ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার জন্য তাকে ব্যাপকভাবে খুঁজেছিল ইসরায়েলি কর্মীরা। তবে তার ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য কার্যকর সুযোগ পাওয়া যায়নি- ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন। শুক্রবার (২৭ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাটজ বলেছেন, যদি সম্ভব হতো তাহলে সেনাবাহিনী তেহরানের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতে খামেনিকে হত্যা করতো।
সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়- খামেনিকে হত্যার জন্য এমন একটি হামলা চালাতে কি যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির প্রয়োজন ছিল?
এর জবাবে কাটজ বলেন, এসব ক্ষেত্রে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির প্রয়োজন হয় না। ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েল খামেনিকে হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর এই প্রথম ভিডিও বার্তা দিয়েছেন খামেনি। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধবিরতির অবসানের দুই দিন পর গতকাল তার মন্তব্য এসেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে সম্প্রচারিত এক ভাষণে খামেনি বলেছেন, এই সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র যে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা করেছে সেগুলোতে উল্লেখযোগ্য কিছুই ঘটেনি।
ইরানি এই নেতা বলেছেন, তার দেশ তাদের ঐক্য প্রদর্শন করেছে, তারা এই বার্তা পাঠিয়েছে যে “আমাদের জনগণের কণ্ঠস্বর এক”।
খামেনি বলেছেন, ট্রাম্প তার দেশকে ‘আত্মসমর্পণ’ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মুখের তুলনায় তা খুব বড় মন্তব্য ছিল, বলেন তিনি।
খামেনি বলেছেন, ইরানের মতো একটি মহান দেশ ও জাতির জন্য আত্মসমর্পণের কথা বলাই অপমান।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার জন্য তাকে ব্যাপকভাবে খুঁজেছিল ইসরায়েলি কর্মীরা। তবে তার ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য কার্যকর সুযোগ পাওয়া যায়নি- ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন। শুক্রবার (২৭ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাটজ বলেছেন, যদি সম্ভব হতো তাহলে সেনাবাহিনী তেহরানের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতে খামেনিকে হত্যা করতো।
সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়- খামেনিকে হত্যার জন্য এমন একটি হামলা চালাতে কি যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির প্রয়োজন ছিল?
এর জবাবে কাটজ বলেন, এসব ক্ষেত্রে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির প্রয়োজন হয় না। ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েল খামেনিকে হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর এই প্রথম ভিডিও বার্তা দিয়েছেন খামেনি। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধবিরতির অবসানের দুই দিন পর গতকাল তার মন্তব্য এসেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে সম্প্রচারিত এক ভাষণে খামেনি বলেছেন, এই সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র যে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা করেছে সেগুলোতে উল্লেখযোগ্য কিছুই ঘটেনি।
ইরানি এই নেতা বলেছেন, তার দেশ তাদের ঐক্য প্রদর্শন করেছে, তারা এই বার্তা পাঠিয়েছে যে “আমাদের জনগণের কণ্ঠস্বর এক”।
খামেনি বলেছেন, ট্রাম্প তার দেশকে ‘আত্মসমর্পণ’ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মুখের তুলনায় তা খুব বড় মন্তব্য ছিল, বলেন তিনি।
খামেনি বলেছেন, ইরানের মতো একটি মহান দেশ ও জাতির জন্য আত্মসমর্পণের কথা বলাই অপমান।
যুদ্ধবিরতির ২ দিন পর নীরবতা ভাঙলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় সংঘাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরান বিজয়ী হয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন তিনি। পরে টেলিভিশনেও জাতির উদ্দেশে খামেনির ভিডিও বার্তা প্রচারিত হয়।
এক্স পোস্টে খামেনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে প্রবেশ করেছে কারণ তারা মনে করেছিল যে যদি তা না হয়, তাহলে ইহুদিবাদী শাসন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ থেকে কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।’ ইরান "বিজয়ী" হয়ে উঠতে পেরেছে এবং "আমেরিকার মুখে এক কঠিন থাপ্পড় দিয়েছে।’
পরবর্তী ইংরেজি ভাষার একটি বার্তায় খামেনি বলেছেন, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র আমেরিকার মুখে এক কঠিন থাপ্পড় দিয়েছে।’
পরে টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও বার্তায় ইরানের এই সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, ‘আমি মিথ্যাচারী জায়নবাদী শাসনের ওপর বিজয়ের জন্য আমার অভিনন্দন জানাই। সব হৈচৈ আর দাবির মধ্যে, জায়নবাদী শাসনব্যবস্থা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ইসলামিক রিপাবলিকের আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘মার্কিন শাসনের ওপর আমাদের প্রিয় ইরানের বিজয়ের জন্য অভিনন্দন। মার্কিন শাসন সরাসরি যুদ্ধে প্রবেশ করেছিল, কারণ তারা মনে করেছিল যে, যদি তারা এটি না করে, তাহলে জায়নবাদী শাসন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা সেই শাসনকে বাঁচানোর চেষ্টায় যুদ্ধে প্রবেশ করেছিল কিন্তু কিছুই অর্জন করতে পারেনি।’
জাতির উদ্দেশে ভাষণে খামেনি বলেন, ‘ইসলামিক রিপাবলিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখে একটি কঠিন চপেটাঘাত করেছে। ইরান আল-উদেইদ এয়ার বেসে আক্রমণ করেছে এবং ক্ষতি সাধন করেছে, যা এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি।’
সর্বোচ্চ নেতা আরও উল্লেখ করেন, ‘ইসলামিক রিপাবলিকের পক্ষে এই অঞ্চলের মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকা এবং যখনই প্রয়োজন মনে করবে তখনই পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হতে পারে। যদি কোনো আগ্রাসন সংঘটিত হয়, তবে শত্রুপক্ষকে অবশ্যই ভারী মূল্য দিতে হবে।’
গত ১৩ জুন ইসরায়েল বিমান হামলার মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও একের পর এক হামলা চালায়।
২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। জবাবে, ২৩ জুন সন্ধ্যায় ইরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি আল-উদেইদে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে।
এরপর ২৪ জুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে তেহরান জানায়, তারা তেল আবিবকে আগ্রাসন থামাতে বাধ্য করে বিজয় অর্জন করেছে।
গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে আগ্রাসন অভিযান শুরু করে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইরান প্রতিশোধ নেয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলি হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালায় ইরান।
২২ জুন ভোরে মার্কিন বোমারু বিমানগুলো তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করে। পরের দিন সন্ধ্যায় তেহরান কাতারে অবস্থিত এই অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক বিমান ঘাঁটি আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
এরপর ২৪ জুন ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলও ঘোষণা করে, তারা মার্কিন প্রস্তাবে রাজি। পরিবর্তে তেহরান জানায়, তারা তেল আবিবকে আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করে বিজয় অর্জন করেছে।
উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের ছোড়া কমপক্ষে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ইসরায়েলি রিপোর্টের বরাতে তুর্কিভিত্তিক আনাদোলু এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে।
আনাদোলু জানায়, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ওপর কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করেছে। তাদের সামরিক ও নিরাপত্তা স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা সম্পর্কিত তথ্য এবং ছবি প্রকাশে বাধা দিয়েছে। ফলস্বরূপ, ইসরায়েলি সামরিক ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ পরিমাণ এখনও অস্পষ্ট।
তেল আবিব-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ (আইএনএসএস)-এর বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান ইসরায়েলে ৫৯১টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে কমপক্ষে ৫০টি সরাসরি আঘাত করেছে। ইরান ১,০৫০টিরও বেশি ড্রোনও মোতায়েন করেছে; ৫৭০টি ইসরায়েলি ভূখণ্ডে পৌঁছেছে।
এছাড়া হামলার সময় ইসরায়েলব্যাপী প্রায় ১৯ হাজার ৫০০ বার বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হয়েছিল। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ৮৫% থেকে ৯০% ক্ষেপণাস্ত্র বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে।
আনাদোলু জানিয়েছে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে ২৯ জন নিহত এবং ৩,৪৯১ জন আহত হয়েছে।
লক্ষ্যবস্তু এলাকা থেকে প্রায় ১১,০০০ বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ ৩৮,০০০ এরও বেশি ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট পেয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) জাতির উদ্দেশে একটি টেলিভিশন বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'আমি মিথ্যাচারী জায়নবাদী শাসনের ওপর বিজয়ের জন্য আমার অভিনন্দন জানাই। সব হৈচৈ আর দাবির মধ্যে, জায়নবাদী শাসনব্যবস্থা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ইসলামিক রিপাবলিকের আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে।'
তিনি আরও বলেছেন, 'মার্কিন শাসনের ওপর আমাদের প্রিয় ইরানের বিজয়ের জন্য অভিনন্দন। মার্কিন শাসন সরাসরি যুদ্ধে প্রবেশ করেছিল, কারণ তারা মনে করেছিল যে, যদি তারা এটি না করে, তাহলে জায়নবাদী শাসন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা সেই শাসনকে বাঁচানোর চেষ্টায় যুদ্ধে প্রবেশ করেছিল কিন্তু কিছুই অর্জন করতে পারেনি।'
জাতির উদ্দেশে ভাষণে খামেনি বলেন, 'ইসলামিক রিপাবলিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখে একটি ভারী চপেটাঘাত করেছে। ইরান আল-উদেইদ এয়ার বেসে আক্রমণ করেছে এবং ক্ষতি সাধন করেছে, যা এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি।'
সর্বোচ্চ নেতা আরও উল্লেখ করেন, 'ইসলামিক রিপাবলিকের পক্ষে এই অঞ্চলের মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকা এবং যখনই প্রয়োজন মনে করবে তখনই পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হতে পারে। যদি কোনো আগ্রাসন সংঘটিত হয়, তবে শত্রুপক্ষকে অবশ্যই ভারী মূল্য দিতে হবে।'
গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে আগ্রাসন অভিযান শুরু করে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইরান প্রতিশোধ নেয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলি হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালায় ইরান।
২২ জুন ভোরে মার্কিন বোমারু বিমানগুলো তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করে। পরের দিন সন্ধ্যায় তেহরান কাতারে অবস্থিত এই অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক বিমান ঘাঁটি আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
এরপর ২৪ জুন ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলও ঘোষণা করে, তারা মার্কিন প্রস্তাবে রাজি। পরিবর্তে তেহরান জানায়, তারা তেল আবিবকে আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করে বিজয় অর্জন করেছে।
ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করলে তেহরান পারস্য উপসাগরে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি এবং জাহাজে হামলা চালাতে পারে। সেই সঙ্গে হরমুজ প্রণালীও বন্ধ করে দিতে পারে তেহরান। এক প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক টাইমস এমনটাই দাবি করেছে।
সংবাদপত্রটির মতে, তেহরান তেল আবিবের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি স্থাপনে রাজি হয়েছিল কারণ, তারা আত্মবিশ্বাসী ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের সম্ভাব্য নতুন হামলার মুখে তারা তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারবে। নতুন হামলার হুমকি সত্ত্বেও দেশটি তার পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করবে না।
সংবাদপত্রটি উল্লেখ করেছে, ইরানি সরকার এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, 'তারা যুদ্ধকালীন অর্থনৈতিক দুর্দশা সহ্য করতে পারবে এবং জনগণ পতাকার কাছে সমবেত হবে এবং বিদেশি আক্রমণকারীদের ওপর তাদের ক্রোধ প্রকাশ করবে।'
নিউ ইয়র্ক টাইমস আরও উল্লেখ করেছে, ইরান কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেননা তারা 'মার্কিন বাঙ্কার-বিধ্বংসী বোমার হাত থেকে স্থাপনাটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারে।'
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, মার্কিন হামলায় ইরানি পারমাণবিক স্থাপনাগুলো 'সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস' হয়ে গেছে।
গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে আগ্রাসন অভিযান শুরু করে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইরান প্রতিশোধ নেয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলি হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালায় ইরান।
২২ জুন ভোরে মার্কিন বোমারু বিমানগুলো তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করে। পরের দিন সন্ধ্যায় তেহরান কাতারে অবস্থিত এই অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক বিমান ঘাঁটি আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
এরপর ২৪ জুন ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলও ঘোষণা করে, তারা মার্কিন প্রস্তাবে রাজি। পরিবর্তে তেহরান জানায়, তারা তেল আবিবকে আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করে বিজয় অর্জন করেছে।
যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহযোগিতার অভিযোগে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ক’দিন পর তাদের গ্রেপ্তার করা হলো। খবর এএফপির।
বুধবার (২৫ জুন) ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ‘গোয়েন্দা সংস্থা হযরত ওয়ালি আছর কোর এই ব্যক্তিদের ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি এবং বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করেছে।’
সংস্থার এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে এটি আরও জানায়, ‘তাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বিরোধী কার্যকলাপ, জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে দেওয়া ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে।’
এদিকে ইসরায়েলের সামরিক প্রধান বুধবার বলেন, ১২ দিনের যুদ্ধের সময় তাদের কমান্ডোরা ইরানের অভ্যন্তরে গোপনে কাজ করে। ইসরায়েলি সামরিক প্রধান ইয়াল জামির টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘আমরা ইরানের আকাশসীমা এবং আমাদের পছন্দের প্রতিটি স্থানে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি সম্ভব হওয়ার অন্যান্য কারণ হলো আমাদের বিমান বাহিনী ও স্থল কমান্ডো ইউনিটগুলোর সমন্বয় ও কৌশল।’
‘বাহিনীগুলো শত্রু অঞ্চলের গভীরে গোপনে অভিযান চালায় এবং আমাদের কর্মক্ষমতার স্বাধীনতা তৈরি করে।’ ইরান বুধবার জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলকে সহযোগিতায় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিত্র বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কয়েক বছর ধরে চলমান দুর্নীতির বিচার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বুধবার তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে নেতানিয়াহুকে ‘মহাযুদ্ধের সময়কার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী’ অভিহিত করে তাকে এই বিচার থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। খবর এএফপি'র।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একটি দীর্ঘ পোস্টে লিখেছেন, ‘যে ব্যক্তি এত কিছু দিয়েছেন তার জন্য এ ধরণের ‘উইচ হান্ট’ মামলা আমার কাছে কল্পনাতীত।’
দুর্নীতিসহ একাধিক ফৌজদারি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার মুখোমুখি নেতানিয়াহু প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ‘এইমাত্র জানতে পেরেছেন যে বিবিকে (নেতানিয়াহুর ডাকনাম) সোমবার আদালতে তলব করা হয়েছে।’
ট্রাম্প বলেন, ‘বিবি আর আমি একসঙ্গে নরকের মধ্য দিয়ে গেছি, ইসরায়েলের এক অত্যন্ত কঠোর ও মেধাবী দীর্ঘস্থায়ী শত্রু ইরানের সাথে লড়াই করেছি, আর পবিত্র ভূমির প্রতি বিবির অবিশ্বাস্য ভালোবাসার চেয়ে ভালো, শক্তিশালী আর কিছু হতে পারে না।’
ট্রাম্প বলেন, ‘নেতানিয়াহুর বিচার অবিলম্বে বাতিল করা উচিত অথবা একজন মহান বীরের প্রতি ক্ষমা করা উচিত।’
২০২০ সালের মে মাসে শুরু হওয়ার পর থেকে নেতানিয়াহুর বিচার অনেকবার বিলম্বিত হয়েছে। গাজা যুদ্ধ এবং পরবর্তীতে লেবাননে সংঘাতের কারণে ইসরায়েলি নেতা তার বিচার স্থগিতের অনুরোধ করেছিলেন।
প্রথম মামলায়, নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী সারার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে কোটিপতিদের কাছ থেকে দুই লাখ ৬০ হাজার ডলারেরও বেশি মূল্যের বিলাসবহুল পণ্য যেমন- সিগার, গহনা ও শ্যাম্পেন গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্য দুটি মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে নেতানিয়াহু দুটি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে অধিকতর অনুকূল কভারেজের জন্য আলোচনার চেষ্টা করেছিলেন। অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নেতানিয়াহু ।
ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েলকে বাঁচিয়েছে, আর এখন বিবি নেতানিয়াহুকেও বাঁচাবে যুক্তরাষ্ট্র।’
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় ইরানের এক পরমাণু বিজ্ঞানী এবং তার পরিবারের মোট ১১ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। সোমবার (২৩ জুন) রাতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ঠিক আগে এই হামলা চালানো হয় বলে জানায় ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় কাস্পিয়ান সাগরের নিকটবর্তী আস্তানেহ আশরাফিহ শহরে হামলার শিকার হন পরমাণু বিজ্ঞানী সেদিঘি সাবের ও তার পরিবার। নিহতদের মধ্যে শিশু ও নারী সদস্যরাও রয়েছেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলি হামলার প্রকৃতি এবং লক্ষ্য নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। প্রেস টিভি জানায়, চলমান ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল অন্তত ১৪ জন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীকে নিশানা করেছে। নিহত বিজ্ঞানীদের মধ্যে রসায়নবিদ, পদার্থবিদ এবং প্রকৌশলীও ছিলেন।
এদিকে ফ্রান্সে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত জোশুয়া জারকার এক বিবৃতিতে দাবি করেন, পরমাণু কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার ফলে ইরানের সক্ষমতা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। তিনি বলেন, 'এই বিজ্ঞানীরা না থাকায় ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে। এমনকি যারা বোমা হামলায় বেঁচে গেছেন, তাদের হাতে পর্যাপ্ত উপকরণ থাকলেও কৌশলগত অভাব দেখা দেবে।'
জারকার মন্তব্য করেন, 'পুরো গবেষণা টিম না থাকায় ইরানের কর্মসূচি এখন থেকে কয়েক বছর পিছিয়ে পড়বে।'
তবে বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। তাদের মতে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এখনো নির্দিষ্ট কিছু বিজ্ঞানীর ওপর নির্ভরশীল নয়। আরও অনেক দক্ষ বিজ্ঞানী আছেন, যারা নিহতদের স্থলাভিষিক্ত হতে সক্ষম। এ কারণে এই হত্যাকাণ্ড কর্মসূচিকে ধীর করে দিতে পারে বটে, কিন্তু তা বন্ধ করে দিতে পারবে না।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত অনুযায়ী, এসব লক্ষ্যবস্তু হামলা ইরানের পরমাণু পরিকল্পনা ও কৌশলে বিঘ্ন ঘটালেও, তেহরানের দীর্ঘমেয়াদি পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও সক্ষমতা একেবারে থামিয়ে দিতে পারবে না। যুদ্ধবিরতির মধ্যেই এমন হামলা চালানো ইসরায়েলের উদ্দেশ্য এবং ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক মহল।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থাপিত ব্যাখ্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরান। খবর বিবিসির।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইরাভানি এই ব্যাখ্যাকে “আইনিভাবে ভিত্তিহীন” বলে অভিহিত করেছেন।
চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলাকে "অবৈধ এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন" বলে উল্লেখ করেছে ইরান। একই সঙ্গে জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদের আওতায় আত্মরক্ষার অধিকার দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে "আন্তর্জাতিক আইনের হত্যা" বলে অভিহিত করা হয়।
চিঠিতে ইরাভানি আরও উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাধারণ সম্মেলনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যে কোনও ধরনের হামলা কিংবা হামলার হুমকি আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং সংস্থাটির বিশ্বাসযোগ্যতা ও যাচাই প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাযা কাল্লাসও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যে কেউ বলপ্রয়োগ করলে তাকে আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে ন্যায়সঙ্গতভাবে তা ব্যাখ্যা করতে হবে।
হামলাটি আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে কতটা বৈধ— এই প্রশ্নের জবাবে কায়া কাল্লাস বলেন, শতভাগ বৈধ বলা যায় না।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির দুই দিন পর, ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ দুই দিনের সফরে চীন গেছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবিসি পার্সিয়ান সার্ভিস জানিয়েছে, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে এবং চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা ও আলোচনা করতে চীন সফর করছেন তিনি।
বিবিসি বলছে, এমন এক সময়ে তার এই সফর হচ্ছে, যখন ইরানের সামরিক ও প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা বাড়ছে। ইসরায়েলি আক্রমণের প্রথম ঘণ্টায় দেশটি কীভাবে সহজেই তার আকাশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ইরান ও ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছে। উভয় দেশই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে ইরানিদের মধ্যে একটি বিষয়ে ব্যাপক উদ্বিগ্ন দেখা দিয়েছে যে, তাদের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কোথায়?
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনিকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি বা তার কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি শোনা যায়নি, এমনকি দেশে যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও না।
এনিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের উপস্থাপক খামেনির কার্যালয়ের এক কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেন, দেশের রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অভিজাতদের মধ্যেও আলোচনার কেন্দ্রে- ‘মানুষ আমাদের সর্বোচ্চ নেতাকে নিয়ে খুবই চিন্তিত’।
মঙ্গলবার ওই উপস্থাপক খামেনির আর্কাইভস অফিসের প্রধান কর্মকর্তা মেহদি ফাযায়েলিকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি আমাদের বলতে পারবেন খামেনি কেমন আছেন। এই উপস্থাপক জানান, একই প্রশ্ন নিয়ে দর্শকদের কাছ থেকে অসংখ্য বার্তা এসেছে।
এর জবাবে মেহদি ফাযায়েলি সোজাসুজি জবাব না দিয়ে উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের তীব্র বোমা হামলার পর তিনিও বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মকর্তা ও নাগরিকদের কাছ থেকে অসংখ্য উদ্বিগ্ন প্রশ্ন পেয়েছেন।
ইরানের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সবার উচিৎ প্রার্থনা করা। মেহদি বলেন, যারা সর্বোচ্চ নেতাকে রক্ষা করার দায়িত্বে আছেন, তারা ভালোভাবেই তাদের কাজ করছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমাদের জনগণ তাদের নেতার পাশেই বিজয় উদযাপন করতে পারবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে খামেনিকে সুরক্ষিত একটি বাঙ্কারে অবস্থান করছেন এবং সম্ভাব্য হত্যা প্রচেষ্টা ঠেকাতে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ করছেন না।
তবে তার এই অনুপস্থিতি ইরানে রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ জনগণের মধ্যে রীতিমতো অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
দৈনিক খানেমান'র প্রধান সম্পাদক মোহসেন খালিফেহ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এই দীর্ঘ অনুপস্থিতি আমাদের সকলকে ভীষণ চিন্তিত করে তুলেছে। তিনি স্বীকার করলেন, যে চিন্তা দুই সপ্তাহ আগেও অকল্পনীয় ছিল- ‘যদি সত্যিই খামেনি মারা যান, তবে সেটি হবে ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় জানাজা।’
ইরানের বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে খামেনির অনুমোদন নিতে হয়। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবেও তিনি মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা বা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মতো সামরিক সিদ্ধান্ত অনুমোদনের একমাত্র ক্ষমতাধর।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে এবং কাতারের আমিরের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু ইরানের সিনিয়র সামরিক কমান্ডার এবং সরকারি কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে খামেনির সঙ্গে দেখা করেছেন বা কথা বলেছেন কি না তা নিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
তাই খামেনির নীরবতা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যে দেশটির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোতে তিনি আদৌ জড়িত ছিলেন কি, তিনি প্রতিদিনকার রাষ্ট্রপরিচালনায় এখনো সক্রিয়? তিনি অসুস্থ, আহত, নাকি মারা গেছেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইসলামিক রেভ্যলুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কমান্ডার ইয়াহিয়া সাফাভির পুত্র হামজেহ সাফাভি জানান, ইরানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা ইসরায়েল এখনো খামেনিকে হত্যা করার চেষ্টা করতে পারে- এমনকি যুদ্ধবিরতির মাঝেও। তাই খামেনিকে বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রেখে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে ৬১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও চার হাজার ৭০০ জন। বুধবার (২৬ জুন) তিনি এই তথ্য জানান। খবর ইরান ইন্টারন্যাশনালের।
ইরানের এই কর্মকর্তা বলেছেন, সংঘাতের শেষ রাতেই ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৪৯ জন নারী রয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন অন্তঃসত্ত্বা। এছাড়া যুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৩ শিশু, যার মধ্যে একজনের বয়স মাত্র দুই মাস।
তবে মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএএনএ জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতে ইরানে নিহত হয়েছে অন্তত এক হাজার ৫৪ জন। এর মধ্যে অন্তত ৩০০ জন ইরানের সামরিক বাহিনীর সদস্য।
এদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের অন্তত ১৪ জন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া ইরানের শীর্ষ সামরিক, কমান্ডারদেরও হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত ১৩ জুন ইরানে আকস্মিক ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর পাল্টা প্রতিশোধ নিতে ইরানও ইসরায়েলের ওপর হামলা শুরু করে। এতে দেশ দুইটির মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
এর মাঝে যুক্তরাষ্ট্র গত ২১ জুন ইরানের প্রধান তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এতে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে উঠে। এর জবাবে ইরান কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায়। যদিও এতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহত হয়নি কেউ।
সর্বশেষ ২৩ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ঘোষণায় জানান, ইসরায়েল ও ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এরপর উভয় দেশ সেইদিনেই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের তথ্য নিশ্চিত করে।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ইরানে আহত দেশটির সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন সামরিক কমান্ডার মেজর জেনারেল আলি শাদমানি মারা গেছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বুধবার (২৫ জুন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস শাদমানির মৃত্যুতে ‘কঠোর প্রতিশোধ’ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। শামদানি ইরানের যুদ্ধকালীন চিফ অব স্টাফ এবং রেভল্যুশনারি গার্ডস কমান্ড সেন্টারের প্রধান ছিলেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ গত ১৭ জুন শাদমানিকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছিল। তবে ইরানের পক্ষ থেকে তখন শামদানির মৃত্যু নিয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
সর্বশেষ ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানাল।
ইসরায়েলের হামলায় ইরানের খাতাম আল-আনবিয়া সদরদপ্তরের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ নিহত হওয়ার পর আলি শামদানিকে এই পদে নিয়োগ করা হয়েছিল।
খাতাম আল–আনবিয়া ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের নির্মাণ ও প্রকৌশল শাখা। এর অধীনে রেভল্যুশনারি গার্ড এবং নিয়মিত ইরানি সেনাবাহিনী উভয়ই যৌথভাবে সামরিক অভিযান পরিকল্পনা করে থাকে।
খাতাম আল–আনবিয়া সদরদপ্তরের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র চারদিনের মাথায় ইসরায়েল বিমান হামলায় শামদানিকে হত্যার দাবি করে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ-এর ভাষ্যমতে, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন শাদমানি।
অভূতপূর্ব এক ছবি-তেহরানের ইনকিলাব স্কয়ার। বারো দিন শেষে যুদ্ধবিরতির পর ইরানিদের উচ্ছাস-আনন্দগাথা, শোকগাথা প্রকাশের মিলনমেলার সাক্ষী হলো তেহরানের প্রাণকেন্দ্রে থাকা ঐতিহাসিক ইনকিলাব স্কয়ার। খামেনি সরকারের সেই বিজয় সুখের শক সইতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন রেজা পাহলভি।
নেপথ্যে সুখের স্বপ্ন দেখা আমেরিকা প্রবাসী রেজা পাহলভির মেয়ে জানিয়েছে, তার বাবা গত কয়েক ঘণ্টা আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। যখন যুদ্ধবিরতির খবর তার কানে গেছে তখনই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
আজকে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে আগ্রাসন তার পেছনে রয়েছেন রেজা পাহলভি। যে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ হলো তার পেছনে তিনি আছেন। ইরানের শাসনব্যবস্থাকে বদলে দিয়ে আবার সেই পাহলভি শাসনে ফিরিয়ে নেওয়ার অলীক স্বপ্ন দেখছেন এই পাহলভি রাজপুত্র! কিন্তু সে স্বপ্নে গুড়ে বালি। ইরানের মানুষের কাছে তিনি এবং তার পূর্বসূরি খলনায়ক। ইরানের মানুষকে হত্যা করে এ দেশের মাটিতে তাদের ঠাঁই হবে না সে কথা ইরানি জাতির আজকের ছবি বলে দেয়।
ইরানের সামরিক-বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অপরাধের প্রতিশোধ গ্রহণকারী ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করতে তেহরানের ইনকিলাব স্কয়ারে জনতার ঢল নামে। হাজার হাজার মানুষ হাতে পতাকা, ইসলামি বিপ্লবের এবং শহীদদের ছবি নিয়ে বিজয় উদযাপনের খোলা ময়দানে হাজির হয়েছেন। নারী-পুরুষ ইরানের বিজয়ের স্লোগান দিয়েছেন।
ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক, ধ্বংস হোক এ স্লোগানও তাদের কণ্ঠে। কারণ ওই আগ্রাসী দেশ দুটি তাদের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে আসছে কয়েক যুগ ধরে ধারাবাহিকভাবে এবং নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরাচ্ছে। তেহরানবাসী এ উদযাপনে তাদের শিশু সন্তানটিকে ঘরে রেখে আসেনি। কাঁধে শিশু সন্তান হাতে শহীদদের ছবি কিংবা ইরানের পতাকা-কী সে অভূতপূর্ব দৃশ্য! এ ছবি মনে করিয়ে দেয় তারা বিভক্ত নয়-এক এবং একাত্মতা। ইরানি জাতির এই একটি বিষয় দেখেছি সব সময়-ছোট্ট শিশুটিও বিপ্লবী। তারা জানে তাদের দেশমাকে, মাটিকে এবং সংস্কৃতিকে কীভাবে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে হয়। এ শিক্ষা বিশ্বের বহু দেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।
১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের সর্বস্তরের মানুষের এ বিজয় উদযাপন ভুলিয়ে দেয় বিভীষিকাময় বারো দিনের কষ্টের কথা; ভুলিয়ে দেয় প্রতি মুহূর্তের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা। বারো দিন কেন, যদি এ যুদ্ধ বারো বছরও চলে কিংবা চলত তাতেও ইরানি জাতি বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হতো না, পেছন ফিরে তাকাত না। সর্বস্তরের ইরানি জনগণের মুখের ইস্পাত কঠিন ছবিই সে কথা বলে দেয়। তারা নিজের শরীরের রক্তের শেষবিন্দু দিয়ে হলেও মহান ইরানকে রক্ষা করত। এ জাতির অতীত ইতিহাসে এমন নজির ঢের আছে।
শুধু ইনকিলাব স্কয়ার নয়; তেহরানের আরও অনেক স্থানসহ ইরানজুড়ে তারা বিজয় মিছিল করেছে, তাদের সংহতির জানান দিয়েছে। তাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করেছে।
বারো দিনের যুদ্ধের বিজয় উদযাপন ইরানের ভ‚খণ্ড পেরিয়ে মধ্যপ্রাচের আরও অনেক দেশ যারা দখলদার ইসরাইলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। রক্ত ও সম্পদ বিলিয়ে দিচ্ছে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে গিয়ে। সেসব দেশেও বিজয় উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের উপকণ্ঠ দাহিয়েতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ছবি দিয়ে বিশাল ব্যানার লাগানো হয়েছে।
গাজা, ইয়েমেনসহ বিশ্বের যারাই ইরানকে ভালোবাসেন তারা খুশিতে কেউ বা আনন্দ অশ্রু ঝরিয়েছেন, কেউ বা আনন্দ মিছিলে যোগ দিয়েছেন কেউ বা তার খুশির বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে ইরান যেন এক ফিনিস। সাম্রাজ্যবাদ, দখলদার শক্তি, অন্যায়, অত্যাচার, অনাচার, সন্ত্রাস ও মানবতার শত্রুদের বিরুদ্ধে একমাত্র ইরান একা দাঁড়িয়েছে বুক চিতিয়ে হয় তাদের হৃদয়ে কাঁপন ধরাতে, পরাজিত কিংবা পরাভ‚ত করতে না হয় শহীদ হতে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হবে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের কারণে স্থগিত হওয়া সংলাপ ওই বৈঠকের মাধ্যমে পুনরায় শুরু হবে বলে জানান তিনি।
ন্যাটো সম্মেলনে নেদারল্যান্ডসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তোমাদের বলছি, আমরা আগামী সপ্তাহে ইরানের সঙ্গে কথা বলব। একটা চুক্তিও হতে পারে।’ তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরুর ব্যাপারে তিনি খুব একটা আগ্রহী নন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়ে গেছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে তারা (ইরান-ইসরায়েল) যুদ্ধ করেছিল, আর এখন যুদ্ধ শেষ।’
১২ দিনের যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল ও ইরান ক্লান্ত বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ইসরায়েল ও ইরান দুপক্ষই ‘ক্লান্ত’ হয়ে পড়েছে, তবে তাদের মধ্যে সংঘাত আবারও শুরু হতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি দুপক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছি, ওরা দুই পক্ষই ক্লান্ত, শ্রান্ত... কিন্তু এটা কি আবার শুরু হতে পারে? হয়তো একদিন হতে পারে। এমনকি খুব শিগগিরও শুরু হতে পারে।’
গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান দমন-পীড়নের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
সোমবার সংস্থাটির পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কায়া ক্যালাস জানিয়েছেন, যদি গাজার পরিস্থিতি না বদলায়, তবে আগামী মাসেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে ইউরোপীয় দেশগুলো। ব্রাসেলসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এ কথা বলেন ক্যালাস। মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
ক্যালাস বলেছেন, ‘গাজা ও পশ্চিম তীরে যা ঘটছে, তা স্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রা কিছুটা হলেও সহজ করা, তাদের কষ্ট কমানো।’
বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসরায়েলের সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়েও আলোচনা করেছেন। ইতোমধ্যে স্পেন এ চুক্তি সম্পূর্ণ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে মানুয়েল আলবারেস বলেছেন, ‘ইসরায়েল আমাদের বন্ধু হতে পারে; কিন্তু তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে কথা বলা দরকার। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং এজন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে।’
তিনি ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বানও জানিয়েছেন। বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড ও সুইডেনও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে। তবে জার্মানি, গ্রিস ও ইতালির মতো দেশগুলো চুক্তি স্থগিত করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা অক্সফামের এক প্রতিনিধি বলেছেন, ‘ইইউ যদি দেরি করে অথবা সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে সেটাও একটা বিপর্যয়। গাজায় প্রতিদিন মানুষ খাবার খুঁজতে নিহত হচ্ছেন। অনেকেই ধ্বংসস্ত‚পে চাপা পড়েই প্রাণ হারাচ্ছেন। প্রতিটি মুহূর্তের দেরি মানে আরও মৃত্যু।’
বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা থাকলেও গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট ভুলে যাওয়া চলবে না। দুই বিষয় আলাদা।’ সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছন, ‘গাজায় মানুষ ভয়ংকর অবস্থায় আছে। আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না।’
গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সোমবার অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে নিহত হন আরও ফিলিস্তিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই ভূখণ্ডে অব্যাহত বোমাবর্ষণে ত্রাণপ্রার্থীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক ও শোক।
আলজাজিরা জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২০ জন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রের সামনে অবস্থানকারী ত্রাণপ্রার্থী। ২০২৩ সালের অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৬ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও লাখ লাখ মানুষ। গাজার মেডিকেল সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলা মূলত গাজা শহরের আশপাশে, রাফা ও নেতজারিম করিডর এলাকায় সংঘটিত হয়েছে।
এসব এলাকায় বহু মানুষ খাবারের সন্ধানে জিএইচএফ পরিচালিত বিতরণ কেন্দ্রগুলোয় জড়ো হন। সোমবার সকালেই ওই কেন্দ্রগুলোয় হামলার ঘটনা ঘটে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর মঙ্গলবার জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের সাহায্য ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং এটি একটি ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তারা সতর্ক করে দিয়েছে, এ ধরনের কার্যক্রম যুদ্ধাপরাধের শামিল।
এদিকে টানা ১২ দিনের সংঘাতের পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। দেশ দুটির পক্ষ থেকে এ যুদ্ধবিরতির তথ্য নিশ্চিতও করা হয়েছে। আর এরপরই নতুন দাবি উঠেছে ইসরায়েলে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডেও যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবারগুলো। পাশাপাশি ইসরায়েলের বিরোধী দলগুলোও সরকারের প্রতি একই আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর মঙ্গলবার থেকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে এক অনিশ্চিত অস্ত্রবিরতি কার্যকর হতে শুরু করে। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর দুই দেশ থেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে।
শুরুতে উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের ওপর তিনি কঠোর সমালোচনা করেন।
ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েলকে এখন শান্ত করতে হবে। ওরা এতদিন ধরে যুদ্ধ করছে যে নিজেরাও জানে না কী করছে। তিনি আরও জানান, ইসরায়েল তার নির্দেশে ভবিষ্যৎ হামলা বন্ধ করেছে এবং সমঝোতা রক্ষা করেছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান এই যুদ্ধ শেষে একে ‘মহান বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ইরানি গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ইরান সফলভাবে যুদ্ধ শেষ করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান আইয়াল জামির জানিয়েছেন, ‘আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ করেছি, তবে ইরানের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান এখানেই থেমে যাবে না।’
এ যুদ্ধবিরতির মধ্যে ইসরায়েলের সব অঞ্চলে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে ইরান ও ইসরায়েল উভয় দেশেই জনগণের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তেহরানের এক বাসিন্দা রেজা শরিফি বলেন, ‘আমরা খুব খুশি... যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এটা শুরুই হওয়া উচিত ছিল না।’
তেল আবিবের আরেক বাসিন্দা, সফটওয়্যার প্রকৌশলী আরিক ডায়মান্ট বলেন, ‘আমাদের বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে দেরিতে হলেও যুদ্ধ থামলো। আমি চাই, এই যুদ্ধবিরতি যেন নতুন শুরুর পথ হয়ে দাঁড়ায়।’
যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম হঠাৎ কমে যায় এবং শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়।
ইসরায়েলে যেসব নাগরিক যুদ্ধের সময় বিদেশে ছিলেন, তাদের জন্য মঙ্গলবার থেকে উদ্ধার ফ্লাইট চালু করা হয়। প্রথম ফ্লাইটেই অনেকেই ফিরে আসেন।
যদিও অস্ত্রবিরতি শুরু হয়েছে, তবুও এই শান্তি কতটা টিকে থাকবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ শেষ করেনি, বরং এটি এক নতুন কৌশলগত ধাপে প্রবেশ করেছে।
পরিস্থিতি শান্তির দিকে অগ্রসর হলেও, বাস্তবতা বলছে, সবকিছু নির্ভর করছে ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত ও পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ওপর। যুদ্ধ শেষ হওয়ার মতো সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নয়, বরং উভয়পক্ষের সদিচ্ছা ও সহনশীলতার মাধ্যমেই টেকসই হতে পারে। রয়টার্স
মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে ফোনালাপে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরানের প্রেসিডেন্ট কাতারের শীর্ষ নেতাকে ফোন করে জানান, কাতার কিংবা দেশটির জনগণ এই হামলার লক্ষ্য ছিল না এবং হামলায় যদি কাতারের নিরাপত্তা বা আকাশসীমা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাহলে সে জন্য তিনি দুঃখিত। খবর আল-জাজিরার।
হামলার ঘটনার পর কাতার সরকারের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, এই হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব ও আকাশসীমার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থি।
এর আগে কাতারের আমির শেখ তামিম এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনে কাতার সবসময় শান্তিপূর্ণ সংলাপের পক্ষপাতী।
তিনি আরও বলেন, ইরানের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা অব্যাহত রাখতে আমরা বরাবরই কূটনৈতিক উদ্যোগ চালিয়ে এসেছি। এখন সময় এসেছে ইরান আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরে আসুক, যেন সংকট উত্তরণ সম্ভব হয় এবং গোটা অঞ্চল ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান কাতারের উদ্বেগের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, হামলার লক্ষ্যবস্তু কাতার ছিল না। যদি কোনোভাবে আপনাদের দেশের সার্বভৌমত্ব বা নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হয়ে থাকে, তাহলে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানের প্রতিক্রিয়া কোনো একক দেশের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি বৃহৎ কৌশলগত বার্তার অংশ। কিন্তু এর অনিচ্ছাকৃত প্রভাব পড়ছে প্রতিবেশী ও মিত্র দেশগুলোর ওপরও, যেমন কাতার- যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক উপস্থিতি রয়েছে।
কাতার ও ইরান ঐতিহাসিকভাবে একে অপরের সঙ্গে গঠনমূলক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। যদিও আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে উভয়ের অবস্থান ভিন্ন, তথাপি দু’দেশই সংলাপ, আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা নিরসনে আগ্রহী।
এই প্রেক্ষাপটে ইরান প্রেসিডেন্টের দুঃখপ্রকাশ কাতারের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে, যখন সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা গোটা উপসাগরীয় অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তুলেছে।
ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে গত সপ্তাহে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এরমধ্যে অত্যাধুনিক বি-২ স্টিলথ বোমারু ব্যবহার করে ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা হয়। তবে মার্কিন গোয়েন্দারা তাদের প্রাথমিক মূল্যায়নে জানিয়েছেন, হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল উপাদান ধ্বংস হয়নি। এ হামলা দেশটির পারমাণবিক কার্যক্রম শুধুমাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন বুধবার (২৫ জুন) এক এক্সক্লসিভ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দারা প্রাথমিক যে মূল্যায়ন প্রদান করেছেন সেটি চারজন ব্যক্তি সিএনএনকে জানিয়েছেন।
এই মূল্যায়ন এর আগে প্রকাশ করা হয়নি। মূল্যায়নটি প্রদান করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা শাখা ডিফেন্স ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি। হামলার পর পর ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড মূল্যায়নটি তৈরি করে।
সামনে আরও তথ্য জানা গেলে হয়ত প্রাথমিক মূল্যায়নে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন প্রকাশ্যে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস করে দেওয়ার যে দাবি করছেন, প্রাথমিক মূল্যায়নে সেটির উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
মূল্যায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র জানিয়েছে, ইরানের সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের মজুদ ধ্বংস হয়নি। অপর একজন জানিয়েছেন, দেশটির পারমাণবিক সেন্ট্রিফিউজের বেশিরভাগও অক্ষত রয়েছে। যার অর্থ যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কাঠামো ধ্বংস করতে পারেনি। বরং তাদের হামলা ইরানি পারমাণবিক কার্যক্রমকে শুধুমাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে।
