গোপালপুরে ঋণের ভারে জর্জরিত এক মুক্তিযোদ্ধা নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করলেন। শনিবার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন। নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করা মুক্তিযোদ্ধার নাম শহীদুল ইসলাম মন্টু।তিনি গোপালপুর উপজেলার ভেঙ্গুলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
এ সময় সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের তালুকদার, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস সোবহান তুলা, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মিনহাজ উদ্দীনসহ ২৫/৩০ মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম মন্টু একাত্তর সালে ৬ ও ৭ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। তার মুক্তিবার্তা নং ০১১১৮০৯০৩৭০ এবং গেজেট নং ১৯১৮। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, একাত্তর সালে যুদ্ধের সময় তিনি দিনমজুর ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ঢাকায় রিকশা চালানো শুরু করেন। পরে বয়স সত্তর অতিক্রম করলে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভাতা বাড়ানো হলে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। তবে বাড়ি ভিটা না থাকায় ভাইয়ের বাড়ি অটুলিতে থাকেন।
ইতিমধ্যে চার ছেলে ও এক মেয়ের লেখাপড়া ও বিয়ের জন্য তিনি দেনার দায়ে আবদ্ধ হন। তার মাথার ওপর কৃষি ব্যাঙ্ক, ইসলামী ব্যাঙ্ক, এনজিওএর মাইক্রোক্রেডিটসহ সুদখোর মহাজনী দেনার দায় সুদাসলে প্রায় বিশ লাখ টাকা। মুদি দোকানের পুঁজি দিয়ে মহাজনী সুদের কিস্তি শোধ করায় ব্যবসাও বন্ধ।
তিনি জানান, বর্তমানে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারি ভাতা পান ১০ হাজার টাকা। প্রতিমাসে এনজিও এবং মহাজনী দেনার কিস্তি দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। কিস্তি পরিশোধে অসমর্থ হওয়ায় সুদখোর মহাজনরা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। পুত্রদের কারো আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তারা বিপদের দিনে সহযোগিতা করছে না। দেনার দায়ে তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমতাবস্থায় নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা ছাড়া কোনো গত্যন্তর ছিলো না বলে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল কাদের তালুকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘৭২ বছর বয়সী শহীদুলের শরীরের অবস্থাও ভালো না। দেনার দায়ে তিনি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দেনার যন্ত্রণা সইতে না পেরে তিনি একবার বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। দশ হাজার টাকার সরকারি ভাতাই এখন তার একমাত্র সম্বল। অসুস্থ স্ত্রীর খাওয়া ও চিকিৎসায় সে টাকা শেষ হয়ে যায়।’
আরও পড়ুনঃ উল্টো পথের বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহত
তিনি অসহায় মুক্তিযোদ্ধা শহীদুলকে রক্ষায় দানশীল ব্যক্তি ও সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
ইত্তেফাক/নূহু