ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় দুই ভাইয়ের মারামারির ঘটনায় ৯৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা সবাই সদর উপজেলার নাটাই (উত্তর) ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামের বাসিন্দা। ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪৫ জনকে করা আসামি করা হয়। এদের মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ কোনো প্রকার যাচাই না করেই মামলাটি এফআইআর (নথিভুক্ত) করেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাজঘর গ্রামে আমতলি বাজারের পাশে আওয়ামী লীগ কর্মী আমিনুল হাসান বিপ্লবের ভাড়াটিয়া ইয়াছিনের কাছে চাঁদা চান ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ শাহনূর। ভাড়াটিয়া ইয়াছিন বিষয়টি বিপ্লবকে জানালে তিনি ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজঘর গ্রামের কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে একটি চায়ের দোকানে শাহনূরকে ডেকে পাঠান। শাহনূর সম্পর্কে বিপ্লবের ফুফাতো ভাই। বিষয়টি নিয়ে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির এক পর্যায়ে বিপ্লব পানির গ্লাস দিয়ে শাহনূরের মাথায় আঘাত করেন। এতে শাহনূরের মাথা ফেটে যায়। এদিকে ৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাহনূর ১৬ফেব্রুয়ারি বিপ্লবসহ রাজঘর গ্রামের ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে ৯৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
মামলায় বিপ্লবসহ বাকি আসামিরা গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন রাজঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে হামলা করে স্থানীয় ছাওয়ার মিয়ার ছেলে ঈসরাইলকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর শাহনূর আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে পুলিশের কাছে দিয়েছেন বলে তাকে প্রাণে মারার হুমকি দেয় আসামিরা। এরই জের ধরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি আসামিরা সবাই মিলে শাহনূরকে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে হামলা করে।
তবে ৭ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ৭নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. হোসেন জানান, শাহনূর দোকানির কাছে চাঁদা চেয়েছিলেন। রাগের মাথায় বিপ্লব একটি গ্লাস দিয়ে শাহনূরের মাথায় আঘাত করেন। তবে ৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনাকে শাহনূর অতিরঞ্জিত করে যে মামলা করেছেন সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন আসামিরা। ঘটনার কিছু জানেন না এমন অনেককেই মামলায় আসামি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মামলার আসামি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, শাহনূরকে আমি মেরেছি। যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তারা ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত না। নাটাই (উত্তর) ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘দুইজনের মধ্যে মারামারি হয়েছে। কেন বাকিদের আসামি করা হয়েছে সেটা জানি না।’
আরও পড়ুন: যুক্ত হলো আরেকটি স্প্যান, ১২শ মিটারে পদ্মা সেতু
নাটাই (উত্তর) ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদ আহমেদ জানান, মামলাটি সম্পূর্ণ ভুয়া। পুলিশ যাচাই না করেই মামলাটি এফআইআর করেছে। নাটাই (উত্তর) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুল্লাহ্ বাহার জানান, ঘটনার পরদিন সকালে শুনেছি বিপ্লব ও শাহনূরের মধ্যে মারামারি হয়েছে। যাদেরকে মামলায় আসামি করা হয়েছে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘বাদী যে এজাহার দিয়েছেন সেভাবেই মামলা হয়েছে।’
ইত্তেফাক/কেকে