হোয়াইট হাউজের প্রেসসচিব ক্যারোলিন লিভিট এই মূল্যায়নের সত্যতা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পকে ‘অপমান’ করতে এগুলো ছড়ানো হচ্ছে।
এরআগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী জানিয়ছিল, ইরানে পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলায় তারা ‘অসাধারণ সফলতা’ অর্জন করেছে।
ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রটি মাটির ২৬২ ফুট নিচে অবস্থিত। এটি ধ্বংস করতে ৩০ হাজার পাউন্ডের বাঙ্কার বাস্টার বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। আর বোমাগুলো ছুড়েছে বি-২ স্টিলথ বোমারু। সিএনএন
ইরানের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় প্রায় এক ডজন নাগরিককে আটক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, অভিবাসন কর্মকর্তারা ইরানের অন্তত ১১ নাগরিককে আটক করেছে। তাতের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থানের অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে এক মার্কিন নাগরিককে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এক ইরানিকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ পালিত হয়। ক্ষমতায় গেলে যুক্তরাষ্ট্র অবৈধ অভিবাসীদের থেকে মুক্ত করার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ২০ জানুয়ারি তিনি শপথ গ্রহণ করেন। এরপর কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। এর মধ্যে ‘আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন জনগণকে সুরক্ষা প্রদান’ নামের একটি আদেশও জারি করেন তিনি।
ট্রাম্পের এমন আদেশের পর যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। সরকরি পরিসংখ্যন অনুসারে, দেশটিতে বর্তমানে এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি অবৈধ অভিবাসী রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত এক লাখ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য নিয়েছে দেশটি।
ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি মানলে ইরানও তা মেনে চলবে বলে জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। ইরানের সংবাদমাধ্যম নুর নিউজ এ কথা জানিয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইরান যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে যতক্ষণ ইসরায়েল তা মেনে চলে। তিনি আরও বলেন, ইরান সংলাপের জন্য প্রস্তুত। তেহরান আলোচনার টেবিলে বসেই ইরানি জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে এক ফোনালাপে পেজেশকিয়ান বলেন, যদি ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করে, তাহলে ইরানও তা লঙ্ঘন করবে না।
তিনি আরও বলেন, ইরানি জনগণ আবারও দেখিয়েছে যে কিছু সমস্যা এবং অভিযোগ সত্ত্বেও তারা শেষ পর্যন্ত শত্রুর আক্রমণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
সূত্র: বিবিসি
ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর বাবলসারের কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানি সংবাদ সংস্থা ইসনার বরাত দিয়ে আল–জাজিরা এ কথা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীরা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। ওই এলাকায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়েছে।
গত শনিবার ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায় মার্কিন সামরিক বাহিনী। পরের দিন সোমবার রাতে কাতার ও ইরাকের মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে মোট ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। এই হামলার কয়েক ঘণ্টা পর ইরানের সঙ্গে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মধ্যে ইরান ও ইসরায়েল তা লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করে। যদিও সে অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে ইরান।
এদিকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনেন ঘটনায় উভয় দেশের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর পরিস্থিতি জটিল থাকা সত্ত্বেও ইরানের কিছু কর্তৃপক্ষ এটিকে নিজেদের ‘বিজয়’ হিসেবে উদযাপন শুরু করেছে। খবর আল জাজিরা।
ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ বলেছেন, ‘‘এ ‘বিজয়’ প্রমাণ করে, ইরান এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের দম্ভ ভেঙে চুরমার দিয়েছে এবং ইরানের শক্তি কতটা, তা তাদের দেখিয়েছে।’’
দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার ও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মাহদি মোহাম্মাদি যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে ‘‘বিশাল, ইতিহাস গড়া বিজয়’’ বলে অভিহিত করে উদযাপন করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।’’
ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরোজ কামালভান্দি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘কেউই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘নির্মুল’ করতে পারবে না। এটা অন্য সবার বোঝা উচিত।’’
তিনি বলেন, আমাদের যে সক্ষমতা ও সামর্থ্য রয়েছে, তা বিবেচনায় নিয়ে বলতে পারি—পারমাণবিক শিল্প অব্যাহত থাকবে এবং এটিকে থামানো যাবে না।
ইরানের ওপর হামলা চালিয়ে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর প্রতি ‘অত্যন্ত বিরক্ত’ ও ‘প্রতারিত’ বোধ করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর আল জাজিরা।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েল ও ইরান তা ভঙ্গ করায় তিনি অনেকটাই হতাশ।
ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে ইউরোপে যাওয়ার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্টের। যাত্রার আগে, ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইরানের বিষয়ে মন্তব্য করার সময় কটূক্তিও করেন।
আল জাজিরার মার্কিন প্রতিনিধি ফিল লাভেল বলেন, ‘তিনি ইরাক ও ইসরায়েল উভয় দেশের প্রতি রাগান্বিত ছিলেন। তবে বেশি রাগ ছিল ইসরায়েলের প্রতি।’
তিনি আরও বলেন, বেনজামিন নেতানিয়াহুর প্রতি যথেষ্ট বিরক্ত ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করছেন তিনি হয়তো প্রতারিত হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির জন্য তার সমর্থন নেওয়ার জন্য ট্রাম্প সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন, এরপর কাতারের সাহায্যে ইরানের সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করেন।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে ইরানে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ১৩ জুন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইরানজুড়ে এই গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
নরওয়েভিত্তিক কুর্দি মানবাধিকার সংস্থা হেনগাও এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ১১ দিনে ইরানজুড়ে ৫৩০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইরানের সরকারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত পুলিশের বিবৃতি এবং হেনগাওয়ের নিজস্ব অনুসন্ধান থেকে ধরপাকড়ের এই চিত্র উঠে এসেছে বলে জানায় আল মনিটর।
গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানের কোন প্রদেশে কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে সেই তথ্যও দিয়েছে সংস্থাটি। খুজেস্তান প্রদেশে ৬৭ জন, তেহরানে ৬৪ জন, ফারসে ৫৩ জন, পশ্চিম আজারবাইজানে ৫১ জন, লোরেস্তানে ৪১ জন, হামাদানে ৩০ জন, রাজাভি খোরাসানে ২৪ জন, কমে ২২ জন, সেমনানে ২১ জন এবং কেরমানে ২০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়াও, অন্যান্য প্রদেশে আরও বহু মানুষকে আটক করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
হেনগাও জানিয়েছে, আটককৃতদের বিরুদ্ধে মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি, ইসরায়েলের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ এবং জনমত প্রভাবিত করার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালানোর কয়েক দিন পর ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলামহোসেন মোহসেনি এজেয় ঘোষণা দেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতার সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃতদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম গত ১৬ জুন এজেয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, 'যদি কেউ জায়নবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং সহযোগিতার জন্য গ্রেপ্তার হয়, তবে তাদের বিচার ও শাস্তি দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত এবং যুদ্ধের পরিস্থিতি বিবেচনায় আইন অনুযায়ী এটা করা উচিত।'
বিস্ফোরক ও স্টারলিংক ডিভাইস জব্দ
গিলান প্রদেশের পুলিশ সোমবার জানায়, ইসরায়েল গত ১৩ জুন ইরান আক্রমণ করার পর থেকে প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতার সন্দেহে অন্তত ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গিলানের আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর কমান্ডার হোসেইন হাসানপুর এক বিবৃতিতে বলেছেন, সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, শত্রুদের সঙ্গে সহযোগিতা করা, সামরিক স্থাপনার কাছে ড্রোন ওড়ানো, অগ্নিসংযোগ, ঘরে বিস্ফোরক তৈরি এবং বিরোধী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে কাজ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের বিচার বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
হাসানপুর জানান, গিলান প্রদেশে অভিযানের সময় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সরঞ্জাম, যার মধ্যে যোগাযোগ ডিভাইস, বিস্ফোরক ডিভাইস এবং স্টারলিংকের রিসিভারও জব্দ করেছে। একই ধরনের অভিযানের খবর পাওয়া গেছে ইরানের অন্যান্য এলাকা থেকেও। যুদ্ধ শুরুর আগে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দুই জনের মৃত্যুদণ্ড সোমবার কার্যকর করেছে ইরান।
গত সোমবার মোহাম্মদ-আমিন মাহদাভি শায়েস্তেহ নামে ২৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে তাকে ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
শায়েস্তেহের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের মোসাদ গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত একটি সাইবার নেটওয়ার্ক পরিচালনার এবং লন্ডন-ভিত্তিক টিভি চ্যানেল ইরান ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। ইরানের শাসকদের সমালোচক হিসেবে পরিচিত ইরান ইন্টারন্যাশনাল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
একই দিনে মাজিদ মোসায়েবি নামে এক ব্যক্তিকে গুপ্তচরবৃত্তি এবং ইসরায়েলের মোসাদ গোয়েন্দা সংস্থাকে সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। মঙ্গলবার (২৪ জুন) টেলিফোন কলে তারা কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে কথা বলেছেন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম বলেছেন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ইরানের প্রেসিডেন্টের কাছে আল উদেইদ ঘাঁটিতে ইরানের হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, টেলিফোনে আলাপকালে কাতারের আমির তার দেশ সবসময় সুসম্পর্ক ও ভালো প্রতিবেশীর নীতি অনুসরণ করে বলে ইরানের প্রেসিডেন্টকে জানান। এ সময় তিনি ইরানের কাছ থেকে এমন ‘শত্রুতাপূর্ণ আচরণ’ প্রত্যাশা করেননি বলে জানিয়ে দেন।
শেখ মোহাম্মদ বলেন, কাতারের আমির সম্ভাব্য কূটনৈতিক ও আইনি প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনার কথা বলেন। তবে এই বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং অতীতের বিষয় হিসেবে রেখে দিতে হবে বলে জোর দেন তিনি।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বলেন, আঞ্চলিক এই উত্তেজনা মূলত গাজার ওপর ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন ও যুদ্ধংদেহী মনোভাবের পরিণতি। আর এটি যাতে পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে না পড়ে, সেই লক্ষ্যে কাতার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বকে এক হয়ে ইসরায়েলের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন কার্যকলাপের অবসান ঘটানোর সময় এসেছে এখন।
সূত্র: আল জাজিরা
ইরানের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ইসরায়েল তিন ধাপে ইরানে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) ইরানের খাতাম আল-আনবিয়া কেন্দ্রীয় সামরিক সদর দপ্তরের মুখপাত্রের বরাতে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এ খবর জানায় বলে জানায় কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।
ট্রাম্পের নির্ধারিত যুদ্ধবিরতির সময়সূচী অনুযায়ী, ইরান প্রথমে স্থানীয় সময় সকাল ৭:৩০টা থেকে যুদ্ধবিরতি পালন করবে, তার ১২ ঘণ্টা পরে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি কার্যকর করবে।
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ জানিয়েছে, পুনরায় হামলার ঘটনা ঘটলে তাদের সশস্ত্র বাহিনী ‘উপযুক্ত জবাব’ দিতে প্রস্তুত আছে।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করার জন্য কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাবানজি।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা লাইভে এ খবর জানায়।
ইরান ইয়ং জার্নালিস্ট ক্লাবের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, এক ফোন কলে কাতারের রাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ আল-খুলাইফিকে তার দেশের “গঠনমূলক ভূমিকা” জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।
ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভালো প্রতিবেশী হিসেবে ও সর্বোচ্চ স্বার্থের ভিত্তিতে দুই দেশের সম্পর্ক চালিয়ে যেতে এবং শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইরান।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জবাবে কাতারের আল উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। হামলার পর পরই এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
জবাবে, কাতার এই হামলাকে কঠোরভাবে নিন্দা জানিয়ে মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে।
ইরানের বিরুদ্ধে আর আক্রমণ যাতে না হয় সেজন্য ইসরায়েলকে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়ে সব পাইলটকে নিজ দেশে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) আল জাজিরার খবরে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথে ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়ে এ নির্দেশনা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল, বোমাগুলো ফেলো না। যদি তুমি এটা করো তাহলে এটা একটা বড় লঙ্ঘন। এখনই তোমার পাইলটদের বাড়িতে নিয়ে এসো।’
ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তীব্র হামলার ঘোষণা দেয়ার কিছুক্ষণ পর ট্রাম্পের এই সতর্ক বার্তা আসলো।
এর আগে দুই দেশের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ তেহরানের কেন্দ্রে সরকারি স্থাপনায় জোরালো হামলা করতে তার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। এছাড়া ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, তেহরান কাঁপবে। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধানও ইরানকে কঠোর জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
ইসরায়েলের দাবি, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে তেহরান জানায়, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর তারা ইসরায়েলে কোনো হামলা চালায়নি।
এদিকে, ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ রেজা জাফরঘানির বরাত দিয়ে ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত ১৩ই জুন থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৬০৬ জন নিহত হয়েছে।
তিনি বলেছেন, পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন এবং চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।
মন্ত্রী আরও বলেছেন যে গত ২৪ ঘণ্টায় ইরান সবচেয়ে খারাপ হামলা দেখেছে, যেখানে ১০৭ জন নিহত হয়েছে।
ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় ওয়াশিংটন ছয়টি বাংকার-বিধ্বংসী বোমা ফেলার আগেই সেখানে থাকা ৪০০ কেজি ওজনের ইউরেনিয়াম সরানো হয়েছিল। এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম দিয়ে ১০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের কাছে এমনটাই দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা নিক্ষেপের পর থেকে হদিস মিলছে না ৪০০ কেজি ওজনের ইউরেনিয়াম, যা ওই তিন স্থাপনাতে মজুত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স বলেছেন, এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম দিয়ে ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যায়।
ওই ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। পারমাণবিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হলে এটি প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, হদিস না মেলা ইউরেনিয়ামকে ইরানের জন্য শক্তিশালী দর-কষাকষির অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে তারা যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনায় ফিরতে চায়।
কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও একাধিকবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে দাবি করেছে, গত রোববার ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই গোপন জায়গায় ওই ৪০০ কেজি ওজনের ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলে ইরান সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবিতে দেখা যায়, ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনার বাইরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ১৬টি ট্রাক। এই স্থাপনা পাহাড়ের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে এটিকে সুরক্ষিত বলে মনে করা হয়।
হামলার পর স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, বাংকার-বিধ্বংসী বোমার আঘাতে ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। তবে তার বাইরে কয়েক দিন আগে যে ট্রাকগুলো দাঁড়িয়ে ছিল, সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই।
ওই সব ট্রাকের মাধ্যমে ঠিক কী সরানো হয়েছে এবং কোথায় সরানো হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, ইরানের প্রাচীন রাজধানী ইস্পাহানের কাছে ভূগর্ভস্থ আরেক গুদামে সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, পারমাণবিক স্থাপনা ফোরদো সর্বশেষ পরিদর্শন করা হয়েছিল ইরানে ইসরায়েলের হামলা শুরুর এক সপ্তাহ আগে।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে গ্রোসি বলেছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব, ফোরদো পরিদর্শনের কাজ আবার শুরু করা জরুরি। তিনি সতর্ক করে এ-ও বলেন, ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাত এই জরুরি কাজটি আরও বিলম্বিত করছে। একই সঙ্গে ইরানকে পরমাণু অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনাও ক্ষীণ করছে।
ইরানে ইসরায়েলের হামলায় গত কয়েক দিনে অন্তত ৬০৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছে তেহরান। মঙ্গলবার (২৩ জুন) ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় ইরানে কমপক্ষে ৬০৬ জন নিহত হয়েছেন। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ রেজা জাফরগনি বলেন, এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৫ হাজারের বেশি মানুষ।
তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া অনেকে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ইরানের এই মন্ত্রী বলেন, ইরানে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। কেবল এই সময়েই ইসরায়েলি হামলায় দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০৭ জন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হোসেইন কারমানপোর বলেছেন, গত ১২ দিন দেশের হাসপাতালগুলো অত্যন্ত বেদনাদায়ক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। এর আগে, সোমবার ইসরায়েলি হামলায় ইরানে প্রাণহানি ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
তবে ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসেবের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
সূত্র: বিবিসি, এএফপি
ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি বলেছেন, পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর হওয়া ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করছে ইরান। তা পুনরায় চালুর পরিকল্পনা নিচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খবর আল জাজিরা লাইভে এ খবর জানায়।
ইরানের মেহর সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মোহাম্মদ এসলামি বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি এবং বর্তমানে যেসব স্থানে ক্ষতি হয়েছে, সেগুলোর মূল্যায়ন করছি।”
তিনি আরও বলেন, পূর্বেই পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, এবং আমাদের পরিকল্পনা হলো যাতে উৎপাদন বা সেবায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।
ইরানে ইসরায়েলের হামলা, এর পাল্টা জবাব, যুক্তরাষ্ট্রের ইরানি পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে হামলা এবং কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের পাল্টা আঘাত—এই উত্তপ্ত সংঘাতের পর যেসব পক্ষ ‘যুদ্ধবিরতি’তে সম্মত হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই নিজেদের ‘বিজয়ী’ হিসেবে উপস্থাপন করছে।
বিষয়টি উঠে এসেছে মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘর্ষে জড়িত প্রতিটি পক্ষেরই যুদ্ধবিরতিকে সম্মান জানানোর কারণ রয়েছে। তারা সবাই পরিস্থিতিকে নিজেদের সাফল্য হিসেবে দেখছে।
ইসরায়েল তাদের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তা সফল বলে দাবি করছে। এই অভিযানে ইরানের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েলের হামলায় ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বিশেষ করে, ইসরায়েল সফলভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইরানে হামলায় যুক্ত করতে পেরেছে। যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।
এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলের জন্য কিছুটা স্বস্তির সুযোগ এনে দিয়েছে। গত দুই বছর ধরে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া দেশটির সামনে যুদ্ধের অবসান নিয়ে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা এখনো নেই, তবে অর্থনীতিতে এ যুদ্ধবিরতির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ইরানের জন্য এই যুদ্ধবিরতি সাময়িক স্বস্তি। টানা বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত দেশটির বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত ১২ দিনের সংঘর্ষে ইরানে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে, যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগবে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত অবস্থায় এসব ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া ইরানের পক্ষে সহজ হবে না।
তবে, এই ‘বিজয়’ দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, ইতিমধ্যে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে এবং দেশটির দুই শীর্ষ মন্ত্রী আবারও হামলার হুমকি দিয়েছেন।
ইরানের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর গাজায় ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলি বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স প্ল্যাটফর্মে তিনি লিখেছেন, ‘আর এখন গাজা। সেখানেও যুদ্ধ শেষ করার সময় এসেছে। জিম্মিদের ফিরিয়ে দাও, যুদ্ধ শেষ করো!’
ইরানের হামাদান প্রদেশে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ছয় সদস্যকে আটক করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজান, নাহাভান্দ ও হামাদান শহর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আটককৃতরা মোসাদের পক্ষে কাজ করছিল এবং সাইবার কার্যক্রম ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা।
তবে, ইরানি গোয়েন্দা সংস্থার তাৎক্ষণিক ও কার্যকর পদক্ষেপে তাদের এসব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়।
এর আগে, গত শুক্রবার (২০ জুন) ইরান আরও ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করে, যাদের মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। তারা দেশের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা, গুজব ছড়ানো এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরির মতো অপরাধে অভিযুক্ত।
ইরান দীর্ঘদিন ধরেই ইসরাইলের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত, যেখানে বহু অভিযুক্তকে পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মোসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এ ধরনের অভিযান ইরানের পক্ষ থেকে নিয়মিত চালানো হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হঠাৎ ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার (২৩ জুন) হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। কাতার এই আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছে বলে জানান তিনি।
গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে আলোচনার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ভূমিকা রেখেছেন।
গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার কিছু পর এই ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিজের প্রশাসনের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাও এ ঘোষণায় বিস্মিত হন। আজ মঙ্গলবার ইসরায়েল–ইরান দুই পক্ষই এই যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তবে গতকাল ট্রাম্পের ঘোষণার তিন ঘণ্টার মধ্যেই ইরানে ইসরায়েলের নতুন হামলার খবর পাওয়া যায়। এতে প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ সব পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল কি না।
এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ যুদ্ধবিরতির পক্ষে চাপ প্রয়োগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সহায়তা করেন। দুই মাস ধরে এ তিনজন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার একটি চুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছিলেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই তিন কর্মকর্তা ‘সরাসরি ও পরোক্ষ’ উভয় ধরনের চ্যানেল ব্যবহার করে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার শর্ত ছিল, তাদের ওপর ইরান আর আক্রমণ না করলে তারা যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ স্থাপনায় হামলা চালালে তা যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করার পরিস্থিতি তৈরি করে দেয়।
তবে ইরান কী শর্তে রাজি হয়েছে বা তারা তাদের ইউরেনিয়ামের মজুত কোথায় রেখেছে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলে ফের হামলা চালানোর অভিযোগ তোলা হয় ইরানের বিরুদ্ধে। তবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান।
রাষ্ট্রীয় টিভির বরাত দিয়ে ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর অস্বীকার করা হয়েছে।
এর আগে ইরান থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে। ইরান থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তারা শনাক্ত করেছে। ইরানি হুমকি প্রতিহত করতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করছে।
এই হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তেহরানে আবারও জোরালো হামলার নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) এক বিবৃতিতে তিনি জানান, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষিত যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে ইরান ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এ কারণে তেহরানে শাসকগোষ্ঠীর অবস্থানে আমরা সর্বোচ্চ মাত্রার পাল্টা হামলার নির্দেশ দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির যেকোনো লঙ্ঘনের কঠোর জবাব দেওয়া ইসরায়েল সরকারের নীতি। সেই নীতির অংশ হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত।’
তেহরানের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধের ডাক দিয়েছেন ইসরায়েলি আইনপ্রণেতারাও। নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সদস্য ও কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল সমোটরিচ এক্স-এ লেখেন, ‘তেহরান কাঁপবে।’
বিরোধী দল ইয়িসরায়েল বেইতেনু চেয়ারম্যান আবিগডোর লিবারম্যান এক পোস্টে বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সাড়ে তিন ঘণ্টা পরই ইরান উত্তরের দিকে হামলা চালাল। আমরা চুপচাপ বসে থাকতে পারি না, অবিলম্বে প্রতিশোধ নিতে হবে।’
ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সংসদ সদস্য তালি গটলিভ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ইরানের যেকোনো লঙ্ঘনের যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।’ আর আরেক লিকুদ এমপি আবিচাই বোয়ারন তেহরানের শাসকগোষ্ঠীর প্রতীকী স্থাপনার ওপর ‘পূর্ণ শক্তি’ দিয়ে হামলার আহ্বান জানান।
ইরানের উত্তরাঞ্চলের গিলান প্রদেশে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩৩ জন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই হামলায় চারটি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গিলানের আস্তানেহ-ইয়ে আশরাফিয়া শহরে। খবর বিবিসি।
গিলান গভর্নরের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে নারী ও শিশুসহ মোট ১৬ জন রয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো দাবি করছে, নিহতদের মধ্যে ইরানের শীর্ষস্থানীয় একজন পারমাণবিক বিজ্ঞানী মোহাম্মদ রেজা সিদ্দিকির নাম রয়েছে।
এদিকে ইরানি গণমাধ্যম এবং সরকারি সূত্র ইঙ্গিত করছে, এই হামলার পেছনে ইসরায়েলের হাত রয়েছে। এমন সময় এই হামলা হলো, যখন ইসরায়েল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও দাবি করেছে, তারা রাতের বেলায় ইরান থেকে উৎক্ষেপণ করা একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েল তার নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছে এবং সতর্কতা না আসা পর্যন্ত সেখানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
তবে ইরান এখনও হামলার দায় স্বীকার করেনি বা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। হামলার বিষয়ে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পূর্বেই বলেছিলেন, যদি ইসরায়েল আগ্রাসন বন্ধ করে, তবে তেহরানও পাল্টা হামলা চালাবে না।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক চরম উত্তেজনায় পৌঁছেছে। এই হামলা এবং পাল্টা পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ইরানের দিক থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ তুলে তেহরানে আবারও জোরালো হামলার নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) এক বিবৃতিতে তিনি জানান, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষিত যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে ইরান ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এ কারণে তেহরানে শাসকগোষ্ঠীর অবস্থানে আমরা সর্বোচ্চ মাত্রার পাল্টা হামলার নির্দেশ দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির যেকোনো লঙ্ঘনের কঠোর জবাব দেওয়া ইসরায়েল সরকারের নীতি। সেই নীতির অংশ হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত।’
এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে ছোড়া একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে।
তেহরানের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধের ডাক দিয়েছেন ইসরায়েলি আইনপ্রণেতারাও। নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সদস্য ও কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল সমোটরিচ এক্স-এ লেখেন, ‘তেহরান কাঁপবে।’
বিরোধী দল ইয়িসরায়েল বেইতেনু চেয়ারম্যান আবিগডোর লিবারম্যান এক পোস্টে বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সাড়ে তিন ঘণ্টা পরই ইরান উত্তরের দিকে হামলা চালাল। আমরা চুপচাপ বসে থাকতে পারি না, অবিলম্বে প্রতিশোধ নিতে হবে।’
ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সংসদ সদস্য তালি গটলিভ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ইরানের যেকোনো লঙ্ঘনের যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।’ আর আরেক লিকুদ এমপি আবিচাই বোয়ারন তেহরানের শাসকগোষ্ঠীর প্রতীকী স্থাপনার ওপর ‘পূর্ণ শক্তি’ দিয়ে হামলার আহ্বান জানান।
ফের ইরান থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, ইরান থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তারা শনাক্ত করেছে। ইরানি হুমকি প্রতিহত করতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করছে। সেইসঙ্গে বাসিন্দাদের পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে লিখেন, যুদ্ধবিরতি এখন থেকে কার্যকর হয়েছে, অনুগ্রহ করে কেউ এটি লঙ্ঘন করবেন না।
ট্রাম্পের এই পোস্টের কিছুক্ষণ পরেই ইসরায়েলও যুদ্ধবিরতির তথ্য নিশ্চিত করে। এর আগে ইরানের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির তথ্য দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানানো হয়।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এর একটি পোস্টে এ দাবি করে লিখেছেন, যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর। দয়া করে এটি লঙ্ঘন করবেন না!
এদিকে, ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৪ জুন) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
তবে যুদ্ধবিরতির ঠিক আগে শেষবারের মতো ইসরায়েলের অভ্যন্তরে একদফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলি চ্যানেল ১৪ জানিয়েছে, সর্বশেষ ইরানি হামলায় বীরশেবা শহরে এখন পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সংস্থার মুখপাত্র লিনয় রেশেফ জানিয়েছেন, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনে এখনো কয়েকজন আটকা পড়ে আছেন। আহত অন্তত আটজনের মধ্যে দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তেহরানকে রাজি করাতে মধ্যস্থতা করেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ইরানের হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টার মাথায় এই আলোচনা এবং সমঝোতার খবরটি প্রকাশিত হলো।
মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার ফলে ইরান আর পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে ইরানের সঙ্গে এবং অবশ্যই ইসরায়েলের সঙ্গেও কথা বলতে হবে।
জেডি ভ্যান্স বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার ক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে কি না। তবে একথা নিশ্চিত, ইরানকে স্পষ্ট বার্তা পাঠানো হয়েছে—আমাদের বিমান যেকোনো সময় তাদের মাতৃভূমিতে পৌঁছাতে পারে।’
এর আগে রোববার ভোরে ইরানের ফরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে তারা ইসরায়েলের আক্রমণাত্মক অভিযানে যুক্ত হয়। গত ১৩ জুন থেকে তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, আক্রমণের লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা।
ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে তা তাদের রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ইরানের হামলার জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু রয়েছে।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত চলছে। এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই ইসরায়েলকে মদত দিয়ে যাচ্ছে। মিত্র দেশকে সমর্থন করে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর জবাবে কাতারে আল উদেইদ মার্কিন বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরান।
এদিকে ইসরায়েল ‘আগ্রাসন’ বন্ধ করলে ইরানও হামলা চালাবে না বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের স্থানীয় সময় ভোর ৪টা থেকে তেহরানে আক্রমণ না করে, তাহলে আমরাও কোনো জবাব দেব না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্ট তিনি বলেন, ইসরায়েল যদি এখনই তার ‘অবৈধ আগ্রাসন’ বন্ধ করে, তাহলে ইরানের ‘প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রাখার কোনো ইচ্ছা নেই’।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল আইআরআইএনএন জানিয়েছে, কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ‘সফল’ হামলার পর এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরানের হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির জন্য 'মিনতি' করেছিলেন।
এই বিবৃতিটি ইরানের একজন উপস্থাপক পড়ে শোনান। বিবৃতিতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বা আইআরজিসি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করা হয় এবং ইরানিদের প্রতিরোধকে সম্মানও জানান হয়েছে।
তবে ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেছেন, ইসরায়েল এবং ইরান প্রায় একই সাথে তার কাছে এসেছিল এবং বলেছিল, শান্তি।
এদিকে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরেও ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান পাঁচ দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের বীরশেবায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে।
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালানোর আগে সতর্ক করেছিল ইরান। এনিয়ে ইরানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন প্রশ্ন উঠেছে, তেহরান কেন আমেরিকাকে আগে থেকেই সর্তক বার্তা দিয়েছিল।
নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক স্টেফান ফ্রুহলিং বিবিসিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে ইরানের পাল্টা হামলার উদ্দেশ্য ছিল মূলত “প্রতীকী”।
তিনি বলেন, এই সতর্কতার মাধ্যমে ইরান বোঝাতে চেয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও বড় সংঘাতে জড়াতে চায় না।
ফ্রুহলিংয়ের মতে, ইরানের পক্ষ থেকে সময় ও লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে আগাম জানানো হয়েছে যাতে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র বেসামরিক বিমান চলাচল নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারে।
তিনি যোগ করেন, এই সতর্কতা যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারকে এক ধরনের বার্তা যে ইরান সংঘাত সীমিত রাখতে চায় শুধু ইসরায়েলের সঙ্গেই। কারণ, সংঘাত বাড়লে তারা সামরিকভাবে পিছিয়ে পড়তে পারে।
ফ্রুহলিং বলেন, এর আগেও ইরান এমন ‘লোক দেখানো’ হামলা চালিয়েছিল, যেমনটা হয়েছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে কাসেম সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের পর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেওয়ার পরেও ইসরায়েলে দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে ইরান। মঙ্গলবার (২৪ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন করে ইরানের দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার বিষয়টি আবার শনাক্ত করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এ নিয়ে বাসিন্দাদের আবার নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, ইরানি হুমকি প্রতিহত করতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করছে। সতর্কতা সংকেত পাওয়ার পর আপনাকে অবশ্যই সুরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করতে হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকতে হবে।
এই সতর্কতা জারি করার কিছুক্ষণ আগেও ইরান ইসরায়েলে আরেক দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। টাইমস অব ইসরায়েলের লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছে।
এ নিয়ে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় পর ইরান থেকে পঞ্চম দফায় ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইরানের আরেক পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইরানের ইংরেজি ভাষার চ্যানেল প্রেস টিভি জানিয়েছে, তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় পরমাণু বিজ্ঞানী সেদিঘি সাবেরকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রেস টিভির বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে ফেরদৌসি এবং ভালি আসরের প্রধান রাস্তার কাছে সাবেরের ওপর আক্রমণ চালানো হয়।
গত ১৩ জুন ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ইরানের অন্তত ১০ জনের বেশি পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
এ ছাড়া ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, কমান্ডারসহ অনেকে নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়।
ইরানের রাজধানী তেহরানে রাতভর অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। শহরটির বিভিন্ন জায়গায় বিকট বিস্ফোরণের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
রাজধানীর বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা তেহরানের পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত, শহরের বিভিন্ন অংশে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তেহরানের একজন বাসিন্দা শহরের ওপর ইসরায়েলি হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, আরেকটি ঘুমহীন রাত।
বিবিসি বলছে, ইসরায়েল এর আগে তেহরানের বিভিন্ন অংশ থেকে 'অবিলম্বে' সরে যেতে সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য তিনটি সতর্কতা জারি করেছিল।
দেশটি এখনো ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যার ফলে বাসিন্দাদের এই সতর্কতাগুলো দেখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
শহরটির আরেক বাসিন্দা বলেছেন, আমাদের ওপর কী বিপর্যয় নেমে আসছে তা দেখার জন্য কেন এত দেরি করে জেগে থাকতে হবে? আমি মর্মাহত বোধ করছি। এখনো ক্রমাগত যে শব্দ শুনতে পাচ্ছি, আমি ভয় পাচ্ছি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি জানিয়েছে, তেহরানের কিছু এলাকায় ১৩ জুনের পর আজ রাতে সবচেয়ে তীব্র বিমান প্রতিরক্ষা সংঘর্ষ দেখা গেছে। কিন্তু ভোর ৪টার দিকে বিস্ফোরণগুলো বন্ধ হয়ে যায় মনে হচ্ছিল বলে কিছু বাসিন্দা বিবিসিকে জানিয়েছেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ইসরায়েলকে আক্রমণ বন্ধ করার জন্য ভোর ৪টা পর্যন্ত সময়সীমা দেন। এবং ইসরায়েলকে তার আগ্রাসনের জন্য শাস্তি দেওয়ার জন্য... একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, ভোর ৪টা পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে ট্রাম্পের ঘোষণার পরেও দেশ দুইটির মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ দাবি করেছে, ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর ইসরায়েলে সাইরেন বাজছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
আইডিএফ’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কিছুক্ষণ আগে ইরানের ভূখণ্ডের দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার বিষয়টি শনাক্ত করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং এটি প্রতিহত করতে কাজ করছে তারা।
ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা পাওয়ার পর ইসরায়েলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
টাইমস অব ইসরায়েলের লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র দেশটির বীরশেবায় প্রভাব ফেলেছে। তবে এতে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছিলেন, ইরানের সামরিক অভিযান তেহরান সময় ভোর ৪টা পর্যন্ত চলেছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে ট্রাম্পের ঘোষণার পরেও দেশ দুইটির মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ইসরায়েল যদি ইরানের ওপর চলমান সামরিক আগ্রাসন বন্ধ করে, তাহলে পাল্টা হামলা চালাবে না তেহরান—এমন বার্তা দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। স্থানীয় সময় সোমবার (২৪ জুন) এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ দেওয়া পোস্টে তিনি এই অবস্থান জানান। খবর বিবিসির।
আরাঘচি বলেন, 'ইসরায়েলকে স্থানীয় সময় ভোর ৪টার মধ্যে তাদের "অবৈধ আগ্রাসন" বন্ধ করতে হবে। যদি তারা থামে, তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রাখার কোনো পরিকল্পনা নেই।' তিনি বলেন, 'আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি, এই যুদ্ধ ইসরায়েল শুরু করেছে, আমরা নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি কিংবা সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়ে চুক্তি হয়নি। তবে ইসরায়েল যদি সময়মতো হামলা বন্ধ করে, তাহলে আমরাও থেমে যাব।'
এর আগেও ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছিলেন, 'তেহরানের সার্বভৌমত্বে হামলার জবাবে কাতারে অবস্থিত মার্কিন বিমানঘাঁটি আল উদেইদে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি আবারও আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ইরানও জবাব দিতে প্রস্তুত।'
আরাঘচির বক্তব্যে আরও উঠে আসে, ইরান এই মুহূর্তে যুদ্ধকে বাড়াতে চায় না, তবে নিজেদের 'আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পিছপা হবে না।** তিনি বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও প্রতিক্রিয়ার অধিকার নিশ্চিত করব।'
এই বক্তব্য এমন এক সময় এসেছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত নতুন মাত্রা পেয়েছে। ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনায় সাম্প্রতিক হামলা এবং তার জবাবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পররাষ্ট্রনীতিতে আরাঘচির এই বিবৃতি তেহরানের কূটনৈতিক কৌশলের অংশ, যাতে ইরানকে আত্মরক্ষামূলক শক্তি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, আবার ভবিষ্যতের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির জন্য দরজাও খোলা রাখা হচ্ছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে বলেছেন, আগ্রাসনের জন্য ইসরায়েলকে শাস্তি দিতে আমাদের শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক অভিযান শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, ভোর ৪টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
তিনি বলেছেন, সমস্ত ইরানি এবং আমি আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই, যারা তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত প্রিয় দেশকে রক্ষা করতে প্রস্তুত থাকে এবং যারা একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শত্রুর যেকোনো আক্রমণের জবাব দেয়।
তেহরানের স্থানীয় সময় ভোর ৪টা, ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধে ইসরায়েলকে এই সময় বেধে দিয়েছিলেন আরাঘচি।
ইসরায়েল এই সময়সীমা অনুসরণ করলে "এর পরে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই" বলে আগের বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল-ইরান সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সবকিছু ঠিকভাবে চললে—যা অবশ্যই চলবে—আমি উভয় দেশকে অভিনন্দন জানাতে চাই।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এই যুদ্ধ বহু বছর ধরে চলতে পারত এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস করে দিতে পারত। কিন্তু তা হয়নি এবং হবেও না!’
