শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বদলে যাচ্ছে কিলোগ্রাম

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:১৯

এক কিলোগ্রাম সমান এক হাজার গ্রাম— এই কথাটি সম্ভবত সবারই কমবেশি জানা তথ্য। আজ থেকে প্রায় ১৩০ বছর আগে ফ্রান্সের প্যারিসে রক্ষিত প্ল্যাটিনাম-ইরিডিয়ামের সংকর ধাতুর একটি সিলিন্ডারকে কিলোগ্রামের নমুনা হিসেবে ধরা হয়েছিল। সেই ওজনের সাপেক্ষেই এতোদিন সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে কিলোগ্রামকে। কিন্তু আগামী বছরের ২০ মে বিশ্ব ওজন দিবসে বদলে যাবে সেই কিলোগ্রাম! কিলোগ্রামের সংজ্ঞা নির্ধারণে বিজ্ঞানীরা দ্বারস্থ হয়েছেন প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের (এইচ)। ‘প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের মান ০.০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ ০০০০০০৬৬২৬০৭। ০১৫ কিলোগ্রাম বর্গমিটার/ সেকেন্ড। যেহেতু ওই মানের মধ্যে কিলোগ্রাম জিনিসটা লুকিয়ে রয়েছে, তাই ‘প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক’ থেকে কিলোগ্রামের নিখুঁত মাপটি গ্রহণ করছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রবর্তিত কিলোগ্রাম ধারণার সঙ্গে দূরত্ব ও সময় ধারণা পরস্পর সম্পর্কিত। নতুন এই কিলোগ্রাম ব্যবস্থায় প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের মান অত্যন্ত নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞানীদের দাবি, কিলোগ্রাম বদলে গেলেও তাতে নিত্যদিনের ব্যবহার্য পণ্যের ওজন করায় কোনো তারতম্য ঘটবে না। গাড়ি, বিমান কিংবা ওষুধের মানোন্নয়ন এবং বৈজ্ঞানিক উপকরণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে নতুন কিলোগ্রাম। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্টান্ডার্ড অ্যান্ড টেকনোলজির প্রধান স্টিফান স্ল্যামিনজারের মতে, আগের কিলোগ্রামের সঙ্গে নতুন কিলোগ্রামের ওজনের তারতম্য খুবই নগণ্য। এক কিলোগ্রামের দশ কোটি ভাগের এক ভাগের সমান ওজনের পার্থক্য হবে দুই ধরনের কিলোগ্রামের মধ্যে যা কিনা একটি চোখের পাপড়ির চার ভাগের এক ভাগ ওজনের সমান।

নতুন কিলোগ্রাম হিসেবে প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবককে অনুসরণ করার ভোটাভুটিতে অংশ নিয়েছিল পৃথিবীর অনেকগুলো দেশের প্রতিনিধিরা। ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ওজন এবং পরিমাপ বিষয়ক ২৬তম সম্মেলনে ৬০ দেশের প্রতিনিধিরা নতুন কিলোগ্রামের পক্ষে রায় দেন। ১৮৮৯ সালে প্ল্যাটিনাম-ইরিডিয়ামের সংকর ধাতু দিয়ে তৈরি কিলোগ্রামের বাটখারাটিকে ‘ল্য গ্রঁদ কে’ কাচের তৈরি একটি জারের মধ্যে সংরক্ষণ করা হলেও এটির ওজনে তারতম্য ঘটার নজির রয়েছে। মূলত সেই কারণেই হাতে তৈরি কিলোগ্রামকে বদলে নিখুঁত এক মাপজোক পদ্ধতি গ্রহণ করতে নেওয়া হচ্ছে প্রকৃতির সাহায্য। নতুন কিলোগ্রামের জন্য প্রয়াত নোবেল জয়ী জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের নামাঙ্কিত প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবককে কাজে লাগানো হচ্ছে। আলোর গতি আর কম্পাঙ্কের সম্পর্ক খুঁজতে গিয়ে ওই ধ্রুবক আবিষ্কার করেন প্ল্যাঙ্ক। এই সম্পর্কে মানুষের কোনও হাত নেই, তা নেহায়েতই প্রকৃতির দান। সেই সূত্র অজর-অমর। -ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

ইত্তেফাক/আরকেজি