শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘ক্যাপাসিটি পেমেন্ট’ নিয়ে যা বললেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম 

আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২২, ১৪:২৪

বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। চলমান এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা। এরই মধ্যে নতুন করে আলোচনায় আসে বিদ্যুতের রেন্টাল সার্ভিসের ক্যাপাসিটি পেমেন্টের বিষয়টি। বেশ কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলেও এর যৌক্তিকতা নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের। ‘লেটস টক অন গ্রিন ট্রানজিশন’-এ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিয়ে এভাবেই নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. ম. তামিম।

ক্যাপাসিটি পেমেন্ট কী

ক্যাপাসিটি পেমেন্ট কী বোঝাতে গিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম. তামিম বলেন, আপনি আপনার জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে পারেন, অথবা ভাড়া নিতে পারেন। এখন আপনি একটি ঘর এক বছরের জন্য ভাড়া নিলেন। কিন্তু সেখানে মাত্র ২ মাস থাকলেন। বাকি ১০ মাস থাকলেন না। এখন কি বাড়িওয়ালাকে বলা সম্ভব যে, ১০ মাস আমি থাকি নাই, তাই ১০ মাসের ভাড়া দেবো না! ক্যাপাসিটি পেমেন্টও তাই। আমি একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে রেট করছি। ৫০ মেগাওয়াট এর উৎপাদন ক্ষমতা। আমাদের গরমকালে লোড বেড়ে যায়, তাই গরমকালে ৬-৭ মাস আমি এই ৫০ মেগাওয়াট ব্যবহার করি। শীতকালে সেটা আমার লাগে না। যখন খুশি তখন যেনো আমি ব্যবহার করতে পারি, সেজন্য আমার যেই ভাড়া দিতে হতো, সেটা তো আমাকে দিতে হবে। এই রেন্টাল পেমেন্টই আমাদের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট।

বিদ্যুতের রেন্টাল সার্ভিসে কিভাবে অর্থ ছাড় হয়

বিদ্যুতের রেন্টাল সার্ভিসের জন্য তিনটি ক্ষেত্রে অর্থ প্রদান করতে হয় বলে জানান ম. তামিল। একটি হলো ক্যাপাসিটি পেমেন্ট যা ভাড়া হিসেবে দিতে হয়, আরেকটি হলো অপারেশন এবং মেইনট্যানেন্স পেমেন্ট এবং জ্বালানি বা ফুয়েল খরচ।

ক্যাপাসিটি পেমেন্ট কী আগেই বর্ণনা করা হয়েছে। এদিকে অপারেশন এবং মেইনট্যানেন্স পেমেন্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখন আমি (ভাড়া) বাসাটিতে থাকি, তখন বিদ্যুৎসহ অন্যান্য ইউটিলিটি বিল দিতে হয়, না থাকলে ওই বিলটি আসে না। অনেকটা তেমনই এখানে। যখন আমি এখান থেকে সার্ভিস নেই, তখন একটি অর্থ প্রদান করতে হয়। তবে কিছু 'ফিক্সড কস্ট' এখানেও আছে। যেমন ভাড়া বাসায় কোনো ইউটিলিটি খরচ না করলেও আপনাকে গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে প্রতি মাসে, অনেকটা তেমন।

আর জ্বালানি মূল্য যেটি, সেটি তো বাজারে যেই মূল্য থাকে, সেটাই প্রদান করতে হয়। এর সঙ্গে যিনি ভাড়া দিচ্ছেন, তার লাভ লসের বিষয় নাই, যা খরচ হবে তাই বিল হবে।

ক্যাপাসিটি পেমেন্ট কতটা যৌক্তিক

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট কতটুকু যৌক্তিক এই আলোচনায় ড. ম. তামিল বলেন, আমাদের গরম এবং শীতে বিদ্যুতের চাহিদায় ৩-৪ হাজার মেগাওয়াটের তারতম্য হয়। এটা হলো কুলিং লোড। অর্থাৎ গরমকালে যে পরিমাণ এসি/ফ্যান চলছে, শীতকালে তার প্রয়োজন পড়বে না। শীতকালে ৪-৫ মাস বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে যায়। গরমকালে বাড়তি যেই ক্যাপাসিটি লাগে এবং শীতকালে যা কমে যায় এর মধ্যে যেই পার্থক্যটা থাকে আমাকে সেটা পে করতেই হবে সেসময়। আমি বাড়িতে থাকি বা না থাকি, আমাকে যেমন ভাড়া দিতে হবে।

এ ছাড়াও, দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদায় তারতম্য রয়েছে। দিনের বেলায় কম চাহিদা থাকে। আর সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা। সেই দিনের বেলা থেকে রাতের যেই পার্থক্য, এ ক্ষেত্রেও ২ থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াটের পার্থক্য হয়। সেটা শীত, অথবা গরম যাই হোক। আর সেই চাহিদা পূরণের জন্যও আমাদের একটা ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেই সময় যে (রেন্টাল সার্ভিস) চলছে না, সেখানেও আমাকে ভাড়া দিতে হচ্ছে। এটি যে একেবারে নতুন কিছু তা নয়। কিন্তু আমি জানি না হঠাৎ করে কি কারণে এ বিষয়টি নিয়ে এত আলোচনা শুরু হলো।

খুবই অল্প কিছু রেন্টাল নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। যেখানে আমি ৩ দিন থাকবো, সেখানে ১ বছরের জন্য ভাড়া নেওয়া অযৌক্তিক। এমন যদি রেন্টাল থাকে, তাহলে তাদের বাদ দিতে হবে। এটাই, আর কিছু নয়।

ইত্তেফাক/মাহি