শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মইনউদ্দীন খান বাদল আর নেই

আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ২২:৫৫

চট্টগ্রাম-৮ (চাঁদগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল আর নেই (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়ণ ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন। বছর দুই আগে ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার পর থেকেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। ৬৭ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ হূদ্যন্ত্রের জটিলতায়ও ভুগছিলেন।

বাদলের ছোটো ভাই মনির উদ্দীন খান জানান, দুই সপ্তাহ আগে নিয়মিত চেকআপের জন্য ভারতে গিয়েছিলেন বাদল। সেখানে প্রখ্যাত হূদেরাগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠীর তত্ত্বাবধানে চিকিত্সাধীন ছিলেন তিনি। বাদলের মরদেহ দেশে আনা এবং জানাজা ও দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলে পরে তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম-৮ আসনের তিনবারের এমপি বাদল বর্তমান সংসদের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়াও শোক জানান।

বাদলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। গতকাল এক শোকবার্তায় ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম জোটের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘মইনউদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে দেশ একজন নির্ভীক মুক্তিযোদ্ধা, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রগতিশীল অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানকে হারাল। আমরা হারালাম একজন সহযোদ্ধাকে।’

এছাড়া তার মৃত্যুতে পৃথক শোকবার্তায় শোক প্রকাশ করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।

ষাটের দশকে ছাত্রলীগের ‘নিউক্লিয়াসে’ যুক্ত বাদল একাত্তরে ভারতে প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্রবোঝাই জাহাজ সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পর সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। জাসদ হয়ে বাসদ এবং পরে আবারও জাসদে ফেরেন। এরশাদের শাসনের সময় তিনি কারাভোগ করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী গ্রামে বাদল জন্মগ্রহণ করেন। স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন মইনউদ্দীন খান বাদল।

ইত্তেফাকের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, মুক্তিযোদ্ধা ও তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান বাদলের মৃত্যুতে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সব মহল থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। পৃথক শোকবার্তায় বলা হয়, তিনি ছিলেন নির্ভীক দেশপ্রেমিক, স্পষ্টভাষী ও সত্ রাজনীতিবিদ। শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও বাদলের শৈশবের বন্ধু মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ।