শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চট্টগ্রামে মামলার বোঝা নিয়েই চলছে যানবাহন

আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০২:২৮

চট্টগ্রামে গণপরিবহন সেক্টরে চরম বিশৃংখলা বিরাজ করছে। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় সড়কে শৃংখলা ফিরছে না। একাধিক মামলা নিয়ে বিভিন্ন রুটে দেদারছে চলছে গণপরিবহনের ত্রুটিপূর্ণ যাবাহন।

ঘুষ দিয়ে ও মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে গাড়ি চলাচলের সুযোগ থাকায় আইন-কানুনকে তোয়াক্কা করছে না গাড়ির মালিক ও চালকরা। মোবাইল কোর্ট নিয়েও চলছে লুকোচুরি। মোবাইল কোর্ট বসলে হঠাত্ ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি গুলো উধাও হয়ে যায়। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। পরে আবার সড়কে নেমে পড়ে এগুলো।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানান, গণপরিবহনের প্রায় ৮০ শতাংশ গাড়ির নথিপত্র ত্রুটিপূর্ণ। মামলা নিয়েই এসব গাড়ি চলাচল করছে। একটি গাড়ির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু মামলায় কারো কিছু হয় না বলে একটা ধারণা তৈরী হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএ’র এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, পরিবহন সেক্টরের অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে পুলিশ ব্যাপক ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। পণ্যবাহী ও গণপরিবহনের প্রতিটি গাড়ির কাগজপত্র নির্ভেজাল থাকলেও পুলিশকে মাসে নির্ধারিত হারে টাকা দিতে হচ্ছে। দিনের বেলায় নগরীতে চলাচলরত পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান , ট্রাক ও লরি থেকে মাসে নির্ধারিত টাকা আদায় করা হয়ে বলে অভিযোগ করেন তিনি। নগরী ও জেলায় বিপুল পরিমাণ প্রাইভেট সিএনজি অটোরিক্সা ভাড়ায় চলাচল করছে। এসব অটোরিক্সা থেকে অর্থ আদায় করছে পুলিশ।

ট্রাফিক পুলিশ জানায়, ট্রাফিক আইন অমান্য করার দায়ে প্রতিদিন বিভিন্ন যাবাহনের বিরুদ্ধে শতশত মামলা হচ্ছে। একটি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় দেয়া হয়। আবার এই সময়ের মধ্যে অন্য অপরাধে আরো কয়েকটি মামলা দেয়া হয়ে থাকে। এতে গাড়ির মালিকরাও জরিমানার টাকা দিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালায়। কাগজপত্রের ত্রুটি সারতে বিআরটিএতে যায় না বলে অনেক গাড়ির মালিক স্বীকার করেছে।

সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার সকালে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে বিআরটিএকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে দেখা যায়। এখান থেকে নিউমার্কেট ও আমতল পর্যন্ত গণপরিবহনের টেম্পু ও বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। কিন্তু গতকাল মোবাইল কোর্ট বসানোর পর এই দু’টি রুটে চলাচলরত বাস ও টেম্পু গুলো হঠাত্ উধাও। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে এসব রুট দিয়ে যাতায়াতকারী স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। এভাবে নগরীতে যেখানেই মোবাইল কোর্ট বসানো হয় সেখানে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস.এম.মনজুরুল হক ইত্তেফাককে বলেন, পরিবহন সেক্টরে অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপকতা বেড়েছে। রাস্তায় সার্বক্ষনিক ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্বে থাকেন। তারা ঠিক থাকলে সড়কে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলতে পারে না। আমরা বিআরটিএ থেকে কাগজপত্র ত্রুটিপূর্ণ গাড়ির তালিকা চেয়েছি। প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। আশা করি অচিরেই চট্টগ্রামে পরিবহন সেক্টরে শৃংখলা ফিরে আসবে। হলুদ টেম্পু গুলো ক্রমান্বয়ে তুলে দেয়া হবে।’

নগরীতে বিভিন্ন রুটে প্রতিদিনই গণপরিবহনে টেম্পু, মাহিন্দ া ও টমটম যুক্ত হচ্ছে। খুলছে নতুন নতুন রুট। এসব সৃষ্ট রুটের পেছনে জড়িত রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। প্রতিটি রুটে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নতুন নতুন সংগঠন জন্ম নিচ্ছে। যত সংগঠন তত রমরমা চাঁদাবাজি। জানা যায় চট্টগ্রামে এ ধরনের প্রায় ১০০টি সংগঠন রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চর ও ডুবোচরে লঞ্চ চলাচল ঝুঁকিতে

বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা পরিবহন সেক্টরে শৃংখলার মধ্যে রাখতে চেষ্টা করছি। প্রতি সপ্তাহে কয়েকটি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। ৩ জন ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছে। মাঝে মাঝে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

ইত্তেফাক/নূহু