শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সুন্দরবনের দুবলারচরে শুরু হয়েছে ৩ দিনের রাস উৎসব

আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:১১

আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোলে  হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৩ দিনব্যাপী রাস উৎসব। বুধবার ভোর থেকেই কয়েক হাজার পূণ্যার্থী ও পর্যটকরা সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে যেতে যাত্রা শুরু করেছে। শুক্রবার ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দিনের প্রথম জোয়ারে বঙ্গোপসাগরের নোনা পানিতে পূণ্য স্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে রাস উৎসব।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আলোরকোলে রাস উৎসবে যাতায়াতের জন্য সুন্দরবন বিভাগ ৮টি রুট নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে শরণখোলা রেঞ্জের বগী স্টেশন-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলারচর হয়ে আলোরকোল এবং শরণখোলা স্টেশন-সুপতি স্টেশন ও শেলারচর হয়ে আলোরকোলে যেতে পারছে পূণ্যার্থীরা। প্রত্যেক পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর ৩ দিন সুন্দরবনে অবস্থানের জন্য ৫০টাকা, নিবন্ধিক ট্রলার ২ শত টাকা এবং অনিবন্ধিত ট্রলারে ৮ শত টাকা রাজস্ব ধরা হয়েছে। 

পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা এবং বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি নৌবাহিনী, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশের পাশাপাশি বনরক্ষীরাও নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া, কন্ট্রোল রুমে স্বার্বক্ষণিক একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন।  

আলোরকোলে নারী পূণ্যার্র্থীদের পোষাক পরিবর্তনের জন্য আলাদা শেড ও পর্যাপ্ত গোসলখানা তৈরি করা হয়েছে। ৩ দিনের এ রাস মেলায় প্রশাসন, বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশ গ্রহণের কথা রয়েছে।

রাস উৎস কমিটির সভাপতি ও দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক  কামাল উদ্দিন আহমেদ দুবলারচর থেকে মুঠোফোনে আজ সন্ধ্যায় জানান, বুধবার সকাল থেকে রাস উৎসবকে ঘিরে আগত পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে সাগরদ্বীপ আলোরকোল। বুধবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার লোকের সমাগম ঘটেছে।

তিনি আরও জানান, রাস উৎসবে বন বিভাগ কোন আর্থিক সহযোগিতা করে না। বরং তারা বিপুল অংকের রাজস্ব আয় করে থাকে। রাস উৎসব কমিটি নিজেদের অর্থেই এ উৎসব আয়োজন করে থাকে।

বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা দ্বীপ দুবলারচর আলোরকোলে আড়াইশ বছরের অধিক সময় ধরে নভেম্বর মাসের রাস পূর্ণিমায় সনাতন হিন্দু ধর্মের লোকেরা এই রাস উৎসব পালন করে আসছে। প্রথম দিকে এই উৎসবের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা আইনী নিয়মনীতি মানা হতো না। ১৯৭৫ সালের পর সুন্দরবনে মৎস্যজীবীদের সংগঠন দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে, জিয়াউদ্দিনের মৃত্যুর পর রাস মেলা কমিটি পুর্নগঠণকরে মেজর জিয়ার ছোট ভাই দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদকে রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি করা হয়। গত দুই বছর ধরে এ কমিটির মাধ্যমে  এই উৎসব পালিত হচ্ছে। প্রতিবছর রাস উৎসবকে ঘিরে এখানে বসে দেশি-বিদেশি লক্ষাধিক লোকের এক মিলনমেলা।

ইত্তেফাক/নূহু