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভাষ্য অনুযায়ী, এ যুদ্ধের অবসান একটি বড় ধরনের মানবিক ও কূটনৈতিক সাফল্য।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তেহরানকে রাজি করাতে মধ্যস্থতা করেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে এমনটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানির সঙ্গে ইরানের কর্মকর্তাদের ফোনালাপের মাধ্যমেই তেহরানের সম্মতি আদায় হয়েছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারের আমিরকে জানান, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে এবং তেহরানকে রাজি করাতে দোহার সহায়তা চান।
কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ইরানের হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টার মাথায় এই আলোচনা এবং সমঝোতার খবরটি প্রকাশিত হলো।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের জবাব হিসেবেই কাতারে দেশটির আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্বে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে। ওয়াশিংটন আবারও কোনো পদক্ষেপ নিলে তেহরান জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আরাগচি এসব কথা বলেন।
এদিকে ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) দাবি অনুযায়ী, ‘কাতারে অবস্থিত (যুক্তরাষ্ট্রের) আল উদেইদ ঘাঁটিতে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।’
কিন্তু কাতার সরকার জানিয়েছে, ইরান থেকে মোট ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হলেও শুধুমাত্র একটি ঘাঁটিতে গিয়ে আঘাত হেনেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত শনিবার সন্ধ্যায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালানো হয়। এর জবাবে স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান।
ইরান এখনো যুদ্ধবিরতির কোনো প্রস্তাব পায়নি এবং তাদের কাছে এমন কোনো প্রস্তাবের প্রয়োজনও নেই—সিএনএনকে এমনটাই জানিয়েছেন তেহরানের এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘ইরান স্থায়ী শান্তি অর্জনের আগ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য আমাদের কাছে প্রতারণার অংশ, যার মাধ্যমে তারা ইরানে হামলার যুক্তি দাঁড় করাতে চায়।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে শত্রু পক্ষ ইরানের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। আর ইরান প্রতিশোধমূলক হামলা আরও জোরদার করার চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমরা শত্রুর মিথ্যা কথায় কান দিচ্ছি না।’
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ‘ইসরায়েল ও ইরান সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’ নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল তিনি এই ঘোষণা দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েল ও ইরান সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
তিনি জানান, এই যুদ্ধবিরতি একপর্যায়ে চলমান সংঘাতের অবসানের পথে নিয়ে যাবে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে দুই পক্ষের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য আসেনি।
কাতারে আল উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার কথা স্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসির খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, কাতারের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ইরান স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এখনো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এর আগে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কোর (আইআরজিসি) জানায়, কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিমের বরাত দিয়ে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, হামলা চালানোর পর ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ এক বিবৃতিতে বলছে, এই হামলা বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ কাতার বা তার সম্মানিত জনগণের জন্য কোনো হুমকি তৈরি করে না।
ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, এই হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব, আকাশসীমা এবং জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি আরও বলেন, কাতার রাষ্ট্র হিসেবে, এই প্রকাশ্য আগ্রাসনের জবাবে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সরাসরি জবাব দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে।
ইরানের হামলার কারণে স্বল্প সময়ের জন্য আকাশসীমা বন্ধের পর আবার তা খুলে দিয়েছে কাতার। সোমবার (২৩ জুন) রাতে দেশটির রাজধানী দোহার অদূরে যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। ওই সময় নিরাপত্তার জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় দেশটি।
কাতার জানিয়েছে, ইরান ঘাঁটি লক্ষ্য করে মোট ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। যারমধ্যে ১৮টি তারা ভূপাতিত করেছে। তবে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে গিয়ে আঘাত করেছে। যদিও এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
কাতারের আগে কুয়েত এবং বাহরাইনও নিজেদের আকাশসীমা খুলে দেয়। এতে করে দেশগুলোতে খুব কম সময়ের মধ্যে আবারও বিমান চলাচল স্বাভাবিক হবে।
সূত্র: আলজাজিরা
কাতার জানিয়েছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আজ জাজিরা লাইভ প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে, কাতার আরও জানিয়েছে, ইরান থেকে মোট ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার রাতে কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর কথা জানায় ইরান।
হামলার পরপরই কাতার এর নিন্দা জানায়। দেশটির কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, আল-উদেইদ ঘাঁটিতে হামলা ‘কাতারের সার্বভৌমত্ব, আকাশসীমা এবং জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কাতার রাষ্ট্রে, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এই স্পষ্ট আগ্রাসনের সরাসরি জবাব দেওয়ার অধিকার রাখি।’
ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এই হামলাকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে অভিহিত করেছে। সেই সঙ্গে আরও যে কোনো আগ্রাসন আসলে তার বিরুদ্ধেও জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
তাসনিম সংবাদ সংস্থা কর্তৃক প্রচারিত এক কঠোর ভাষায় বিবৃতিতে আইআরজিসি সতর্ক করে দেয়, আরও যে কোনো আগ্রাসন আসলে, তার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের মাধ্যমে জবাব দেওয়া হবে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ইরান তার 'সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা বা জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসনকে কখনো জবাবহীন রাখবে না।'
কাতারের রাজধানী দোহার উপকণ্ঠে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, যার ফলে দোহার একটি অংশ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে। হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
ইসরায়েলি এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস এবং ব্রিটিশ বিবিসি অ্যারাবিক এই হামলার খবর নিশ্চিত করেছে। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার জবাবে এই প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে।
এই ঘটনার পর কঠোর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বার্তায় তিনি বলেন, আমরা কারো ওপর আঘাত হানিনি। তবে কেউ যদি আমাদের ওপর আগ্রাসন চালায়, তাহলে সেটি আমরা কখনোই মেনে নেব না। কোনো পরিস্থিতিতেই না।
তিনি আরও বলেন, ইরানি জাতির যুক্তি খুব পরিষ্কার- আমরা কারো আগ্রাসনের কাছে মাথা নত করব না। আমরা প্রতিরোধ করব, সম্মানের সঙ্গে বাঁচব।
বিশ্লেষকদের মতে, আয়াতুল্লাহ খামেনির এই বক্তব্য কেবল প্রতিক্রিয়ামূলক নয় ; এটি ইরানের ভবিষ্যৎ কৌশলগত অবস্থানেরই প্রতিফলন। এতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, দেশটি আর আগ্রাসনের জবাবে নিরব থাকবে না, বরং প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
এর আগে নিরাপত্তার স্বার্থে কাতার সাময়িকভাবে তার আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং কাতারে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের ঘরের ভেতরে থাকার নির্দেশ দেয় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। এক পশ্চিমা কূটনীতিক জানান, হামলার আগেই আল উদেইদ ঘাঁটির প্রতি হুমকি পাওয়া যাচ্ছিল।
এ হামলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ছয়টি দেশ- সৌদি আরব, জর্ডান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লেবানন ও ফিলিস্তিন।
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলো হামলাকে কাতারের সার্বভৌমত্ব ও আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেছে। কাতার নিজেও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে ‘জাতিসংঘ সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে এমন উত্তেজনা যদি দ্রুত কূটনৈতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে তা আরও বিস্তৃত সংঘাতে রূপ নিতে পারে। এখন আন্তর্জাতিক মহলের নজর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার দিকে, যা এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করতে পারে কি না, সেটিই দেখার বিষয়।
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার 'আগেই জানানোর জন্য' ইরানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। লাইভ প্রতিবেদনে ফক্স নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
নিজের ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প লিখেছেন, আমি ইরানকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের আগেভাগে জানানোর জন্য, যার ফলে কোনো প্রাণহানি হয়নি এবং কেউ আহত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, 'হয়তো ইরান এখন এই অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে এবং আমি উৎসাহের সাথে ইসরায়েলকে একই কাজ করতে উৎসাহিত করব।'
পৃথক আরেক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, 'বিশ্বকে অভিনন্দন, শান্তির সময় এসেছে।'
পরবর্তী আরেক পোস্টে ট্রাম্প কাতারের আমিরকে 'এই অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি যা করেছেন তার জন্য' ধন্যবাদ জানান।
দোহা ইনস্টিটিউটের সমালোচনামূলক নিরাপত্তা অধ্যয়নের সহকারী অধ্যাপক মুহানাদ সেলুম কাতারে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে 'প্রতীকী' বলে বর্ণনা করেছেন।
আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদন অনুসারে, তিনি বলেন, এই হামলার তাৎপর্য হল ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংঘর্ষের তীব্রতা বৃদ্ধি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরান থেকে ইরাকের বাইরে মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার ঘটনা এটিই প্রথম।
মুহানাদ সেলুম বলেন, 'তারা অতীতে ইরাকে এটা করেছিল এবং সম্ভবত ২০০৩ সাল থেকে সেই দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।'
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই আক্রমণগুলো এখন 'স্বাভাবিক' হয়ে উঠেছে। এখন বিষয়টি কাতারের মতো 'তৃতীয় দেশকে' আক্রমণ করে ইরাক ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি, ইতোমধ্যেই খালি করা হয়েছিল, সেখানে কেবল মার্কিন সেনাই নয়, কাতারি সেনারাও আছেন।
তিনি আরও বলেন, 'আমার তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন হলো যে, ইরান ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সম্ভবত কাতারকে আক্রমণ সম্পর্কে অবহিত করেছে। এবং এটি একটি প্রতীকী আক্রমণের মতো দেখাচ্ছে।'
সেলুমের মতে, ইরান এবং আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা দুটি উপায়ে বাড়তে পারে। 'প্রথমটিতে, ইরান হয়তো বলবে এটি মুখ বাঁচানোর চেষ্টা, এবং এখন আলোচনার সময়।' দ্বিতীয়ত তিনি সতর্ক করেন, 'এটি অন্য দিকে বৃদ্ধি পাবে - যা খুবই বিপজ্জনক - কারণ যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই তাদের কর্মীদের লক্ষ্য করে চলমান আক্রমণের জবাব দেবে।'
কাতারে মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কড়া ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'সৌদি আরব দৃঢ় ভাষায় কাতারের বিরুদ্ধে ইরানের আগ্রাসনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন এবং সুপ্রতিবেশীসুলভ নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।'
এতে বলা হয়েছে, 'এটি অগ্রহণযোগ্য এবং কোনো অবস্থাতেই এর ন্যায্যতা দেওয়া যাবে না।'
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, 'সৌদি আরব কাতারের প্রতি তার সংহতি এবং পূর্ণ সমর্থন নিশ্চিত করেছে এবং দেশটিকে যে কোনো পদক্ষেপে সহায়তা করার জন্য তার সমস্ত সক্ষমতা নিয়োজিত করছে।'
এসকে
কাতার ও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা এবং যাওয়া বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
FlightRadar24-এর ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকাশসীমাজুড়ে খুব কম সংখ্যক বিমান উড়ছে।
আবুধাবির বাসিন্দা জেডকে খালিজ টাইমসকে বলেন বলেন, 'কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে এবং আরও কোকো খবর পেলে তারা আপডেট তথ্য জানাবে।'
এদিকে সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান সংস্থা ফ্লাইদুবাই জানিয়েছে, কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর তারা এই অঞ্চলের 'ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে'।
খালিজ টাইমসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ফ্লাইদুবাইয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, 'আমরা এই অঞ্চলের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি... আমাদের যাত্রী এবং ক্রুদের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।'
এর আগে, হামলার কারণে কাতার সরকার তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। উপসাগরীয় দেশটি বলেছে, ইরানের হামলার 'প্রতিশোধ' নেওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে।
ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) কাতারে অবস্থিত মার্কিন আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বাহিনীটি এই হামলাকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে অভিহিত করেছে। সেই সঙ্গে আরও যে কোনো আগ্রাসন আসলে তার বিরুদ্ধেও জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। লাইভ প্রতিবেদনে আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) রাতে কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর আইআরজিসি'র এই বিবৃতি এলো।
আল জাজিরা জানিয়েছে, তাসনিম সংবাদ সংস্থা কর্তৃক প্রচারিত এক কঠোর ভাষায় বিবৃতিতে আইআরজিসি সতর্ক করে দেয়, আরও যে কোনো আগ্রাসন আসলে, তার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের মাধ্যমে জবাব দেওয়া হবে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ইরান তার 'সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা বা জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসনকে কখনো জবাবহীন রাখবে না।'
আইআরজিসি জানিয়েছে, এই অভিযানটি ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয়েছে। আরও উল্লেখ করা হয়, 'জায়নিস্ট সত্তা' ভেঙে না ফেলা পর্যন্ত প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।
কাতারের দোহায় অবস্থিত মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলার পর এক বিবৃতিতে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল বলেছে, এই হামলা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ কাতার এবং এর মহৎ জনগণের বিরুদ্ধে নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি কাতারের আবাসিক এলাকা থেকে দূরে ছিল। এটি সুনির্দিষ্টভাবে মার্কিন অবস্থানেই চালানো হয়েছে।
সুপ্রিম কাউন্সিল বলেছে, ‘এই পদক্ষেপটি বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ কাতার এবং এর মহৎ জনগণের জন্য কোনও হুমকি সৃষ্টি করে না এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কাতারের সাথে উষ্ণ ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এর আগে, কাতার এই হামলাকে তার সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানায়।
মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে হামলার আগে ইরান কাতারকে অগ্রিম সতর্কবার্তা দিয়েছিল। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের বরাতে আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, 'হতাহত কমানোর জন্য' এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
এর আগে, সোমবার রাতে কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন-পরিচালিত সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
আল জাজিরা জানিয়েছে, কাতারে ৬০ একর ভূমিজুড়ে মার্কিন আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি বিস্তৃত। রাজধানী দোহার দক্ষিণ-পশ্চিমে এটির অবস্থিত। এটি মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের 'ফরোয়ার্ড সদর দপ্তর'।
হামলার পর কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, আল-উদেইদ ঘাঁটিতে হামলা 'কাতারের সার্বভৌমত্ব, আকাশসীমা এবং জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন'।
তিনি বলেন, 'আমরা কাতার রাষ্ট্রে, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এই স্পষ্ট আগ্রাসনের সরাসরি জবাব দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করি।'
তিনি আরও বলেন, কাতারের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আক্রমণটি ব্যর্থ করে দিয়েছে এবং ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের সফলভাবে মোকাবেলা করেছে।
#BREAKING Iran gave advance notice to Qatar of attack on American airbase to 'minimize casualties,' reports New York Times pic.twitter.com/8quN4PD8z3
— Anadolu English (@anadoluagency) June 23, 2025
কাতারের আল উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার কথা নিশ্চিত করেছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কোর (আইআরজিসি)। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিমের বরাত দিয়ে আল–জাজিরা এ কথা জানিয়েছে।
এই ঘাঁটিতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।
ইরাক ও কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। দেশটির সংবাদ সংস্থা তাসনিম এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে সিচুয়েশন রুমে অবস্থান করছেন। তার সাথে আছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং জয়েন্ট চিফস।
মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং ইরানের এই হামলার জবাবে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে- তা নিয়ে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ কাতার সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে। দোহা বলছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির আলোকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে তারা প্রতিশোধ নিতে পারে।
আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করা ছাড়াও কাতারের বেশ কিছু স্কুল আগামীকাল বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, কাতারে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস এক ইমেইল বার্তায় জানিয়েছে, ‘সতর্কতার অংশ হিসেবে’ দেশটিতে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
তবে এই সতর্কতার পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করেনি মার্কিন দূতাবাস।
যুক্তরাজ্যের দূতাবাসও দেশটিতে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রে ঘাঁটি ও সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। কাতারে আল উদেইদ নামের বিমানঘাঁটিতে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের ফরওয়ার্ড হেডকোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন-পরিচালিত সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। সোমবার (২৩ জুন) বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স, ইরানের প্রেস টিভি ও ইরাকের গণমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, কাতারে ৬০ একর ভূমিজুড়ে মার্কিন আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি বিস্তৃত। রাজধানী দোহার দক্ষিণ-পশ্চিমে এটি অবস্থিত। এটি মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের 'ফরোয়ার্ড সদর দপ্তর'।
ইরাকের গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইরাকে অবস্থিত মার্কিন 'আই আসাদ ঘাঁটিতে' ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান।
ইরানের প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সন্দেহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
এর আগে রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'সফল আক্রমণ' চালিয়েছে।
ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত ১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়। পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয়পক্ষই হতাহতের খবর দিচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি স্বীকার করেছে।
▶️ More videos from Iranian missiles in the sky in Qatar
— Press TV
Follow: https://t.co/mLGcUTS2ei pic.twitter.com/csJNU3k3dK
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে বলেছেন, যত দিন প্রয়োজন, তত দিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত ইরান। ইসরায়েলের অবৈধ আগ্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইরান এ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।
খতিবজাদে আরও বলেন, ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের ‘অন্যায়’ ও ‘উসকানিমূলক’ হামলা প্রতিরোধে ইরান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’ নিজের দেশকে রক্ষা করতে কত দূর যেতে পারে, তার উদাহরণ হিসেবে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরাক-ইরান যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেন খতিবজাদে। তিনি বলেন, ‘আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।’
উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইরানের পক্ষ থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার এমন ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আরও বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এর আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাঈদ খতিবজাদে বলেছিলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালায়, তবে পুরো মধ্যপ্রাচ্য দোজখে পরিণত হবে।
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে বলেছেন, যত দিন প্রয়োজন, তত দিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত ইরান। ইসরায়েলের অবৈধ আগ্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইরান এ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা সোমবার (২৩ জুন) জানিয়েছেন, হাউস কর্মীদের সরকারি ডিভাইসে এখন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধ থাকবে। রয়টার্স এবং অ্যাক্সিওসের বরাতে দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
হাউসের সকলের কাছে পাঠানো ই-মেইলে উল্লেখকরা হয়েছে, '(হোয়াটসঅ্যাপ) তাদের ব্যবহারকারীদের তথ্য কীভাবে সুরক্ষিত করে সে সম্পর্কে স্বচ্ছতার অভাব, সঞ্চিত তথ্য এনক্রিপশনের অনুপস্থিতি এবং এটি ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত সম্ভাব্য সুরক্ষা ঝুঁকির কারণে সাইবার নিরাপত্তা অফিস হোয়াটসঅ্যাপকে ব্যবহারকারীদের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেছে।'
ই-মেইলে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, 'হাউস (প্রতিনিধি পরিষদ) কর্মীরা কোনো ডিভাইসে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড বা সংরক্ষণ করতে পারবেন না - যার মধ্যে মোবাইল, ডেস্কটপ বা ওয়েব ব্রাউজারও রয়েছে।'
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, 'যাদের হাউস-ম্যানেজড ডিভাইসে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, তাদের সাথে যোগাযোগ করে এটি সরিয়ে ফেলা হবে।'
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুসারে, হোয়াটসঅ্যাপের গ্রহণযোগ্য বিকল্প হিসেবে মাইক্রোসফ্ট টিম, উইকার, সিগন্যাল, আইমেসেজ এবং ফেসটাইম ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় না বসলে ইরানের জনগণের উচিত সরকারকে সরিয়ে দেওয়া। তবে তিনি এ সংকট সমাধানে কূটনীতিতে ‘এখনো আগ্রহী’। হোয়াইট হাউস সোমবার (২৩ জুন) এ কথা জানিয়েছে বলে এএফপির খবরে বলা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট ফক্স নিউজকে বলেন, যদি ইরান সরকার শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক সমাধানে রাজি না হয়, তাহলে ইরানিদের কয়েক দশক ধরে দমনকারী এই (ইরান) সহিংস সরকারের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার অধিকার জনগণের থাকা উচিত নয়? ইরান নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো কূটনীতিতে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার রাতে ইরানে তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় ওয়াশিংটন। এই হামলার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ইরানে ইসরায়েলের হামলায় সরাসরি যুক্ত হয়।
যদিও মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ইরানে সরকার পরিবর্তন নয়। তবে রোববার সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘সরকার বদল হবে না কেন???’
একটি প্রো-রেজিস্ট্যান্স হ্যাকার গ্রুপ 'সাইবারইসনাদফ্রন্ট' ইসরায়েলের সামরিক-সম্পৃক্ত অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘বেনসাইমন অ্যালুমিনিয়াম ইন্ডাস্ট্রি’-এ সাইবার হামলার দাবি করেছে। খবর তাসনিম নিউজি এজেন্সির।
গ্রুপটির ভাষ্য অনুযায়ী, এই হামলার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সম্পূর্ণ অপারেশনাল সিস্টেম অচল করে দেওয়া হয়েছে এবং গোপন সামরিক তথ্য সংগ্রহের পর মূল সার্ভার থেকে তা মুছে ফেলা হয়েছে।
বেনসাইমন কোম্পানিটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, যুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন উচ্চ নিরাপত্তা অবকাঠামো নির্মাণে জড়িত। এসবের মধ্যে রয়েছে ভূগর্ভস্থ সামরিক টানেল, গোপন স্থাপনা এবং সাইবার ইউনিট ৮২০০-এর সঙ্গে যুক্ত।
হ্যাকার গ্রুপটি দাবি করে, তারা যেসব সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করেছে, তা ইতোমধ্যে ‘প্রতিরোধ ফ্রন্টের’ ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এটি ছিল তাদের একটি ধারাবাহিক সাইবার অভিযানের অংশ। এর আগেও তারা ইসরায়েলের অস্ত্র প্রস্তুতকারক রাফায়েল-এর ওপর হামলা চালিয়ে সামরিক সরঞ্জামে কারিগরি ত্রুটি সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করে।
গ্রুপটির ভাষ্য, ‘ইসরায়েলের সামরিক শিল্প এবং প্রতিরক্ষা অবকাঠামোর বড় অংশ এখন ভেঙে পড়েছে কিংবা অকার্যকর হয়ে গেছে’” তারা আরও জানায়, এই ধরনের সাইবার হামলা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সাইবার যুদ্ধ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কে বড় ধরনের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে, যা দেশটির সামরিক সক্ষমতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার (২৩ জুন) ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান বলেছেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার 'আনুপাতিক জবাব' দেওয়া হবে।
মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি উল্লেখ করেছেন, একই সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ওপর ইরানের শাস্তি সর্বোচ্চ শক্তির সাথে অব্যাহত থাকবে।
মুসাভি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের মাটিতে মার্কিন আক্রমণ জবাবহীন থাকবে না। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী মার্কিন আক্রমণের প্রতি দুঃখজনক জবাব দেবে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ট্রাম্পের সমর্থনের লক্ষ্য হলো ইরানের মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়া ভুয়া সরকারকে সাহায্য করা।
তিনি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি ইরানের জনগণের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দেশের সশস্ত্র বাহিনী কোনো আক্রমণকারীর সাথে আপস করবে না।
এর আগে গতকাল রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালায়। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'সফল আক্রমণ' চালিয়েছে।
গত ১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়। পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফ বিভাগ রোববার (২২ জুন) গভীর রাতে 'ইরানে সাম্প্রতিক বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের প্রতি' সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে সমবেদনা জানানোর পর ক্ষমা চেয়েছে।
সিএনএন জানিয়েছে, বার্তাটি অনলাইনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সমালোচকরা ইরানের প্রতি সহানুভূতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এরপর বিতর্কের মুখে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফ বিভাগের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে তা মুছে ফেলা হয়েছে।
পোস্টটিতে শত শত মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। এর মধ্যে একজন ব্যক্তি বলেছেন, 'মূল পোস্টটি খুবই অবিবেচক এবং আমেরিকান জনগণ, আমাদের সেনা সদস্য এবং ইসরায়েলের মুখে চপেটাঘাত। অবিশ্বাস্য!'
বিভাগটি ক্ষমা চেয়ে জারি করা একটি দীর্ঘ বিবৃতিতে বলেছে, 'আমরা পররাষ্ট্র নীতি বা সামরিক বিষয়ে মন্তব্য করি না'। পোস্টটি 'শেরিফ রবার্ট জি লুনা বা বিভাগের মতামত প্রতিফলিত করে না।'
প্রসঙ্গত, লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইরানি অভিবাসীদের বৃহত্তম প্রবাসীদের আবাসস্থল। অর্ধেকেরও বেশি ইরানি অভিবাসী ক্যালিফোর্নিয়ায় এবং এক তৃতীয়াংশেরও বেশি লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকায় বাস করে।
সুইজারল্যান্ডের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ইরানের ওপর মার্কিন হামলা প্রমাণ করে যে, ওয়াশিংটন আর বিশ্ব মঞ্চে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে না, বরং কেবল ইসরায়েলের ইচ্ছা পূরণ করে। জেনেভা ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (GIPRI)-এর সচিব হিচেম লেহমিচি বার্তা সংস্থা তাসকে এ কথা বলেন।
এই বিশেষজ্ঞের মতে, ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন হামলার লক্ষ্য ছিল 'কোনো গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন বা পশ্চিমা স্বার্থ রক্ষা করা' নয়। বরং এই আক্রমণ মূলত 'ইসরায়েলের অতি-ডানপন্থী মেসিয়ানিক শক্তির' যুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
লেহমিচি বিশ্বাস করেন, এটি দেখায় যে, 'ওয়াশিংটন আর ইসরায়েলি নেতৃত্বকে আদেশ দেয় না, বরং (তাদের) মেনে চলে'।
লেহমিসি ইরানের ওপর হামলাকে 'অবৈধ, একতরফা সিদ্ধান্ত' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, 'আন্তর্জাতিক আইন পদদলিত হচ্ছে। সম্মিলিত নিয়ম আর নেই, আমরা বিশ্বের বর্বরতার দিকে পতিত হওয়ার আরেকটি পর্ব উন্মোচিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারছি না।'
এর আগে গতকাল রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালায়। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'সফল আক্রমণ' চালিয়েছে।
গত ১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়। পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইরান বিষয়ক মার্কিন দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এলিয়ট অ্যাব্রামস বিবিসির টুডে প্রোগ্রামে বলেছেন, ইরান বিষয়ে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে অনেক 'ভুল দিক নির্দেশনা' বা 'বিভ্রান্তি' ছড়িয়েছে। খবর বিবিসির।
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইরানে সরকার পরিবর্তনের (রেজিম চেঞ্জ) বিষয়ে বললে এ কথা বলেন আব্রামস। তিনি বলেন, ট্রাম্প হয়তো এটা শুধু 'ঠাট্টা করে' বলেছেন।
অ্যাব্রামস হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার ইরানের হুমকির বিষয়েও কথা বলেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ, যেখানে দিয়ে বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তেল ও গ্যাস পরিবাহিত হয়।
তিনি বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য 'তেমন বড় কোনো সমস্যা নয়।
তিনি আরও বলেন, হ্যাঁ, এটি (পুনরায়) খুলতে কয়েক দিন বা সপ্তাহ লাগতে পারে – তবে এ ব্যাপারে ব্যাপক সমর্থন থাকবে। যদি ইরান সত্যিই প্রণালীটি বন্ধ করে দেয়, তাহলে তারা নিজেরাই নিজেদের গলা কাটবে, কারণ তখন তারা আর তেল রপ্তানি করতে পারবে না।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন বাঙ্কার বাস্টার বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি 'সম্পূর্ণ ও সর্বাংশে ধ্বংস' হয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়ার একদিন পরও কর্মসূচিটির প্রকৃত অবস্থা অনেক বেশি অস্পষ্টই আছে। শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, ইরানের কাছে থাকা প্রায়-বোমা-তৈরির-উপযোগী ইউরেনিয়ামের মজুতের কী পরিণতি হয়েছে, সে সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।
রোববার এবিসি নিউজের এক অনুষ্ঠানে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, 'আগামী সপ্তাহগুলোতে আমরা ওই জ্বালানির বিষয়ে কিছু একটা করার জন্য কাজ করব। এ ব্যাপারে আমরা ইরানিদের সঙ্গে আলোচনা করব।' তিনি এখানে যে ইউরেনিয়ামের কথা বলেছেন, তা দিয়ে ৯-১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যাবে।
তবে ভ্যান্স দাবি করেন, ইরান বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, ওই জ্বালানিকে অস্ত্রে রূপান্তর করার সক্ষমতা ব্যাপকভাবে হারিয়েছে ইরান। কারণ, এ জ্বালানিকে কার্যকর অস্ত্রে রূপান্তরিত করার মতো সরঞ্জাম এখন আর তেহরানের হাতে নেই।
অন্যদিকে ইরান স্পষ্ট বলে দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী নয়। একদিকে বিমান হামলার পরিকল্পনা, অন্যদিকে আলোচনার নামে ধোঁকা দেওয়ার অভিযোগ এনেছে তেহরান ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে। তাছাড়া এই ইউরেনিয়ামের মজুতই এখন ইরানের হাতা থাকা দরকষাকষির অন্যতম হাতিয়ার।
রোববার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও জয়েন্ট চিফস অভ স্টাফের চেয়ারম্যান ড্যান কেইন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বাত্মক সাফল্যের দাবি এড়িয়ে যান। তারা বলেন, বিমানবাহিনীর বি-২ বোমারু বিমান ও নৌবাহিনীর টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, 'ব্যাপক ক্ষতি ও ধ্বংস' হয়েছে।
প্রধান লক্ষ্যবস্তু ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল পর্বতের নিচে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, সেখানে একাধিক স্থানে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এক ডজন ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর পাথরের গভীরে এভাবে ফাটল সৃষ্টি করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রাথমিক বিশ্লেষণ বলছে, এই কেন্দ্রটিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা গেলেও সম্পূর্ণ ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি।
তবে গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কে অবগত দুজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, হামলার আগের কয়েক দিনে ইরান ওই স্থাপনা থেকে ইউরেনিয়াম ও যন্ত্রপাতি অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে।
কাতারে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস উপসাগরীয় দেশটিতে অবস্থিত আমেরিকান নাগরিকদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
কাতারের নাগরিকদের কাছে পাঠানো একটি ই-মেইলে দূতাবাস বলেছে, 'প্রচুর সতর্কতার কারণে আমরা আমেরিকান নাগরিকদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থানে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।' এর বাইরে আর কোনো কিছু বলা হয়নি।
আল জাজিরা জানিয়েছে, উপসাগরীয় দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি অবস্থিত। সেখানে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। এটি মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড বা সেন্টকমের অগ্রবর্তী সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে।
এর আগে গতকাল রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালায়।
হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'সফল আক্রমণ' চালিয়েছে।
গত ১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়।
পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষই হতাহতের খবর দিচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি স্বীকার করেছে।
ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থিত এভিন কারাগারে হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না বা ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কতটা গুরুতর, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এভিন কারাগারটি রাজনৈতিক বন্দীর জন্য কুখ্যাত। এখানে বহু রাজনৈতিক বন্দী, দ্বৈত ও পশ্চিমা নাগরিককে আটক রাখা হয়েছে, যাদের ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রায়শই পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বন্দিবিনিময়ের জন্য ব্যবহার করে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার এক দিন পর ইরান ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এর প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল তেহরানের এই কারাগারসহ একাধিক স্থানে হামলা শুরু করে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলার জন্য ইরানি স্বৈরশাসককে পূর্ণ শক্তি দিয়ে শাস্তি দেওয়া হবে।
এভিন কারাগার ছাড়াও ইসরায়েলি বিমানবাহিনী আজ সোমবার অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতেও হামলা চালিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আধা সামরিক ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) নিরাপত্তা সদর দপ্তর, তেহরানের ফিলিস্তিন স্কয়ার ও আধা সামরিক বাসিজ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, যা আইআরজিসির একটি অংশ।
পাকিস্তানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি প্রতিবেশী ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিষয়ে বিশ্বের নীরবতার কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানকেও সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি আমরা ইরানিদের পক্ষে কথা না বলি, তাহলে তারা (ইসরায়েলিরা) যখন আমাদের ধরতে আসবে তখন আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। খবর জিও নিউজের
সোমবার (২৩ জুন) পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় বিলাওয়াল বলেন, 'প্রথমে, তারা ফিলিস্তিনিদের জন্য এসেছিল, কিন্তু বিশ্ব কথা বলেনি, কারণ তারা ফিলিস্তিনি ছিল না। তারপর তারা লেবানিজদের জন্য এসেছিল, কিন্তু আমরা কথা বলিনি, কারণ আমরা লেবানিজ ছিলাম না। এবং তারপর তারা ইয়েমেনিদের জন্য এসেছিল, কিন্তু আমরা কথা বলিনি, কারণ আমরা ইয়েমেনের নই।'
তিনি বলেন, 'এখন, তারা ইরানের জন্য এসেছে। আমরা যদি কথা না বলি, তাহলে তারা যখন আমাদের জন্য আসবে তখন আর কেউ থাকবে না। এই অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি সরকারের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে।'
জিও নিউজ জানিয়েছে, পাকিস্তানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য - মার্টিন নিমোলারের 'ফার্স্ট দে কাম' কবিতার একটি উদ্ধৃতির সঙ্গে মিলে যায়। ইরানে ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা বৃদ্ধির পটভূমিতে তার এসব মন্তব্য এলো।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়।
পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষই হতাহতের খবর দিচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি স্বীকার করেছে।
ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনার মধ্যে গতকাল রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালায়। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'সফল আক্রমণ' চালিয়েছে। এরপর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত আরও বেড়ে চলেছে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) সদর দপ্তরে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সোমবার (২৩ জুন) ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এই তথ্য জানায়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইরানের রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন অংশে বিশাল ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ছে। এসব এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক হামলার খবর পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজগুলো যাচাই করেছে আল জাজিরা।
এর আগে, তেহরান থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক আলী হাশেম জানিয়েছিলেন, শহরের উত্তর অংশে কমপক্ষে তিনটি ‘বিশাল বিমান হামলা’ হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, আমাদের সেনাবাহিনী ‘তেহরানের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সরকারী লক্ষ্যবস্তু ও দমনকারী সংস্থাগুলো’ লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
সোমবার (২৩ জুন) এক্স পোস্টে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী লেখেন, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) সদর দপ্তর, আইআরজিসির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সদর দপ্তর, এভিন কারাগার ও ফিলিস্তিন স্কয়ারে অবস্থিত ‘ইসরায়েল ধ্বংস’ ঘড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলে ছোড়া প্রতিটি ‘গুলির’ জন্য, ইরানি ‘স্বৈরশাসককে’ শাস্তি দেওয়া হবে ও পূর্ণ শক্তিতে আক্রমণ চলতে থাকবে।
সূত্র: আল জাজিরা ও এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। এর পরপরই প্রণালিটি খোলা রাখতে চীনকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, দেশটির পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রোববার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমি চীন সরকারকে বলব তারা যেন ইরানকে এই পদক্ষেপ থেকে বিরত রাখে। কারণ চীন তাদের তেলের জন্য হরমুজ প্রণালির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।'
তিনি আরও বলেন, 'যদি ইরান প্রণালিটি বন্ধ করে, তবে এটি হবে তাদের জন্য অর্থনৈতিক আত্মহত্যা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, তবে অন্য দেশগুলোরও বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। কারণ এতে আমাদের চেয়ে অন্য দেশের অর্থনীতি অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'
হরমুজ প্রণালি বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সরবরাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুট। বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশগুলো এই জলপথ ব্যবহার করেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি সরবরাহ করে। ফলে এই পথে জাহাজ চলাচল ব্যাহত হলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম আকাশচুম্বী হতে পারে।
এরই মধ্যে ইরানের হুমকির পর তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে বিশ্ববাজারে। সোমবার অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮১ দশমিক ৪০ ডলারে পৌঁছায়, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও পরে তা কিছুটা কমে ৭৮ ডলারে স্থির হয়।
এমএসটি ফিন্যান্সিয়ালের জ্বালানি গবেষণা প্রধান সল কাভোনিক বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে যেকোনো পাল্টা হামলা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু ঝুঁকি হলো, পরিস্থিতি আরও মারাত্মক রূপ নিলে তেলের দামও দ্রুত বাড়তে পারে।'
অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়ে গাড়ির জ্বালানি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ওপর।
চীন বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ইরান থেকে বেশি তেল কেনে। জাহাজ ট্র্যাকিং সংস্থা ভর্টেক্সার তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ইরান থেকে চীনের তেল আমদানি দৈনিক ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো এশিয়ার অন্যান্য বড় অর্থনীতির দেশগুলোও হরমুজ প্রণালির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
এদিকে, ইরানে মার্কিন হামলার বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। সোমবার বেইজিং বলেছে, মার্কিন হামলা ওয়াশিংটনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং সব পক্ষকে 'শক্তি প্রয়োগ' থেকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস বলেছে, মার্কিন হস্তক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে এবং সংঘাতকে 'নিয়ন্ত্রণহীন' দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
জ্বালানি বিশ্লেষক বন্দনা হরি বিবিসিকে বলেন, প্রণালিটি বন্ধ করে দিলে ইরানের 'লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে'। কারণ এর মাধ্যমে ইরান কেবল উপসাগরীয় প্রতিবেশী দেশগুলোকেই শত্রু বানাবে না, বরং তাদের তেলের প্রধান বাজার চীনকেও ক্ষুব্ধ করবে।
সূত্র: বিবিসি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে রাশিয়া ইরানকে বিভিন্ন ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তুত, তবে তেহরান কী সহায়তা চায়, তা স্পষ্ট করে বলার দায়িত্ব তাদের।
বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, এক ব্রিফিংয়ে পেসকভ বলেন, 'আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছি, যা ইরানি পক্ষের জন্য সমর্থনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রূপ। ভবিষ্যতে সবকিছুই নির্ভর করবে এই মুহূর্তে ইরানের কী প্রয়োজন, তার ওপর।'
আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মস্কো কী কী বাধ্যবাধকতা নিতে প্রস্তুত এবং ইরানকে এস-৩০০ এবং এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত কি না জানতে চাইলে পেসকভ আবারও পুনর্ব্যক্ত করেন, 'সবকিছু (নির্ভর করে) ইরানি পক্ষ কী বলে, আমাদের ইরানি বন্ধুরা যা বলে, তার উপর নির্ভর করছে।'
ব্রিফিংয়ে তিনি পুতিনের মধ্যস্থতার প্রস্তাবের কথাও উল্লেখ করেন। বলেন, আমরা আমাদের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টার প্রস্তাব দিয়েছি, এটি সুনির্দিষ্ট একটি বিষয়।
গত ১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়। পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষই হতাহতের খবর দিচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি স্বীকার করেছে।
এ অবস্থায় গতকাল রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালায়। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'সফল আক্রমণ' চালিয়েছে।
ইসরায়েল যখন ইরানে হামলা শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরুতে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি এমন এক পথে এগিয়ে যান যা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলে পরিচালিত এক ব্যাপক বোমা হামলার অভিযানে রূপ নেয়।
হোয়াইট হাউসের ব্রিফিং রুমে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট একটি বার্তা পড়ে শোনান, তিনি বলেছিলেন এটি 'সরাসরি প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এসেছে।'
বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ইরানের সঙ্গে 'আলোচনার যথেষ্ট সুযোগ' থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তাই তিনি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ইরানে হামলা করবেন কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
ট্রাম্পের নিজের দলে যারা এই সংঘাতে জড়াতে চায়নি তাদের চাপের মধ্যে ছিলেন তিনি। সেদিন দুপুরে বোমা হামলার অন্যতম বিরোধী স্টিফেন কে. ব্যাননের সঙ্গে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন ট্রাম্প। যা থেকে মনে হচ্ছিল যে ট্রাম্প হয়তো হামলা থেকে বিরত থাকবেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এর প্রায় পুরোটাই ছিল প্রতারণা। ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমা ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন এবং জটিল এই আক্রমণের জন্য সামরিক প্রস্তুতিও চলছিল পুরোদমে। লেভিট প্রেসিডেন্টের বক্তব্য পড়ে শোনানোর ৩০ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ট্রাম্প ইরানে হামলার নির্দেশ দেন। এই হামলার ফলে বিশ্বের অন্যতম অস্থির অঞ্চলের চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের এই 'দুই সপ্তাহ' বিষয়ক বিবৃতিটি ছিল রাজনৈতিক ও সামরিক বিভ্রান্তির বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। ইসরায়েলের ইরানের বিরুদ্ধে প্রথমদিনের হামলা থেকে শুরু করে মিসৌরি থেকে বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমানের ইরানের উদ্দেশ্যে উড়ে যাওয়া পর্যন্ত—এই আট দিন ধরে এটি চলে। ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পর এটিই ছিল দেশটির ভেতরে প্রথম মার্কিন সামরিক হামলা।
প্রশাসনের কর্মকর্তা, ট্রাম্পের মিত্র ও উপদেষ্টারা, পেন্টাগনের কর্মকর্তা এবং এই ঘটনাগুলির সঙ্গে পরিচিত অন্যান্যদের সাথে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জানা যায় যে, এই বিশৃঙ্খল সময়ে ট্রাম্পের সহযোগীদের বিভিন্ন গোষ্ঠী কীভাবে একজন অস্থির প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল। প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ, কূটনীতি, নাকি উভয়ের সমন্বয় বেছে নেবেন তা নিয়ে দোদুল্যমান ছিলেন।
ট্রাম্প সে সময় কার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন, তা দেখে বাইরের পর্যবেক্ষকরা বোঝার চেষ্টা করছিলেন কোন গোষ্ঠী তখন তার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে। ট্রাম্প নিজেই সাংবাদিকদের আনন্দিত ভঙ্গিতে বলেছিলেন, 'তিনি ডেডলাইনের এক সেকেন্ড আগেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কারণ পরিস্থিতি বদলায়, বিশেষ করে যুদ্ধের ক্ষেত্রে।'
এরই মধ্যে, ট্রাম্প উস্কানিমূলক বিবৃতি দিচ্ছিলেন যা ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে তিনি দেশকে সংঘাতে জড়াতে চলেছেন। গত সোমবার তিনি তার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, 'সবার তেহরান ছেড়ে যাওয়া উচিত!' পরের দিন তিনি পোস্ট করেন তিনি কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলন কোনো মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিতে ছেড়ে আসেননি বরং 'আরও বড় কিছু'র জন্য এসেছেন। এরপর তিনি বিশ্বকে বলেন, 'সঙ্গেই থাকুন!'
