বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মিঠাপুকুরে চলন্ত বাসে পেট্রোলবোমা হামলার মামলা থমকে আছে ৫ বছর

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫২
রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা হামলার মামলা পুলিশি তদন্তের ত্রুটির সুযোগ নিয়ে আসামিপক্ষ হাইকোর্টে আবেদন করলে মামলাটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
 
রংপুরের অতিরিক্ত পিপি আব্দুস সাত্তার সাংবাদিকদের জানান, আসামিপক্ষ হাইকোর্টে মামলাটি কোয়াশমেন্ট (আদালতের ক্ষমতার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনও মামলার মাধ্যমে আসামিকে হাজতে দেওয়া) করার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করায় মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
 
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র আইনজীবী জানান, ‘অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে মামলাটি শুনানির উদ্যোগ নিলে আসামিপক্ষে মামলা কোয়াশমেন্টের আবেদন খারিজ হয়ে যেত। কিন্তু কেন তারা উদ্যোগ নিচ্ছে না সে ব্যাপারে তারাই ভালো বলতে পারবেন।’
 
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি ওই হামলায় দগ্ধ হন অন্তত ২৫ যাত্রী। তবে পাঁচ বছর পরও শেষ হয়নি ওই মামলার বিচার। আইনি মারপ্যাঁচে বন্ধ রয়েছে মামলার সব কার্যক্রম। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্বাধীনভাবে। ১৩২ আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬১ আসামিকে পুলিশ গ্রেফতারই করতে পারেনি পুলিশ।
 
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিহত করার নামে সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়। এরমধ্যে প্রথম বড় সহিংস ঘটনা ঘটে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বাতাসন এলাকায়। কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে ছেড়ে আসা খলিল পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে রংপুরের বাতাসন এলাকায় এলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা চলন্ত বাসে বেশ কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। এতে পুরো বাসে আগুন ধরে যায়। বাসের ভেতরে থাকা শিশুসহ ৬ যাত্রী জীবন্ত দগ্ধ হয়ে নিহত হন। আহত হন অন্তত ২৫ বাসযাত্রী। আহতদের অনেকে চিরদিনের মতো অচল হয়ে গেছেন। বাসযাত্রীদের বেশির ভাগই সহায়-সম্বলহীন হতদরিদ্র বলে জানায় পুলিশ।
 
এ ঘটনায় রংপুরের মিঠাপুকুর থানার এসআই আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় ৮৭ জন জামায়াত শিবির নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মিঠাপুকুর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে তদন্ত করে মিঠাপুকুর থানার ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম ১৩২ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটির বিচার রংপুরের অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালত-১ এ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৬০ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ৪৪ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়েছে। 
 
সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি আব্দুস সাত্তার জানান, ‘মামলায় ডাক্তার, তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ছয় জনের সাক্ষ্যগ্রহণ বাকি রয়েছে।’
 
এদিকে মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন সাংবাদিকদের জানান, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা মেরে ছয় যাত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করার পরেও মামলাটির যদি বিচার না হয় আইনের মারপ্যাঁচে আটকে যায় তাহলে এ দায় কার? দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ করে দোষীদের সাজা দেওয়া না হলে আরও বড় ধরনের সহিংসতা ঘটাতে পারে দুষ্কৃতকারীরা।’
 
 
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি মণ্ডল বলেন, ‘এই মামলায় আসামিদের বিচার না হলে এবং শাস্তি না হলে এর দায়ভার কে নেবে? দ্রূত মামলাটির বিচার শেষ করার দাবি জানাই।’
 
ইত্তেফাক/নূহু