শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মাইলফলকের ম্যাচে চেনা মাশরাফি

আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:১৪

চার দিয়ে শুরু। ছক্কা দিয়ে শেষ।

ক্যারিয়ারের ২০০তম ওয়ানডেতে পেস বোলার মাশরাফিকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন ড্যারেন ব্র্যাভো। ইনিংসের ১৫তম ওভারটি করেছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। প্রথম বলটিই করেছিলেন ফুলার। দর্শনীয় কভার ড্রাইভে চার মেরেছেন ব্র্যাভো জুনিয়র।

মাইলফলকের ম্যাচে মাশরাফির শেষ বলটি ছিল অফস্ট্যাম্পের বাইরে স্লোয়ার। লেন্থ ধরতে পেরে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে রোস্টন চেজ বল পাঠালেন গ্যালারিতে।

এই চার-ছক্কা গতকাল মাশরাফির বোলিংয়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ মাত্র। কারণ ১০ ওভারে আর কোনো বাউন্ডারি দেননি তিনি। বাকি সময়ে ডানহাতি এই পেসারের বলে রীতিমতো নাকানি-চুবানি খেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের

 ব্যাটসম্যানরা। ৩৫ বছর বয়সী এই পেসারের বল পড়তে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হয়েছে ক্যারিবিয়ানদের।

নিয়ন্ত্রিত, আঁটোসাঁটো বোলিংয়ে মাশরাফি যেন ফিরিয়ে এনেছিলেন বল হাতে তার সোনালি সময়কে। অবশ্য গত কয়েক বছরেও দেশের সবচেয়ে সফল পেসার তিনি। পরিসংখ্যান, পারফরম্যান্সেই তার প্রমাণ রয়েছে। গতকাল মিরপুরে ১০ ওভারে ৩০ রানে নিয়েছেন তিন উইকেট। বলা বাহুল্য ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা বোলার মাশরাফি।

তিন স্পেলে বোলিং করেছেন। প্রথম স্পেলে সাত ওভারে ১৪ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন। পরে দুই ওভারে ৫ রান দিয়ে নেন এক উইকেট। তৃতীয় স্পেলে এক ওভারে দেন ১১ রান। ২১তম ওভারে ড্যারেন ব্র্যাভোকে ফিরিয়ে শুরু তার শিকার কাব্য। মাশরাফির কাটারের জবাবে লং অফে ক্যাচ তুলেছিলেন ড্যারেন ব্র্যাভো (১৯)। ১০-১২ গজ দৌড়ে এসে বাজপাখির মতো উড়ন্ত অবস্থায় দর্শনীয় এক ক্যাচ ধরেছেন তামিম ইকবাল। তাই ব্র্যাভোর বিদায়ে বোলার মাশরাফির চেয়ে ফিল্ডার তামিমের অবদান অনেকাংশে বেশি বললে ভুল হবে না।

একপ্রান্ত আগলে খেলা শেই হোপকে (৪৩) ফেরান ২৫তম ওভারে। লেন্থ বলে হোপের স্লাইস ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিরাজের হাতে ধরা পড়ে। নিজের দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম বলে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলকে তৃতীয় শিকার বানান মাশরাফি।

গতকাল প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০০ ওয়ানডে খেলার গৌরব অর্জন করলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। দুর্দান্ত বোলিংয়ে নিজের মাইলফলকের ম্যাচটাও রাঙিয়েছেন তিনি। ম্যাচের বিরতিতে ব্রডকাস্টার টিভিকে নিজের বোলিং নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক বলেছেন, ‘২০০তম ম্যাচ খেলা অনেক আনন্দের আমার জন্য। উইকেট নেয়া আসলে দলকে সাহায্য করতে পারা। অনেক সময় ভ্রমণ এবং মানিয়ে চলা কঠিন হয়। কিন্তু আমি এখনও শক্তভাবে এগুচ্ছি। দেখা যাক। আমার মনে হয় উইকেটের অসম বাউন্স অনেক সাহায্য করেছে। বোলাররা খুব শৃঙ্খলিত ছিল। তাই তারা উইকেট পেয়েছে। আমরা শেষ ৫ ওভারে কিছু বাড়তি রান দিয়েছি। যদি আমরা উইকেটে কিছুটা সময় কাটাতে পারি তাহলে আশা করি সবকিছু ঠিক থাকবে।’

এমন বোলিংয়ের পর কে বলবে, নড়াইল এক্সপ্রেস ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে আছেন? শেষ কয়েক বছর ধরেই তার ক্যারিয়ারের যতিচিহ্ন এঁকে দেয়াটা দেশের ক্রিকেটের বড় আলোচনার বিষয়। কিছুদিন পরপরই যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সম্প্রতি তিনি রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর সেই আলোচনা যেন আরও উচ্চকিত হয়ে উঠেছে। যেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে দেশের মাটিতে এটিই মাশরাফির শেষ সিরিজ কিনা? যদিও তিনি বলেছেন, টার্গেটে থাকা বিশ্বকাপের পর দেখবেন ক্যারিয়ার, ফিটনেস, ফর্ম, সার্বিক অবস্থান কোথায় থাকে। তারপরই বিদায়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।

তবে এটুকু নিশ্চিত, মুস্তাফিজ-রুবেলদের এই যুগেও বল হাতে ক্ষুরধার-কার্যকর মাশরাফিকে হারানোর ক্ষতিটা নেহায়েত কম হবে না বাংলাদেশের জন্য। কার্যকর এই বোলিংয়ের দিনে মাশরাফি নতুন একটা মাইলফলকও ছুঁয়েছেন। উইকেটসংখ্যার দিক থেকে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন কিংবদন্তিতুল্য সাবেক ভারতীয় পেসার কপিল দেবকে। বিশ্বকাপজয়ী কপিলের উইকেট সংখ্যা ২৫৩। আর মাশরাফির ২৫৫। ওয়ানডেতে উইকেটসংখ্যার দিক থেকে মাশরাফির অবস্থান এখন ২৪। পেস বোলারদের মধ্যে অবস্থান ১৬-তে। আর মাত্র ২৭ টা উইকেট পেলেই মাশরাফি চলে আসবেন পেস বোলারদের সর্বকালের সেরা ১০-এ। এই রেকর্ড মাশরাফি ছুতে পারুন কি না নাই পারুন, তার নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে ক্রিকেট বিশ্বে!