ট্রাম্পের এই ধরনের প্রকাশ্য ঘোষণায় পেন্টাগন এবং ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডে দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়ে। সামরিক পরিকল্পনাবিদরা ভাবতে শুরু করেন, ট্রাম্প হয়তো ইরানকে আসন্ন হামলার ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক করে দিচ্ছেন।
তাই তারা হামলার কৌশলে বিভ্রান্তিমূলক ব্যবস্থা যোগ করেছিল। বি-২ বোমারু বিমানের একটি দ্বিতীয় দল মিসৌরি থেকে যাত্রা করে প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে পশ্চিম দিকে যাবে, যা শনিবার ফ্লাইট ট্র্যাকাররা সহজেই শনাক্ত করতে পারবে। এর ফলে অনেক পর্যবেক্ষক এবং সম্ভবত ইরানও ভুল ভেবে বসে—হামলার সময় এবং দিক সম্পর্কে, কারণ আসল হামলাটি এসেছিল একেবারে ভিন্ন দিক থেকে।
যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেন যে তিনি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে তার দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে—তার আগেই হামলার প্রস্তুতি চূড়ান্ত ছিল। জ্বালানিভর্তি ট্যাংকার ও যুদ্ধবিমানগুলো নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর জন্য অতিরিক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থাও চলছিল।
'দুই সপ্তাহ' মন্তব্যটি প্রেসিডেন্টকে শেষ মুহূর্তের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য কিছু অতিরিক্ত সময় এনে দিলেও সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, এই কৌশলগত বিভ্রান্তি এবং বি-২ বোমারু বিমানের ভুয়া গতিপথের পরিকল্পনার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল একটি জটিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়া — যা অনেকটাই প্রেসিডেন্টের কারণে তৈরি হয়েছিল। তিনি আক্রমণের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন।
এই প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য চাইলে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, প্রেসিডেন্ট ও তার দল 'ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো নিয়ে ইতিহাসের অন্যতম জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন।' তিনি আরও বলেন, 'অনেক প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে শুধু কথা বলেছেন, কিন্তু কেবল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই সাহস দেখিয়েছেন তা বাস্তবায়নে।'
ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুর মাসগুলোতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ইরানে হামলা না করার ব্যাপারে সতর্ক করে আসছিলেন। কিন্তু গত ১৩ জুন, শুক্রবার সকালে প্রথম ইসরায়েলি হামলার কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প তার সুর পাল্টে ফেলেন।
তিনি তার উপদেষ্টাদের কাছে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রশংসা করেন, যাকে তিনি 'অসাধারণ' বলে অভিহিত করেন। 'নিখুঁত' হামলায় ইরানের সামরিক নেতৃত্বের মূল ব্যক্তিরা নিহত হন এবং কৌশলগত অস্ত্রের স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। ট্রাম্প তার সেলফোনে সাংবাদিকদের কল ধরেন এবং এই অভিযানকে 'চমৎকার' ও অত্যন্ত সফল' বলতে শুরু করেন। এমনকি তিনি ইঙ্গিত দেন যে, এই অভিযানে তার ভূমিকা অনেক বেশি ছিল—মানুষ যতটা জানে তার চেয়েও বেশি।
সেদিন পরবর্তীতে ট্রাম্প এক ঘনিষ্ঠ মিত্রের কাছে জানতে চান ইসরায়েলের এই হামলাগুলো কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে। তিনি বলেন, 'সবাই' তাকে আরও সক্রিয় হতে বলছে। এর মধ্যে তেহরানের দক্ষিণে পাহাড়ি এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফোরদোতে ৩০ হাজার পাউন্ডের জিবিইউ-৫৭ বোমা ফেলাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পরদিন ট্রাম্প আরেক উপদেষ্টাকে বলেন, তিনি ফোরদোতে 'বাংকার বাস্টার' বোমা ব্যবহারের কথা ভাবছেন। একই সাথে তিনি এই বোমার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা এবং এই ধরনের বোমা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই আছে, এই দুটি বিষয়ে গর্ববোধ করেন। সেই উপদেষ্টা কথোপকথন শেষে নিশ্চিত হন যে, ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমা ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন।
একই সময়ে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল যে যুক্তরাষ্ট্র দৃশ্যমানভাবে যুদ্ধে জড়ালে তাদের সবচেয়ে প্রভাবশালী সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
তারা বিশেষভাবে নজর রাখছিলেন প্রভাবশালী পডকাস্টার ও ফক্স নিউজের সাবেক সঞ্চালক টাকার কার্লসনের বক্তব্যের দিকে। কার্লসন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের সাথে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তার কিছু মন্তব্যে ট্রাম্প এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে তিনি তাকে নিয়ে প্রকাশ্যে ও ব্যক্তিগতভাবে অভিযোগ করতে শুরু করেন।
ট্রাম্পের রাজনৈতিক উপদেষ্টারা বিভিন্ন প্রকাশ্য ও গোপন জনমত জরিপ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালাচ্ছিলেন, যেখানে দেখা যাচ্ছিল—যুক্তরাষ্ট্র ইরানে সামরিক অভিযান চালাবে কি না, তা নিয়ে জনসমর্থন অনেকটাই নির্ভর করছে প্রশ্নটি কীভাবে করা হচ্ছে তার ওপর। যদিও অধিকাংশ জরিপে দেখা যায়, আমেরিকানদের বিপুল অংশই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না, তবুও অধিকাংশই চান না ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করুক।
ট্রাম্প নিয়মিত ফক্স নিউজ দেখছিলেন, যেখানে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ব্যাপক প্রশংসা করা হচ্ছিল এবং অতিথিরা ট্রাম্পকে আরও সরাসরি যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছিলেন। ট্রাম্পের কয়েকজন উপদেষ্টা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, কার্লসন এখন আর ফক্স নিউজে নেই, যার ফলে ট্রাম্প বিতর্কের অন্য দিকটি খুব একটা শুনতে পাচ্ছিলেন না।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে ইরানে সম্ভাব্য মার্কিন হামলা নিয়ে আলোচনা চরমে ওঠে ১৫ জুন যেদিন ট্রাম্প কানাডার জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিতে রওনা দেন। উপদেষ্টাদের মতে, ট্রাম্প ধীরে ধীরে হামলার অনুমোদনের দিকে এগোচ্ছিলেন—যদিও একই সঙ্গে তিনি বলছিলেন, ইসরায়েল যদি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার চেষ্টা করে সেটা হবে 'বোকামি'।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে হামলা চালায়, তবে তার লক্ষ্য হওয়া উচিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা—সরকার পতন ঘটানো নয়।
তখনও পর্যন্ত, পেন্টাগন এবং টাম্পার ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের একটি ছোট দল ফোরদোর স্থাপনা এবং ইরানের অন্যান্য পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার পরিকল্পনাগুলো নিয়ে কাজ করা শুরু করে দিয়েছিল, যা সামরিক পরিকল্পনাকারীরা কয়েক বছর আগেই তৈরি করেছিলেন।
এই পরিকল্পনার নেতৃত্বে ছিলেন সেন্টকমের কমান্ডার জেনারেল মাইকেল এরিক কুরিলা এবং যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ারম্যান অব জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ জেনারেল ড্যান কেইন।
মিসৌরির হোয়াইটম্যান এয়ার বেসে অবস্থিত বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমানগুলোই একমাত্র যুদ্ধবিমান যা ইরানি রাডারে ধরা পড়া ছাড়া জিবিউই-৫৭ বোমা ফেলতে সক্ষম। বি-২ বোমারু বিমানের পাইলটরা দূরপাল্লার এই মিশনের জন্য ব্যাপক মহড়া করেছে- যেমন, আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া, একাধিকবার জ্বালানি ভরে নেওয়া এবং শেষ পর্যায়ে ফাইটার জেটের সঙ্গে মিলিত হয়ে ইরানে প্রবেশ করা।
কিন্তু সামরিক পরিকল্পনা গোপনে চলার মধ্যেই, ট্রাম্পের প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট যেন আগাম ঘটনার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। একজন সামরিক কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্টই ছিলেন 'অপারেশনাল সিকিউরিটির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।'
হামলার পরিকল্পনায় বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য, সামরিক কর্মকর্তারা প্রায় একই সময়ে মিসৌরি থেকে বি-২ বোমারু বিমানের দুটি গ্রুপকে যাত্রা করানোর সিদ্ধান্ত নেন। একটি গ্রুপ পশ্চিম দিকে গুয়ামের দিকে উড়ে যাবে, তাদের ট্রান্সপন্ডার চালু থাকবে যাতে বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট কোম্পানিগুলো তাদের ট্র্যাক করতে পারে। অন্য সাতটি বোমারু বিমানের একটি গ্রুপ ট্রান্সপন্ডার বন্ধ রেখে বোমা নিয়ে পূর্ব দিকে ইরানের দিকে উড়ে যাবে, যা ধরা পড়বে না।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে, ইরানে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর, জেনারেল কেইন গুয়ামের দিকে যাওয়া বহরটিকে 'ডিকয়' বা কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেন।
১৭ জুনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানে হামলার বিষয়ে মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু তিনি তার জবরদস্তিমূলক কূটনীতিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকিমূলক বার্তার মাধ্যমে।
তিনি ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেন, 'ইরানের আকাশ এখন আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।' তিনি আরও যোগ করেন, 'তথাকথিত সর্বোচ্চ নেতা' কোথায় লুকিয়ে আছেন, তা আমরা জানি। তিনি সহজ লক্ষ্য, কিন্তু সেখানে তিনি নিরাপদ—আমরা তাকে এখনই হত্যা করব না।'
এরপর তিনি বড় অক্ষরে লেখেন, 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ!'
এই সময়ে ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা যুদ্ধবিরোধী ছিলেন তারা বুঝতে পারেন যে প্রেসিডেন্টকে সম্ভবত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত করা থেকে বিরত রাখা যাবে না। তাই তারা তাদের মনোযোগ ঘুরিয়ে এই যুদ্ধ যাতে 'ক্ষমতা পরিবর্তনের' যুদ্ধে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন।
১৭ জুন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিরিজ পোস্ট দেন, যেগুলো অনেক যুদ্ধবিরোধী উপদেষ্টা মনে করেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন এবং প্রেসিডেন্টের সম্ভাব্য সিদ্ধান্তকে আগে থেকেই রক্ষা করার প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
ভ্যান্স তার বহুল প্রচারিত পোস্টে লেখেন, 'তিনি (ট্রাম্প) হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার জন্য তাকে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টেরই।'
'এবং অবশ্যই গত ২৫ বছরের বোকামিপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতির পরে বিদেশি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে মানুষের চিন্তিত হওয়া স্বাভাবিক। তবে আমি বিশ্বাস করি প্রেসিডেন্ট এই বিষয়ে কিছুটা আস্থা অর্জন করেছেন।'
প্রভাবশালী অ্যাক্টিভিস্টরা আলোচনাকে নতুন দিকে মোড় ঘোরানোর জন্য কাজ শুরু করেন। কারণ বোমা হামলার পর কী হতে পারে, তা নিয়ে একটা বিতর্ক দানা বাঁধছিল: ইরানে ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য যুদ্ধে জড়ানো উচিত কি না।
হামলার দুদিন আগে প্রভাবশালী অ্যাক্টিভিস্ট চার্লি কার্ক এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছিলেন, 'ক্ষমতা পরিবর্তন এই অভিযানের নতুন লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। আমেরিকার উচিত এ বিষয়ে শিক্ষা নেওয়া এবং ক্ষমতা পরিবর্তনের যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়া।'
ট্রাম্প যখন নিজের যুদ্ধংদেহী বিবৃতি পোস্ট করছিলেন, তখন টেলিভিশনে বিশেষজ্ঞদের ফোরদোতে তার সম্ভাব্য হামলার আগাম বার্তা দেওয়া দেখে তিনি বিরক্ত হচ্ছিলেন। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল যখন খবর প্রকাশ করে যে, তিনি অভিযানের সব প্রস্তুতি শুরু করার সবুজ সংকেত দিয়েছেন কিন্তু চূড়ান্ত নির্দেশ দেননি, তখন তিনি ক্ষিপ্ত হন।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেতে যোগ দেন স্টিভেন কে. ব্যানন, যিনি ইসরায়েলের সাথে ইরানের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার অন্যতম প্রধান সমালোচক। যুদ্ধবিরোধী শিবিরের কিছু আশাবাদী মানুষ এই বৈঠককে ট্রাম্পের পিছু হটার লক্ষণ হিসেবে ধরে নেন।
ব্যানন হোয়াইট হাউসে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর যখন ক্যারোলিন লেভিট ট্রাম্পের বিবৃতি পড়ে শোনান, তখন সেই ধারণা আরও জোরালো হয়। লেভিট জানান যে, ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। জটিল বিষয়ে যখন তার কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকত না, তখন তিনি প্রায়শই এই ধরনের সময়সীমার কথা বলতেন।
তবে ট্রাম্প স্টিভেন কে. ব্যাননের সাথে দেখা করার আগেই লেভিটের বিবৃতিটি তৈরি করে দিয়েছিলেন। এটি ছিল একটি পরিকল্পিত বিভ্রান্তি, যার উদ্দেশ্য ছিল প্রেসিডেন্টের জন্য কিছুটা সময় কেনা এবং একই সাথে বোঝানো যে হামলা শিগগির হবে না।
সেই সময় পর্যন্ত ট্রাম্প ইরানের ওপর হামলা নিয়ে যারা সন্দিহান ছিলেন তাদের কথা শুনতে এবং এর সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিণতি—যেমন তেলের দামে প্রভাব, ইরানে গৃহযুদ্ধ এবং সম্ভাব্য শরণার্থী সংকট এবং এর পাশাপাশি প্রতিশোধমূলক হামলার সম্ভাবনা যা যুক্তরাষ্ট্রকে একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে টেনে আনতে পারে—এইসব আশঙ্কা নিয়ে আলোচনা শুনতেন।
শুক্রবার বিকেলে ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে তার গ্রীষ্মকালীন প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র, নিউ জার্সির বেডমিনস্টারে অবস্থিত তার ক্লাবে একটি তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে যান। এটিও এই ধারণাকে আরও জোরালো করে যে, কোনো হামলা আসন্ন নয়।
কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে ট্রাম্প সামরিক বাহিনীকে তার ইরান অভিযান শুরু করার নির্দেশ দেন। মিসৌরি থেকে ইরানে বি-২ বোমারু বিমানগুলোর উড়তে ১৮ ঘণ্টা সময় লাগবে জেনেও তিনি বুঝতে পারছিলেন যে তার কাছে মন বদলানোর জন্য আরও সময় আছে, যেমনটা তিনি ২০১৯ সালে করেছিলেন, যখন ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলার নির্দেশের পরও বাতিল করেছিলেন।
তবে তার প্রশাসনে খুব কম লোকই বিশ্বাস করেছিল যে এবার তিনি পিছু হটবেন।
একটি জটিল ও সুসংগঠিত সামরিক অভিযান শুরু হয় শুক্রবার রাতে। বি-২ বোমারু বিমানের দুটি বহর বিপরীত দিকে উড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর, ইরানের দিকে যাত্রা করা বোমারু বিমানগুলো যুদ্ধবিমানের সাথে যোগ দেয় এবং ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে।
মার্কিন সাবমেরিন নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ৩০টি টোমাহক ক্রুজ মিসাইল ছোড়ে।
রোববার পেন্টাগনের ব্রিফিংয়ে জেনারেল কেইন জানান, বিমানগুলো ফোরদো ও নাতাঞ্জের কাছে পৌঁছালে যুদ্ধবিমানগুলো বোমারু বিমানের সামনে এসে ইরানের যে কোনো সম্ভাব্য সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল প্রতিরোধ করার জন্য আঘাত হানে।
রোববার ইরানের স্থানীয় সময় ভোররাত ২টা ১০ মিনিটে প্রধান বোমারু বিমান ফোরদো সাইটে দুটি জিবিইউ-৫৭ বোমা ফেলে। স্থাপনাটি পর্বতের গভীরে এবং কয়েকশ ফুট কংক্রিটের নিচে অবস্থিত। এই অভিযান শেষ হওয়ার আগে মোট ১৪টি 'বাঙ্কার বাস্টার' বোমা ফেলা হয়, যা যুদ্ধে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হলো।
পেন্টাগনের কর্মকর্তারা রোববার জানান যে, আমেরিকান বোমারু বিমান ও জেট ফাইটারগুলো কোনো শত্রুর হামলার মুখে পড়েনি।
মার্কিন বিমানগুলো ইরানের আকাশসীমা ত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টা পর, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বিজয়ী ভাষণ দেন। তিনি বলেন, এই অভিযান ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা 'সম্পূর্ণ ও পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন' করে দিয়েছে। তিনি ইঙ্গিত দেন যে, যদি ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি ছেড়ে দেয় এবং আলোচনায় বসে তবে এই একটি অভিযান দিয়েই যুদ্ধের অবসান হতে পারে।
তবে রোববার দুপুর নাগাদ মার্কিন কর্মকর্তারা আগের রাতের আশাবাদ কমিয়ে আনেন। তারা বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো হয়তো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি।
ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স স্বীকার করেন, ইরানের কাছে থাকা বোমা তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়ামের মজুদ কোথায় আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তিনি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জোর দিয়ে বলেন যে, তেহরানে ক্ষমতা পরিবর্তন যার অর্থ দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়া সেটি তাদের লক্ষ্য ছিল না।
কিন্তু ট্রাম্প যার অভিযান শুধু মিত্রদের কাছ থেকেই নয়, তার কিছু সমালোচকদের কাছ থেকেও প্রশংসা পেয়েছিল, তিনি ততক্ষণে অন্য চিন্তায় চলে গেছেন। ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে তিনি ইঙ্গিত দেন যে, তার লক্ষ্য হয়তো পরিবর্তন হতে পারে।
তিনি লিখেছেন, 'ক্ষমতা পরিবর্তন' শব্দটি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক নয়, কিন্তু যদি বর্তমান ইরানি শাসন ইরানকে আবার মহান করতে না পারে, তাহলে কেন ক্ষমতা পরিবর্তন হবে না???'
রুশ সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তির ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার বরাতে জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আল-হাসাকাহ প্রদেশে একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) ওয়াকিবহাল সূত্র মেহের নিউজ এজেন্সিকে জানিয়েছে, সিরিয়ায় একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। হামলার লক্ষ্য ছিল সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় হাসাকা প্রদেশের কাসরুক এলাকায় অবস্থিত একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি।
তবে কোথা থেকে হামলা হয়েছে, এ বিষয়ে সংবাদ সংস্থাটি বিস্তারিত আর কোনো তথ্য জানায়নি।
এর আগে ২২ জুন রাতে নাতানজ, ফোরদো এবং ইসফাহানে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের ভাষ্য, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা বা গুরুতরভাবে দুর্বল করা। তবে মার্কিন হামলা আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, কূটনীতির দরজা সর্বদা খোলা থাকা উচিত, কিন্তু এখন 'তা নয়'। যুক্তরাষ্ট্রই কূটনীতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ইরান তার নিরাপত্তা এবং দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
রাশিয়াও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলোর চরম লঙ্ঘন। মস্কো 'IAEA'-এর থেকে এই ঘটনার 'সৎ প্রতিক্রিয়া' আশা করেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচিকে ক্রেমলিনে স্বাগত জানিয়েছেন। আলোচনার শুরুতে পুতিন বলেছেন, রাশিয়া ইরানি জনগণকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল প্রতিদিন ইরানে হামলা চালিয়ে আসছে। ২২ জুন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার দলে এই সংঘাত বিশেষভাবে তীব্র হয়ে ওঠে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির পটভূমিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
স্বাগত বক্তব্যে পুতিন আরাঘচিকে বলেন, 'প্রিয় মন্ত্রী, আপনাকে দেখে আমি খুবই আনন্দিত। আপনি রাশিয়া সফর করছেন এমন এক নাটকীয় মুহূর্তে, যখন এই অঞ্চল এবং আপনার দেশের আশেপাশের পরিস্থিতি তীব্রতর হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'ইরানের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের, ভালো, নির্ভরযোগ্য সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে, আমরা ইরানি জনগণকে সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করছি।'
রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যা ঘটছে সে সম্পর্কে মস্কোর অবস্থান সুপরিচিত এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি ইতোমধ্যে নির্ধারণ করেছে। ইরানের বিরুদ্ধে বিনা উস্কানিতে আগ্রাসনের কোনো ভিত্তি বা ন্যায্যতা নেই।
পুতিন বলেন, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধানের রাশিয়া সফর আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা যায়, তা নিয়ে আলোচনা এবং চিন্তাভাবনা করার সুযোগ করে দেবে।
এ সময় আরাঘচি উল্লেখ করেন, ইরানের ওপর ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। তেহরান তেল আবিব এবং ওয়াশিংটনের কর্মকাণ্ডকে অবৈধ বলে মনে করে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের আত্মরক্ষার বৈধ অধিকার রয়েছে।
তিনি বলেন, 'এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানানোর জন্য আমরা রাশিয়াকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই। রাশিয়া আজ ইতিহাস এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঠিক দিকে রয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা (আলি খামেনি) এবং প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান আমাকে আপনার কাছে তাদের শুভেচ্ছা জানাতে বলেছেন।'
ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ বলেছেন, জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থার অপেশাদার আচরণের প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে তেহরানের সহযোগিতা স্থগিত করার জন্য আইনসভা একটি বিল বিবেচনা করছে।
সোমবার (২৩ জুন) পার্লামেন্টের অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে কালিবাফ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ ধরণের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।
পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে সর্বোচ্চ নেতার জারি করা একটি ধর্মীয় ফরমানের কথা তুলে ধরে পার্লামেন্ট স্পিকার বলেন, ইরানের শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের বাইরে কোনো পরিকল্পনা নেই, কিন্তু বিশ্ব স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করেছে যে, আইএইএ কোনো প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। সংস্থাটি একটি রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
কালিবাফ বলেন, ইরানের পার্লামেন্ট আইএইএ'র সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা স্থগিত করার বিষয়ে একটি বিল পাস করার কথা বিবেচনা করছে - যতক্ষণ না তেহরানকে জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থার পেশাদার আচরণের বাস্তব নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
মেহের নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইসরায়েলি সরকারের ব্যর্থতার পর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন সামরিক হামলাকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরাসরি 'আমেরিকার অংশগ্রহণের ঘোষণা' হিসেবে নিন্দা করে পার্লামেন্ট স্পিকার বলেন, 'যদিও আমরা এই আমেরিকান আক্রমণকে ইসরায়েলি সরকারের লক্ষ্য অর্জনে কৌশলগত ব্যর্থতার ফলস্বরূপ বিবেচনা করি, কিন্তু আমরা এটি সহ্য করব না। আমরা অবশ্যই এমন একটি প্রতিক্রিয়া দেব, যা জুয়াড়ি ট্রাম্পকে আমাদের প্রিয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য অনুতপ্ত করবে।'
এর আগে গতকাল রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালায়। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'সফল আক্রমণ' চালিয়েছে।
গত ১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়।
পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষই হতাহতের খবর দিচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি স্বীকার করেছে। ইরানি কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায় তেহরান 'নিজস্ব বিকল্প' অবলম্বন করার অধিকার রাখে।
ইসরায়েলে টানা সাইরেন বেজে চলেছে, আর তার সঙ্গে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠছে বিভিন্ন শহর। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান থেকে প্রচুর সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যার ফলে সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলার সতর্কতা হিসেবে সাইরেন বেজে উঠেছে।
বিশেষ করে আসদোদ, লাচিস এবং পশ্চিম জেরুজালেমের আশপাশে একাধিক জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে জানা গেছে। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, জেরুজালেমে সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গেই নেসেটের (ইসরায়েলি সংসদ) সদস্যরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।
এদিকে সাংবাদিকদের জন্য সোমবার (২৩ জুন) ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে রিপোর্টিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে অনেক সংবাদকর্মী পাশের দেশ জর্ডান থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান থেকে পাল্টা হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৪৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৪টি সরাসরি ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, টানা প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে সাইরেন ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
তবে ক্ষয়ক্ষতির নির্ভরযোগ্য তথ্য এখনো জানা যায়নি। কারণ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ভিডিও ও তথ্য প্রকাশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
গত ১০ দিনের ইরানি হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্ট্রাল ইসরায়েল। হামলার শিকার হয়েছে হাইফার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরও।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গতকাল ইরান তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে একটি হামলা চালায়, যেখানে কোনো সতর্কতামূলক সাইরেন বাজেনি। পরে ইসরায়েল নিশ্চিত করে এটি ইরানের একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল, ভুল করে ছোড়া নিজস্ব প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র নয়।
উল্লেখ্য, ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে বড় ধরনের হামলা চালায়, যাতে পরমাণু স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ৪০০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে পরমাণু বিজ্ঞানী, সামরিক কর্মকর্তা এবং সাধারণ মানুষ রয়েছেন।
এর জবাবে ইরান 'অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি' নামে পাল্টা অভিযান শুরু করে এবং ২৩ জুন পর্যন্ত অন্তত ২১ দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যুদ্ধ পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত।
ইরানে বিমান হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রোববার (২২ জুন) আমেরিকান নাগরিকরা শহরগুলোতে ইরানে ট্রাম্প প্রশাসনের বিমান হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউ ইয়র্ক, রিচমন্ড, বোস্টন, শিকাগো, ওয়াশিংটন এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে এসব যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালীন বিক্ষোভকারীদের ইরানের পতাকা হাতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তারা পোস্টার প্রদর্শন করেন।
এর আগে রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালায়।
হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'সফল আক্রমণ' চালিয়েছে।
এরপর এই হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের ‘গুরুতর ও নজিরবিহীন লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করে। পাশাপাশি এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পূর্ণ অধিকার রয়েছে বলে জানায়।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, গত কয়েক ঘণ্টায় ইসরায়েলের বিভিন্ন জায়গায় আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইসরায়েলের ওয়াইনেট সংবাদ সংস্থার বরাতে এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ কোম্পানির কৌশলগত স্থাপনার কাছে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত এনেছে। এতে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
টাইমস অফ ইসরায়েলের খবর বলছে, দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহে গোলযোগ দেখা দিয়েছে। ইসরায়েল ইলেকট্রিক করপোরেশন বলছে, বিদ্যুৎব্যবস্থা স্বাভাবিক করার কাজ চলছে। অবকাঠামো মেরামত ও ঝুঁকিপূর্ণ সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তাবাহিনীও সেখানে কাজ করে যাচ্ছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইরানের হামলার সময় প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে সাইরেন বেজেছে। সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল থার্টিনের খবর বলছে, ১৩ জুন হামলা শুরুর পর থেকে আজ সবচেয়ে লম্বা সময় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হয়েছে ইসরায়েলিদের।
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কমপক্ষে ১০ সদস্য নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। রোববার (২২ জুন) দেশটির ইয়াজদ প্রদেশে ইসরায়েলি হামলায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। ইরানি সংবাদ সংস্থা তাসনিমের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আইআরজিসির বেশ কয়েকজন কর্মীও এ হামলায় আহত হয়েছেন। তবে তাদের সংখ্যা কত তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে ইসরায়েল বলছে, গত ১৩ জুন থেকে শুরু করা হামলায় ইরানের দুই ডজন সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পরে ট্রাম্প নিজেই ঘোষণা দেন যে, তার দেশ ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফল হামলা সম্পন্ন করেছে। স্থাপনাগুলো হলো- ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান।
নিন্দা জানিয়ে এ হামলাকে জঘন্য কাজ বলে আখ্যায়িত করেছে ইরান। দেশটির পারমাণবিক সংস্থা জানিয়েছে, ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তিন পারমাণবিক স্থাপনায় শক্রর হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে, বিশেষ করে নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফেরেশন চুক্তি (এনপিটি)।
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিরুদ্ধে এবার কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন ইরানের সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল আমির হাতামি। সোমবার (২৩ জুন) তিনি বলেন, ‘আমেরিকানরা যখনই অপরাধ করেছে, তখনই কঠোর জবাব পেয়েছে। এবারও ব্যতিক্রম হবে না।’
এদিকে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)-এর মুখপাত্র ইব্রাহিম জোলফাগারি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে নেমেছে এবং ইরানের ‘পবিত্র মাটি’ অপবিত্র করেছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে এবার ‘চরম, অনুতাপজনক ও অপ্রত্যাশিত পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। শক্তিশালী ও নিশানাভেদী অভিযানের মাধ্যমে এর জবাব দেওয়া হবে।’’
জোলফাগারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে সরাসরি ইংরেজিতে সম্বোধন করে বলেন, ‘মিস্টার ট্রাম্প, জুয়াড়ি! যুদ্ধ শুরু করতে পারেন আপনি, কিন্তু শেষ করব আমরা!’
