বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে এমপিদের হাতাহাতি

আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৪২

শ্রীলঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের একদিন পরেই দেশটির পার্লামেন্টে তুমুল হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন এমপিরা। এই ঘটনার পর দেশটির রাজনীতিতে গভীর সংকট আরো প্রকাশ্যে এলো।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজাপাকসের সমর্থক এমপিরা রনিল বিক্রমাসিংহের এমপিদের সঙ্গে আধঘন্টার বেশি সময় ধরে তর্কবিতর্ক ও ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত ছিলেন। আহত এত এমপিকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। অন্যদিকে, পার্লামেন্টের স্পিকার কারু জয়সুরিয়া ঘোষণা করেছেন, শ্রীলঙ্কার এখন কোনও প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভা নেই।

 

আরো পড়ুন : ‘শ্রীলংকায় এখন কোন সরকার নেই’ বললেন স্পিকার

স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, বুধবার অনাস্থা ভোটে হেরে যান মাহিন্দা রাজাপাকসে। গতকাল স্পিকার এ বিষয়ের উপর কণ্ঠভোট গ্রহণের সময় রাজাপাকসের সমর্থকরা চিত্কার জুড়ে দেন। তারা ক্ষণে ক্ষণে পার্লামেন্ট ভবন কাঁপিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপরই পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। রাজাপাকসে স্পিকারের এই পদক্ষেপকে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তাব সমর্থন করতে এমপিদের প্রতি আহ্বান জানান। এরপরই তার সমর্থক এমপিরা বিপক্ষ দলের এমপিদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। অনেকে স্পিকারের দিকে পানির বোতল ছুড়ে মারেন।

 

শ্রীলঙ্কার এই রাজনৈতিক সংকট শুরু হয় গত ২৬ অক্টোবর। ওই দিন প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহকে বরখাস্ত করে রাজাপাকসেকে তার স্থলাভিষিক্ত করেন। পরদিনই পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত করেন। আন্তর্জাতিক চাপের মুখের গত সোমবার পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হয়। কিন্তু যখন প্রতীয়মান হয় রাজাপাকসে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে জয়ী হতে পারবেন না তখন সিরিসেনা পার্লামেন্ট ভেঙে দেন এবং আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন।

 

রনিল বিক্রমাসিংহকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করে লঙ্কান প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে বসানোর পদক্ষেপ পর্যাপ্ত সমর্থন পাবে না বুঝতে পেরে পরে এক ডিক্রিতে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছিলেন ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্সের (ইউপিএফএ) নেতা সিরিসেনা। বুধবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে ২২৫ সদস্যের মধ্যে ১২২ জনই রাজাপাকসে ও তার সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে সমর্থন জানান। পার্লামেন্ট এমন অবস্থান নিলেও তা মেনে নেননি সিরিসেনা। তিনি বলেছেন, স্পিকার পার্লামেন্টের নিয়মনীতি, ঐতিহ্য ও সংবিধানকে অবজ্ঞা করেছেন বলে মনে হওয়ায় তিনি অনাস্থা ভোটের ফল গ্রহণ করতে পারছেন না।

 

উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় সরকার ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্টই সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর। এখানে প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টের নেতৃত্বে থাকলেও নির্বাহী ক্ষমতা থাকে প্রেসিডেন্টের হাতে। মন্ত্রিসভাও তার অধীনেই পরিচালিত হয়। সামপ্রতিক মাসগুলোতে দিল্লির সঙ্গে বিক্রমাসিংহের ইউএনপির ঘনিষ্ঠতা এবং সিরিসেনাকে হত্যায় ‘ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ’ নিয়ে দলটির সঙ্গে ইউপিএফএর মিত্রতায় ছেদ পড়ে। এরপরই এক সময়ের মিত্র রাজাপাকসের দিকে ঝুঁকে পড়েন সিরিসেনা। খবর বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার।

 

 

ইত্তেফাক/ইউবি