শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, জ্বিন আতঙ্কে গ্রামবাসী

আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৪৫

গত এক মাসে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামের ২টি দোকানঘরসহ ৬টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কারা, কেন এসব ঘরে আগুন দিচ্ছে তা বলতে পারেছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা। এসব কর্মকাণ্ড জ্বিন সংঘটিত করছে বলে প্রচার করা হচ্ছে সুকৌশলে। এতে আড়ালেই থেকে যাচ্ছে প্রকৃত ঘটনা। কখন কার বাড়িতে আগুন লাগে এ আশঙ্কায় এলাকাবাসীর নির্ঘুম রাত কাটছে।

জানা গেছে, ওই গ্রামের আনোয়ার শেখের বাড়িতে এক রাতেই ৩ বার অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। শুধু বাড়িতেই নয়। আরো ৫টি দোকন ও ঘরে এমন ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা কে বা কারা ঘটাচ্ছে তা কেউ এখনো দেখেনি। এমনকি গ্রামে পাহারা বসিয়েও অগ্নিসংযোগকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এই সুযোগে এসব কর্মকাণ্ড জ্বিন সংঘটিত করছে বলে প্রচার করা হচ্ছে সুকৌশলে।

এ পর্যন্ত ওই গ্রামের সিরাজুল মুন্সীর ছেলে ছাবু মুন্সীর (৫০) ঘর, সাদেক মুন্সীর ছেলে হাসান মুন্সীর (৬০) দোকান ঘর, সামসুল মুন্সীর ছেলে লিটন মুন্সীর (৪০) দোকান ঘর, মৃত আবুল শেখের ছেলে আনোয়ার শেখের (৪৫) বসতঘর এবং মৃত আবুল শেখের ছেলে মনিরুজ্জামান শেখের (৩২) ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড বলে আখ্যা দিয়েছেন গ্রামের সচেতন মহল। আর পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছে।

আরো পড়ুন: এনায়েতপুর থানার ৫শ গজের মধ্যে ফিল্মি স্টাইলে ডাকাতি

আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক লিটন শেখ বলেন, ‘আমাদের গ্রামটি শান্তশিষ্ট ও সুশৃঙ্খল ছিলো। হঠাৎ করে গ্রামের কিছু উশৃঙ্খল যুবক বিশৃঙ্খলা ঘটাচ্ছে। আমার দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমার প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার পাশের দোকানদার হাসান মন্সীর দোকানও পুড়িয়ে দিয়েছে ওই চক্র। এরপর গ্রামবাসী বসে সিদ্ধান্ত নেয় সবাই মিলে এই অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এর পরেও বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।আমরা এখন অজানা আতঙ্কে মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’

ওই গ্রামের আনোয়ার শেখের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘৫ জানুয়ারি রাতে হঠাৎ করে আমার ঘরে আগুন দেওয়া হয়। কে বা কারা আগুন ধরিয়েছে আমরা দেখতে পরিনি। আমাদের বাড়িতে এদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত তিনবার অগ্নিসংযোগ করা হয়। এলাকায় আমাদের কোন শত্রু নেই। কেন যে আমার ঘরে আগুন দিলো, তা বুঝতে পারছিনা।’

ক্ষতিগ্রস্ত শংকরপাশা গ্রামের মিলন শেখের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৮) বলেন, ‘রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। রাতে আমরা ঘুমাতে পারিনা। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।’

ক্ষতিগ্রস্ত ছাবু মুন্সী বালেন, ‘রাতের আধারে আমার গোয়াল ঘরে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে মসজিদের মাইকে লোকজন ডাকা হয়।এলাকাবাসী পানি দিয়ে আগুন নিভায়। এরপর থেকে আমরা আতঙ্কে আছি। রাতে ঠিকমতো ঘুমও হয়না।’ 

রাতইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আঞ্জুরুল ইসলাম আঞ্জু বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার জন্য হয়তো জ্বিনের কাণ্ড বলে চালানো হচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা এসব করছে তারা হয়তো অন্য কোন বড় ধরনের অপরাধ করছে। এটি আড়াল করতে হয়তো তারা এ কাজ করে থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুকসুদপুর সার্কেল) হুসাইন মোহাম্মদ রায়হান জানান, ‘ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ দায়ের না করলেও আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে স্ব-প্রণোদিত হয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। দোষীরা যেই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

ইত্তেফাক/বিএএফ