ইরানের খাতাম আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার থেকেও জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক আগ্রাসন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর বৈধ লক্ষ্যবস্তুর পরিধি আরও বিস্তৃত করেছে।
ইরানে মার্কিন সামরিক হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও বাড়ছে উত্তেজনা। বিশেষ করে পারস্য উপসাগরের মুখে অবস্থিত কৌশলগত তেল পরিবহন পথ হরমুজ প্রণালীকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নতুন সংকট। ইতোমধ্যে ইরানের পার্লামেন্ট এই প্রণালী বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে বিশাল আকারের দুটি তেলবাহী জাহাজ হরমুজে প্রবেশের পর ইউটার্ন করে ফিরে গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কোসইউসডম লেক’ ও ‘সাউথ লয়্যালটি’ নামের দুই ট্যাংকার প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বহনে সক্ষম। রোববার (২২ জুন) স্যাটেলাইট ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, জাহাজ দুটি হরমুজ প্রণালীতে প্রবেশ করলেও কিছুক্ষণ পরই দিক পরিবর্তন করে নিরাপদ রুটে চলে যায়।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক এই ঘটনা আন্তর্জাতিক তেলবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে এবং পরিবহনের বিকল্প রুট নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করতে পারে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি খাতকে।
এদিকে ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, দেশটির পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেন, 'আমি বেইজিংয়ের চীন সরকারকে অনুরোধ করবো—তারা যেন ইরানকে ফোন করে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। কারণ, চীন এই প্রণালী ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণে তেল আমদানি করে।'
রুবিও আরও বলেন, 'যদি ইরান সত্যিই হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে, তাহলে সেটা হবে একটি ভয়াবহ ভুল। এটি ইরানের অর্থনৈতিক আত্মহননের শামিল হবে।'
বিশ্বজুড়ে জ্বালানি পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী দিয়ে বিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবাহিত হয়। এই পথ বন্ধ হয়ে গেলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। জ্বালানির দাম বেড়ে যেতে পারে আকাশচুম্বীভাবে, যার প্রভাব পড়বে চীন, ভারত, জাপানসহ বড় আমদানিকারক দেশগুলোতে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, পরিস্থিতি যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে এই সংকট বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা ও জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
ইসরায়েলি হামলার পর পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে ইরান। মধ্য, দক্ষিণ ইসরায়েল ও জেরুজালেম অঞ্চলে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে উঠেছে ইতোমধ্যে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরান থেকে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে। এরই মধ্যে লেবানন সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও সাইরেন বেজে ওঠেছে।
জেরুজালেমে সাইরেন বাজার শব্দে নেসেটের আইনপ্রণেতারা আশ্রয় নিতে ছুটে যান।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাসিন্দাদের বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আইডিএফ জানিয়েছে, আরও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে পারে। মধ্য ইসরায়েলে সাইরেন বাজতে পারে যেকোনো মুহূর্তে।
ইরানে মার্কিন হামলার প্রতিবাদে রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে যোগ দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। রোববার (২২ জুন) এই বিক্ষোভ হয়।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সির প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তেহরানের ঐতিহাসিক ইনকিলাব স্কয়ারে বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারীদের অনেকেরই হাতে ছিল ইরানের জাতীয় পতাকা।
ইরানের সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়, ইনকিলাব স্কয়ারে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। যাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান লেখা ছিল। কোনোটিতে লেখা ছিল, ইরান আমাদের মাতৃভূমি। তার মাটি আমাদের সম্মান, তার পতাকা আমাদের কাফন।
টানা ১১ দিন ধরে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। এর মধ্যে শনিবার রাতে ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোমবার (২৩ জুন) ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে নিজ নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে দেশটি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে অবস্থানকারী নিজ নাগরিকদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে।
দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল-ইরানের সংঘাতের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে ভ্রমণ ব্যাহত হচ্ছে এবং অঞ্চলটির আকাশসীমা কখনো কখনো বন্ধ রাখা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও স্বার্থবিরোধী বিক্ষোভের আশঙ্কা রয়েছে।
সিএনএন বলছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর পরামর্শ দিয়েছে যে মার্কিন নাগরিকেরা যেন ভ্রমণের আগে সংশ্লিষ্ট দেশের তথ্য ও সাম্প্রতিক নিরাপত্তা সতর্কতাগুলো মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখে নেন।
এবার আরেক দেশ থেকে ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা আগেই এ হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় দেশটির আকাশে সাইরেন বেজেছে।
সোমবার (২৩ জুন) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইরান জানিয়েছে এ হামলা ইরান থেকে চালানো হয়নি। অপারেশন ট্রু প্রমিজের অধীনে ২১তম হামলা এখনো চালায়নি তারা।
পরে ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলে বিমান হামলার সাইরেন বাজানো ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ইয়েমেন থেকে ছোড়া হয়েছিল, ইরান থেকে নয়। অর্থাৎ, ইয়েমেন এ হামলা চালিয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয়েছে। তবে এ হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছু জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, ১৩ জুন ইরানের হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির এ হামলায় পরমাণু, সামরিক ও আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে ৪০০-এর বেশি ইরানি নাগরিক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষ রয়েছেন।
ইরান ওই হামলার পরপরই পাল্টা প্রতিক্রিয়া শুরু করে। ২২ জুন পর্যন্ত ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস III’ এর আওতায় ইরান ইসরায়েলে মোট ২০ দফায় পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি হামলায় যোগ দেওয়ার পর এটিই তার প্রথম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বার্তা।
এক্স-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে খামেনি বলেন, ‘জায়োনিস্ট শত্রু বড় ভুল করেছে, বড় অপরাধ করেছে; তাদের শাস্তি পেতেই হবে এবং সেটি চলছে, এখনই চলছে। আল্লাহু আকবার’
খামেনির বার্তার সঙ্গে একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে দাউ দাউ আগুনে জ্বলতে থাকা খুলি ও এর ওপর ডেভিডের তারকা চিহ্ন এবং পেছনে জ্বলন্ত ভবনের দৃশ্য দেখা যায়।
তবে এ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলার কোনো ইঙ্গিত দেননি তিনি।
এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
টানা ১১ দিন ধরে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। এরপরের দিন রোববারেই যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে তেলের ফিউচার দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি ব্যারেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭৬ দশমিক ৪৭ ডলার। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হিসেবে পরিচিত ব্রেন্ট তেলের দাম ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৫৯ ডলার।
এদিকে বিশ্ববাজারে এই অস্থিরতার মধ্যেই মার্কিন ডলারের মান বেড়েছে প্রায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। বৈশ্বিক সংকট ও অনিশ্চয়তার সময়ে ডলারের মান সাধারণভাবে বৃদ্ধি পায়। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে এই প্রবণতা এবার কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে নতুন মাত্রা ও মার্কিন পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় বাজারে উদ্বেগ বাড়ছে, যার প্রভাব সরাসরি জ্বালানি ও বিনিয়োগ খাতে পড়ছে।
অন্যদিকে গতকালই ইরানের পার্লামেন্ট বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। এই প্রণালি বন্ধ থাকলে বিশ্ববাজারে তার বড় প্রভাব পড়বে।
সংঘাত না বাড়াতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য। রোববার এক যৌথ বিবৃতি জারি করে তারা ইরানকে সতর্ক করে। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ওই তিন দেশ। দেশগুলো বলেছে, এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে পারে এমন কোনো নতুন পদক্ষেপ না নিতে আমরা ইরানকে আহ্বান জানাচ্ছি।
যৌথ বিবৃতিটি ফোর্ডো স্থাপনাসহ ইরানের পারমাণবিক সাইটগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বাংকার-বাস্টার বোমা এবং ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করে হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর এলো।
তিন দেশ পুনর্ব্যক্ত করেছে, তারা উত্তেজনা কমাতে যৌথ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং সংঘাত যাতে তীব্র না হয় তা নিশ্চিত করবে।
তারা আরও উল্লেখ করেছে, আমরা ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত সকল উদ্বেগ সমাধানের দিকে নিয়ে যাওয়া আলোচনায় অংশ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সকল পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে এই লক্ষ্যে অবদান রাখতে প্রস্তুত।
জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য আবার জানায়, তারা তাদের লক্ষ্যে স্থির। ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন না করে তা তারা নিশ্চিত হতে চায়। সে সঙ্গে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি তিন দেশ সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
বিবৃতিতে দেশগুলো বলেছে, আমরা সর্বদা স্পষ্টভাবে বলে এসেছি যে ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না এবং আর অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারবে না।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার সকালে বলেছেন, তার বাহিনী ফোর্ডো, নাতানজ এবং ইসফাহানে ইরানের তিনটি পারমাণবিক সাইটে বোমা হামলা চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ফোর্ডো স্থাপনায় বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ছয়টি বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ফেলেছে এবং নাতানজ ও ইসফাহান স্থাপনায় সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপিত কয়েক ডজন ক্রুজ মিসাইল হামলা চালিয়েছে।
এই হামলাগুলো ১৩ জুন থেকে মার্কিন-সমর্থিত ইসরায়েলি সামরিক হামলার সর্বশেষ উত্তেজনা হিসেবে এলো। অপরদিকে ইসরায়েলের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে তেহরান। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের মিসাইল হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে নয় বরং এর পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুদ্ধে রয়েছে। এমন মন্তব্য করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। রোববার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে আমেরিকান হামলার ফলে এই কর্মসূচি অনেক দূর পিছিয়ে গেছে। খবর রয়টার্সের।
ভ্যান্স এনবিসি’র মিট দ্য প্রেস উইথ ক্রিস্টেন ওয়েলকার” শো-তে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে নেই। আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুদ্ধে রয়েছি। আমি মনে করি, আমরা তাদের কর্মসূচিকে অনেক দূর পিছিয়ে দিয়েছি। আমি মনে করি, ইরানীদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে আরও অনেক, অনেক বছর লাগবে।
ভ্যান্স বলেন, আমরা শাসন পরিবর্তন চাই না। আমরা এটিকে দীর্ঘায়িত করতে চাই না... আমরা পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে চাই, এবং তারপর ইরানীদের সঙ্গে এখানে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নিয়ে কথা বলতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ইরানে হামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন ট্রাম্প এবং হামলার পর থেকে তেহরান থেকে ওয়াশিংটন কিছু পরোক্ষ বার্তা পেয়েছে। ইরানের মাটিতে সৈন্য পাঠানোর কোনো আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার সকালে বলেছেন, তার বাহিনী ফোর্ডো, নাতানজ এবং ইসফাহানে ইরানের তিনটি পারমাণবিক সাইটে বোমা হামলা চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ফোর্ডো স্থাপনায় বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ছয়টি বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ফেলেছে এবং নাতানজ ও ইসফাহান স্থাপনায় সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপিত কয়েক ডজন ক্রুজ মিসাইল হামলা চালিয়েছে।
এই হামলাগুলো ১৩ জুন থেকে মার্কিন-সমর্থিত ইসরায়েলি সামরিক হামলার সর্বশেষ উত্তেজনা হিসেবে এলো। অপরদিকে ইসরায়েলের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে তেহরান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় রোববার বিকেল ৫টার দিকে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন (রেজিম চেঞ্জ) শব্দটি রাজনৈতিকভাবে সঠিক নয়। কিন্তু ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থা যদি দেশটিকে আবার মহান করতে না পারে, তাহলে কেনই বা সরকার পরিবর্তন হবে না??? মিগা!!!’ এখানে মিগা বলতে ‘মেক ইরান গ্রেট এগেইন’ বোঝানো হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা, সরকার পরিবর্তন নয়।
কিন্তু ট্রাম্পের সর্বশেষ মন্তব্য হেগসেথের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আলাদা একটি পোস্টে ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, ইরানে হামলা চালানো বি-২ বোমারু বিমানগুলো মিসৌরিতে নিরাপদে ফিরে এসেছে।
মধ্যপ্রাচ্য আলোচনার জন্য মস্কো পৌঁছেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য রাশিয়ায় পৌঁছেছেন।
রুশ সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তির প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, আব্বাস আরাঘচি প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ রাশিয়ান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আলোচনায় ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বের পরিস্থিতির উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এর আগে আরাকচি নিজেই জানিয়েছিলেন, তিনি ২৩ জুন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশা করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার চূড়ান্ত নির্দেশ দেন শনিবার। একই দিনে তা কার্যকর করা হয়। হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা সিএনএনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হামলা চালানোর আগে শেষ মিনিটেও ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার ক্ষমতা ছিল বলে জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হবে কি না তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই চিন্তাভাবনা করছিলেন ট্রাম্প। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে গত বৃহস্পতিবার দুই সপ্তাহ সময়ের কথা উল্লেখ করে এই দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানিয়েছিলেন। তবে অভ্যন্তরীণ আলোচনায় তিনি ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যুক্ত হওয়ার দিকেই ঝুঁকছিলেন।
এরপর শনিবার ট্রাম্প চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন ইরানে হামলা চালানোর। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে তিনি অভিযান এগিয়ে নিতে ‘সবুজ সংকেত’ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইনের দেওয়া সময় অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিটে দুটি পারমাণবিক স্থাপনায় ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ফেলা হয়। ইরানের স্থানীয় সময় অনুযায়ী সেটি ছিল রোববার ভোর ২টা ১০ মিনিট।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স রোববার এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বোমা পড়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেন। ভ্যান্স বলেন, এই হামলা চালানোর আগে শেষ মিনিট পর্যন্ত তা বন্ধ করার ক্ষমতা তাঁর ছিল। এবং তিনি তা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ইরানের রাজধানী তেহরান ও দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জানিয়েছে, তাদের বাহিনী বর্তমানে তেহরান ও ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে ‘সামরিক অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
এই ঘোষণার মধ্যে ইরানি গণমাধ্যমগুলো জানায়, ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কেরমানশাহে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
রোববার ভোরে ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে এই কেন্দ্রগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে মার্কিনিরা। তবে পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালালেও ‘খেলা শেষ হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শীর্ষ সহযোগী আলী শামখানী।
ইরানি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, খামেনির এ সহযোগী বলেছেন, “পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, এমনটি ধরে নিলেও, খেলা শেষ হয়নি। সমৃদ্ধকরণকৃত উপাদান, স্বতন্ত্র জ্ঞান এবং রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি অক্ষুন্ন থাকবে। চমকও অব্যাহত থাকবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরান যে পারমাণবিক আলোচনা চালাচ্ছিল সেখানে ইরানের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন আলী শামখানী।
সূত্র: ফার্স নিউজ এজেন্সি
ইরানে ইসরায়েলের হামলায় ইয়াজদ প্রদেশে ৯ জন নিহত হয়েছে। রোববার এই হামলা চালানো হয়। ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, দেশটির মধ্যাঞ্চলে ইয়াজদ প্রদেশে ইসরায়েলি বাহিনী দুইটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এতে ৯ জন নিহত হন।
সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে জানানো হয়েছে, নিহতদের মধ্যে সাতজন ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) সদস্য এবং দুজন নিয়মিত সেনাসদস্য।
সূত্র: আল–জাজিরা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। কথোপকথনের সময় মোদি অবিলম্বে উত্তেজনা হ্রাস এবং আঞ্চলিক শান্তির ওপর জোর দিয়েছেন।
আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নরেন্দ্র মোদি মাসুদ পেজেশকিয়ানের কাছ থেকে একটি ফোন পেয়েছেন। ফোনালাপে মোদিকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোদি অবিলম্বে উত্তেজনা হ্রাস, সংলাপ এবং কূটনীতির ওপর জোর দিয়েছেন এবং আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ পাকপুর বলেছেন, জায়নিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে, তাতে কোনও বিরতি নেই।
রোববার (২২ জুন) আইআরজিসি কমান্ডারদের সঙ্গে এক বৈঠকে শীর্ষ কমান্ডার বলেন, 'আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে আছি।'
তিনি বলেন, আইআরজিসি এরোস্পেস ফোর্স ইউনিটগুলো ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্নভাবে অভিযান পরিচালনা করছে।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর ইরানি জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংহতির প্রশংসাও করেন পাকপুর।
মেহের নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইসরায়েলি সরকার ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে বিনা উস্কানিতে আগ্রাসনের যুদ্ধ শুরু করে। তারা ইরানের পারমাণবিক, সামরিক এবং আবাসিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার ফলে ৪০০ জনেরও বেশি ইরানি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং সাধারণ নাগরিকরা রয়েছেন।
ইরানের সামরিক বাহিনী এর পরপরই পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। অপারেশন 'ট্রু প্রমিজ ৩'-এর অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে ২০টি প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার বিরুদ্ধে মার্কিন আগ্রাসনের একটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরানের পার্লামেন্ট কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছে।
রোববার (২২ জুন) ইরানের জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা ইসমাইল কাওসারি বলেছেন, মার্কিন আগ্রাসন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার প্রতিক্রিয়ায় মজলিস (পার্লামেন্ট) বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাণিজ্যের প্রধান রুটটি বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত সংসদ কমিটির সদস্য কাওসারি বলেন, 'পার্লামেন্ট এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, হরমুজ প্রণালী বন্ধ করা উচিত, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সুপ্রিম জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের হাতে।'
পারস্য উপসাগরের মুখে অবস্থিত হরমুজ প্রণালী বিশ্ব বাণিজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল এই প্রণালী দিয়ে যাতায়াত করে। এটি বিশ্বব্যাপী জ্বালানি খাতের জন্য এটিকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
এই সরু প্রণালী দিয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসও (এলএনজি) পরিবহন করা হয়, বিশেষ করে কাতার থেকে।
হরমুজ প্রণালীই একমাত্র সমুদ্রপথ, যা পারস্য উপসাগরকে উন্মুক্ত সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এটি ইরান, সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত।
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন, প্রণালীর যে কোনো ব্যাঘাত বা বন্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে এবং বড় ধরনের বৃদ্ধি পেতে পারে। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যাহত হতে পারে।
ইরানের প্রেস টিভি জানিয়েছে, রোববার ভোরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে মার্কিন আগ্রাসন শুরু করার আগে বিশেষজ্ঞরা ইরানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া চলমান যুদ্ধ সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন।
গত সপ্তাহে প্রেস টিভির সঙ্গে কথা বলার সময় কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, সরাসরি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য ব্যয়বহুল হবে, বিশেষ করে যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বিশ্বের বেশিরভাগ বহুজাতিক কর্পোরেশন কয়েক দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির সরবরাহ শেষ হয়ে যাবে।
কিছু পূর্বাভাস অনুসারে, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে প্রথম সপ্তাহেই তেলের দাম ৮০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ বিকল্প রুটগুলোতে প্রচুর খরচ হবে।
স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে সিএনএন দাবি করেছে, ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বোমা হামলার ফলে কমপক্ষে ছয়টি বড় গর্ত তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এটি বাঙ্কার ধ্বংসকারী বোমার ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়।
লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইট কোম্পানি ম্যাক্সার-এর ধারণ করা ছবিতে ফোর্দোর কাছাকাছি দুটি স্থানে ছয়টি গর্ত দেখা গেছে। ভূগর্ভস্থ কমপ্লেক্সের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি ঢাল বরাবর গর্তগুলো দেখা যায়।
সিএনএন আরও জানিয়েছে, স্যাটেলাইট ছবিতে পাহাড়ের ঢালের রঙের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেছে, যেখানে স্থাপনাটি অবস্থিত। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, হামলার পর একটি বিশাল এলাকা ধূসর ছাইয়ের স্তরে ঢাকা পড়ে গেছে।
এর আগে রোববার (২২ জুন) ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার ওপর ভারী বোমা হামলা চালায়। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'সফল আক্রমণ' চালিয়েছে।
মার্কিন হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের ‘গুরুতর ও নজিরবিহীন লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করেছে। পাশাপাশি এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পূর্ণ অধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বকে ভুলে গেলে চলবে না যে, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাঝপথে যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়ে এখন ইরানের বিরুদ্ধে বিপজ্জনক যুদ্ধ চালাচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এটি স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিয়ম বা নৈতিকতা মানে না। গণহত্যাকারী ও দখলদার এক শাসন ব্যবস্থার লক্ষ্য পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনো আইন বা অপরাধের তোয়াক্কা করে না।’
ইরানে থাকা ‘বন্ধুদের’ তথ্যের অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ নিশ্চিত করতে আগামী কয়েক সপ্তাহের জন্য দেশটিতে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা বিনা মূল্যে চালু করার জন্য স্পেসএক্স-এর প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ককে আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত রিচার্ড গ্রেনেল।
এক্সে এক পোস্টে গ্রেনেল লিখেছেন, ‘ইলন মাস্ক, আপনি কি ইরানে পরবর্তী কয়েক সপ্তাহের জন্য স্টারলিংক বিনা মূল্যে চালু করতে পারেন? আমার বন্ধুরা এখন নিয়মিতভাবে তথ্য পাচ্ছে না। আমি অনুদান দিতে প্রস্তুত, অন্যরাও দেবে।’
গ্রেনেল একসময় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ছিলেন। বর্তমানে তিনি ট্রাম্পের অধীনে বিশেষ মিশনের প্রেসিডেনশিয়াল এনভয় হিসেবে কাজ করছেন।
এদিকে ইলন মাস্ক এখনো এই অনুরোধের কোনো প্রকাশ্য জবাব দেননি। তবে পূর্বে তিনি বলেছিলেন, ‘বিম চালু রয়েছে।’ অর্থাৎ প্রযুক্তিগতভাবে সেবা পাওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য প্রয়োজন একটি বিশেষ স্যাটেলাইট ডিশ, যা সিগন্যাল গ্রহণ ও প্রেরণ করতে পারে।
স্টারলিংক মূলত প্রত্যন্ত ও গ্রামীণ এলাকায় উচ্চগতির, স্বল্প-বিলম্বের ইন্টারনেট সরবরাহের জন্য তৈরি হলেও এটি সামরিক মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ২০২২ সালে স্পেসএক্স দেশটির সেনাবাহিনীকে ৪০ হাজারের বেশি টার্মিনাল সরবরাহ করে, যা সামরিক যোগাযোগ ও ড্রোন অপারেশনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। গত মার্চে মাস্ক দাবি করেন, স্টারলিংক বন্ধ হয়ে গেলে ইউক্রেনের পুরো ফ্রন্টলাইন ধসে পড়বে।
১৩ জুন ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ইরানে সামরিক অভিযান শুরু করে। সে সময় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানে থাকা গুপ্তচরদের সক্রিয় করে দেশটির ভেতর থেকে ড্রোনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ব্যক্তিত্ব ও বিজ্ঞানীদের ছাড়াও প্রতিরক্ষা অবকাঠামোগুলোতে আঘাত হানে।
জবাবে ইরান সরকার দেশের যোগাযোগব্যবস্থা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তারা জনগণকে হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলতে বলে এবং অভিযোগ করে, ইসরায়েল মেটার মালিকানাধীন এই অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের ওপর নজরদারি করছে।
এ ঘটনার কয়েক দিন পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, মার্কিন বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চালিয়েছে। এটি ইসরায়েলের হামলা শুরুর ঠিক এক সপ্তাহ পর ঘটল।
উল্লেখ্য, হারিকেন হেলেন ও মিল্টনের পর প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্টারলিংক সেবাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু এখন এটি একটি সামরিক প্রযুক্তি হিসেবে বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইড বলেছেন, ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র 'এখন সরাসরি এমন একটি যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে, যা ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করার পর শুরু হয়েছিল'।
সরকারি সম্প্রচারক এনআরকে অনুসারে, বার্থ এইড সাংবাদিকদের বলেন, 'ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আরও তীব্রতা বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।'
তিনি বলেন, 'এর অর্থ হলো তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এখন সরাসরি এমন একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে, যা ইসরায়েল ইরান আক্রমণ করার সময় শুরু হয়েছিল।'
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, 'আন্তর্জাতিক আইন সকল পক্ষকে সম্মান করতে হবে। এখন যেহেতু অনেক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, আমরা যুদ্ধের আরও তীব্রতা দেখতে পাব - আমাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনের গুরুত্ব মনে করিয়ে দিতে হবে।'
১৩ জুন রাতে ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়।
পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষই হতাহতের খবর দিচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি স্বীকার করেছে।
এ অবস্থায় আজ রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার ওপর ভারী বোমা হামলা চালায়। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'সফল আক্রমণ' চালিয়েছে।
মার্কিন হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের ‘গুরুতর ও নজিরবিহীন লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করেছে। পাশাপাশি এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পূর্ণ অধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বকে ভুলে গেলে চলবে না যে, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাঝপথে যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়ে এখন ইরানের বিরুদ্ধে বিপজ্জনক যুদ্ধ চালাচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এটি স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিয়ম বা নৈতিকতা মানে না। গণহত্যাকারী ও দখলদার এক শাসন ব্যবস্থার লক্ষ্য পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনো আইন বা অপরাধের তোয়াক্কা করে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন জানিয়েছেন, ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামে পরিচালিত অভিযানে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বি-২ বোমারু বিমান স্থানীয় সময় শুক্রবার উড্ডয়ন করে। ১৮ ঘণ্টার ফ্লাইট শেষে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে হামলা চালায় বিশেষ এই বিমান।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনে রোববার (২২ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান কেইন। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, কেইন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর একাধিক শাখা পরিকল্পিতভাবে ও সমন্বিতভাবে এই অভিযান পরিচালনা করে।
ইরানে হামলা চালানোর সময় দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিরোধ আসেনি বলে উল্লেখ করেন জেনারেল কেইন। তিনি বলেন, ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে ‘কোনো গুলি ছোড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।’
এই মার্কিন জেনারেল আরও বলেন বলেন, ইরানের যুদ্ধবিমান আকাশে ওড়েনি, মনে হচ্ছে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আমাদের শনাক্তই করতে পারেনি।
১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়।
পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষই হতাহতের খবর দিচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি স্বীকার করেছে।
ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের (হুথি) রাজনৈতিক ব্যুরো ঘোষণা করেছে, ইরানের ওপর মার্কিন হামলার পর 'আপস শেষ হয়ে গেছে' এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এখন ইয়েমেনের 'সামরিক প্রতিক্রিয়ার জন্য' অপেক্ষা করতে হবে।
মেহের নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, হুথি'র রাজনৈতিক ব্যুরো সদস্য মোহাম্মদ আল-বুখাইতি বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের আগে আমেরিকার সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছিল। আজ আমরা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ইরানে আমাদের ভাইদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
তিনি ঘোষণা করেন, আমাদের সামরিক প্রতিক্রিয়া আসছে এবং প্রথম পর্যায়ে আমরা লোহিত সাগরে আমেরিকান বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করব।
এর আগে রোববার (২২ জুন) ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালায়। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফল আক্রমণ চালিয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়ে দুই সপ্তাহ সময় নেওয়ার কথা বলেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তার আগেই ইরানে হামলা চালিয়ে বসেন তিনি।
শনিবার (২১ জুন) রাতে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান—এই তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে জড়াল যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান কী করতে পারে, এ প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছেন বিবিসির সাংবাদিক ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার।
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে ইরানকে এখন তিনটি কৌশলগত পথের একটি বেছে নিতে হবে। প্রথমত কোনো কিছু না করা।
এতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও হামলা থেকে রেহাই পেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। ইরান চাইলে কূটনৈতিক পথেও যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ফিরতে পারে।
তবে কিছুই না করে চুপচাপ বসে থাকলে ইরান সরকারকে দুর্বল মনে হতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে তার ভয়াবহ পরিণতি হবে—এ হুঁশিয়ারি বারবার দেওয়ার পর। তাই ইরান মনে করতে পারে, জনগণের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি হামলার ঝুঁকির চেয়ে বড়।
দ্বিতীয় পথ, তীব্র ও দ্রুত প্রতিশোধ নেওয়া। ইরানের কাছে এখনো অনেক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা তারা বহু বছর ধরে তৈরি করেছে এবং লুকিয়ে রেখেছে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০টি ঘাঁটির তালিকা তাদের হাতে আছে, যেগুলো তারা সহজে টার্গেট করতে পারে।
ইরান চাইলে ছোট ছোট ড্রোন, দ্রুতগতির নৌকা বা অন্যান্য ছোট অস্ত্রবাহী যানের সাহায্যে একসঙ্গে দলবদ্ধভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের ওপর হামলা চালাতে পারে।
ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনারের মতে, ইরানের হাতে সর্বশেষ পথ হতে পারে নিজের সুবিধামতো সময়ে প্রতিশোধ নেওয়া। এখনকার উত্তেজনা কমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে তেহরান। এরপর যখন যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে না, ঠিক তখন অতর্কিতে আক্রমণ চালাবে তারা।
ইরান যদি চায়, তাহলে তার প্রতিবেশী দেশ, যাদেরকে সে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী মনে করে, তাদের স্থাপনার ওপর হামলা করতে পারে। এমনটি হলে অবশ্য যুদ্ধ গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার পর রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ দাবি করেছেন, বেশ কয়েকটি দেশ ইরানকে সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত।
রোববার (২২ জুন) এক লাইভ প্রতিবেদনে তুর্কিভিত্তিক টিআরটি ওয়ার্ল্ড এ খবর জানিয়েছে।
বর্তমানে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যানে দায়িত্বে থাকা মেদভেদেভ টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেন, 'বেশ কয়েকটি দেশ ইরানকে সরাসরি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত।'
মেদভেদেভ বলেন, ইরানে লক্ষ্যবস্তু স্থাপনাগুলোতে ন্যূনতম বা কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি বলে মনে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্রের উন্নয়ন সম্ভবত অব্যাহত থাকবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি বড় সংঘাতের ঝুঁকিতে পড়েছে এবং যুক্তি দেন যে হামলার ফলে ইরানি নেতৃত্ব রাজনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
এর আগে ইরানের হামলার পর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক বলেছে, 'একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলা চালানোর দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত, তা যে যুক্তিতেই উপস্থাপন করা হোক না কেন - আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের সনদ এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলির স্পষ্ট লঙ্ঘন।'
প্রসঙ্গত, আজ ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার ওপর ভারী বোমা হামলা চালায়। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'সফল আক্রমণ' চালিয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার পর ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। রোববার (২২ জুন) কঠোর ভাষায় এক বিবৃতিতে বাহিনীটি বলেছে, আগ্রাসী শক্তিগুলোর 'প্রতিশোধ থেকে পালানোর ক্ষমতা নেই'।
তেহরান টাইমস জানিয়েছে, বিবৃতিতে আইআরজিসি মার্কিন হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছে। সেই সঙ্গে 'জায়নিস্ট সরকার' এবং তার মিত্রদের স্বার্থ ও অবকাঠামোগুলো লক্ষ্য করে একটি শক্তিশালী এবং সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আইআরজিসির মতে, ভোরের এই হামলা জাতিসংঘ সনদ, অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার নীতি সহ আন্তর্জাতিক নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী হামলায় জড়িত বিমানের উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করেছে এবং তাদের নিবিড় নজরদারিতে রেখেছে, যা দেশের ব্যাপক গোয়েন্দা শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরে।
আইআরজিসি জোর দিয়ে বলেছে, এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির ব্যাপক উপস্থিতি শক্তির লক্ষণ নয় বরং দুর্বলতার উৎস। তাদের সংখ্যা এবং ছড়িয়ে পড়া তাদের মুখোমুখি ঝুঁকিগুলোকে কেবল বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক অগ্রগতির প্রতি ইরানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে আইআরজিসি বলেছে, এই ধরনের আক্রমণ দেশের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকে থামিয়ে দেবে না বরং এর তরুণ বিজ্ঞানীদের দৃঢ় সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করবে।
বাহিনীটি অপারেশন 'ট্রু প্রমিজ ৩' এর অধীনে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলি অবকাঠামো এবং কৌশলগত সম্পদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই ২০টিরও বেশি সুনির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যবস্তু আক্রমণ চালানো হয়েছে।
বিবৃতির শেষে আইআরজিসি ইরানি জাতির পূর্ণ সমর্থনে ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলি খামেনির নেতৃত্বে ইরানের মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য তাদের প্রস্তুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে। এতে বলা হয়, 'আল্লাহর কৃপায়, ইসলামী প্রজাতন্ত্র বিজয়ী হবে - ইরানি জনগণ এবং বৃহত্তর ইসলামী উম্মাহর জন্য সম্মান বয়ে আনবে।'
শত্রু-মিত্র উভয় পক্ষকে হতবাক করে শনিবার (২১ জুন) মধ্যরাতের পর ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে বসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের এ সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে ফেললেন।
ট্রাম্পের এ পদক্ষেপে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘাত আরও বিপজ্জনক রূপ নেওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। বিশ্বনেতা ও কূটনীতিকদের কেউ কেউ এর নিন্দা জানিয়েছেন। অন্যরা উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি এ হামলাকে উত্তেজনাপূর্ণ একটি অঞ্চলে বিপজ্জনক মাত্রায় উত্তেজনা বৃদ্ধির ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, ‘এই সংঘাত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে; যা বেসামরিক মানুষ, এতদঞ্চল ও সারা বিশ্বের জন্যই ভয়ানক পরিণতি ঢেকে আনতে পারে।’
যুক্তরাজ্য: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সেই হুমকি কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছে।’ তিনি ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরার ও এ সংকটের একটি কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছার আহ্বান জানান।
অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি।’
নিউজিল্যান্ড: নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সামরিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে, তা নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
মেক্সিকো: মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলোর প্রতি কূটনৈতিক সংলাপ শুরু করা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে।
চিলি: প্রেসিডেন্ট গাব্রিয়েল বোরিক বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে এ হামলা অবৈধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আমরা শান্তি চাই এবং শান্তি প্রয়োজন।’
ভেনেজুয়েলা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে অবৈধ, অযৌক্তিক ও ভীষণ বিপজ্জনক আগ্রাসন বলে বর্ণনা করেছেন।
সৌদি আরব: বিবিসি জানায়, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রিয়াদ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, বিশেষ করে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়টি।
বিবৃতিতে উত্তেজনা কমাতে সংযম প্রদর্শন এবং সংঘাত এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এ সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছার প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বানও জানিয়েছে সৌদি আরব।
ওমান: আল–জাজিরা জানায়, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছিল ওমান। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে অবৈধ আগ্রাসন বলে উল্লেখ করে এ কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে দেশটি। ওমান তাৎক্ষণিকভাবে ও সর্বাত্মক উত্তেজনা প্রশমনেরও আহ্বান জানিয়েছে।
ওমান নিউজ এজেন্সিকে ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, দেশটি এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সতর্ক করে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ সংঘাত আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদেরও স্পষ্ট লঙ্ঘন।
কাতার: যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এ অঞ্চলে যে বিপজ্জনক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, তা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে কাতার।
ইরাক: ইরাক প্রতিবেশী ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। এ হামলায় যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে বলেও উল্লেখ করেছে দেশটি।
ইরানের মাটিতে মার্কিন আগ্রাসনের পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কেবল ইরানের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করেননি, বরং নিজের জাতিকেও প্রতারিত করেছেন।
রোববার (২২ জুন) সংবাদ সম্মেলনে ইরানের শীর্ষ ইরানি কূটনীতিক প্রতিশ্রুতি দেন, তেহরান ওয়াশিংটনের আগ্রাসনের জবাব দেবে।
আরাঘচি বলেন, আমরা আমেরিকানদের আগ্রাসনের মুখোমুখি হয়েছি। ইরান এই আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। এই আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইন এবং নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন ২২৩১ এর লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দিকে ইঙ্গিত করে আরাঘচি বলেন, ট্রাম্প একজন অপরাধীর দাবির কাছে নতি স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক নয়, কেবল বলপ্রয়োগ এবং হুমকির ভাষা বোঝে। তারা দেখিয়েছে যে, তারা আন্তর্জাতিক সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করে না এবং এর কোনোটিই মেনে চলে না।
'গত রাতের হামলাগুলো দেখিয়েছে যে ইহুদিবাদী সরকার ইরানে আক্রমণের লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়নি এবং এখন সমস্যায় পড়েছে এবং আমেরিকা এই সরকার ও তার নেতাদের সমর্থন করার চেষ্টা করছে।'
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতির পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ নয়; আক্রমণের সারমর্মই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই বিষয়টি উপেক্ষা করতে পারি না।
'আলোচনার দরজা সবসময় খোলা থাকা উচিত, কিন্তু এখন তা নয়। আমার দেশে আক্রমণ করা হয়েছে এবং আমাদের অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে।'
আমেরিকান আগ্রাসনের জবাবে ইরান কী করবে, তা ঘোষণা করতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। তিনি জানান, আমাদের সামনে বিভিন্ন পথ আছে।
তিনি উল্লেখ করেন, আমরা ইরানের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার সঙ্গে কখনো আপস করব না। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান তার ভূমি, সার্বভৌমত্ব এবং জনগণকে রক্ষা করতে থাকবে এবং কেবল সামরিকভাবে মার্কিন আক্রমণ মোকাবেলা করার জন্যই নয়, এই বিষয়ে অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও প্রয়োজনীয় এবং সম্ভাব্য সকল উপায় ব্যবহার করবে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। রোববার (২২ জুন) পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিবৃতিতে ইসলামাবাদ জানিয়েছে, তারা এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রার্থী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করার একদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানাল পাকিস্তান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সকল নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। আরও বলেছে যে জাতিসংঘ সনদের অধীনে ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।
পাকিস্তান জানায়, ‘ইরানের বিরুদ্ধে চলমান আগ্রাসনের কারণে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা ও সহিংসতা উদ্বেগজনক। উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেলে এই অঞ্চল এবং এর বাইরেও মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।’
ইসলামাবাদ আরও বলেছে, আমরা বেসামরিক নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এবং অবিলম্বে সংঘাতের অবসান ঘটানোর অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছি। সকল পক্ষকে আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে হবে।
এর আগে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে, পাকিস্তান জানিয়েছে যে এই বছরের শুরুতে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সময় তার নেতৃত্বের জন্য ২০২৬ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনয়নকে তারা সমর্থন করবে।
রোববার (২২ জুন) ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ফোর্দো, নাতাঞ্চ এবং ইসফাহানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
ইরানে মার্কিন হামলার পর তেহরান-তেল আবিব সংঘাত আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর এরমধ্যেই জানা গেছে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য।
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের দিকে অত্যাধুনিক ‘খাইবার-শেকান’ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
যদিও আল জাজিরা বলছে, আইআরজিসি খাইবার-শেকান ‘মোতায়েন করছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে’।
রোববার (২২ জুন) কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক স্থাপনা এবং আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকায়, প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইরান এখন তাদের সবচেয়ে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র, ‘খাইবার শেকান’ মোতায়েন করছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, রোববার হাইফা এবং তেল আবিবের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে প্রায় ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা দাবি করেছে, ইরান যখন কূটনৈতিক আলোচনার মাঝামাঝি ছিল তখনই এই হামলাগুলো চালানো হয়।
ইরানের একটি সূত্রের বরাতে মেহের নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ফোর্দো পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সাইটে মজুদ থাকা বেশিরভাগ ইউরেনিয়াম স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং ফোর্দোসহ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সাম্প্রতিক মার্কিন হামলার মধ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্থানান্তরিত ইউরেনিয়ামের সঠিক অবস্থান জানানো হয়নি।
এর আগে রোববার (২২ জুন) ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার ওপর ভারী বোমা হামলা চালায়। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় 'সফল আক্রমণ' চালিয়েছে।
হামলার পর ইরানের সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফের উপদেষ্টা মাহদি মোহাম্মাদিও জানিয়েছেন, ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা অনেক আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল এবং হামলায় কোনো 'অপরিবর্তনীয় ক্ষতি' হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে মোহাম্মাদি লেখেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ইরান আগে থেকেই প্রত্যাশা করেছিল। তাই সেটি আগেই খালি করা হয়েছে।'
তিনি আরও লেখেন, দুইটি বিষয় নিশ্চিত: প্রথমত, জ্ঞানকে বোমা দিয়ে ধ্বংস করা যায় না এবং দ্বিতীয়ত, এবার জুয়াড়িরা হারবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার জন্য রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন।
মেহের নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, মার্কিন-ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যে রোববার (২২ জুন) ইস্তাম্বুলে এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের শীর্ষ কূটনীতিক জানান, তিনি আগামীকাল সোমবার মস্কো সফরে যাচ্ছেন।
আরাঘচি বলেন, আগামীকাল রাশিয়ায় তিনি ‘গুরুতর আলোচনা’ করবেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করা তার সফরের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।
এর আগে আজ ভোরে ইরানের ওপর বি-২ স্পিরিট বিমান থেকে ভারী বোমা হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফল আক্রমণ চালিয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলছিলেন, ইসরায়েলকে বারবার জানানো হয়েছে যে, ইরানের পরমাণু বোমা বানানোর ইচ্ছা নেই।
মার্কিন হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের ‘গুরুতর ও নজিরবিহীন লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করেছে। পাশাপাশি এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পূর্ণ অধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছে।
তাসনিম বার্তা সংস্থার বরাতে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বকে ভুলে গেলে চলবে না যে, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাঝপথে যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়ে এখন ইরানের বিরুদ্ধে বিপজ্জনক যুদ্ধ চালাচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এটি স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিয়ম বা নৈতিকতা মানে না। গণহত্যাকারী ও দখলদার এক শাসন ব্যবস্থার লক্ষ্য পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনো আইন বা অপরাধের তোয়াক্কা করে না।’
পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছে ইরান। বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাইদ ইরাভানি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি এবং জাতিসংঘ মহাসচিবকে লেখা চিঠিতে এ আহ্বান জানিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বর্বর ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের গুরুতর ও সুদূরপ্রসারী পরিণতির আলোকে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা পরিষদকে এই স্পষ্ট ও বেআইনি আগ্রাসনের বিষয়টি মোকাবেলায় বিলম্ব না করে জরুরি সভা আহ্বান করার জন্য অনুরোধ করছে।'
আমির সাইদ ইরাভানি আরও বলেন, '(উল্লেখিত কর্মকাণ্ডের) তীব্রতম সম্ভাব্য নিন্দা জানাতে এবং সনদের অধীনে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক জরুরি, যাতে এই ধরনের জঘন্য অপরাধের অপরাধীকে সম্পূর্ণরূপে জবাবদিহি করতে হয় এবং শাস্তি থেকে অব্যাহতি না দেওয়া হয়।'
এর আগে রোববার (২২ জুন) ভোরে ইরানের ওপর বোমা হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফল আক্রমণ চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালিয়েছে। অথচ ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) সদস্যরাষ্ট্র। তাদের এই কর্মসূচি সব সময় নজরদারির মধ্যেই রয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও বলছেন, ইসরায়েলকে বারবার জানানো হয়েছে যে, ইরানের পরমাণু বোমা বানানোর ইচ্ছা নেই। একই কথা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানিয়েছিলেন।
ইরানে মার্কিন হামলার পর সোমবার জরুরি বৈঠক ডেকেছে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ।
ইরানে সৃষ্ট জরুরি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন।
এদিকে, ইরানের পারমাণবিক সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলাম আইএইএ-কে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে, তেহরান চায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়ে তদন্ত হোক এবং একই সাথে তারা আইএইএ-র কাছে যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার নিন্দা জানানোরও দাবি জানানো হয় বলেও ইরানের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
এর আগে, আইএইএ এ নিশ্চিত করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালেও আশপাশের এলাকায় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধির’ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাইশ বছর আগে ইরাক আক্রমণের আগে দেশটির হাতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার ধারণা এবং সেই অস্ত্র মানব অস্তিত্বের জন্য হুমকি হতে পারে—এমন বয়ান তৈরি করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের পক্ষ থেকে। এবারও একেবারেই বিনা উসকানিতে ইরান আক্রমণের পর 'একই অজুহাতে' ইসরায়েলের 'দোসর' হয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এ সংঘাতে জড়িয়েছে।
আজ রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায়। অথচ ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) সদস্যরাষ্ট্র। তাদের এই কর্মসূচি সব সময় নজরদারির মধ্যেই থাকে। তবু সম্ভাব্য পারমাণবিক সক্ষমতার অভিযোগেই ইরানের ওপর বিধ্বংসী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিপরীতে এনপিটিতে সই না করা ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিধর দেশ। তারা কখনোই আইএইএকে তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও বলছেন, ইসরায়েলকে বারবার জানানো হয়েছে যে ইরানের পরমাণু বোমা বানানোর ইচ্ছা নেই। একই কথা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানালে তুলসী 'ভুল' জানেন বলে মন্তব্য করেন।
এ দিকে, গতকাল ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মোসাদ বলছে—ইরান ১৫ দিনের মধ্যে পরমাণু বোমা বানাতে সক্ষম আর মার্কিন সংস্থাগুলো বলছে—অন্তত এক বছর লাগবে।
এমন 'ধোঁয়াশাপূর্ণ' পটভূমিতে গত ২০ জুন দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনের শিরোনামে প্রশ্ন রাখা হয়—যুক্তরাষ্ট্র ইরাক যুদ্ধে 'ভয়াবহ ভুল' করেছিল। একই কাজ কি ইরানের ক্ষেত্রেও করতে যাচ্ছে? প্রতিবেদনে আরও বলা হয়—প্রায় ২০ বছর আগে যখন মার্কিন কর্মকর্তারা ইরাক আক্রমণ করা উচিত হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন তখন তাদের মনে একটাই প্রশ্ন ছিল—সাদ্দাম হোসেনের হাতে কি গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে? যদি থাকে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সেগুলো ধ্বংস করা এবং সামরিক হামলার মাধ্যমে বাথ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা। তারপর যা ঘটেছিল তা বিশ্ববাসীর জানা।
ইরাক বা সাদ্দাম হোসেনের হাতে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছিল না। প্রাচীন সভ্যতার দেশ ইরাক ও হাজার বছরের সমৃদ্ধ শহর বাগদাদ ধ্বংস করে ইরাকিদের চরম দুর্দশার ভেতর ফেলে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা বুঝতে পারেন—তাদের 'ভুল' হয়ে গেছে। ২০০৩ সালে শুরু হওয়া ইরাক যুদ্ধ বা দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে চলে ২০১১ সাল পর্যন্ত। বলা বাহুল্য, এর রেশ চলছে এখনো। সেসময় ইরাকে হামলা হয়েছিল রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের নির্দেশে। আবারও কি সেই 'ভুল পথে' হাঁটছে মার্কিন প্রশাসন? এবারও হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।
ইরান নিশ্চয় 'ইরাক' নয়?
ইসরায়েল-ইরান চলমান সংঘাতের দশম দিনে অন্তত এ কথা বলা যায় যে, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ও সামরিক দিকগুলো বিবেচনায় নিলে ইরানকে নিশ্চয় 'ইরাক' বলা যাবে না। সবাই জানেন যে ১৯৮১ সালের ৭ জুন ইসরায়েলের আটটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান প্রায় এক হাজার ১০০ কিলোমিটার উড়ে গিয়ে আচমকা ইরাকের রাজধানী বাগদাদের কাছে ওসিরাকে হামলা চালায়। ফরাসিদের তৈরি ওসিরাকের রিঅ্যাকটরটি ধ্বংস করে। সেখানে পরমাণু বোমার জন্য প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করা হতে পারে এমন ধারণার ভিত্তিতে ইরাকের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এরপর দেশটি আর সে পথে এগোয়নি। এ ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসরায়েলের নিন্দা করেছিল।
ইরানের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। দেশটি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে সই করে ১৯৬৮ সালে। এরপর ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা অনুমোদন করে ইরান নিজেকে পরমাণু বোমামুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে তেহরান বারবার বলে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বেসামরিক। এটি গবেষণা ও শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য। চুক্তি অনুসারে জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থা আইএইএ নিয়মিত ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে আসছে।
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে সই না করা ও পরমাণু বোমার অধিকারী হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে অন্য কোনো দেশকে পরমাণু রিঅ্যাকটর বসাতে দিতে নারাজ। ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে সীমিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলো ২০১৫ সালে চুক্তি করে। ইরান চুক্তি মেনে চললেও প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে বের হয়ে আসেন। ফলে চুক্তিটি অকার্যকর হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, তেহরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের পথে হাঁটতে শুরু করে ওয়াশিংটন।
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প পরমাণু নিয়ে ইরানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তির জন্য আলোচনার নির্দেশ দেন। সেই আলোচনা পঞ্চম দফা পর্যন্ত গড়ায়। ষষ্ঠ দফা শুরুর ঠিক আগে ইসরায়েল আচমকা ইরানের ওপর হামলা শুরু করে। উদ্দেশ্য—ইরানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস করা। যদিও এর সঙ্গে তেহরানে সরকার পরিবর্তনের ডাক দিচ্ছে তেল আবিব।
এই যুদ্ধ 'দীর্ঘস্থায়ী' হবে?
ইরাকে মার্কিন সামরিক অভিযান ২০০৩ সালে শুরু হয়ে চলেছিল ২০১১ সাল পর্যন্ত। তারপরও তা শেষ হয়নি। এখনো ইরাকে মার্কিন বাহিনীর ঘাঁটি আছে। সেই ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরান-সমর্থিত যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী সশস্ত্র সংগঠনগুলোর হামলা মাঝেমধ্যেই সংবাদ শিরোনাম হয়। সেই হিসাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে এখনো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে পারেনি।
ঠিক তেমনি ইরানেও কি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র? আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে—ইরানিদের একটি অংশ বর্তমান শাসকবিরোধী হলেও তারা আগ্রাসন বা বিদেশি হামলার বিপক্ষে। আর চলমান প্রেক্ষাপটে সেখানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব আরও জোরালো হচ্ছে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়—ইরানিরা তাদের দেশে ইসরায়েলের এই আক্রমণ ভুলবে না। যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে যোগ দিলে ইরান মার্কিনিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে। এর ফলে যুদ্ধ আরও বিস্তৃত রূপ নিতে পারে। এই সংঘাত চলতে পারে আরও অনেক বছর।
যদি তাই হয়, তাহলে প্রশ্ন জাগে—যুক্তরাষ্ট্র কি একই অজুহাতে ইরানকে ধ্বংস করে 'ইরাক' বানানোর পথে হাঁটবে?
ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হামলার পরও স্থাপনাগুলোর আশপাশে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধি পায়নি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। রোববার (২২ জুন) সংস্থাটির এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। খবর বিবিসির।
আইএইএর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বর্তমানে তেজস্ক্রিয়তার কোনো অস্বাভাবিক মাত্রা মেলেনি। তবে আরও তথ্য পেলে পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।’
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজস্ব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় ‘সফল হামলার’ দাবি করেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করা হয়।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ১০ স্থানে আজ রোববার হামলা চালিয়েছে ইরান। এসব হামলায় ১০ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএম) জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে ১১ জন আহত হয়েছেন। এমডিএমের বরাতে টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থার মুখপাত্র বলেছেন, ইসরায়েলের ১০টি স্থানে রকেট ও গোলা হামলা হয়েছে। কারমেল, হাইফা, তেল আবিব ও ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে এসব হামলা হয়েছে। দেশটির বেশির ভাগ এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বিবিসির খবর বলা হয়েছে, ফোরদো নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইস্পাহানের নিরাপত্তাবিষয়ক ডেপুটি গভর্নর আকবর সালেহি বলেন, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আমরা এ দুটি শহরে পারমাণবিক স্থাপনার কাছে হামলা হতে দেখেছি।
দিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, আজ রোববার ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে।
এ ছাড়া অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে সাহায্যকারী ঘাঁটি, কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার এবং একটি জৈব গবেষণা কেন্দ্র।
ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) বরাতে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব টেলিভিশন জানায়, দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ৮৬ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোববার (২২ জুন) ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা মাঝারি পর্যায়ের, ৭৭ জনের অবস্থা ভালো এবং চারজন তীব্র মানসিক আতঙ্কের কারণে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনজনের অবস্থা এখনও পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
এই হামলায় ইসরায়েলের তেলআবিব শহর প্রধান লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় পুরো শহরজুড়ে জরুরি অবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) জানিয়েছে, শনিবার রাতে ইসরায়েলে ২০তম দফার হামলায় মোট ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো তৃতীয় প্রজন্মের বহু-ওয়ারহেডবিশিষ্ট ‘খাইবার শেকান’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে।
আইআরজিসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে অবতরণের সময়ও ওয়ারহেড নিয়ন্ত্রিত করা যায় এবং এটি নানা ধরনের উচ্চ বিস্ফোরক ও ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়ারহেড বহন করে।’
আইআরজিসি আরও জানিয়েছে, ইরানের সামরিক ক্ষমতার বড় অংশ এখনও ব্যবহারই করা হয়নি। এতে আরও বড় হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না তেহরান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলার ঘটনার পর ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। রোববার (২২ জুন) সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরানের ওপর মার্কিন হামলা, বিশেষ করে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার ঘটনাকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে সৌদি। এর আগে ১৩ জুনের বিবৃতিতেও সৌদি আরব ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিল।’
সৌদি সরকার পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সংযম দেখানো এবং উত্তেজনা প্রশমনের ওপর জোর দিয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে রিয়াদ।
গত মে মাসেই সৌদি আরব ইরানকে ট্রাম্পের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করতে আহ্বান জানিয়েছিল।
টানা ১০ দিন ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। এরইমধ্যে এই যুদ্ধে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন, ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী।
এমন পরিস্থতিতে ইরানিরা শঙ্কায় দিন পার করছেন। কাতারের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্মেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মেহরান কামরাভা আল জাজিরাকে বলেছেন, ইরানের জনগণ আশঙ্কা করছেন যে ইসরায়েলের লক্ষ্য তেহরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস করার ঘোষিত লক্ষ্যের চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত।
তিনি বলেছেন, বহু ইরানি বিশ্বাস করেন যে ইসরায়েলের শেষ লক্ষ্য হলো ইরানকে লিবিয়া, ইরাক এবং আফগানিস্তানে পরিণত করা। আর তাই ইরানকে টুকরো টুকরো করার কথাই নেতানিয়াহুর মনে আছে, অন্তত তেহরানের ক্ষেত্রে।
তাই ইরানিদের ক্ষেত্রে আত্মসমর্পণ কোনও অপশন নয়। কারণ তারা এটিকে শুধু সরকার পরিবর্তন হিসেবে দেখবে না বরং দেশের ভাঙন হিসেবেও দেখবে বলে জানান মেহরান।
আল জাজিরাকে তিনি আরও বলেছেন, ইতোমধ্যে ইরানের বিভিন্ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য জেরুজালেমে আলোচনা হচ্ছে। এসব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে বেলুচ, আরব, কুর্দি।
এদিকে সর্বশেষ ইরানে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে এবং হামলা অব্যাহত থাকবে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের ‘গুরুতর ও নজিরবিহীন লঙ্ঘন’ বলে আখ্যায়িত করেছে। পাশাপাশি এই ‘আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পূর্ণ অধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটি।
তাসনিম বার্তা সংস্থার বরাতে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বকে ভুলে গেলে চলবে না যে, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাঝপথে যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়ে এখন ইরানের বিরুদ্ধে বিপজ্জনক যুদ্ধ চালাচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এটি স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিয়ম বা নৈতিকতা মানে না। গণহত্যাকারী ও দখলদার এক শাসন ব্যবস্থার লক্ষ্য পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনো আইন বা অপরাধের তোয়াক্কা করে না।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন ও এই দুষ্কৃতিকারী শাসনের অপরাধের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধের অধিকার সংরক্ষণ করে। প্রজাতন্ত্র ইরানের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় বদ্ধপরিকর।’
এবার ইরানে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। দেশটির সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের বিমান বাহিনী ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেছে। রোববার (২২ জুন) বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
তবে এসব হামলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে- সেই সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
এর আগে ইরান ইসরায়েল লক্ষ্য করেছে তুমুল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, ইরান ইসরায়েল লক্ষ্য করে ২০-৩০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রই ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইসরায়েল। ইরানের সর্বশেষ এই হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইরানকে এখনই শান্তি স্থাপন করতে হবে। দেশটি যদি এটি না করে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় হামলা হবে।
দেশটির স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১০টায় হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প আরও বলেন, আমি বিশ্বকে আজ রাতে জানাতে পারি, ইরানে হামলা ছিল অসাধারণ সামরিক সাফল্য।
এ হামলার উদ্দেশ্য ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা শেষ করে দেওয়া, সন্ত্রাসের মদদদাতা বিশ্বের এক নম্বরে থাকা দেশটির পারমাণবিক হুমকি থামিয়ে দেওয়া, বলেন ট্রাম্প।
হামলার পর ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্পও পাল্টা নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র একটি টিম হিসেবে কাজ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি অঙ্গরাজ্য থেকে উড্ডয়ন করে প্রায় ৩৭ ঘণ্টার দীর্ঘ ফ্লাইট শেষে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন বি-২ বোমারু বিমান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
এই কর্মকর্তা জানান, মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো হামলার সময় একাধিকবার মাঝ আকাশে জ্বালানি নেয়। হামলার লক্ষ্যে বেছে নেওয়া হয় ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। তিনি বলেন, এই তিনটি স্থাপনাকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র তার সর্বাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমানগুলো ব্যবহার করে ‘মাদার অব অল বম্বস’ নামে পরিচিত জিবিইউ-৫৭ বাংকারবিধ্বংসী বোমা, যার প্রতিটি বোমার ওজন প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড। একটি বি-২ বিমান নাতাঞ্জ কেন্দ্রে দুটি বোমা নিক্ষেপ করে, আর ফোর্দো স্থাপনায় ছোড়া হয় এক ডজন।
এছাড়া ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর দিকে মার্কিন নৌবাহিনীর সাবমেরিন থেকে ছোড়া হয় অন্তত ৩০টি টিএলএএম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। কর্মকর্তারা বলছেন, এসব হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতাকে স্থায়ীভাবে ধ্বংস করা।
হামলার পর হোয়াইট হাউস থেকে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরান যদি কূটনৈতিক পথে না ফেরে, তবে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, 'আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছি। এটি ছিল আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য অপরিহার্য।'
এদিকে, মার্কিন হামলার বিষয়টি স্বীকার করেছে ইরান। তবে তেহরানের দাবি, যেসব স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলো কয়েকদিন আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল। তাই এসব স্থাপনায় পারমাণবিক উপাদান ছিল না এবং কোনো বিকিরণ ছড়ানোর আশঙ্কাও নেই।
এই হামলার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে যুক্ত হলো। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের কূটনৈতিক সমাধানের পথ আরও সংকুচিত করে তুলতে পারে।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে ফাঁসি দিয়েছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। দুই দেশের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের দশম দিনে এ ফাঁসি কার্যকর হলো।
ইরানের বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট মিজান অনলাইনের বরাতে এএফপি জানিয়েছে, ‘সম্পূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে মজিদ মোসাইবি নামের ওই ব্যক্তিকে আজ সকালে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তিনি মোসাদকে সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহের চেষ্টা করেছিলেন।’
গত ১৬ জুন ইসমাইল ফকরি নামের আরেক মোসাদ গুপ্তচরের ফাঁসি কার্যকর করে ইরান।
ইরানের বিচারবিভাগ-সংশ্লিষ্ট বার্তা সংস্থা মিজান অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখায় ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থার এক ‘ছদ্মবেশী এজেন্টের’ ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে ইরানে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো।
গত ১৩ জুন ইসরায়েলি হামলার পর থেকে ইরান একাধিক ব্যক্তিকে ইসরায়েলের হয়ে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।
কিছুক্ষণ আগে ইরান থেকে ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের হাইফায় আঘাত হেনেছে। তবে এই ঘটনায় আগাম সতর্কতামূলক কোনো সাইরেন বাজেনি উত্তরাঞ্চলীয় শহরটিতে। এই খবর দিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।
এই প্রথম এমন ঘটনা নিয়ে নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ইসরায়েলে। হোম ফ্রন্ট কমান্ড ঘটনাটি তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম।
ইসরায়েলি চিকিৎসা কর্মীরা বলছেন, সর্বশেষ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশজুড়ে ১০টিরও বেশি আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে জরুরি সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও উত্তর ইসরায়েলে নতুন করে সাইরেন বাজছে। সর্বশেষ ইরানি মিসাইল ব্যারেজে ইসরায়েলে ২০-৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা মেহর নিউজের খবরে বলা হয়, রবিবার সকালে ইরান নতুন দফায় ইসরায়েলের উপর প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা শুরু করেছে।
ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্যবস্তু এবং সরকারের সাথে সম্পর্কিত শিল্পের উপর আইআরজিসির ২০তম আক্রমণ শুরু হয়েছে।
লোহিতসাগরে মার্কিন রণতরিতে তাৎক্ষণিকভাবে হামলা চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি। মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভির এক প্রতিবেদনে হুথি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জায়নবাদী শত্রুর পক্ষে মার্কিন আগ্রাসন উপেক্ষা করার মতো নয়। এটি মুসলিম জাতির স্বাধীনতা, স্বকীয়তা ও মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার সমতুল্য।
ইয়াহিয়া সারি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা চালানো মূলত মুসলিম বিশ্বকে অপমান করা। মুসলিমদের ভূমি দখল, সম্পদ লুণ্ঠন এবং নির্বিচার হত্যাযজ্ঞকে বৈধ ঘোষণা করা।’
এদিকে, গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হেজাম আল-আসাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি সংক্ষিপ্ত সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ওয়াশিংটনকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এই সতর্কবার্তা দিয়েছে গোষ্ঠীটি। রোববার স্থানীয় সময় ভোরে ইরানের ফোরদো, নোতান্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা—ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে অত্যন্ত সফলভাবে হামলা সম্পন্ন করেছি। সব বিমান এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে।’
তিনি আরও দাবি করেন, ফোরদো স্থাপনায় ‘সম্পূর্ণ অস্ত্রবোঝাই বোমা’ ফেলা হয়েছে। তার ভাষায়, ‘সব বিমান এখন দেশে ফেরার পথে। আমাদের বীর মার্কিন যোদ্ধাদের অভিনন্দন। বিশ্বের আর কোনো সেনাবাহিনী এমন অভিযান চালাতে পারত না। এখন শান্তির সময়।’
ট্রাম্পের এমন দাবির কিছুক্ষণ পর হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে ইরানও। তবে, আগেই গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলা হয়েছিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হামলার পর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিউইয়র্ক সিটিতে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক স্থাপনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতে ইরানের ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রে এ হামলা চালানো হয়।
নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগ এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্টে জানায়, ‘ইরানে উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর আমরা নজর রাখছি। জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে নিউইয়র্কজুড়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
প্রায় ৮০ লাখ মানুষের শহর নিউইয়র্কে হামলার আশঙ্কা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে সম্ভাব্য যে কোনো ঝুঁকি মোকাবিলায় সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ দিকে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় শনিবার দিবাগত রাতে সরাসরি হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে নিজেই এ হামলার খবর জানান।
পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রে সফলভাবে হামলা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে হামলায় অংশ নেওয়া সব বিমান ইরানের আকাশসীমার বাইরে রয়েছে। সফল অভিযানের জন্য মার্কিন যোদ্ধাদের অভিনন্দন। বিশ্বের আর কোনো সেনাবাহিনী এমন অভিযান চালাতে পারত না। এখন শান্তির সময়।’
আরেক পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, ভারি বোমার আঘাতে মাটির ২৬২ ফুট গভীরে থাকা ফোর্দো পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে।
এরপর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘মনে রাখবেন, অনেক টার্গেট এখনো বাকি আছে। আজ রাতের লক্ষ্যবস্তু ছিল সবচেয়ে কঠিন, সম্ভবত সবচেয়ে আইনসঙ্গত। কিন্তু যদি দ্রুত শান্তি না আসে, তাহলে আমরা অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলতা, গতি এবং দক্ষতার সঙ্গে আঘাত হানব।’
পারমাণবিক স্থাপানায় হামলার বিষয়টি ইরানি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে যেই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা বলছে, আদতে সেখানে এমন কোনো পদার্থ নেই যা তেজস্ক্রিয়তা সৃষ্টি করে। ওই কর্মকর্তার মন্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ইরানি কর্তৃপক্ষ বোমা হামলার আগেই হয়তো ওই স্থাপনাগুলো থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বা তেজস্ক্রিয় উপাদান সরিয়ে ফেলেছে।
গত ১৩ জুন ভোররাতে বিনা উসকানিতে ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে ইসরায়েল ও এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্রসহ ড্রোন হামলার আশঙ্কা থেকে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আগাম প্রতিরোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে।
ওই হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে। জবাবে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইরানও। আজ দশম দিনে গড়াল ইসরায়েল–ইরান সংঘাত। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সংঘাতে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের ২৪ জন নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে আজ ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে গত আট দিনে ইরানে অন্তত ৪৩০ জন নিহত হয়েছেন। এ সময়ে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩ হাজার ৫০০ মানুষ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অধিকার সংগঠনের সংবাদমাধ্যম হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি বলেছে, ইরানে নিহতের সংখ্যা ৬৫৭ জন।
শনিবার (২১ জুন) দিবাগত রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ স্যোশালের এক পোস্টে এই দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ হামলার কথা ইরানের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
মার্কিন হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘ঘটনাগুলো অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং এর পরিণতি হবে চিরস্থায়ী।... আমাদের সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ ও জনগণকে রক্ষার জন্য ইরানের সব বিকল্প উন্মুক্ত রয়েছে।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে তিনটি প্রাথমিক দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন তেহরানের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক আব্বাস আসলানি।
আসলানি বলেন, ‘প্রথমত, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রার ওপর ভিত্তি করে ইরান সীমিত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।’
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘শুধু পারমাণবিক স্থাপনা নয়, এই হামলা মানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এর আগে ইরান স্পষ্টভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, তারা এই পদক্ষেপের জবাব দেবে।’
দ্বিতীয় দৃশ্যপট হিসেবে তিনি বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধও হতে পারে। তখন ইরান শুধু মার্কিন স্বার্থ নয়, ইসরায়েলি স্বার্থেও বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে। এর আওতায় ইসরায়েলের পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তু আঘাতের শিকার হতে পারে। ইরানের মিত্ররাও এতে যুক্ত হতে পারে।’
তৃতীয় বিকল্প হিসেবে আসলানি উল্লেখ করেন, ‘এই দুটি অপশনের সংমিশ্রণও হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিয়ে অঞ্চলের জ্বালানি সরবরাহের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে।’
ইসরায়েলের কেন্দ্রে এবং উত্তরাঞ্চলে হামলার সাইরেন বাজানো হয়েছে। টাইমস অব ইসরায়েলের লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নতুন করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান।
পরবর্তী নোটিশ জারি না করা পর্যন্ত বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর তেহরান ইসরায়েলে নতুন করে আক্রমণ শুরু করল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তারা ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে আসা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, জেরুজালেম ও তেল আবিবে বিস্ফোরণ হয়েছে। পুরো ইসরায়েলজুড়ে সতর্কতামূলক এলার্ট চালু হয়েছে।
তবে ইরানের কতটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে- সেই সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
মার্কিন হামলার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। তিনি ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় আরাঘচি লিখেছেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন ও এনপিটিকে (পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি) গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ সকালের ঘটনাগুলো অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং এর পরিণতি হবে চিরস্থায়ী। জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রেরই এ ধরনের বিপজ্জনক, আইনবহির্ভূত ও অপরাধমূলক আচরণে সতর্ক হওয়া উচিত।’
আরাঘচি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানান, ‘আমাদের সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ ও জনগণকে রক্ষার জন্য ইরানের সব বিকল্প উন্মুক্ত রয়েছে।’
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রভাবশালী একজন উপদেষ্টা মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ প্রণালি বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রধান রুটগুলোর একটি। খবর সিএনএনের।
ইরানের কায়হান পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হোসেইন শরিয়তমাদারি সতর্ক করে বলেছেন, ‘ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর, এখন আমাদের পালা।’ হোসেইন শরিয়তমাদানি ইরানের রক্ষণশীল কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত। অতীতে তিনি নিজেকে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতিনিধি বলে দাবি করেছেন।
সামাজিকমাধ্যম টেলিগ্রামে কায়হানের এক বার্তায় শরিয়তমাদারিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘কোনো সংশয় বা বিলম্ব না করে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমরা অবশ্যই বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাব এবং একযোগে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের জাহাজ চলাচলের জন্য হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
ইরানের সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফের উপদেষ্টা মাহদি মোহাম্মাদি জানিয়েছেন, ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা অনেক আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল এবং হামলায় কোনো অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হয়নি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে মোহাম্মাদি লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ইরান আগে থেকেই প্রত্যাশা করেছিল। তাই সেটি আগেই খালি করা হয়েছে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘দুইটি বিষয় নিশ্চিত: প্রথমত, জ্ঞানকে বোমা দিয়ে ধ্বংস করা যায় না, এবং দ্বিতীয়ত, এবার জুয়াড়িরা হারবে।’
এদিকে ইরানের কোম অঞ্চলের এমপি মানান রাইসি বলেছেন, ‘নির্ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমি স্পষ্টভাবে বলছি, মিথ্যাবাদী মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবির বিপরীতে ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় কোনো বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি যা হয়েছে, তা মূলত স্থলভাগে, যা পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব।’
তিনি আরও জানান, হামলার পর ফোরদোতে কোনো ধরনের তেজস্ক্রিয় উপাদান লিকের প্রমাণও পাওয়া যায়নি।
শনিবার দিবাগত রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ স্যোশালের এক পোস্টে এই দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ হামলার কথা ইরানের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
মার্কিন হামলার পর ইসরায়েল থেকে একের পর এক প্রতিক্রিয়া আসছে। এ নিয়ে মুখ খুলেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার।
এক্সে দেওয়া বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে হামলা পরিচালনা করার কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম ইতিহাসের পাতায় সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে।’
তিনি আরও দাবি করেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নেতৃত্বেই এই ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ বাস্তবায়ন হয়েছে।
এর আগে শনিবার (২১ জুন) দিবাগত রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ স্যোশালের এক পোস্টে এই দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রে সফলভাবে হামলা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে হামলায় অংশ নেওয়া সব বিমান ইরানের আকাশসীমার বাইরে রয়েছে। সফল অভিযানের জন্য মার্কিন যোদ্ধাদের অভিনন্দন। বিশ্বের আর কোনো সেনাবাহিনী এমন অভিযান চালাতে পারত না। এখন শান্তির সময়।’
আরেক পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, ভারি বোমার আঘাতে মাটির ২৬২ ফুট গভীরে থাকা ফোর্দো পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে।
মার্কিন হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা বাড়ছে বলে মনে করছেন অস্ট্রেলিয়ার ডিকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন ফোরামের পরিচালক শাহরাম আকবরজাদেহ।
আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইরান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে তাদের আঞ্চলিক মিত্র ও প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো তেহরানের আনুষ্ঠানিক নির্দেশের অপেক্ষা নাও করতে পারে।
তার ভাষায়, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের এত মিত্র এবং প্রক্সি রয়েছে যে- তারা তেহরানের নির্দেশের আগে থেকেই নিজ উদ্যোগে মার্কিন স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। আর এখানে প্রচুর মার্কিন সম্পদ রয়েছে।’
এর আগে ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার (২২ জুন) সকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ তথ্য জানান।
ইরানের প্রধান তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বছরের পর বছর সবাই এই নামগুলো শুনেছে, তারা এই ভয়ানক ধ্বংসাত্মক প্রকল্প গড়ে তুলছিল।
ট্রাম্প বলেছেন, আজ রাতে আমি বিশ্বের কাছে জানাতে পারি, এই হামলাগুলো ছিল একটি অসাধারণ সামরিক সাফল্য। ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এই হামলাকে চলমান সংঘাতের তীব্রতার ‘ভয়াবহ বৃদ্ধি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেছেন, এখন ‘সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি’ তৈরি হয়েছে। এর ফলে ‘বেসামরিক নাগরিক, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের’ জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি।
তার পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, এই মুহূর্তে ‘শুধুমাত্র কূটনীতির মাধ্যমে’ এই সমস্যার সমাধান করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
ইরানে আমেরিকা যে হামলা চালিয়েছে তা চরমভাবে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। স্থানীয় সময় শনিবার ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যে একটি অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ভিডিওতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইরানে হামলার খবর সমর্থকদের দেন। এই খবরে সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে চিৎকার করে বলেন, ‘আর যুদ্ধ নয়।’
স্যান্ডার্স বলেন, ‘আমি একমত। আর আমি আপনাদের কিছু বলতে চাই। এই খবরটা শুধু ভীতিকরই নয়, বরং এটি চরমভাবে অসাংবিধানিক। আপনারা সবাই জানেন, কেবল মার্কিন কংগ্রেসেরই এই দেশকে যুদ্ধে পাঠানোর ক্ষমতা আছে। প্রেসিডেন্টের সেই অধিকার নেই।’
শনিবার দিবাগত রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ স্যোশালের এক পোস্টে এই দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রে সফলভাবে হামলা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে হামলায় অংশ নেওয়া সব বিমান ইরানের আকাশসীমার বাইরে রয়েছে। সফল অভিযানের জন্য মার্কিন যোদ্ধাদের অভিনন্দন। বিশ্বের আর কোনো সেনাবাহিনী এমন অভিযান চালাতে পারত না। এখন শান্তির সময়।’
আরেক পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, ভারি বোমার আঘাতে মাটির ২৬২ ফুট গভীরে থাকা ফোর্দো পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে।
তবে ট্রাম্পের এই দাবি নিয়ে ইরানের প্রতিরক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি।
ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। রোববার (২২ জুন) বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এই হামলাকে চলমান সংঘাতের তীব্রতার ‘ভয়াবহ বৃদ্ধি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেছেন, এখন ‘সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি’ তৈরি হয়েছে। এর ফলে ‘বেসামরিক নাগরিক, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের’ জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি।
তার পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, এই মুহূর্তে ‘শুধুমাত্র কূটনীতির মাধ্যমে’ এই সমস্যার সমাধান করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
ইরানে হওয়া হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের বি-টু স্পিরিট বম্বার বিমান ছিল বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন একজন মার্কিন কর্মকর্তা। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাটির নিচে ৬০ মিটার গভীরতায় অবস্থিত স্থাপনায় আঘাত করতে সক্ষম ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমা জিবিইউ ৫৭ শুধুমাত্র এই বিমানই নিক্ষেপ করতে পারে।
কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের চার হাজার কিলোমিটারের মধ্যে থাকা একটি বিমানঘাঁটিতে এই ধরনের কয়েকটি বিমান নিয়ে রেখেছিল। তবে দুদিন আগে এই ধরনের কয়েকটি বিমান ইরান থেকে প্রায় সাড়ে নয় হাজার কিলোমিটার দূরের বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে রাখা হয়।
যুদ্ধ কেবল শুরু মিস্টার ট্রাম্প। এখন আপনি শান্তির কথা বলছেন? আমরা এমনভাবে আপনার সঙ্গে ডিল করব যেন আপনি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিণতি বুঝতে পারেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রোগ্রামে এমনভাবেই হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন ইরানি একজন উপস্থাপক। ইরান ইন্টারন্যাশনালের লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
মার্কিন হামলার পর ইরানের কট্টরপন্থী আইনপ্রণেতা হামিদ রাসাই বলেছেন, এই জঘন্য কাজের কঠোর ও জোরালো জবাব দেওয়া হবে।
এ ছাড়া ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আরও বলা হয়েছে, এখন থেকে, এই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রতিটি আমেরিকান বেসামরিক ও সামরিক কর্মীকে হামলার বৈধ লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এদিকে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইরানকে এখনই শান্তি স্থাপন করতে হবে। দেশটি যদি এটি না করে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় হামলা হবে।
দেশটির স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১০টায় হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প আরও বলেন, আমি বিশ্বকে আজ রাতে জানাতে পারি, ইরানে হামলা ছিল অসাধারণ সামরিক সাফল্য।
এ হামলার উদ্দেশ্য ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা শেষ করে দেওয়া, সন্ত্রাসের মদদদাতা বিশ্বের এক নম্বরে থাকা দেশটির পারমাণবিক হুমকি থামিয়ে দেওয়া, বলেন ট্রাম্প।
এদিকে হামলার পর ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্পও পাল্টা নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র একটি টিম হিসেবে কাজ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের অন্তত তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে সবচেয়ে সুরক্ষিত ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে ছয়টি ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করা হয় বলে জানান তিনি। রোববার (২২ জুন) টাইমস অব ইসরায়েল এক প্রতিবেদনে ফক্স নিউজের উপস্থাপক শন হ্যানিটির বরাত দিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করে।
ফক্স নিউজের জনপ্রিয় উপস্থাপক হ্যানিটি জানান, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়। সেখানেই ট্রাম্প তাকে জানান, ইরানের পাহাড়ের নিচে অবস্থিত গোপন ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা ফেলেছে। তিনি আরও জানান, যদিও পূর্ব ধারণা ছিল মাত্র দুটি বোমাই যথেষ্ট হবে, বাস্তবে টার্গেট সম্পূর্ণ ধ্বংসে ছয়টি বোমা প্রয়োজন হয়েছে।
হ্যানিটির ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন থেকে নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর দিকে অন্তত ৩০টি টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। সাবমেরিনগুলো ইরানের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৪০০ মাইল দূরে অবস্থান করছিল বলে জানান তিনি।
এর আগেই ইসরায়েল দাবি করেছিল, ১৩ জুন তাদের চালানো প্রথম দফার হামলায় নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্র ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুটি কেন্দ্র— ফোর্দো ও নাতাঞ্জ— দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমের মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
বাঙ্কার-বাস্টার বোমা হলো এক ধরনের অত্যন্ত শক্তিশালী অস্ত্র, যা মূলত মাটির গভীরে বা পাহাড়ের নিচে নির্মিত কংক্রিটের সুরক্ষিত স্থাপনা ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। এই অস্ত্র মূলত সামরিক ঘাঁটি, গোপন গবেষণাগার কিংবা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর মতো কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রয়োগ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, হামলার বিষয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন তিনি। একইসঙ্গে বলা হয়, হামলার পূর্বে ইরানের পারমাণবিক উপকরণ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল— দুই দেশই বহু বছর ধরে দাবি করে আসছে, ইরানের এসব পারমাণবিক কেন্দ্র দেশটির সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির ভিত্তি। সম্প্রতি ওই সব কেন্দ্র লক্ষ্য করেই একাধিক হামলা চালানো হয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।
ইরানের অন্তত তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে ইরানও হামলার তথ্য স্বীকার করেছে। ইরানে হামলার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেছেন, ইরানকে এখনই শান্তি স্থাপন করতে হবে। দেশটি যদি এটি না করে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় হামলা হবে। দেশটির স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১০টায় হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প আরও বলেন, আমি বিশ্বকে আজ রাতে জানাতে পারি, ইরানে হামলা ছিল অসাধারণ সামরিক সাফল্য।
এ হামলার উদ্দেশ্য ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা শেষ করে দেওয়া, সন্ত্রাসের মদদদাতা বিশ্বের এক নম্বরে থাকা দেশটির পারমাণবিক হুমকি থামিয়ে দেওয়া, বলেন ট্রাম্প।
এদিকে হামলার পর ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্পও পাল্টা নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র একটি টিম হিসেবে কাজ করেছে।
ভাষণে ট্রাম্প আরও বলেছেন, ইরানের সাবেক মিলিটারি কমান্ডার কাসেম সোলেইমানি হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছে। আমি অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিই যে এমনটি আর হতে দিবো না।
এর আগে ইরানে হামলার পর ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেন, তেহরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ আর ইসফাহানের পারমাণবিক ঘাঁটিতে সফলভাবে হামলা চালানো হয়েছে এবং হামলা শেষে সব বিমান এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে আছে।
এর কিছুক্ষণ পর ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার পোস্ট করেন 'ফোর্দো ইজ গন' অর্থাৎ 'ফোর্দো শেষ।' যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ হামলায় বি-টু বোমারু বিমান জড়িত।
ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার (২২ জুন) সকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ তথ্য জানান।
ইরানে হামলার পর ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সময় রাত ১০টার দিকে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা) তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তিনি দাবি করেছেন, ইরানে তাদের বিমানবাহিনী অত্যন্ত সফল হামলা চালিয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন, “এটি যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং বিশ্বের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ইরানকে এখন অবশ্যই এ যুদ্ধ বন্ধে রাজি হতে হবে।”
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিকভাবে ইরানে হামলার ঘোষণায় মার্কিন আইনপ্রণেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিবিসি
দক্ষিণ ক্যারোলিনার সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, "তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন", এবং যোগ করেন, "ইরানের শাসকগোষ্ঠী এমনটাই প্রাপ্য।"
রিপাবলিকান সিনেটর রজার উইকার ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, এটি ছিল একটি "সুনির্দিষ্ট ও সঠিক সিদ্ধান্ত", যার মাধ্যমে ইরানের "অস্তিত্বগত হুমকি" মোকাবিলা করা হয়েছে।
তবে সবার প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক ছিল না। কেন্টাকির রিপাবলিকান সিনেটর থমাস ম্যাসি বলেন, "এই সিদ্ধান্ত সাংবিধানিক নয়।"
অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট প্রতিনিধি সারা জ্যাকবস এই হামলাকে "একটি বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধির ঘটনা" বলে অভিহিত করেছেন, যা "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি অন্তহীন ও প্রাণঘাতী যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারে"।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ট্রাম্পের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ-এ দেওয়া ঘোষণাটি পুনঃপোস্ট করলেও এখনো পর্যন্ত এই হামলা নিয়ে কোনো সরাসরি মন্তব্য করেননি। খবর বিবিসি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের পর ইরান তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার উপ-রাজনৈতিক পরিচালক হাসান আবেদিনি আজ সরাসরি টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে জানান, ইরান ইতিমধ্যেই তিনটি পরমাণু স্থাপনাকে “আগেই” খালি করে ফেলেছে। খবর বিবিসি
তিনি বলেন, “ট্রাম্প যেটাই বলুন না কেন, আমরা বড় ধরনের কোনো ক্ষতির মুখে পড়িনি, কারণ গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।”
এমন মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, ইরান হয়তো সম্ভাব্য হামলা বা হুমকির ব্যাপারে পূর্বেই সতর্ক ছিল এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এতে তারা একদিকে যেমন ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়েছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের কৌশলগত সচেতনতা ও প্রতিরক্ষা দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারছে।
তবে এখনো পরিষ্কার নয়, ঠিক কবে নাগাদ এসব স্থাপনা খালি করা হয় এবং সেগুলোর উপাদান কোথায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বিবিসি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফল হামলা সম্পন্ন করেছে। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান।
ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা—ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে—খুবই সফলভাবে হামলা সম্পন্ন করেছি। সব বিমান এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে।’ খবর বিবিসির।
ট্রাম্প একটি ওপেন-সোর্স ইন্টেলিজেন্স একাউন্ট থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে যে, শক্তিশালীভাবে সুরক্ষিত ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা নাই হয়ে গেছে। আল–জাজিরা।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আজ ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় রাত ১০টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘এটি (ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও পুরো বিশ্বের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’
ইরানের ভূগর্ভস্থ ফর্দো পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হবে কি না এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দুই সপ্তাহের সময় নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে দখলদার ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছে, দুই সপ্তাহের সময় শেষ হওয়ার আগেই যেন তারা হামলা চালায়। এ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইসরায়েলের গত বৃহস্পতিবার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে।
রোববার (২২ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের হয়ে ওই ফোন কলে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এবং সেনাপ্রধান ইয়াল জামির।
ইসরায়েলিরা ওই টেলিআলাপে জানিয়েছে, ইরানের ফর্দো পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালানোর জন্য তাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। যদি যুক্তরাষ্ট্র এতে সরাসরি যুক্ত না হয় তাহলে তারা একাই ফর্দোতে হামলা চালাবে।
তবে ফর্দো পরমাণু কেন্দ্রটি মাটির ২৬২ ফুট গভীরে অবস্থিত হওয়ায় দখলদাররা এটি ধ্বংস করতে পারবে না। তাদের সেই সক্ষমতা নেই। এজন্য অবকাঠামোটি পুরোপুরি ধ্বংস না করে এটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তারা। এক্ষেত্রে স্থল বাহিনী অথবা অন্যান্য উপায় ব্যবহার করা হতে পারে।
ওই টেলি আলাপের পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শুক্রবার বলেন, ফর্দো পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস করার কোনো সক্ষমতা ইসরায়েলের নেই।
সূত্র: রয়টার্স
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিয়েছেন, তার দেশ পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধ করবে না। এছাড়া বেসামরিক কাজের জন্য যেসব কার্যক্রম আছে সেগুলোও অব্যাহত রাখা হবে। বেসামরিক পারমাণবিক কার্যক্রমকে ইরানের অধিকার হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।
ইরানি বার্তাসংস্থা ইরনা নিউজ জানিয়েছে, শনিবার (২১ জুন) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ম্যাক্রোঁকে তিনি জানান, ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম বেসামরিক কাজের জন্য ব্যবহৃত হবে এ ব্যাপারে তার দেশ গ্যারান্টি দিতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু যুদ্ধের হুমকি দিয়ে তাদের এই অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।
এছাড়া সামনে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার জবাব ‘আরও বিধ্বংসী’ হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সূত্র: ইরনা নিউজ
ইরানের পাল্টা হামলায় ক্রমেই বাড়ছে ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। এ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র-জার্মান থেকে সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ইসরায়েলে নেমেছে এক ডজনের বেশি বিমান। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলে সামরিক সহায়তা পাঠালে হামলার হুমকি দিয়েছে ইরান।
শনিবার (২১ জুন) জর্ডানের সংবাদমাধ্যম রয়া নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যেই তৃতীয় কোনো দেশ থেকেস সামরিক সহায়তা পাঠানো হলে তা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
শনিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, যেকোনো দেশ যদি নৌপথ বা আকাশপথে ইসরায়েলি বাহিনীকে সামরিক বা রাডার সরঞ্জাম পাঠায়, তাহলে তা ইসলামি ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে অংশগ্রহণ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।
এর আগে ইসরায়েলে সঙ্গে চলমান যুদ্ধের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলি শাসনের আগ্রাসী যুদ্ধে জড়ানোর বিপজ্জনক পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের সঙ্গে এই যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে, তবে তা ‘সবার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি এই যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়, তবে তা তাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে।
এর আগে ১৮ জুন এক টেলিভিশন ভাষণে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনিও যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিলে আমেরিকা ‘অপূরণীয় ক্ষতির’ মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, এই অঞ্চলের বাস্তবতা সম্পর্কে যারা জানে, তারা ভালোভাবেই বোঝে—এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা শতভাগ তাদের নিজেদের ক্ষতির কারণ হবে। তারা যা ক্ষতি করবে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই ক্ষতি হবে স্থায়ী ও অপূরণীয়।
দখলদার ইসরায়েলকে লক্ষ্য বিশাল ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। যেগুলো ইসরায়েলের দিকে ছুটে যাচ্ছে।
ইরানের চৌকস ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি) শনিবার মধ্যরাতে ড্রোন হামলার ঘোষণা দেয়। বাহিনীর মুখপাত্র আলী মোহাম্মদ নাইনি বলেছেন, “অ্যাটাক ও সুইসাইড ড্রোনের বিশাল একটি ঢেউ ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর দিকে কয়েক ঘণ্টা ধরে এগিয়ে চলছে। এগুলো যাচ্ছে অধিকৃত ভূমির উত্তর থেকে দক্ষিণ সবদিকে।“
গতকাল শনিবার সকালেও ইসরায়েলে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইরান। এরআগে ছুড়েছিল মিসাইল। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানায় শনিবারই প্রথমবারের মতো কোনো ইরানি ড্রোন সরাসরি আঘাত হেনেছে। সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে ড্রোনের আঘাতে একটি বাড়ি প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল
কোনো দেশ যদি জাহাজ অথবা বিমানে করে দখলদার ইসরায়েলে সামরিক পণ্য পাঠায় তাহলে সেগুলোতে হামলা চালানো হবে হুমকি দিয়েছে ইরান।
দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর সদরদপ্তরের এক মুখপাত্র শনিবার (২১ জুন) এ হুমকি দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ।
ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন, দখলদার ইসরায়েল তাদের রাডার ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বিরাট একটি অংশ হারিয়েছে। ইসরায়েল এসব অস্ত্র ও সরঞ্জামের অভাবে ভুগছে। এখন তারা অন্যান্য দেশের কাছ থেকে এগুলো পাওয়ার চেষ্টা করছে।
ওই মুখপাত্র হুমকি দিয়ে বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে সতর্কতা দিচ্ছি, ইহুদিবাদী সরকারের কাছে যদি কোনো দেশর রাডার এবং সামরিক পণ্য জাহাজ অথবা বিমানে করে পাঠায় তাহলে আমরা ইরানের বিরুদ্ধে চলমান আগ্রাসনে তাদের জড়িত হওয়া হিসেবে বিবেচনা করব। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এগুলো বৈধ হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে কাজ করবে।”
সূত্র: তাসনিম নিউজ
ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ কারমানশাহতে হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। তাদের হামলায় সেখানে ৫ ইরানি সেনা নিহত ও ৯ জন আহত হয়েছেন।
ইরানি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজকে কারমানশাহের প্রাদেশিক গভর্নর জানিয়েছেন, শনিবার (২১ জুন) প্রদেশের কাসের-ই-শিরিনের নাফতাশহর গ্রামে হামলা চালায় দখলদাররা। এতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
গত ১৩ জুন দখলদার ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন জায়গা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এরপর থেকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
