শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দেশে মানসিক রোগী দুই কোটি

আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ২২:২০

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক জাহিদ মালেক এমপি বলেছেন, আমরা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯ থেকে জানতে পারলাম যে, দেশে প্রায় সোয়া ২ কোটি মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থ এবং ১৩ শতাংশ শিশু-কিশোর মানসিক রোগে আক্রান্ত। এখন-ই এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। দেশের ২ কোটির ওপরে মানসিক রোগীর জন্য চিকিত্সক আছে মাত্র ২০০ জান। হিসাবে দেখা যায়, ২ লাখ রোগীর জন্য চিকিত্সক মাত্র এক জন। গতকাল বৃহস্পতিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের কনভেনশন হলে ‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপের (২০১৮-১৯) ফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল বিভাগ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে না। এ বিষয়টি আমরা জানি। এ বিষয়ে আমরা শিখছি। আমরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় অনেক এগিয়ে গেছি। এর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

আমাদের অনেক অর্জন আছে, প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন হিরো হয়েছেন। আমাদের দেশে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৪০ ছিল। এখন সেটা শুধু চল্লিশে নেমেছে। মা মৃত্যু কোনো একসময় প্রতি লাখে ৬০০ ছিল, এখন সেটা নেমে ১৬৯ নেমেছে। এখন আমাদের ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, কিডনি রোগের সংখ্যা বেড়েছে, ডায়বেটিসে আক্রান্ত প্রায় ১০ ভাগ মানুষ।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখন মোবাইল ফোনের আসক্তিটা অনেক বেড়েছে। আমাদের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সে অনুয়ায়ী চিকিত্সাসেবা বাড়াতে হবে। আমাদের চিকিত্সাসেবা না নেওয়ার হার ৯৪ শতাংশ। আমাদের দেশে আত্মহত্যার হারও বেশি। প্রতি বছর ১১ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। সারাবিশ্বে যেখানে ৩ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে একজন ছেলে অথবা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিত্সায়।

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা শুধু রোগ নয়, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পরিচর্যা প্রতিটি মানুষের জন্য প্রয়োজন। এমবিবিএস কোর্সে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ জানান তিনি।           

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলালউদ্দিন আহমেদ জানান, দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১৭ শতাংশ ও শিশুদের ১৪ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ মানসিক অবসাদজনিত (ডিপ্রেশন) এবং শিশুদের মধ্যে ৫ দশমিক ৯ ভাগ স্নায়ু বিকাশজনিত মানসিক সমস্যায় ভুগছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য  অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশের প্রতিনিধি ডা. বর্ধন জং রানা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন প্রমুখ। এর আগে সর্বশেষ ২০০৫ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ হয়েছিল।