শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অতিথি পাখি বাঁচাতে হবে

আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:৪৩

সারা পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ লাখ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এসব পাখির অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিজেদের অবস্থান বিপদসংকুল হওয়ায় তারা নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে। বাঙালি অতিথিপরায়ণ জাতি হিসেবে সুপরিচিত। শীতকাল শুরু হতেই যেসব পাখি ভিনদেশ থেকে আসতে শুরু করে তাদের নিয়ে আনন্দে মেতে উঠি আমরা। জাহাঙ্গীরনগর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব পাখি ভিড় করে। হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসব পাখি আমাদের দেশে আসে। মানে আশ্রয় নেয়। শীতপ্রধান দেশে শীতের মাত্রা এতটা তীব্র থাকে যে তা এই পক্ষীকুল সহ্য করতে পারে না। হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তারা এদেশে এসে নতুন পরিবেশ সৃষ্টি করে। শীতপ্রধান দেশে তীব্র শীত দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের অভাবও দেখা দেয়। শীতে উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশে প্রবল তুষারপাত হয়ে থাকে। তীব্র তুষারপাতে এসব পাখি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে এবং বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশে এসে উপস্থিত হয়।

শীতকালে বাংলাদেশে আসা পাখিদের মধ্যে স্বচ্ছ পানির বালি হাঁস, খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, বুনো হাঁস, ছোট সারস পাখি, বড় সারস পাখি, হেরন, নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি, কাদাখোঁচা, গায়ক হেরন পাখি, রাজসরালি, পাতিকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড, বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও নানা রং আর কণ্ঠ বৈচিত্র্যের পাখিদের মধ্যে রয়েছে ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, রাঙামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল—এসব পাখি দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

পাখি প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অতিথি পাখির অবদান অনেক। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাখির বিভিন্ন প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। পাখি হলো প্রকৃতির কীটনাশক। পাখির সংখ্যা কমে গেলে কীটপতঙ্গ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে কৃষিতে ব্যবহূত পাচিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে ক্ষতিকারক কীট ধ্বংস করা সহজ হচ্ছে। এসব কারণে অতিথি পাখি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। আমাদের লোভ এতদূর পৌঁছেছে যে অতিথি পাখি দিয়ে ভোজসভা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে ছবি পোস্ট দিতে দ্বিধা করেন না শিক্ষিত সচেতন সমাজের কিছু মানুষ। কেউ জীবিকা অর্জনের জন্য পাখি শিকার করে। কিন্তু যারা সেসব পাখি কিনে রসনা তৃপ্তি করে তারা বেশিরভাগই কিন্তু শিক্ষিত। নিজেদের স্বার্থেই অতিথি পাখি শিকার রোধ করতে হবে। পাখি শিকারীরা যাতে পাখি শিকার থেকে বিরত থাকে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তত্পরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টি জরুরি। সবক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ সম্পূর্ণ সফলতা আনতে পারে না। যদি পাখি শিকারীদের এটা বোঝানো যায় যে পাখি শিকার করা অন্যায়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের জন্য ক্ষতিকর—তাহলে এ প্রবণতা কমে আসবে।

পাবনা