এখন পর্যন্ত ইরানে অন্তত ৪৩০ জন নিহত ও ৩ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। অপরদিকে ইরানের হামলায় ইসরায়েলে ২৫ জন নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন।
সূত্র: আনাদোলো
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ'র প্রাক্তন বিশ্লেষক রে ম্যাকগভর্ন বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন 'সমস্ত গোয়েন্দা তথ্য বাতিল করে তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ' বলে মনে হচ্ছে।
রোববার (২২ জুন) আল জাজিরাকে তিনি এ কথা বলেন। ম্যাকগভর্ন-এর মতে, মানুষ স্পষ্ট উদ্দেশ্যে 'পারমাণবিক অস্ত্র'র সঙ্গে 'পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণকে' মিশিয়ে ফেলছে।
প্রাক্তন সিআইএ বিশ্লেষক বলেন, 'ইউক্রেন এবং অন্যান্য ইস্যুতে গোয়েন্দা সম্প্রদায় যতই খারাপ অবস্থানে থাকুক না কেন, ২০০৭ সালের নভেম্বরে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে যে, ২০০৩ সালের শেষের দিকে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে।'
মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে 'সত্য বলেছিলেন' বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না - সম্প্রতি তুলসির এই বক্তব্যকে অস্বীকার করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের ভাষ্য, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক যখন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না, তখন তিনি 'ভুল' ছিলেন।
এই প্রসঙ্গ টেনে ম্যাকগভর্ন আল জাজিরাকে বলেন, 'তুলসি গ্যাবার্ড সত্য বলছেন।'
/এসকে
ইরানের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের রাস্তায় নেমেছেন হাজারো মানুষ। শনিবার (২১ জুন) পার্লামেন্ট স্কয়ারে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে তারা ইরান ও গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ইসরায়েলকে দেওয়া সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করে।
তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদলু এজেন্সির প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিন, ইরান ও লেবাননের পতাকা হাতে, ‘ইরানে বোমাবর্ষণ বন্ধ করো’, ‘গাজায় হামলা থামাও’, ‘ইসরায়েলকে অস্ত্র দিও না’ এবং ‘ফিলিস্তিন হোক স্বাধীন’ ইত্যাদি স্লোগানে শহরের কেন্দ্রস্থল মুখর করে তোলেন।
বিক্ষোভকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘ইরানে হামলা চলবে না’—যা সরাসরি শুক্রবার ইসরায়েল পরিচালিত হামলার প্রতি প্রতিক্রিয়া। ওই হামলায় ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু করা হয়। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি দূতের ভাষ্যমতে, এতে অন্তত ৭৮ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরাও রয়েছেন।
এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩ জন নিহত এবং ১৭০ জনের বেশি আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে, জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
লন্ডনের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষ শুধু যুদ্ধ বিরোধিতাই করেননি, তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার দাবি তুলেছেন। তাদের মতে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে একের পর এক হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।
আয়োজকদের ভাষ্য, এই সংঘাতের অবসান একমাত্র সম্ভব কূটনৈতিক পন্থায়। যুদ্ধ নয়, দরকার আলোচনার টেবিলে ফেরা। যুক্তরাজ্য সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে এবং ইসরায়েলের প্রতি সব ধরনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যদি সময়মতো কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে এই সংঘাত দ্রুতই একটি বড় আকারের যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে, যার প্রভাব শুধু ওই অঞ্চল নয়, গোটা বিশ্বেই পড়বে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত দ্রুত হস্তক্ষেপ করে উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়া।
ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এক ডজনেরও বেশি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সফল হামলার দাবি করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
শনিবার (২১ জুন) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানায়, ইসরায়েলি গোয়েন্দা বিভাগের নির্দেশনায় প্রায় ৩০টি যুদ্ধবিমান ইরানের মাহভাজ এলাকায় অভিযান চালায়। খবর বিবিসি।
এই অভিযানে ৫০টিরও বেশি আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে একাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, হামলার লক্ষ্য ছিল মিসাইল লঞ্চারসহ অন্যান্য সামরিক অবকাঠামো।
আইডিএফ-এর ভাষ্যমতে, ইরানের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করে নিজেদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষায় এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বিষয়টি নিয়ে ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই হামলাকে তেহরান কড়া প্রতিক্রিয়ায় দেখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান দেশটির পশ্চিম উপকূল থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। এটি ইরানে সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি, নাকি তেহরানের ওপর কূটনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল—তা স্পষ্ট নয়।
এই বিমানগুলো এমন বিশাল বোমা বহনে সক্ষম, যা ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার বিকেলে নিউ জার্সি থেকে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন। গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জানিয়েছেন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য তিনি দুই সপ্তাহ সময় নিচ্ছেন। এর মধ্যেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন ইরানে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালাবে কি না। ইতিমধ্যে ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন ট্রাম্প।
নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরির হুইটম্যান বিমান ঘাঁটি থেকে একাধিক বি-২ বোমারু বিমান উড্ডয়ন করেছে। কিছু ফ্লাইট ট্র্যাকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানাচ্ছে, বোমারু বিমানগুলো গুয়ামের উদ্দেশে যাচ্ছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা আছে। তবে নিউইয়র্ক টাইমস এই তথ্য নিশ্চিত হতে পারেনি।
এই বিমানগুলো ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা বহনে সক্ষম। যা ইরানের ভূগর্ভস্থ ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে বলে আলোচনা আছে।
ইরানের ওপর হামলায় ওয়াশিংটন যোগ দিলে ইয়েমেনের হুথিরা লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাবে।
শনিবার (২১ জুন) সংগঠনের সামরিক মুখপাত্র এ কথা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র এবং হুথিরা একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, যার অধীনে কোনো পক্ষই অন্য পক্ষকে লক্ষ্যবস্তু করবে না।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার এবং জনসাধারণের অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার জন্য ইরানের বুশেহর প্রদেশে ৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার (২১ জুন) ইরানের সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, বুশেহরের নিরাপত্তা প্রধান হায়দার সুসানি গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি তাসনিম নিউজকে বলেন, তদন্তের পর আটককৃতদের জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার এবং সামাজিক মনোবলকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলকে সমর্থন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এর আগে একই দিন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশে মোসাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী।
খুজেস্তান প্রদেশের প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা শত্রুর পক্ষ হয়ে তথ্য সংগ্রহ, রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা, মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার কাজে যুক্ত ছিলেন।
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, গ্রেপ্তারদের সঙ্গে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সরাসরি যোগাযোগ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়া বারবার ইসরায়েলকে জানিয়েছে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে— এমন কোনো প্রমাণ নেই। তিনি বলেছেন, রাশিয়া ইরানকে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি উন্নয়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
প্রেসিডেন্ট পুতিন শনিবার (২১ জুন) স্কাই নিউজ আরবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, রাশিয়া ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) কখনোই এমন কোনো প্রমাণ পায়নি যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য কাজ করছে। আমরা এই বিষয়টি বহুবার ইসরায়েলি নেতৃত্বকে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ইরানকে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি উন্নয়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত। শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি চালানোর অধিকার ইরানের রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গে এক অর্থনৈতিক ফোরামে পুতিন জানান, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধে রাশিয়া উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং কিছু প্রস্তাব দিচ্ছে—তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়।
পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষই হতাহতের খবর দিচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি স্বীকার করেছে।
গত ১৩ জুন থেকে এ পর্যন্ত ৮ দিনে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ৫ শতাধিক বিস্ফোরকবাহী ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইরান। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার রাতভর ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয়েছে অন্তত ৪০টি ড্রোন।
তবে এসব ড্রোনের ৯৯ শতাংশকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করতে পেরেছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী (আইএএফ)।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে আইএএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতভর ইসরায়েলে অন্তত ৪০টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইরানের সামরিক বাহিনী। এছাড়া গত ১৩ জুন থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে ৫ শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান। তবে এসব ড্রোনের ৯৯ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭০টিরও বেশি ড্রোন আমরা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করতে পেরেছি।
অধিকাংশ ড্রোন ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইস্ফাহান থেকে ছোড়া হয়েছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে আইডিএফের বিবৃতিতে।
এদিকে শুক্রবার রাতে ইরানে অভিযান চালিয়েছে আইএফও। সেই অভিযানে নিহত হয়েছেন ইরানের সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভোল্যুশনারী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর ড্রোন ইউনিটের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন পৌর যোধি।
সূত্র: আলজাজিরা
ইরান ও ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শান্তির বার্তা ছাড়া কারও পক্ষ নিয়েই কোনো রকম বার্তা দেননি। কিন্তু কেন্দ্রের এই মৌন অবস্থানকে ‘নীতি বিরুদ্ধ’ এবং ‘কাপুরুষোচিত’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন কংগ্রেসের সাবেক সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। ইরানের পক্ষ নিয়ে সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, ইসরায়েল ইরানের সাধারণ জনগণের উপর যে হামলা চালাচ্ছে সেটা একতরফা ও আইন বিরুদ্ধ। ভারত সরকারের উচিত এ নিয়ে নীরবতা ভঙ্গ করা।
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের আবহে সরকার নীরব থাকলেও কংগ্রেস যে ইরানের পক্ষে সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী। কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেত্রী দ্য হিন্দু পত্রিকায় লেখা একটি প্রবন্ধে স্পষ্ট বলেছেন, ইরান আমাদের পুরনো বন্ধু। শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কই নয়, ইরানের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক যোগও রয়েছে। সোনিয়া মনে করিয়েছেন, অতীতে একাধিকবার কাশ্মীর ইস্যুতে জাতিসংঘে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান।
কংগ্রেস নেত্রী দাবি জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদি সরকারের উচিত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিরক্ষার জন্য সরব হওয়া। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে কংগ্রেসের সাবেক সভানেত্রীর বক্তব্য, ইসরায়েল যেভাবে ইরানে হামলা চালিয়েছে সেটা ইরানের সার্বভৌমত্বে আঘাত। এটা বেআইনি, এক তরফা এবং আঞ্চলিক শান্তি বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা। কংগ্রেস এই হামলার নিন্দা করছে।
সোনিয়ার দাবি, মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডই জানিয়েছেন, ইরান কোনও রকম পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। ২০০৩ সালে সেই চেষ্টা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লা আলি খামিনিই এর অনুমতিও দেননি। তারপরও ইরানে কেন ইসরায়েল হামলা চালাল, প্রশ্ন তুলছেন সোনিয়া। আর শুধু ইরান নয়, ইসরায়েল যেভাবে গাজা ভুখণ্ডে লাগাতার ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে, সেটারও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কংগ্রেসের সাবেক সভানেত্রী।
মার্কিনভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) ও ক্রিটিক্যাল থ্রেটস প্রজেক্ট (সিটিপি) দাবি করেছে, ইরান তাদের কিছু পারমাণবিক উপকরণ গোপনে সরিয়ে ফেলেছে এবং সেগুলো এমন স্থানে সরিয়ে নিয়েছে যেখানে তা ধ্বংস করা কঠিন।
আইএসডব্লিউ ও সিটিপি’র সর্বশেষ যৌথ মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কায় গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক উপকরণ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলা হয়েছে, যাতে সেগুলো ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
এই কৌশলের উদ্দেশ্য কী— তা ব্যাখ্যা করে পর্যবেক্ষকরা বলেন, এর মাধ্যমে ইরান পশ্চিমাদের সামনে এমন একটি বার্তা দিতে চাইছে যে, ‘সব পারমাণবিক উপকরণ ধ্বংস করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দীর্ঘ, কঠিন এবং হয়তো ব্যর্থ এক অনুসন্ধানে নামতে হবে।’
এর ফলে পশ্চিমা দেশগুলোকে আলোচনায় ফিরতে উৎসাহিত করাই ইরানের লক্ষ্য। পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো বলছে, এটি এক ধরনের কূটনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল, যাতে করে পশ্চিমা শক্তিগুলো যুদ্ধ নয়, আলোচনার পথ বেছে নেয়।
ইরান অবশ্য বরাবরই বলে আসছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।
আর এই জেরে গত ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে এবং এর জবাবে ইরানও ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা শুরু করে।
এদিকে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের মহাসচিব ও নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে ইরান। ইরানের আধা সরকারি সংবাদমাধ্যম ফার্স নিউজের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আল-জাজিরা।
তেহরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের বিষয়ে রাফায়েল গ্রোসির মনোভাব নিয়ে সমালোচনা করেছেন ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির–সায়েদ ইরাভানি। সেই সঙ্গে ইসরাইলি হামলার নিন্দা না জানানোকেও ইরাভানির ব্যর্থতা বলেন তিনি।
ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি গত বৃহস্পতিবার রাফায়েল গ্রোসির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি রাফায়েল গ্রোসির বিরুদ্ধে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় ইসরাইলি হামলার সময় ‘নিষ্ক্রিয়তার’ অভিযোগ এনেছেন।
ইরানের দু’টি ড্রোন ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে দেশটির উত্তরাঞ্চলে ও দক্ষিণাঞ্চলে পৃথক হামলা চালিয়েছে। যা অনেকটা অবাক করেছে ইসরায়েলকে। হামলার বিষয়টি স্বীকার করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এটি একটি বিরল ঘটনা, যেখানে ইরানের একমুখী আক্রমণাত্মক ড্রোন সফলভাবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, শনিবার (২১ জুন) ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে জর্ডান সীমান্তসংলগ্ন বেইত শেইন শহরে একটি ড্রোন আঘাত হানে। এতে একটি দুইতলা বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। জরুরি উদ্ধারকর্মীরা জানান, বিস্ফোরণে বাড়িটির পাশে বড় ধরনের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, জানালা ও দরজা উড়ে গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড আডম (এমডিএ) জানিয়েছে, তারা ধ্বংসস্তূপের ভেতর তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। হতাহত কারও খোঁজ পায়নি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তথ্যমতে, ইরানের দ্বিতীয় ড্রোনটি ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের একটি খোলা এলাকায় আঘাত হানে। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করার পর থেকে ইরান যে বিপুলসংখ্যক ড্রোন ছুড়েছে, তার মধ্যে বেশির ভাগই লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর আগেই প্রতিহত করা হয় বলে দাবি ইসরায়েলি বাহিনীর।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরানের সর্বশেষ হামলায় অন্তত ছয়টি ড্রোন ছিল। এর মধ্যে কয়েকটি ড্রোন আরাভা মরুভূমি ও গোলান মালভূমিসহ অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছানোর আগেই ঠেকানো হয়।
ইসরায়েলের এক সামরিক কর্মকর্তার মতে, গত সপ্তাহে ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করার পর থেকে ইরান হামলার জন্য হাজারের বেশি ড্রোন পাঠায়। যা লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর আগেই নিষ্ক্রিয় করা হয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরানের ভূখণ্ডে ক্রমবর্ধমান ইসরায়েলি আক্রমণের মধ্যে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তার জীবন এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্ব কাঠামো উভয়কেই রক্ষা করার জন্য 'একটি অসাধারণ ধারাবাহিক পদক্ষেপ' নিয়েছেন। শনিবার (২১ জুন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি তার মৃত্যুর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিন জন সিনিয়র ধর্মীয় নেতার নাম জানিয়েছেন।
জরুরি যুদ্ধ পরিকল্পনার সঙ্গে পরিচিত তিন জন ইরানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খামেনি ইলেকট্রনিক যোগাযোগ স্থগিত করেছেন এবং সনাক্তকরণ এড়াতে একজন 'বিশ্বস্ত সহকারীর' মাধ্যমে কমান্ডারদের সঙ্গে কথা বলছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ নেতা এখন একটি 'বাঙ্কারে' সময় কাটাচ্ছেন। তাকে হত্যা করার জন্য ইসরায়েলি হুমকির মধ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের উদ্ধৃত করা কর্মকর্তাদের ভাষ্য, খামেনি বিশ্বাস করেন যে, ইসরায়েল অথবা আমেরিকা তাকে হত্যার চেষ্টা করতে পারে।
প্রতিবেদনে ইরানের বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং উল্লেখ করা হয়েছে, খামেনির পুত্র মোজতবা, যিনি একসময় গুঞ্জনে এসেছিলেন, উত্তরসূরিদের মধ্যে তার নাম নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সামরিক কমান্ডারদের ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই প্রতিবেদন সম্পর্কে ইরানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য আসেনি বলে জানানো হয়।
১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিমান হামলা শুরু করলে শত্রুতা শুরু হয়। এর ফলে তেহরান প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তখন থেকে কমপক্ষে ২৫ জন নিহত এবং শত শত আহত হয়েছে।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৪৩০ জন নিহত এবং ৩,৫০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
তথ্যসূত্র: আনাদোলু এজেন্সি
ইরানের উত্তরাঞ্চলে শুক্রবার (২০ জুন) মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের এই সময়ে ভূকম্পন ইরানের গোপন পারমাণবিক পরীক্ষা কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
আলবোর্জ পর্বতমালায় আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ১ মাত্রার এই ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। এটিকে ঘিরে পারমাণবিক বোমার গোপন পরীক্ষায় জল্পনা শুরু হয়েছে, যেখানে ইরান এখন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কোন ধাপে রয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ থেকে সাংঘর্ষিক প্রতিবেদন আসছে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা এটিকে ঘিরে পারমাণবিক বোমার গোপন পরীক্ষায় জল্পনা খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, এটি প্রাকৃতিক উৎপত্তির স্পষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে। এ ছাড়া পারমাণবিক পরীক্ষার কারণে সৃষ্ট ভূমিকম্প অগভীর হয় এবং কদাচিৎ ৩ মাত্রার বেশি হয়। ইরানেরটি ছিল ৫ মাত্রার বেশি। এই মাত্রার ভূকম্পন তৈরির জন্য কয়েক মিলিয়ন টন টিএনটির (বিস্ফোরণের শক্তির একক) সমতুল্য শক্তি প্রয়োজন।
এবার আগের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার দৃষ্টান্তগুলো মিলিয়ে দেখা যাক:
২০১৬ সালের শুরুতেই দুটি উল্লেখযোগ্য ভূকম্পনের ঘটনা ঘটে, যার দ্বিতীয়টি আসলে কোনো প্রাকৃতিক ভূমিকম্প ছিল না। প্রথম ঘটনাটি ছিল ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি টেকটোনিক ভূমিকম্প, যা ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি উত্তর-পূর্ব কোণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে এবং কয়েকশ মানুষ নিহত বা আহত হয়।
এর পরের ঘটনাটি ঘটেছিল এর কয়েক দিন পর, যার মাত্রা অনেক কম ছিল। এতে সরাসরি কোনো ক্ষতি হয়নি, কিন্তু এর রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। এই কাণ্ড ঘটিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। ২০০৬ সালে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা কর্মসূচি শুরু করার পর চতুর্থ পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ ছিল এটি।
এই ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট ভূমিকম্প তরঙ্গ সারা বিশ্বের সিসমোমিটারগুলোতে ধরা পড়ে। বিশ্বের প্রধান সব দেশের রাজনীতিবিদরা, এমনকি উত্তর কোরিয়ার মিত্র চীনের নেতারাও এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন।
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের প্রচারযন্ত্র উল্লাস প্রকাশ করে জানায়, এই সর্বশেষ অস্ত্র পরীক্ষায় তারা সফলভাবে তাদের প্রথম হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
ওই সময় উত্তর কোরিয়াই বিশ্বের একমাত্র দেশ ছিল, যেটি তখনই পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছিল। দেশটির পুংগেয়-রি পরীক্ষা কেন্দ্রটি উত্তর হামগিয়ং প্রদেশে অবস্থিত। এটি রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে প্রায় ২৩৫ মাইল উত্তর-পূর্বে এবং রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় বন্দর ভ্লাদিভোস্তক থেকে প্রায় একই দূরত্বে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সালে সেখানে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করে, যার পরবর্তীতে ২০০৯ এবং প্রায় তিন বছর আগে ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আরও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
এই পরীক্ষাগুলোর মাত্রা ক্রমাগত বেড়েছে। বিস্ফোরণের ভূমিকম্প তরঙ্গ থেকে গণনা করা সমতুল্য ভূমিকম্পের মাত্রা থেকে এটি বোঝা যায়। এই মানগুলো ২০০৬ সালে ৪ দশমিক ৩ থেকে বেড়ে ২০০৯ সালে ৪ দশমিক ৭ এবং ২০১৩ সালে ৫ দশমিক ১-এ উন্নীত হয়।
কলোরাডোর গোল্ডেন-এ অবস্থিত ইউএসজিএস ন্যাশনাল আর্থকোয়েক ইনফরমেশন সেন্টার (এনইআইসি)-এর বিজ্ঞানীদের গণনা অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার ঘটনাটির মাত্রাও ছিল ৫ দশমিক ১। জার্মানির পটসডামে অবস্থিত জিওফোরসুংজেনট্রাম কিছুটা বেশি—৫ দশমিক ২ মাত্রা অনুমান করেছে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় পাঁচটি পারমাণবিক শক্তি (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউএসএসআর—সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং চীন) পরিচালিত ২ হাজার ১০০ টিরও বেশি পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে, এই মাত্রার মানগুলোকে বিস্ফোরণের শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়, যাকে ‘বিস্ফোরণ ইয়েল্ড’ বলা হয়। সাধারণত, একটি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বিস্ফোরণ যা ৫ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প তরঙ্গ উৎপন্ন করে, তা প্রায় ৭ হাজার টন প্রচলিত রাসায়নিক বিস্ফোরক টিএনটি-এর বিস্ফোরণের সমতুল্য শক্তি উৎপন্ন করে। তুলনামূলকভাবে: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে হিরোশিমাকে ধ্বংস করা পারমাণবিক বোমাটি এই বিস্ফোরণের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ শক্তিশালী ছিল।
ভূমিকম্প সংক্রান্ত গবেষণার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ অস্ত্র পরীক্ষার ইয়েল্ড যুক্তিসংগত নির্ভুলতার সঙ্গে নির্ধারণ করা সম্ভব হলেও, ভূমিকম্পবিদেরা কোন ধরনের অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে তা বলতে পারেন না। ফলে, উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষার দাবিটি সত্য কিনা, তা ওই সময় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তথ্যসূত্র: বার্কলি সিসমোলজি ল্যাব
ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের সামরিক অবকাঠামোতে আক্রমণ করছে। লাইভ প্রতিবেদনে আল জাজিরা জানিয়েছে, অঞ্চলটির ঠিক কোথায় হামলা চালানো হচ্ছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশের আহভাজ শহর এবং মাহশাহর বন্দরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ফার্স সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ওই এলাকাগুলোতে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে।
ইসলামি বিশ্বের একটি স্বাধীন শক্তি কেন্দ্র গঠনের সম্ভাবনা বাড়ছে—যদি এখনই তারা পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে একত্রিত হয় এবং বহুমুখী বিশ্বের পক্ষে দাঁড়ায়।
ইরান যদি সত্যিই চাইত এবং ইসরায়েলের সরাসরি আক্রমণ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উন্মুক্ত সংঘাতের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করত, তাহলে তারা রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারত। আমরা এমন পরিস্থিতির জন্য ইরানের চেয়ে বেশি প্রস্তুত ছিলাম। যদি দ্রুত এবং মৌলিক পদক্ষেপ নেওয়া হতো, তাহলে পরিস্থিতি আজ যা আছে, তা নাও হতে পারত। আমার আশঙ্কা, এখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে।
রাশিয়ার অবস্থান একটি স্বাধীন শক্তি কেন্দ্র হিসেবে স্পষ্ট এবং অবিচল। আমরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে, ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে এবং পশ্চিমা হস্তক্ষেপবাদের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে 'নিওকনদের' পুনরুত্থানের বিরুদ্ধে, যারা ট্রাম্পকে জিম্মি করে রেখেছে বলে মনে হয়। তবে আমরা ট্রাম্প বা ট্রাম্পইজম বা 'Make America Great Again'-এর বিরুদ্ধে নই, কারণ এগুলো বৈদেশিকভাবে বিশুদ্ধ বৈশ্বিকতাবাদীদের চেয়ে অনেক পছন্দনীয়। এখানে সবকিছু সুসংগত—আমরা আমাদের নীতি, ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ এবং জাতীয় স্বার্থ অনুসরণ করি।
এখন বহুমুখী বিশ্ব নিয়ে কথা বলা যাক। আমার বই 'The Theory of a Multipolar World' এবং 'The Multipolar World'-এ বিস্তারিতভাবে বর্ণিত বহুমুখী বিশ্বের তত্ত্ব অনুসারে, ইসলামী বিশ্বের নিজেকে একটি ভূ-রাজনৈতিক ব্লকে সুসংগঠিত করা উচিত—আমি প্রস্তাব করি 'বাগদাদ খিলাফত ২.০'—এবং তাদের শক্তি একত্রিত করে পশ্চিমের অবশিষ্ট আধিপত্যের বিরুদ্ধে তাদের সভ্যতাগত স্বাধীনতা রক্ষা করা উচিত। ইসরায়েল এই প্রক্রিয়ার একটি পরীক্ষাস্থল, এর চালিকাশক্তি। যতক্ষণ ইসলামী বিশ্ব খণ্ডিত থাকবে, ইসরায়েল জয়ী হবে, একে একে তার আঞ্চলিক শত্রুদের ধ্বংস করবে—হামাস, হিজবুল্লাহ, সিরিয়া... এবং এখন ইরান। পরবর্তীতে ইয়েমেন, তারপর সুন্নি দেশগুলো।
ইসরায়েল যখন একা এটি করতে অক্ষম হয়, তখন তারা পশ্চিম—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ—এর সমর্থন চায়। এভাবে, ইসলামী শক্তি কেন্দ্রের অস্তিত্বের একটি ক্রমাগত পরীক্ষা চলছে: এটি আছে কি নেই; মুসলিমরা কি বহুমুখী বিশ্বের জন্য প্রস্তুত, নাকি অপ্রস্তুত? রাশিয়া বহুমুখী বিশ্বকে সমর্থন করে, কিন্তু মুসলিমদের পরিবর্তে আমরা ইসলামী শক্তি কেন্দ্র তৈরি করতে পারি না বা করব না। আমরা মুসলিমদের পক্ষে ইসরায়েল বা পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে ইসলামী যুদ্ধও লড়ব না।
তবে, কল্পনা করুন যদি ইসলামী বিশ্ব—বা অন্তত কিছু দেশ—ইউক্রেন সংঘাতে আমাদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াত, যেখানে আমরা সম্মিলিত পশ্চিমের বিরুদ্ধে আমাদের সভ্যতাগত স্বাধীনতা রক্ষা করছি এবং আমাদের দিক থেকে বহুমুখী বিশ্ব গড়ে তুলছি। শুধু পরোক্ষভাবে বা কূটনৈতিকভাবে 'নিরপেক্ষতা' বা দুই পক্ষের খেলায় সমর্থন নয়, বরং দৃঢ়ভাবে এবং স্পষ্টভাবে—যেমন উত্তর কোরিয়া করেছে। সেক্ষেত্রে, গাজা থেকে শুরু করে, রাশিয়া ইসলামী দেশগুলোর পশ্চিমের সাথে সংঘাতে সমর্থন করতে বাধ্য হতো। কিন্তু, অনেক ইসলামী দেশ ইসরায়েল এবং বৈশ্বিকতাবাদীদের স্বার্থে আসাদ শাসনের পতনে অংশ নিয়েছে—যে শাসন প্রতিরোধ শক্তি, রাশিয়া এবং ইরানের সাথে, অর্থাৎ বহুমুখী বিশ্বের সাথে সংযুক্ত ছিল—এবং অদূরদর্শীভাবে এর পতন উদযাপন করেছে।
ইউক্রেনে আমাদের জন্য ইসলামী দেশগুলোর থেকে কোনো দৃঢ় সমর্থন ছিল না; তারা দ্বিধাগ্রস্ত ছিল, যদিও অন্তত তারা স্পষ্টভাবে পশ্চিমপন্থী অবস্থান গ্রহণ করেনি (যা কিছুটা ইতিবাচক)। ইরান আমাদের সবচেয়ে কাছের ছিল, এবং তা ভুলে যাওয়া হবে না।
তাই, রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে এবং স্পষ্টভাবে বহুমুখী বিশ্বের পক্ষে এবং আমেরিকান 'নিওকন' ও বৈশ্বিকতাবাদীদের আঁকড়ে ধরা একমুখী বিশ্বের বিরুদ্ধে। এটি নীতি ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের বিষয়। এতে কোনো সন্দেহ নেই—এটি আলোচনার অযোগ্য। তাই, নীতিগতভাবে আমরা একটি স্বাধীন ইসলামী শক্তি কেন্দ্রের উত্থানকে সমর্থন করি। চীনও তাই করে, যদিও আমাদের চেয়ে আরও সতর্ক ও অস্পষ্টভাবে। ভারত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে এর বিরোধী।
পশ্চিম অবশ্যই আরও বেশি বিরোধী, কারণ তারা বিভিন্ন ইসলামী দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত ইসলামী অভিজাতদের মাধ্যমে শাসন করতে সুবিধা পায়—বিভাজন করে শাসন, সবাইকে সবার বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেয়: আরব বনাম তুর্কি, তুর্কি বনাম পারসিক, শিয়া বনাম সুন্নি, ইত্যাদি।
ইসরায়েল (এবং সম্ভবত শিগগিরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং ইরানের মধ্যে যুদ্ধকে এই প্রেক্ষাপটে বোঝা উচিত। পরবর্তী পদক্ষেপ রাশিয়ার নয়—বরং ইসলামী বিশ্বের—আমাদের কৌশল স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ। এখনই সময় একত্রিত হয়ে ইসরায়েল এবং পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে জোট গঠনের। তবেই একটি ইসলামী শক্তি কেন্দ্র সত্যিকার অর্থে অস্তিত্বে আসবে। এবং তবেই জয়ের সম্ভাবনা থাকবে। আমার আশঙ্কা, একা কেউই সফল হবে না।
লেখক: রাশিয়ার দার্শনিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদরেজা জাফরঘান্দি বলেছেন, চলমান সংঘাতে ইসরায়েলি বাহিনী দেশটির ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স এবং তিনটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় দুজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং এক শিশু নিহত হয়েছেন।
ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সির বরাতে আল–জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ১৩ জুন সংঘাত শুরুর পর থেকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশটিতে ২৪ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের বিরসেবা শহরের সোরোকা হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের দেওয়া তথ্যের বরাতে আল–জাজিরা জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সোরোকা হাসপাতালের ছাদের একাংশ ধসে পড়েছে। সেই সঙ্গে ভেঙে গেছে হাসপাতাল ভবনের বাইরের দেওয়ালের কাঁচ।
এর আগে, ১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়।
পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষই হতাহতের খবর দিচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি স্বীকার করেছে।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চেয়েছেন, কারণ এভাবে তিনি চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।
'দ্য ডেইলি শো' অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি মনে করি আমাদের এটি (যুদ্ধ) প্রশমিত করার চেষ্টা করা উচিত। আমি আশা করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা করবেন।
ক্লিনটন মূলধারার পশ্চিমা আলোচনায় প্রায়শই উপেক্ষা করা একটি মূল বিষয়ের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের 'পদ্ধতিগত অস্বীকার'। তিনি বলেন, 'তারা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আলোচনার কথা বলছে না কারণ নেতানিয়াহুর অধীনে ফিলিস্তিনিদের একটি রাষ্ট্র দেওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। এখন তারা এতটাই বিভক্ত এবং চূর্ণবিচূর্ণ যে, তারা এটি অর্জনের জন্য নিজেদের সংগঠিত করতে পারছে না।'
ক্লিনটন পরমাণু বিস্তার রোধকে সমর্থন করেন বলেও জানান। সেই সঙ্গে অরক্ষিত বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মার্কিন ও ইসরায়েলি অভিযানের ফলে সৃষ্ট রক্তপাতের নিন্দা করেন।
তিনি বলেন, 'আমি কি মনে করি যে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র রাখা থেকে বিরত রাখার জন্য আমাদের চেষ্টা করা উচিত? আমি (মনে) করি। কিন্তু আমাদের এমন সব বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করার দরকার নেই যারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে না এবং তারা কেবল বেঁচে থাকার সুযোগ চায়।'
ইসরায়েলের সঙ্গে গত ১৩ জুন সংঘাত শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইরানে অন্তত ৪৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৫০০ মানুষ। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে স্থানীয় নূর নিউজ এজেন্সি হতাহতের হালনাগাদ এ তথ্য প্রকাশ করেছে। খবর বিবিসির।
ইরানের পক্ষ থেকে গত কয়েকদিনের মধ্যে নিহতের সংখ্যা নিয়ে এই প্রথম সরকারি তথ্য প্রকাশ করা হলো।
সর্বশেষ গত রোববার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ইসরায়েলি হামলায় দেশটিতে মোট ২২৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি অধিকার সংগঠনের সংবাদমাধ্যম হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি বলেছে , নিহতের সংখ্যা ৬৫৭ জন।
এর আগে, গত ১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়।
পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষই হতাহতের খবর দিচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি স্বীকার করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানের পাশে অটলভাবে দাঁড়ানোর জন্য মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। ইস্তাম্বুলে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে বক্তৃতাকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি মুসলিম দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বলেছেন, ইরানের ওপর আক্রমণের মাধ্যমে ইসরায়েল এই অঞ্চলকে সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধকে আরও বিস্তৃত সংঘাতে পরিণত হওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
ফিদান সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে এবং রক্তপাত ঘটিয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত ইসরায়েল আজ ইরানে আক্রমণ করছে, পুরো অঞ্চলকে একটি বিপর্যয়ের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
তুরস্কের মন্ত্রী ইসরায়েলি আগ্রাসনকে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মূল কারণ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এটি ইয়েমেন, ইরান, ফিলিস্তিন বা সিরিয়ার সমস্যা নয়। আসল সমস্যা হল ইসরায়েল।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্ক উত্তেজনা প্রশমনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে প্রস্তুত।
ফিদান ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার এবং ইসরায়েলি উস্কানির বিরুদ্ধে ইরানের সঙ্গে অটল সংহতি প্রকাশ করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা উচিত এবং আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি যে, ওআইসির সদস্য দেশগুলোর ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে প্রকৃত সংহতি প্রদর্শন করা উচিত।
কাতারের ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক মুহানাদ সেলুম বলেছেন, এই যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব থাকলেও, ইরানের দীর্ঘ সময় যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকার সামর্থ্য রয়েছে।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ইরানের আকাশসীমায় প্রায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। তবে, ইরানি ভূখণ্ডের আয়তন ইসরায়েলের ৭০ গুণ।
আল-জাজিরাকে সেলুম বলেন, (ইরানিরা) অনেক আঘাত সহ্য করতে পারে, কিন্তু তাদের নিজস্ব ধরনের অস্ত্রশস্ত্রও আছে যা ইসরায়েলকে সত্যিই আঘাত করতে পারে। ইসরায়েলের এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার সক্ষমতা নেই, তাই তাদের একটি নিষ্পত্তিমূলক বিজয় দরকার অথবা যত দ্রুত সম্ভব তাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এই সংঘাতের একটি জটিল পর্যায়ে রয়েছি...কারণ উভয় পক্ষ এখনো এটিকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করেনি, কিন্তু উভয় পক্ষই তাদের অস্ত্রের গতি বাড়াচ্ছে।
সেলুমের মতে, হামাসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় এটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘বিপর্যস্ত’ হতে পারে—এই কৌশলটি এখন ইরানিরা ব্যবহার করছে। তিনি উল্লেখ করেন, ইরান একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপ করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, যা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইসরায়েলের আয়রন ডোম-সহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অধিকাংশ হামলা প্রতিহত করলেও, কিছু ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হচ্ছে, এবং ক্ষয়ক্ষতি ঘটাচ্ছে।
অধ্যাপক সেলুমের মতে, যদি (যুদ্ধ) দীর্ঘায়িত হয়, তবে তা ইসরায়েলের স্বার্থের অনুকূল হবে না। ইসরায়েল এই যুদ্ধে বেশি দিন টিকতে পারবে না, কারণ অধিকাংশ ইসরায়েলি বাংকারে (ভূগর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্র) রয়েছে, তাদের অর্থনীতি প্রভাবিত হচ্ছে।
ইসরায়েলের অর্থনীতি ইতিমধ্যেই গাজায় চলমান সংঘাতের কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে। ইরানের সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ তাদের অর্থনৈতিক চাপকে আরও বাড়িয়ে দেবে। প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি, জনশক্তির অভাব এবং পর্যটন খাতের ক্ষতি ইসরায়েলের অর্থনীতিকে দুর্বল করে তুলছে।
অন্যদিকে, ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের পর বিগত অন্তত ৪০ বছর ধরে ইরান ‘জরুরি পরিস্থিতিতে’ রয়েছে। লেবানন ও সিরিয়ায় তাদের সক্রিয় মিলিশিয়া বাহিনী রয়েছে, এবং তারা কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও টিকে আছে। ইসরায়েলের অর্থনীতির তুলনায় ইরানের অর্থনীতি ভিন্ন প্রকৃতির। ইরানের অর্থনীতি, বিশেষ করে জ্বালানি তেল রপ্তানি এবং তার আঞ্চলিক প্রভাবের মাধ্যমে, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কিছু স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে।
সেলুম বলেন, সুতরাং, আমরা এমন দুটি দেশকে দেখছি যারা একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরি করেছে, যেখানে উভয় পক্ষই একে অপরের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করছে।
ওয়াশিংটন ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যোগ দিলে তেহরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক অবস্থানে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে প্রস্তুত থাকবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এনবিসি নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।
রুশ বার্তা সংস্থা তাসের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন আক্রমণ আসলে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করবে কিনা - সাংবাদিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যখন যুদ্ধ হয়, তখন উভয় পক্ষই একে অপরকে আক্রমণ করে। এটা বেশ বোধগম্য এবং আত্মরক্ষা প্রতিটি দেশের বৈধ অধিকার।'
তবে আরাঘচি উল্লেখ করেন, 'সবকিছু বন্ধ করার জন্য ওয়াশিংটন থেকে তেল আবিবে কেবল একটি টেলিফোন কলের প্রয়োজন।'
এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক সমস্যা কূটনৈতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করার জন্য এবং তেহরানের ওপর মার্কিন হামলা প্রতিরোধ করার জন্য আমেরিকা ইরানকে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সময় দিতে প্রস্তুত।
১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে আগ্রাসন শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান। এরপর তেহরান ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালায়।
পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানও ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষই হতাহতের খবর দিচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি স্বীকার করেছে।
ইরানের বিরুদ্ধে পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই একতরফা যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। বিশ্লেষকেরা হিসাব করে দেখেছেন, গত ১৩ জুন শুরু করা এই যুদ্ধে ইসরায়েলের ব্যয় দৈনিক প্রায় ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ডলার। আর এর বেশির ভাগ অংশই ব্যয় হচ্ছে মূলত ইরানি হামলা ঠেকাতে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাথমিক এক হিসাবে দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ইরানকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের যুদ্ধ দেশটির দৈনিক আনুমানিক ২০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে। এই বিপুল অঙ্ক, এই সংঘাত কত দিন চলবে, তার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে। এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিদিনই ১০ লাখ ডলার থেকে শুরু করে কয়েক কোটি কোটি ডলার পর্যন্ত খরচ হচ্ছে।
ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘ডেভিডস স্লিং’ ও ‘অ্যারো—৩’ এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতিটি আগত ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে খরচ হচ্ছে ৭ লাখ থেকে ৪০ লাখ ডলার পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত ইরানের ছোড়া ৪ শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে বারবার ব্যবহার করতে হচ্ছে এগুলোকে।
এ ছাড়া, ইরানে ইসরায়েলের হামলার খরচও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ইরানের ১ মাইল দূরত্ব পাড়ি দিয়ে হামলা চালাতে ইসরায়েলি এফ-৩৫ জেট প্রতি ঘণ্টায় খরচ করছে প্রায় ১০ হাজার ডলার। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে জেডিডিএএম ও এমকেএইটি ফোর-এর মতো নির্ভুল বোমার দাম।
সব মিলিয়ে, ইসরায়েলি অ্যারন ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক পলিসি ধারণা দিয়েছে, এ যুদ্ধ এক মাস স্থায়ী হলে ইসরায়েলের মোট ব্যয় দাঁড়াতে পারে প্রায় ১২০০ কোটি ডলার। থিংক ট্যাংকটির অর্থনীতিবিদ জিভ একস্টাইন বলেন, এই যুদ্ধ গাজা বা হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল। সবচেয়ে বড় খরচটা হচ্ছে গোলাবারুদ—আক্রমণাত্মক এবং প্রতিরক্ষামূলক, উভয় ক্ষেত্রেই।
এই আর্থিক চাপের কারণে স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধের পক্ষে জনমত বাড়ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনো যুদ্ধ থামানোর ইঙ্গিত দেননি। তিনি ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে চূড়ান্তভাবে অকার্যকর না করা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে।
এদিকে, ইসরায়েলি পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রয়েছে এমনকি কিছু ক্ষেত্রে সূচকও বেড়েছে—তবে বাস্তবে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। প্রকৌশলীরা হিসাব করে বলছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পুনর্গঠনে খরচ হবে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। এখন পর্যন্ত কয়েক শ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পাঁচ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দেশটির সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অবকাঠামো খাতেও কাজ স্থগিত রয়েছে। ইসরায়েলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর কারনিত ফ্লাগ ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে বলেন, যুদ্ধ কত দিন স্থায়ী হবে, তা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যদি এক সপ্তাহ চলে, সেটা এক কথা। কিন্তু যদি দুই সপ্তাহ বা এক মাস চলে, তাহলে পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে যাবে।
ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি) ঘোষণা করেছে, তারা ইসরায়েলের বেন গুরিওন বিমানবন্দর এবং সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
ইসরায়েলে হামলা সম্পর্কিত ১৫তম বিবৃতিতে শনিবার (২১ জুলাই) আইআরজিসি জানায়, তারা ট্রু প্রমিজ অপারেশন ৩-এর ১৮তম ধাপ শুরু করেছে। এ হামলায় শাহেদ ১৩৬-এর মতো অসংখ্য আত্মঘাতী ও যুদ্ধ ড্রোন; সেই সঙ্গে নির্ভুল কঠিন-জ্বালানি এবং তরল-জ্বালানি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
বিবৃতি অনুসারে, আইআরজিসি বেন গুরিওন বিমানবন্দর এবং সামরিক অপারেশনাল লজিস্টিক সেন্টারগুলোতে পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যবস্তু সফলভাবে ধ্বংস করেছে।
এতে আরও বলা হয়, অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানি ড্রোনগুলোকে আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে ইসরায়েলিরা আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ইসরায়েলি সরকারের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সর্বশেষ আক্রমণের সময় দশটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ছয়টি তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ওই এলাকায় ব্যাপক সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করেছে এবং ইরান ও ইউরোপীয় নেতৃত্বাধীন সংঘর্ষ প্রশমন প্রচেষ্টার ওপর চাপ তৈরি করেছে।
রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি ইসরায়েলের বিমান হামলায় যুক্ত হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বহু মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থেকে ইরানে হামলা চালানো হবে, ফলে এসব ঘাঁটিই ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠতে পারে।
যেসব ঘাঁটি সম্ভাব্য ইরানি হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে, সেখান থেকে ইতোমধ্যে কিছু বিমান ও জাহাজ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে বুধবার রয়টার্সকে জানান দুজন মার্কিন কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস একটি সতর্কবার্তা জারি করে, অস্থায়ীভাবে তাদের কর্মীদের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই ঘাঁটিটি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক স্থাপনা, যা দোহার বাইরে মরুভূমিতে অবস্থিত।
এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে এফ-১৬, এফ-২২ এবং এফ-৩৫-সহ আরও কিছু যুদ্ধবিমান মোতায়েন শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, এই বাহিনী ড্রোন ও অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে নামিয়ে কর্মী ও স্থাপনাগুলোর সুরক্ষা দিতে পারবে।
মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক আরও কিছু মার্কিন সামরিক উপস্থিতি:
ইউরোপে এই সপ্তাহের শুরুতে বহু ট্যাংকার বিমান পাঠানো হয়েছে।
ইউএসএস নিমিৎজ বিমানবাহী রণতরী স্ট্রাইক গ্রুপকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে পাঠানো হয়েছে, যা আগে থেকে মোতায়েনকৃত ইউএসএস কার্ল ভিনসনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
স্যাটেলাইট চিত্রে যুক্তরাজ্য-মার্কিন যৌথ সামরিক ঘাঁটি দিয়েগো গার্সিয়ায় বি-৫২ বোমারু বিমানসহ অন্যান্য যুদ্ধবিমান দেখা গেছে।
ইরানে হামলায় ইসরায়েলের কেন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন?
