বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

মেসি প্রায় চলেই গিয়েছিলেন চেলসিতে, অতঃপর... 

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৩০

লিওনেল মেসি আর বার্সেলোনা, এ যেন এক হৃদয়ের বন্ধন, যা তৈরি হয়েছিল শৈশবের স্বপ্ন থেকে। ন্যু ক্যাম্প ছিল তার রাজ্য, আর বল ছিল তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার নিউওয়েলস ওল্ড বয়েস ক্লাব থেকে বিনা ট্রান্সফার ফিতে ন্যু ক্যাম্পে যোগ দেন মেসি। ২০০০ সাল থেকে বার্সা বয়সভিত্তিক হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ধীরে ধীরে বার্সার অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৯, বার্সা সি দল এবং বার্সা বি দলের হয়ে খেলা সম্পন্ন করে জায়গা পান মূল দলে। 

তারপর ক্লাবটিতে কাটিয়ে দেয় ২১ বছর। এ সময় মেসি ক্লাবটিকে গড়ে তুলেছিল এক জীবন্ত কিংবদন্তিতে, ধারণা করা হয়েছিল মেসি কাতালানদের মধ্যে থেকেই তার ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানবে। তবে ২০২১ সালে বিভিন্ন কারণে ক্লাবটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয় আটবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী আর্জেন্টাইন এই তারকার। প্রায় দুই যুগ একসাথে থাকার পর বার্সেলোনা ছেড়ে পাড়ি জমান প্যারিসে। 

যদিও বার্সার সঙ্গে মেসির এই বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটতে পারতো আরও সাত বছর আগেই। মেসি প্রায় চলেই গিয়েছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসিতে। সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে হস্তক্ষেপ মেসির বার্সেলোনার এক সাবেক সতীর্থ, যার কারণে ভেস্তে যায় ইতিহাস গড়া এক সম্ভাব্য দলবদল। 

ঘটনাটি ২০১৪ সালের। সেই সময় চেলসির কোচ হোসে মরিনহো। পর্তুগিজ এই কোচ ঐ সময় নিজেই মেসিকে ভিডিও কলে রাজি করিয়েছিলেন স্প্যানিশ ক্লাব ছেড়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চলে আসতে। শোনা গেছে মরিনহো এক আবেগঘন বক্তব্য দেন, যা মেসিকেও নাড়িয়ে দেয়। তিনি মেসিকে বলেন, 'যদি এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখো যে ট্রেনিং গ্রাউন্ডে তোমার প্রিয় কফির স্বাদ কেমন যেন বদলে গেছে, আকাশটা হঠাৎ ধূসর হয়ে গেছে, তোমার গাড়িটাও আর ভালো লাগছে না, তুমি বাসায় ফেরার সময় বিষণ্ণ বোধ করছো, পরিবারও খুশি নয় তাহলে বুঝে নিও, তুমি সুখে নেই। আর তখনই তোমাকে আবার সুখের দরজা খুলতে হবে। সেই দরজার পেছনে আমি থাকব। জোসে মরিনহো, তোমার জন্য অপেক্ষা করবে।' এই কথাগুলো এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, মেসি চেলসিতে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। 

স্কাই স্পোর্টসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চেলসি তখন বার্সেলোনার তারকা ফরোয়ার্ড মেসির চুক্তিতে থাকা ২৫০ মিলিয়ন ইউরো রিলিজ ক্লজ দিতেও প্রস্তুত ছিল এবং তাকে বছরে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড পারিশ্রমিক দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আকর্ষণীয় এ প্রস্তাবে মেসিও রাজি হয়ে যান। সব কিছু ছিল ঠিকঠাক, তখনই ঝামেলা শুরু করে মেসির বার্সার সাবেক সতীর্থ সেস ফ্যাব্রেগাস (যে ঐ সময় চেলসিতে ছিলেন)। চেলসিতে এলএমটেন আশার খবরে ফ্যাব্রেগাস তো এতটাই উত্তেজিত ছিলেন যে গোপনে হওয়া এই চুক্তির কথাটা নিজের ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েও দেন তিনি। পরে এ ট্রান্সফারে বাঁধ সাধে মেসির বাবা হোর্হে মেসিও। তিনি পুরো বিষয়টি জানতেন না। বিষয়টি জানতে পারেন সাবেক বার্সা মিডফিল্ডার ও তখনকার এজেন্ট ডেকোর মাধ্যমে। আর এই তথ্য সরবরাহ করেন কেউ নন, মেসির নতুন ক্লাবমেট ফ্যাব্রেগাসই। 

হোর্হে বিষয়টি নিয়ে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলে, লিওনেল মেসি আশ্চর্য হয়ে বলেন, 'আমি জানি না আপনি কী বলছেন, আমি সত্য বলছি!' এই 'বিস্ময়'ই শেষ করে দেয় সব আলোচনা। মেসি থেকে যান বার্সেলোনাতেই। আর চেলসির ইতিহাসে যুক্ত হয় আরেকটি 'যদি'। তার মেসি বার্সেলোনায় আরো সাত বছর কাটান, তারপর চলে যান পিএসজিতে। সেখানে দুই মৌসুম কাটিয়ে ২০২৩ সালে তিনি চলে যান ইন্টার মায়ামিতে, যেখানে এখনো খেলছেন। তবে মেসির বাবা যদি বাধ না সাধতো, মরিনহো যদি আরও দ্রুত সব কিছু নিষ্পত্তি করতে পারতো তাহলে ফুটবলপ্রেমীরা স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ চেলসির নীল জার্সিতে মাঠ মাতাতে দেখতো আটবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী লিওনেল মেসিকে।

ইত্তেফাক/জেডএইচ