শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সৌদি তরুণী রাহাফকে নিয়ে অনলাইন দুনিয়ায় তোলপাড়

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৫৪

পরিবারের রক্ষণশীলতা থেকে পালানোর চেষ্টা করা সৌদি তরুণী রাহাফ মোহাম্মেদ আল-কুনুনকে নিয়ে ইন্টারনেট দুনিয়ায় রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তার পক্ষে বিপক্ষে উভয় দিকে তর্কযুদ্ধ চলছে। একটি পক্ষ বলছে তাকে ধরে তার বাবা মায়ের কাছে ফেরত পাঠানো উচিত। অন্যদিকে আরেকটি পক্ষ সৌদি আরবের রক্ষণশীলতা ও ভিন্নমত পোষণকারীদের প্রতি পরিবার ও সরকারের নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগ তুলে ধরে রাহাফের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ অতি সম্প্রতি ঘটনা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে তাকে বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছে। তাকে নিয়ে সবচে বেশি আলোচনা চলছে মাইক্রোব্লগিং ওয়েবসাইট টুইটারে।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে জাতিসংঘের আহ্বানের পর তাকে আশ্রয় দেয়ার কথা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে তারা। শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পেতে গেলে যে গ্রাউন্ডগুলো লাগে, রাহাফের বেলায় সেগুলো থাকলে তিনি আশ্রয় পাবেন। অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকজন রাজনীতিকও তাদের দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই তরুণীকে আতিথ্য দিতে।

জানা গেছে, কুয়েত থেকে আসার পর গত শনিবার থেকে ব্যাংককের একটি হোটেল কক্ষে নিজেকে আটকে রেখেছিলেন রাহাফ। তাকে ফিরতে বাধ্য করলে খুন হয়ে যেতে হবে বলে অভিযোগ করেন তিনি। থাই প্রশাসন জানায়, রাহাফ কুয়েত থেকে এসেছেন কিন্তু তার কোনো ফিরতি টিকেট নেই। তাই তাকে কুয়েতেই আবার ফেরত পাঠানো হবে। সৌদি কর্তৃপক্ষও পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী।

তুরস্কের দূতাবাসে সাংবাদিক খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে সৌদির সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যেই থাইল্যান্ডের বিমানবন্দরে রাহাফের এ ঘটনা ঘটল। শুরুতে থাই অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করলেও পরে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার কারণে তা থেকে সরে এসেছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) একজন প্রতিনিধি মেয়েটির সঙ্গে সাক্ষাতের পর অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ওই সাক্ষাতের পর থাইল্যান্ডের প্রধান অভিবাসন কর্মকর্তা বলেন, রাহাফকে বহিষ্কার করা হচ্ছে না। তাকে ইউএনএইচসিআরের অধীনে ব্যাংককে নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া হবে। তাকে শরণার্থী মর্যাদা দেওয়ার জন্য কাজ করবে ইউএনএইচসিআর। থাইল্যান্ডে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি গুইসেপ দ্য ভিনসেন্টিস বলেছেন, রাহাফের বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য বিপজ্জনক কোনো দেশে তাকে পাঠাবে না থাই কর্তৃপক্ষ।

আরো পড়ুন: ভারতে মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রূপান্তরকামী অপ্সরা

রাহাফ জানিয়েছেন, তিনি পরিবার থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। তিনি মুক্ত মনের মেয়েদের মতো জীবনযাপন করতে চাওয়ায় স্বজনরা তাকে কঠোরভাবে শাসন করে। একবার চুল খাটো করার জন্য তাকে গৃহবন্দি করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। রাহাফ বিবিসিকে বলেন, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার কথা ও ছবি পোস্ট করেছি। এতে আমার বাবা অনেক রেগে গিয়েছিলেন। নিজের দেশে আমি পড়তে পারি না, কাজ করতে পারি না। আমি মুক্তভাবে চলতে চাই, পড়তে চাই এবং আমার ইচ্ছে মতো কাজ করতে চাই।’

এদিকে, থাইল্যান্ডের সৌদি দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা কেবল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এ ঘটনাকে তারা পারিবারিক ঘটনা হিসেবে দেখছে। তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য চাপ দেয়নি তারা।

ইত্তেফাক/মোস্তাফিজ