বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

টাকার জন্য খুন করে লাশ গুম, নিহতের স্ত্রীকেও হত্যার পরিকল্পনা

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০১৯, ১৮:০২

ওসমানীনগরে আনিছ উল্যা আনিক হত্যার ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আফসা বেগম হাফসা বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে সোমবার রাতে ওসমানীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে সোমবার দিনে পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঘটনার দিন সোমবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-ওসমানীনগর উপজেলার রাইকদারা গ্রামের (বর্তমানে দিগর গয়াসপুর গ্রামে বসবাসকারী) আজমল আলীর ছেলে সুমন রশিদ (৩০) একই উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রামের ইব্রাহীম আলীর ছেলে শাওন মিয়া (২৫) ও শায়েস্তাগঞ্জ থানার সোবারাই গ্রামের আবু মিয়ার ছেলে নানু মিয়া (২৪)। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবাননন্দী রেকর্ড করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানায়।

ঘাতকদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে মঙ্গলবার সিলেট পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার পর স্থানীয়দের সহযোগীতায় থানা পুলিশ প্রথমে সুমন রশিদ ও শাওন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, নানু মিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতকরা জানান, আনিছ উল্যা আনিক এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে টাকা পয়সা দান করতেন। গ্রেপ্তারকৃত সুমন লোকজনের কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে দেউলিয়া হয়ে এই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে তিনি দীর্ষ দিন ধরে পলাতক অবস্থায় শেরপুর এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। সুমনের ধারণা ছিল, আনিছ উল্যাকে জিম্মি করতে পারলে তার কাছ থেকে বড় অংকের টাকা আদায় করা যাবে। 

১৭ মার্চ রবিবার বিকেলে সুমন, শাওন ও নানু শেরপুর পয়েন্টে গিয়ে চায়ের দোকানে বসে তারা চা-নাস্তা খান। এসময় সুমন তার সহযোগী শাওন ও নানুকে জানান, তিনি (সুমন) আনিছ উল্যার কাছে ১৫লাখ টাকা ও ১৫ ভরি স্বর্ণ পান। কিন্তু আনিছ উল্যা টাকা ও স্বর্ণ না দিয়ে তালবাহানা করে আসছেন। এতে আনিছ উল্যাকে হত্যা করার জন্য শাওন ও নানুর সহযোগীতা চান সুমন। বিনিময়ে সুমন তাদের দুই জনকে বড় অংকের টাকা দেবে বলে আশ্বস্থ করেন। সুমনের এমন প্রস্তাবে শাওন ও নানু রাজি হন। এরপর রবিবার সন্ধ্যায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা পূর্ব তাজপুর গ্রামের প্রবাসী আলা উদ্দিনের বাড়িতে যান। 

শাওন ও নানুকে আলা উদ্দিনের বাড়িকে রেখে সুমন আলা উদ্দিনের বাড়ির কেয়ারটেকার আনিছ উল্যা আনিকের বাড়িতে গিয়ে আলা উদ্দিনের বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে আনিছ উল্যাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। 

সুমনের সঙ্গে আনিছ উল্যা আলা উদ্দিনের বাসায় অবস্থান করার পর সুমন, শাওন ও নানু বাসার বিভিন্ন রুম ঘুরে দেখেন। এসময় বাসার দু’তলায় উঠার পর সুমন সুযোগ বুঝে গামছা দিয়ে আনিছ উল্যার মুখ বেঁধে ফেলেন।  শাওন ও নানু দড়ি দিয়ে আনিছ উল্যার হাত-পা বেঁধে তার শরীরে আঘাত করতে থাকেন। এরপর সুমন ও নানু দড়ি দিয়ে আনিছ উল্যার গলায় ফাঁস লাগিয়ে দু’দিক থেকে স্বজোরে টানতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা আনিছ উল্যার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে তারা  লাশ কাধে করে বাসার ছাদের পানির ট্যাঙ্কের ভেতরে ফেলে রেখে ঘণ্টাখানেক বাসায় অবস্তান নেন। শাওন ও সুমন আনিছ উল্যার স্ত্রীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাসার চাবি অন্যত্র ছুড়ে ফেলে দেন। নানু বাসা থেকে বের হয়ে শেরপুরে চলে যান। সুমন ও শাওন আনিছ উল্যার স্ত্রীকে হত্যারও জন্য তার বাড়ির আশে পাশে অবস্থান নিলেও সুযোগ না পেয়ে তারা ব্যর্থ হয়ে সেখান থেকে চলে যান। 

নিহতের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, নিঃসন্তান আনিছ উল্যা স্থানীয় মসজিদের মোতওয়াল্লীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মানুষকে দান-খয়রাত করতেন। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর বাড়িতেই থাকতেন এবং সেবা মূলক কাজ করতেন। 

আরও পড়ুন: প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে জেব্রা ক্রসিংয়ে আবরারকে চাপা

এবিষয়ে ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম আল-মামুন বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ 

ইত্তেফাক/কেকে