শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নোবেলজয়ী নাদিয়া ও আমাদের পূর্ণিমা

আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৫৩

তন্ময় কুমার হীরা

 

নাদিয়া মুরাদ গত বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ধর্ষণের ব্যবহার বন্ধে অবদান রাখার জন্য ইয়াজিদি নারী নাদিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। নাদিয়া ‘রেইপ সারভাইভর’, পুরুষতান্ত্রিক পৃথিবীতে নির্যাতিত নারীর প্রতিভূ। তাঁর সংগ্রাম ও টিকে থাকার লড়াইকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারা যায় না। অন্যদিকে নির্যাতিত নারীর আরেক প্রতিভূ পূর্ণিমা রাণী শীল। ২০০১ সালে কৈশোরে মাত্র ১৪ বছর বয়সে সে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল। পূর্ণিমা মরেনি। সে বেঁচে আছে। এবং বেঁচে থেকেই প্রতিদিন তাকে পথে-ঘাটে নানা হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। অথচ পূর্ণিমা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঁচার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার এ সংগ্রাম ও বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই পুরস্কারের অতীত। অথচ তাকে আমরা তার আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তাটুকুও দিতে পারিনি।

পূর্ণিমা শুধু নিজে বাঁচতে চায় না সে অন্যকেও বাঁচাতে চায়;  বাঁচাতে চায়  প্রতিটি নিপীড়িত নারীকে। সেজন্য সে নিজ উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় তৈরি করেছে ‘পূর্ণিমা ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট’, যার মাধ্যমে সে নির্যাতিত নারীর সহায়তা করবে আজীবন এবং জীবন পরবর্তী সময়ে। কিন্তু পূর্ণিমাকে সহায়তা করতে প্রায় কেউই এগিয়ে আসেনি। সে তার আর্থনিরাপত্তা বা চাকরির জন্য এমনকি প্রায় প্রতিটি নারীবাদী সংঠনের কাছেও গেছে। কিন্তু কোনো সংগঠন তাকে চাকরি দেয়নি। তার দোষ একটাই—সে ‘ধর্ষিত’। এতোটা অসহায় জীবন যাপন করেও নিজের ও অন্যের সহায়তার জন্য সে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোও তাকে ব্যবহার করে শুধু তাদের স্বার্থোদ্ধারের চেষ্টাই চালিয়েছে, কিন্তু পূর্ণিমার জন্য কিছুই করেনি। তবে মনে করি— ক্ষমতাসীনদের উচিত পূর্ণিমার জন্য কিছু করা, তার যোগ্য সম্মান দেওয়া এবং তার আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তার বিধান করা।

পূর্ণিমা এমন একটি পৃথিবী চায় যেখানে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে আর ধর্ষণ ব্যবহার হবে না, যেখানে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না, যেখানে নারীরা স্বাধীন, স্বতন্ত্র, পূর্ণ মানবগোষ্ঠী হবে। পূর্ণিমার সেই চাওয়া বাস্তবায়নে তাকে সরকারের কাজে লাগানো উচিত। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবিরাম লড়াই করে টিকে থাকা পূর্ণিমার চেয়ে আর কারোরই  নারীর যন্ত্রণা ও অসহায়ত্বকে ভালো বুঝতে পারার কথা না। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়