শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

৩৭তম বিসিএস নন-ক্যাডারদের কান্না!

আপডেট : ০৮ মার্চ ২০১৯, ২২:০৫

মো. আতিকুল ইসলাম

আল আমিন রিয়ন

বিশ্বজিত্ বিশ্বাস

 

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের ইতিবাচক ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও দপ্তরসমূহে লক্ষাধিক শূন্য পদ থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রথম (৯ম গ্রেড) ও দ্বিতীয় (১০ম-১২তম গ্রেড) শ্রেণির শূন্য পদের চাহিদা বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে প্রেরণ করা হয়নি। নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতাসমূহ তুলে ধরা হলো —

৩৭তম বিসিএস ক্যাডার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত নয় এমন চাকরিপ্রার্থীদের নন-ক্যাডার প্রথম (৯ম গ্রেড) ও দ্বিতীয় (১০ম-১২তম গ্রেড) শ্রেণির বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ১ জুলাই ২০১৮ তারিখে অধিযাচন চেয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়। ঐ পত্রে কমিশন সচিবালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে ১৯ জুলাই ২০১৮ তারিখের মধ্যে অধিযাচন প্রেরণের জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু ঐ তারিখের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগের জন্য কোনো শূন্য পদ না থাকায় অধিযাচন প্রেরণ করা হয়নি। ১ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে প্রস্তাবিত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার ২০টি শূন্য পদের বিপরীতে ১১ জন যোগদান করায় বাকি ৯টি পদ শূন্য থেকে যায়। তাছাড়া গত ২২ অক্টোবর সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে ৯ জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পাওয়ায় আরো ৯টি পদ শূন্য হওয়ায় সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণযোগ্য মোট ১৮টি পদ শূন্য হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে ৫১টি শূন্য পদ রয়েছে।

৩৫তম ও ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগ প্রদানের পরেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার প্রায় ৪০০টি পদ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের হাতে রয়ে যায়। তবে নন-ক্যাডারদের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী ঐ পদসমূহ ৩৭তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগ দিতে হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের কাছে পুনরায় ৩৭তম বিসিএস নন-ক্যাডারের জন্য নির্ধারিত ছকে চাহিদাপত্র প্রেরণ করতে হবে।

আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোট ৪২০ জন সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকাকে সহকারী প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা ও সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার (৯ম গ্রেড) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এই ৪২০টি পদ পদোন্নতির ফলে যে পদ শূন্য হয়েছে তা ৩৭তম বিসিএস থেকে পূরণ করা সম্ভব। উল্লেখ্য যে, বিগত ৩৫তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে ৭০১ জন এবং ৩৬তম বিসিএস থেকে ৩৫১ জনকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এই পদগুলোর অধিযাচন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে প্রেরণ করা হয়নি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তার মোট অনুমোদিত পদ ৫০৫টি। বর্তমানে এই পদে কর্মরত আছেন ৪৯৫ জন, স্থায়ীভাবে ১৮৩ জন, চলতি দায়িত্বে আছেন ৩১২ জন এবং সম্পূূর্ণরূপে পদ শূন্য আছে ১০টি। অর্থাত্ মোট নিয়োগযোগ্য পদ আছে ৩১২+১০=৩২২টি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধিমালা-২০১৪ (সংশোধিত) অনুযায়ী, ‘উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার পদে ৬০% পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে; তন্মধ্যে ৫০% পদ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে এবং যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে উন্মুক্ত প্রার্থীগণের মধ্যে হইতে পূরণ করা হইবে’। ঐ হিসাবমতে, ৩২২টি নিয়োগযোগ্য পদের মধ্যে সরাসরি নতুন নিয়োগের মাধ্যমে ৩০% অর্থাত্ ৯৬টি পদ ৩৭তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে পূরণ করা সম্ভব। অপরদিকে, ৩১২টি উপজেলা/ থানা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তাগণ চলতি দায়িত্বে থাকায় তাঁরা একাধারে উভয় পদে কর্মরত আছেন।

সারাদেশে উপজেলা ও থানা নির্বাচন অফিসের জন্য সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তার ৫১৭টি দ্বিতীয় শ্রেণির পদ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে, যা বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে পূরণযোগ্য। কিন্তু নিয়োগবিধি সংক্রান্ত কারণে সেগুলোর অধিযাচন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে প্রেরণ করা হয়নি।

২০১১ সালের পর থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ আটকে আছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রায় ২,৫০০ পদ শূন্য রয়েছে, যা ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজে স্থবিরতা তৈরি করেছে। বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগযোগ্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি ও জরিপ অধিদপ্তরের কানুনগো পদে ১,১৩৭টি পদ ছাড়াও সেটেলমেন্ট অফিসারের অনেকগুলো পদ ফাঁকা রয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে প্রথম (৯ম গ্রেড) ও দ্বিতীয় (১০ম-১২তম গ্রেড) শ্রেণির  মোট ৪৮টি পদ শূন্য রয়েছে।  

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির এই শূন্য পদগুলোর অধিকাংশই বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার প্রার্থী কর্তৃক পূরণযোগ্য। এমনকি নন-ক্যাডার থেকে এই পদগুলো পূরণ করা হলে সরকারের আলাদা করে পরীক্ষা নেওয়ার শ্রম ও সময় উভয়ই সাশ্রয় হবে।

ঢাকা