ইরানের আকাশসীমায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থাকায় তারা বিস্তৃত বোমাবর্ষণ চালাতে পারছে, তবে দেশটির ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া পেরে উঠবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা। তবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বলছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় স্থাপনাটির তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি এখনো দৃশ্যমান হয়নি।
রয়টার্স বলছে, পর্বতের নিচে মাটি খুঁড়ে বানানো ফোরদো স্থাপনায় ইরানের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বিশাল অংশ উৎপাদিত হয়, যা আরও পরিশোধন করে অস্ত্রে রূপান্তর করা সম্ভব।
এই স্থাপনার মূল অংশ প্রায় ৮০-১০০ মিটার গভীরে অবস্থিত, যেখানে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী 'বাঙ্কার বাস্টার বোমা'র মাধ্যমেই পৌঁছানো সম্ভব।
নাতাঞ্জ ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট ফোরদোর চেয়েও গভীরে অবস্থিত। আইএইএ বলছে, ইসরায়েলের আগের হামলায় স্থাপনাটির বিদ্যুৎ অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ যন্ত্রপাতি (সেন্ট্রিফিউজ) কার্যত অকেজো হয়ে গেছে। তবে পুরো স্থাপনাটি ধ্বংস করার ক্ষমতা ইসরায়েলের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
যদি ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ফোরদোর মতো স্থাপনায় হামলা চালাবে, তবে তিনি ইউএস এয়ার ফোর্সের বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করতে পারেন।
এই বোমারু বিমান তার স্টেলথ বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেই বিশাল ওজনের গোলাবারুদ বহনে সক্ষম, যার মধ্যে দুটি জিবিইউ-৫৭এ/বি এমওপি (ম্যাসিভ অর্ডিন্যান্স পেনিট্রেটর) বা ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের নির্ভুলভাবে পরিচালিত 'বাঙ্কার বাস্টার বোমা' বহন করতে পারে।
এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রচলিত বোমা, যা শক্তিশালী ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার ধ্বংসের জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এটি ২০ দশমিক ৫ ফুট লম্বা, জিপিএস-নির্ভর টার্গেটিং ব্যবস্থার সাহায্যে নির্দিষ্ট ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় নিখুঁত হামলা করতে সক্ষম। শক্ত কংক্রিট ভেদ করে এটি ৬০ মিটার (২০০ ফুট) পর্যন্ত ঢুকে যেতে পারে, যা বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থাপনাগুলো ধ্বংসে কার্যকর।
ফোরদো স্থাপনাটি যদি ১০০ মিটার গভীরে হয়ে থাকে, তবে এমন একাধিক বোমা এক জায়গায় বারবার ফেললে তা ধ্বংস হতে পারে।
২০১২ সালের কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থাপনাটিতে সরাসরি পৌঁছানো না গেলেও সেন্ট্রিফিউজগুলো ধ্বংস বা অকার্যকর করা যেতে পারে।
তবে প্রশ্ন হলো, সেন্ট্রিফিউজগুলো ঝাঁকুনির প্রভাব এবং বিস্ফোরণ থেকে ঠিক কীভাবে সুরক্ষিত আছে।
কিংস কলেজ লন্ডনের সিকিউরিটি স্টাডিজ বিভাগের সিনিয়র লেকচারার আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভারী বাঙ্কার বাস্টার বোমাও ইরানের সবচেয়ে গভীর স্থাপনাগুলোর ক্ষতি করতে ব্যর্থ হতে পারে। ট্রাম্প যদি এই হামলায় যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেনও— এমন পরিস্থিতিতে স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে কমান্ডো ধাঁচের বিশেষ বাহিনীকে মাটির নিচে অভিযান চালাতে হবে।'
সূত্র: রয়টার্স
ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের শুক্রবারের বৈঠক পরিণত হয়েছিল এক উত্তপ্ত বিতর্কের মঞ্চে। তবে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে ইরান ও রাশিয়ার কড়া ভাষার আক্রমণ, যা মূলত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ছোড়া হয়েছে।
দশকের পর দশক ধরে সীমিত সংঘাত ও গোপন লড়াই চলার পর গত সপ্তাহ থেকে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে। ইসরায়েল অভিযোগ করছে, তেহরান গোপনে পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে, যা তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাই আত্মরক্ষার দাবি তুলে তেলআভিভ ইরানে বিমান হামলা চালিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ছে তেহরান।
বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইসরায়েলকে আক্রমণ করে বলেন, ‘ইসরায়েল নিরপরাধ মানুষ হত্যা করছে, অন্য দেশের ভূখণ্ড লঙ্ঘন করছে। এরা মানবতাবিরোধী রাষ্ট্র।’ এ সময় তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত শিশুদের ছবি তুলে ধরে বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিতে চান।
পাশাপাশি রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক বোমা বানানোর কথা ভিত্তিহীন গুজব। এ গুজব ছড়িয়ে পশ্চিমারা আসলে ইসরায়েলি আগ্রাসনের সহযোগী। এরা ভয়াবহ অস্ত্রের মতোই বিপজ্জনক।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্বর্তী প্রতিনিধি ডরোথি ক্যামিল শে পাল্টা দাবি করে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা ও সন্ত্রাসের মূল কেন্দ্র ইরান।’ তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে আছে এবং থাকবে।
তবে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স তুলনামূলকভাবে সংযত সুরে উভয়পক্ষকে উত্তেজনা কমাতে আহ্বান জানিয়েছে।
চীনের প্রতিনিধি ফু কংও সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা না করলেও ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা করেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
গত ১২ জুন আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির উপযোগী মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। তবে রাশিয়া এটিকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন’ বলে উড়িয়ে দেয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘ইরান বহুদিন ধরেই পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করছে না বলে দাবি করলেও এর বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি আছে। এ জন্য দরকার কূটনীতি ও পূর্ণ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা সংকটের দিকে এগোচ্ছি না, ছুটে যাচ্ছি।’
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইরানে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২৪ জন নিহত ও আড়াই হাজারের বেশি আহত হয়েছে। অপরদিকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যানন জানান, ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে ২৯ জন নিহত ও প্রায় ৯০০ জন আহত হয়েছে। দুই দেশই স্বীকার করছে, বেশিরভাগ হতাহত সাধারণ মানুষ।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ইরানের ওপর হামলার জন্য 'বছরখানেক আগে থেকেই' প্রস্তুতি নিচ্ছিল। শনিবার (২১ জুন) বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান ইয়াল জামির বলেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এই প্রস্তুতির বিষয়ে সব তথ্য যতটা সম্ভব গোপন রাখা হয়েছে।
জামির বিস্তারিত তথ্য না জানিয়েই বলেছেন, এই অভিযান সম্ভব হয়েছে 'অপারেশনাল ও কৌশলগত পরিস্থিতির কারণে'। দেরি করলে পরিস্থিতি হারানোর ঝুঁকি ছিল এবং ইসরায়েল দুর্বল অবস্থায় পড়তে পারত।
তিনি আরও বলেন, প্রথমেই একটি শক্তিশালী ও অপ্রত্যাশিত হামলার কারণে আমরা অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেছি।
এদিকে মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন তথ্য আছে যা থেকে ধারণা করা যায় যে ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।
তিনি গত মার্চ মাসে সিনেট কমিটির শুনানিতে মিডিয়ার বিরুদ্ধে তার বক্তব্য বিকৃত করার অভিযোগ করেন। তুলসী গ্যাবার্ড সেই সময় বলেছিলেন, গোয়েন্দা সম্প্রদায় বিশ্বাস করে না যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে।
অন্যদিকে ইরান বারবার জোর দিয়ে বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সার্বভৌম অধিকার রয়েছে।
চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। শুক্রবার (২০ জুন) এ বৈঠকে একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করেছে দুই পক্ষের মিত্ররা।
তবে সব ছাপিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া। বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি মুখ ফসকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস ও দুর্ভোগ ছড়াচ্ছে ইসরায়েল।’
আদতে ইরানের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে গিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। কিন্তু ভুল করে ‘ইরানের’ জায়গায় ‘ইসরায়েলের’ কথা বলেন তিনি।
মুহূর্তে নিজের ‘ভুল’ বুঝতে পারেন ডরোথি শিয়া। শুধরে নেন দ্রুত। পরে ইরানের নাম উল্লেখ করে তীব্র সমালোচনা করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের জন্য ইরানকে দায়ী করে ডরোথি শিয়া বলেন, ‘নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি সংযত করার জন্য তেহরানের একটি চুক্তিতে রাজি হওয়া উচিত ছিল।’
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদে গতকালের বৈঠকে ইরান ও ইসরায়েল তাদের মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘাতের দায় চাপানোর চেষ্টা করে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি ইসরায়েলকে এমন একটি দেশ হিসেবে আখ্যা দেন, যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা ও অন্যান্য দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে। বক্তব্যের সময় তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানি শিশুদের ছবি তুলে ধরেন।
ইরানি কুদস ফোর্সের ‘প্যালেস্টানিয়ান কর্পস’–এর কমান্ডার সাঈদ ইজাদিকে হত্যার দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। কোম শহরে একটি আবাসিক ভবনে শনিবার সকালে চালানো হামলায় ইজাদি নিহত হয়েছেন বলে জানান কাৎজ। খবর আল–জাজিরার।
কাৎজ দাবি করেন, ইজাদি ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার আগে সংগঠনটিকে অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করতেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘তার (ইজাদি) হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও বিমান বাহিনীর একটি বড় সাফল্য। নিহত ও অপহৃতদের জন্য এটি ন্যায়বিচার। ইসরায়েলের দীর্ঘ হাত সব শত্রুর কাছে পৌঁছে যাবে।’
এর আগে কুম শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৬ বছর বয়সি এক কিশোর নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করেছিল আল জাজিরা। ওই হামলায় আরও দুজন আহত হন। তবে সাঈদ ইজাদি ও ওই কিশোর একই হামলায় নিহত হয়েছেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, নিহত কিশোরের সঙ্গে ওই হামলার লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কিত কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এখনো দেয়নি তেহরান। ইসরায়েলি পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে ইজাদির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার মতে, এ দুটি অঞ্চল এখন মারাত্মক সংঘর্ষের সম্ভাব্য কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
শুক্রবার (২০ জুন) সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের (এসপিআইইএফ) মূল অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে পুতিন এ হুঁশিয়ারি দেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সংঘর্ষের বিপুল আশংকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা বৈশ্বিক যুদ্ধের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। সব সংকটেরই শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়া উচিত’।
তিনি ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণের সমালোচনা করে বলেন, ‘এই জোট বারবার রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করছে। এটি পশ্চিমাদের উপনিবেশবাদী নীতির আরেকটি রূপমাত্র’।
পুতিন এ সময় দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, ইরানের বুশেহর পারমাণবিক স্থাপনায় রুশ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করবে।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ‘ইসরায়েল যদি সত্যিই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করার কথা বিবেচনা করে থাকে, তবে আমি আশা করি এটি কেবল কথার কথা হিসেবেই থাকবে’।
এর আগে রুশ প্রেসসচিব দিমিত্রি পেসকভ সেন্ট পিটার্সবার্গের কনস্টান্টিন প্রাসাদে স্কাই নিউজ-কে বলেন, ‘ইরানে সরকার পরিবর্তনের কথা যারা বলছে, তারা যেন মনে রাখে—এটা শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং এতে দেশটিতে চরমপন্থার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে’।
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘যারা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যা করার কথা বলছে, তারা যেন মনে রাখে—তাতে তারা এক ভয়ংকর প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেবে’। সূত্র: ডেইলি সাবাহ
টানা নয়দিন ধরে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। দেশ দুইটির মধ্যে সংঘাত বন্ধে চীন-রাশিয়া ছাড়াও পশ্চিমা কিছু দেশ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনেভায় ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি শনিবার (২১ জুন) রাতে লন্ডনে ফিরে যাচ্ছেন। জেনেভায় তিনি ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
ল্যামি ওই বৈঠকের আগে ওয়াশিংটন থেকে ফিরেছিলেন। ওয়াশিংটনে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ হুইটেকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ইরান ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে বৈঠকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বার্তা পৌঁছে দেন। সেখানে বলা হয়েছে, মার্কিন সামরিক পদক্ষেপের হুমকি “বাস্তব এবং আসন্ন”, তবে “কূটনৈতিক পথ” এখনো খোলা আছে।
ইউরোপীয় নেতারা এই বার্তার মাধ্যমে ইরানের সামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির নিন্দা জানান এবং কীভাবে একটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন।
বিবিসি সংবাদদাতার মতে, ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা ইরানের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তবে কোথায় বা কখন বৈঠক হবে, সেই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
জানা গেছে, এই বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েল হামলা চলতে থাকলে তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনা করতে পারবে না। কিন্তু ইউরোপীয় মন্ত্রীরা বলেন, যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার সেরা উপায় হলো আলোচনার টেবিলে ফিরে আসা।
ডেভিড ল্যামি আশা করছেন, তিনি এই সপ্তাহেই তার মার্কিন অংশীদারদের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
শনিবার (২১ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।
খুজেস্তান প্রদেশের প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা ‘শত্রুর পক্ষ হয়ে তথ্য সংগ্রহ, রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা, মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার’ কাজে যুক্ত ছিলেন।
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, গ্রেপ্তারদের সঙ্গে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সরাসরি যোগাযোগ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
ইসরায়েল-ইরান সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে এমন গ্রেপ্তারকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে তেহরান। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরির মাধ্যমে ইসরায়েল গোপনে তেহরানকে চাপে রাখতে চাইছে।
ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) বিমান ও ড্রোন ইউনিটের প্রধানকে হত্যা করার দাবি করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। এক সপ্তাহ আগেই তার পূর্বসূরিকেও একইভাবে হত্যা করেছিল তারা।
আইডিএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিহত এই কমান্ডার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শত শত ড্রোন হামলার নকশা ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ইরানের সামরিক কাঠামোর ওপর বড় ধরনের আঘাত। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।
এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর ইসফাহানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসফাহানে রয়েছে ইরানের অন্যতম প্রধান পারমাণবিক গবেষণা ও সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। বিস্ফোরণের সঠিক উৎস নিশ্চিত না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, এটি ইসরায়েলের ড্রোন বা বিমান হামলা হতে পারে।
ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তের ঘাজার শহরে ড্রোন সন্দেহে সাইরেন বাজানো হয়েছে। হোম ফ্রন্ট কমান্ড স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়েছে সম্ভাব্য ড্রোন হামলার আশঙ্কায়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আলোচিত ফিলিস্তিনপন্থি অধিকারকর্মী মাহমুদ খালিলকে তিন মাস কারাভোগের পর মুক্তি দিয়েছে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ছাত্র সাম্প্রতিক ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন। খালিল অভিযোগ করেছেন, ‘আমি কোনো অপরাধী নই, একজন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী।’
তবে মার্কিন নিরাপত্তা বিভাগ তার মুক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং অভ্যন্তরীণ ভ্রমণেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে। তাকে ‘স্ব-নির্বাসনের’ শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে।
আইডিএফ আরও জানিয়েছে, ইরানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ ও উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোতে একাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলার লক্ষ্য ইরানের সামরিক সক্ষমতা দুর্বল করা।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রই কূটনীতির আড়ালে ইসরায়েলের এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল। জেনেভায় ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। আর তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসা সম্ভব নয়।’
তিনি আবারও স্পষ্ট করে দেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে না। ‘মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফকে বহুবার বলেছি— সমৃদ্ধকরণ শূন্যে নামানো অসম্ভব।’
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল কৌশলগত সমন্বয় এবং ইরানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও দুর্বল করছে। ইরান এখন নিজেকে ‘বিশ্বাসঘাতকতার শিকার’ হিসেবে তুলে ধরে সরাসরি প্রতিশোধ বা আরও সামরিক উত্তেজনার পথেই এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট অ্যাক্সেস থেকে ৬০ ঘণ্টা ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে ইরান। ইন্টারনেট সংযোগ পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান নেটব্লকস এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আল-জাজিরার।
নেটব্লকস মনিটর অনুসারে, ইরান দীর্ঘ গত ৬০ ঘণ্টা ধরে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট অ্যাক্সেস থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।
ইন্টারনেট বন্ধের ফলে জনসাধারণের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ, অবাধ যোগাযোগ এবং নিরাপত্তা সতর্কতা অনুসরণ করার ক্ষমতা মারাত্মকভাবে সীমিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে মনিটরটি।
ইরান সরকারের আরোপিত অবরোধের ফলে এই বিভ্রাট দেখা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারের মতে, ইসরাইলি সাইবার হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ জুন টাইমস অব ইসরাইল এক প্রতিবেদনে জানায়, নেটব্লকস জানিয়েছে, ইরান ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। নেটব্লকস পরিস্থিতিটিকে ‘প্রায় সম্পূর্ণ জাতীয় ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
গত ১৩ জুন থেকে ইরানের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। জবাবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পালটা হামলা অব্যাহত রেখেছে তেহরান। পালটাপালটি এ হামলায় উভয় দেশের বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন।
ইরানের সঙ্গে কূটনীতি সহজেই আবার শুরু করা যেতে পারে যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলি নেতৃত্বকে তেহরানে হামলা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তা মাজিদ ফারাহানি শুক্রবার (২০ জুন) সিএনএনকে এই কথা বলেছেন।
মাজিদ বলেছেন, ইরান বেসামরিক সংলাপে বিশ্বাস করে, সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হোক তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইরানের এই কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলিদের শুধুমাত্র একটি কল দেওয়ার মাধ্যমেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সহজেই এই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন।
ইরানে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হলে আলোচনা নিয়ে তেহরানের অবস্থান পাল্টাবে না বলে জানান মাজিদ। তিনি বলেছেন, ইরান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে রাজি হবে না। তবে ছাড় দেওয়া সম্ভব বলে জানান মাজিদ।
ইতোমধ্যে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হবে কিনা এই বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই প্রসঙ্গে মাজিদ বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে অংশ নেয় তাহলে অনেক অপশন আছে এবং সব বিকল্পই টেবিলে আছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার তেহরানের রাস্তায় সরকারপন্থী বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ওপর ক্ষুব্ধ।
সিএনএন-এর একটি টিম জানিয়েছে, তারা এই বিক্ষোভ দেখেছেন। বিক্ষোভকারী ইরান, হিজবুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনের পতাকা নাড়িয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। সেইসঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছেন।
বিক্ষোভকারী ইসরায়েলের মৃত্যু, যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যু বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এক নারী সিএনএনকে বলেছেন, ট্রাম্প, আপনি আমার নেতাকে হুমকি দিচ্ছেন, আপনি কি জানেন না আমার জাতি বিশ্বাস করে মৃত্যু মধুর চেয়েও মিষ্টি।
ইরানের রাজধানী তেহরানের দক্ষিণাঞ্চলের কোম শহরে একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির আধা–সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম। খবর আল–জাজিরার।
হামলায় আরও অন্তত দুজন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে ঠিক কোন লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা চালানো হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আজ শনিবার ইরান–ইসরায়েল চলমান সংঘাতের নবম দিন। শনিবার সকালে তেহরান ও ইসফাহানের আকাশে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিস্ফোরণের ভিডিও ও ছবি যাচাই করে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে আল–জাজিরা।
স্থানীয় বিভিন্ন পোস্টে বলা হচ্ছে, ইরানের নাজাফাবাদ শহরে ইসরায়েলি হামলা প্রতিহত করেছে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তেহরানের মালারদ এলাকার আকাশেও বিস্ফোরণের খবর মিলেছে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশই বেশ ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
ইরানের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি থেকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের নতুন চালান পৌঁছেছে ইসরায়েলে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার আরও কয়েকটি কার্গো বিমান অস্ত্র নিয়ে ইসরায়েলে অবতরণ করেছে। খবর তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৪টি কার্গো অস্ত্র ও সরঞ্জাম নিয়ে ইসরায়েলে পৌঁছেছে। তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর মোট ৮০০টি কার্গো অস্ত্রবাহী উড়োজাহাজ এসেছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ পরিচালনায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ও ভবিষ্যতের জন্য মজুত জোরদার করাই এই সরবরাহের মূল লক্ষ্য। তবে নতুন চালানে কী ধরনের অস্ত্র এসেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এমন সময় এই চালানের খবর এলো, যখন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে ব্যবহৃত ইসরায়েলের ‘অ্যারো’ ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ খবর অস্বীকার করেছেন।
গত ১৩ জুন ভোরে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। এর জবাবে ইরান একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ছে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো নিয়ে চিন্তা
ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠিয়েছে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে অবগত আছে এবং স্থল, সমুদ্র ও আকাশে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদারে কাজ করছে।
গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন পোস্ট–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি ইরান একই গতিতে আক্রমণ চালিয়ে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ ছাড়া অথবা মার্কিন বাহিনীর ব্যাপক অংশগ্রহণ ছাড়া ইসরায়েল আর ১০-১২ দিন তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বজায় রাখতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা মূল্যায়ন সম্পর্কে অবহিত এক ব্যক্তি এ তথ্য জানান।
উল্লিখিত ব্যক্তি জানান, চলতি সপ্তাহের শেষ দিক থেকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হয়তো কমসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সক্ষম হবে। কারণ, তাদের প্রতিরক্ষা গোলাবারুদ পালা করে ব্যবহার করতে হবে।
বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম না প্রকাশ করার শর্তে ওই ব্যক্তি আরও বলেন, তাদের (ইসরায়েল) বেছে নিতে হবে তারা কোনটা (ক্ষেপণাস্ত্র) আটকাতে চায়। ইতিমধ্যে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জিবিইউ-৫৭ ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল এ পর্যন্ত ইরানের ফোর্দোয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি। কেন্দ্রটি পাহাড়ের ভূগর্ভে তৈরি করা হয়েছে, এর মূল কক্ষগুলো মাটির নিচে ৮০ থেকে ৯০ মিটার (প্রায় ২৬০ থেকে ৩০০ ফুট) গভীরে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক কেলসি ডেভেনপোর্ট বলেন, ইসরায়েল যদি এসব ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় হামলা করতে চায়, তাহলে সম্ভবত তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দরকার হবে। কারণ, সেখানে ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম বোমা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে।
জিবিইউ-৫৭ বাংকার বাস্টার নামে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বোমাটি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) নামে পরিচিত। এতে ১২ টনের বেশি বিস্ফোরক থাকে।
ইরানে ইসরায়েলি বিমান হামলা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চেয়ে যখন ইউরোপীয় কূটনীতিকরা জোর আহ্বান জানাচ্ছেন, ঠিক সেই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন—তিনি ইসরায়েলকে হামলা বন্ধ করতে বলবেন না।
ট্রাম্পের কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান, তিনি কি ইউরোপীয় নেতাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসরায়েলকে চাপ দেবেন যেন তারা হামলা কমিয়ে আনে এবং আলোচনার পথ খুলে দেয়।
এর জবাবে ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল এখন জিতছে এবং তারা খুব ভালো করছে। তাই জয়ী পক্ষকে এমন অবস্থায় কিছু বলা কঠিন। অর্থাৎ, তিনি ইরানে ইসরায়েলের চলমান হামলা বন্ধের জন্য কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না।
এটা স্পষ্ট যে, চলমান সংঘাত পরিস্থিতিতে ট্রাম্প পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। তিনি কূটনৈতিক সমাধানের পথে এখনই ঝুঁকছেন না, যদিও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও দুই সপ্তাহ সময় রাখছেন বলে জানিয়েছেন।
খবর আল–জাজিরার।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ, যা সব সময়ই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ইসরায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্রচুক্তিতে অংশ না নেওয়া একটি শাসকগোষ্ঠীর (ইসরায়েল) পক্ষ থেকে এসব নিরাপদ পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালানো গুরুতর অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
জেনেভায় জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধানের সঙ্গে বৈঠক শেষে আরাগচি এ কথা বলেন।
জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইরানের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পরমাণু স্থাপনায় হামলার নিন্দা না জানানোয় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগ্রাসন বন্ধ হলে এবং অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হলে ইরান আবারও কূটনীতির কথা বিবেচনা করতে প্রস্তুত। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে কোনোভাবেই আলোচনা হতে পারে না।
শেষে আরাগচি বলেন, ‘আমরা জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইইউর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। শিগগিরই আবার এই আলোচনায় যোগ দিতে আমরা প্রস্তুত।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে অব্যাহত সংঘাতের ফলে বিশ্ব একটি সংকটের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সংঘাতের বিস্তার হলে যে আগুন জ্বলবে, তা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
শুক্রবার (২০ জুন) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে উদ্বোধনী বক্তব্যে গুতেরেস এসব কথা বলেন। ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে এই বৈঠক আহ্বান করা হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, এই সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে ‘পারমাণবিক প্রশ্ন’। তিনি বলেন, ‘ইরান বারবার বলেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র চাইছে না। কিন্তু আসুন আমরা স্বীকার করি, এখানে আস্থার অভাব রয়েছে।’
সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণ একটি সমাধানে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গুতেরেস বলেন, ‘আমি যুদ্ধ বন্ধের এবং আন্তরিকতাসহ আলোচনায় ফিরে আসার আবেদন জানাচ্ছি।’
এদিকে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পাশাপাশি জেনেভায় ইউরোপের তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। বৈঠকের আগে আলোচনার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি কূটনৈতিক সমাধান অর্জনের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
এর আগে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৫৯তম অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইরানের জনগণের ওপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরান নিজেকে রক্ষা করছে।
চলমান কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই ইরানের ওপর হামলা চালানো হয়েছে উল্লেখ করে আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্ভূত বিষয়গুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক চুক্তি করতে ১৫ জুন আমেরিকানদের সঙ্গে আমাদের দেখা করার কথা ছিল।’
এর আগেই হামলা চালানো হয় উল্লেখ করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি ছিল কূটনীতির বিশ্বাসঘাতকতা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার ভিত্তির ওপর এক নজিরবিহীন আঘাত।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। অন্যথায় জাতিসংঘভিত্তিক সমগ্র আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আজকের বৈঠকের ঠিক আগে ইরাকের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে ৫০টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরাকের প্রতিনিধি এ কথা বলেছেন।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইরাকের জাতিসংঘ মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আব্বাস কাযম ওবায়েদ আল-ফাতলাওয়ি নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, যুদ্ধবিমানগুলো সিরিয়া-জর্ডান সীমান্ত অঞ্চল থেকে এসেছিল।
তিনি জানান, প্রথমে ২০টি যুদ্ধবিমান প্রবেশ করে। পরে আরও ৩০টি যুদ্ধবিমান ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে যায়। এই বিমানগুলো বসরা, নাজাফ ও কারবালা শহরের আকাশসীমা অতিক্রম করে।
আল-ফাতলাওয়ি আরও বলেন, এই আকাশসীমা লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘পবিত্র স্থান ও অঞ্চলগুলোর ওপর এ ধরনের হুমকি আমাদের জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, কারণ এসব ধর্মীয় স্থান আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরানের প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইরাভানিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন ইসরাইলের প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন। খবর আল-জাজিরার।
শুক্রবার (২০ জুন) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশনে ইরাভানি যখন আন্তর্জাতিক আইন রক্ষার আহ্বান জানিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তখন ড্যানন তাকে ‘ভিকটিম সাজার নাটক’ করার অভিযোগ তোলেন।
ড্যাননের কড়া মন্তব্য ছিল— মি. ইরাভানি, আপনি কোনো ভিকটিম নন। আপনি কূটনীতিকও নন। আপনি এক নেকড়ে, যিনি কূটনীতিকের মুখোশ পরে আছেন।
ইরান সম্প্রতি বিয়ারশেভা শহরে একটি হাসপাতালের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার জন্য ড্যানন ইরানকে সরাসরি দায়ী করেন। যদিও ইরান দাবি করে, তাদের লক্ষ্য ছিল কাছাকাছি একটি সামরিক ঘাঁটি।
ড্যানন শুধু ইরানকেই নয় বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও সমালোচনা করে বলেন, আমরা আত্মরক্ষার জন্য কাউকে জবাবদিহি করি না। আমরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করি না। আমরা হুমকি নিরসনের জন্যও ক্ষমা চাই না।
এ বিবৃতি এমন সময় এলো যখন বিশ্ব নেতারা ইসরাইল ও ইরানকে উত্তেজনা হ্রাসে আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে ইসরাইলি দূতের এ স্পষ্ট অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে, পরিস্থিতি এখনো অতি উত্তেজনাপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তৃতায় রাশিয়ার দূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, ইসরাইল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতি ‘স্পষ্ট অবজ্ঞা’ দেখিয়েছে। শুধু তাই নয়, ইসরাইল জাতিসংঘ সনদের প্রতি কোনো সম্মান না দেখিয়ে সার্বভৌম রাষ্ট্র ইরানের ওপর একতরফাভাবে হামলা চালিয়েছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তৃতায় রাশিয়ার দূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, ইসরায়েল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতি ‘স্পষ্ট অবজ্ঞা’ দেখিয়েছে। শুধু তাই নয়, ইসরায়েল জাতিসংঘ সনদের প্রতি কোনো সম্মান না দেখিয়ে সার্বভৌম রাষ্ট্র ইরানের ওপর একতরফাভাবে হামলা চালিয়েছে।
শুক্রবার (২০ জুন) নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী অধিবেশনে বক্তব্য দেন রাশিয়ার দূত ভাসিলি নেবেনজিয়া। তার দেওয়া বক্তব্যের কিছু বিষয় পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো:
সূত্র: আল–জাজিরা
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর কারমিয়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেওয়ার সময় হার্ট অ্যাটাকে একজন ইসরায়েলি নারীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২০ জুন) স্থানীয় সময় বিকালে ইরান থেকে এক ঝাঁক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর এই মৃত্যুর খবর জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় সাইরেন বেজে উঠলে আশ্রয় নেওয়ার সময় হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে ৫১ বছর বয়সী এই নারী আকস্মিক পড়ে যান এবং তাৎক্ষণিক তার মৃত্যু ঘটে।
এদিকে, ইরানের সবশেষ মিসাইলগুলো হাইফা শহরে আঘাত হানার ফলে সেখানে আহতদের সংখ্যা ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা গুরুতর।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, সর্বশেষ ব্যারেজে ইসরায়েলে প্রায় ২৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলে আঘাতের ফলে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েল নতুন করে ইরানে হামলা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরআইবির অধীন ইয়াং জার্নালিস্টস ক্লাব। তারা বলছে, ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরে বুশেহরে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে।
আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দেশটির সামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে ইসরায়েলের হাইফা শহরে
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের হাইফা শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। ভিডিওটি কিছুক্ষণ আগের বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত এবং আল জাজিরার যাচাই করা ফুটেজে দেখা গেছে, সিরিয়ার আকাশে গিয়ে একটি ইরানি 'শাহেদ-১৩৬' ড্রোন আটকে দিয়েছে ইসরায়েলি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। ড্রোনটি সিরিয়ার আকাশ দিয়ে ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছিল।
লাইভ প্রতিবেদনে আল জাজিরা জানিয়েছে, ভিডিওটি মূলত ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল। এক্স-পোস্টেও একটি ক্রপ করা ভিডিও শেয়ার করা হয়।
ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান সিরিয়ার আকাশে গিয়ে ফায়ার করে ড্রোনটিকে ভূপাতিত করছে। আল জাজিরার মতে, সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের কাছে দেরা অঞ্চলের আকাশে এই ঘটনাটি দেখা যায়।
এদিকে, ইরানের মেহের নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইসরায়েলের ওপর শুক্রবার (২০ জুন) বিকালে নতুন করে প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি মিডিয়ার খবর অনুসারে, ইরান থেকে ছোড়া সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে ১৭ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা গুরুতর।
ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ-এর কলাম লেখক ও বিশ্লেষক গিডিওন লেভি বলেছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ট্রাম্প কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারেন—এই ইঙ্গিতে বেনজামিন নেতানিয়াহু ও তার জোট গভীর হতাশায় পড়ছেন। কারণ নেতানিয়াহু চান, ট্রাম্প যেন যত দ্রুত সম্ভব এই যুদ্ধে যুক্ত হন।
গিডিওন লেভি আল-জাজিরাকে বলেন, এই বাস্তবতায় দুই সপ্তাহ মানে অনন্তকাল। যদি ট্রাম্প সত্যিই দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে চান এবং এটা কোনো ছলচাতুরী না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
লেভি আরও বলেন, ইসরায়েল যদি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষমও হয়, তবু দীর্ঘ মেয়াদে ইসরায়েল নিজেদের আরও নিরাপদ ভাবতে পারবে না।
এই বিশ্লেষক বলেন, কিছুই সমাধান হবে না, কারণ ইরান তার সক্ষমতা পুনরায় অর্জন করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের আরও অনেক নিরাপত্তা সমস্যা রয়েছে, যেগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে না—যেমন গাজা।
ইরান থেকে ছোড়া সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে ১৭ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা গুরুতর। দেশটির জরুরি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাগেন ডেভিড অ্যাডমের (এমডিএ) বরাত দিয়ে আল জাজিরা এ কথা জানিয়েছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি মিডিয়া এখন পর্যন্ত রিপোর্ট করছে, ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো চারটি স্থানে আঘাত হেনেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, হাইফা অঞ্চলে বেশি আঘাত লেগেছে। মনে করা হচ্ছে সেখানে একটি সরকারি কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলে যুদ্ধকালীন সেন্সরশিপের খুব কঠোর নিয়ম রয়েছে। সম্প্রতি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আক্রান্ত সংবেদনশীল বা সামরিক অবস্থানের চিত্র প্রকাশ করলে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এক লাইভ প্রতিবেদনে টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণে ১৭ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দু'জনের অবস্থা গুরুতর।
রিপোর্ট অনুসারে, ১৭ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে, যার মধ্যে ৪০ বছর বয়সী একজন পুরুষ এবং ১৬ বছর বয়সী একজন ছেলে গুরুতর অবস্থায় ছিল। আরও ১৫ জন হালকা আহত হয়েছেন।
জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য শুরু করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলের হামলা ‘নিকৃষ্ট যুদ্ধাপরাধ’।
আরাঘচি বলেন, ইসরায়েল ইরানের উপর বিনা উস্কানিতে আগ্রাসন শুরু করেছে, যা জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ ২, অনুচ্ছেদ ৪ এর সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। ১৩ জুন (শুক্রবার) ভোর থেকে আমার জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া একটি অন্যায় যুদ্ধ, যখন ইসরায়েল কর্তব্যরত সামরিক কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে বেআইনি এবং অপরাধমূলক অভিযানের মিশ্রণ ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, তেজস্ক্রিয় পদার্থের লিকেজ থেকে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকলেও, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণ গুরুতর যুদ্ধাপরাধ। চলমান কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাঝামাঝি আমাদের উপর আক্রমণ করা হয়েছিল।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্ভূত সমস্যাগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য একটি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল চুক্তি তৈরির জন্য ১৫ জুন আমেরিকানদের সাথে আমাদের দেখা করার কথা ছিল। এটি ছিল কূটনীতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা এবং আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ ব্যবস্থার ভিত্তির উপর এক অভূতপূর্ব আঘাত।
ইরানের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে শুক্রবার (২০ জুন) জুমার নামাজের পর ইরাকের বাগদাদে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার জনতা।
আল জাজিরা জানিয়েছে, অনলাইনে পোস্ট করা ফুটেজে দেখা গেছে, রাজধানীর সদর সিটিতে হাজার হাজার ইরাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন।
এদিকে, একই দিন ইয়েমেনেও ইরানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের নিন্দা জানায়।
এছাড়া জুমার নামাজ শেষে আজ ইরানের রাস্তায়ও নেমেছে হাজার হাজার জনতা। প্রেস টিভি জানিয়েছে, রাজধানী তেহরানে কয়েক হাজার মানুষ এঙ্গেলাব স্কোয়ারে অবস্থিত তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পশ্চিম তেহরানের প্রতীকী আজাদী টাওয়ারে মিছিল করে। এছাড়া মাশহাদ, ইসফাহান, তাবরিজ, কোম, শিরাজ, কাজভিন, ইয়াজদ এবং গিলানসহ শহরগুলোতে একই রকম বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভকারীরা হুমকি উপেক্ষা করে শহীদদের ছবি বহন করে এবং ইহুদিবাদী সরকার ও তার পশ্চিমা সমর্থকদের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তীব্র স্লোগান দেয়।
'জায়নিস্ট শাসনের মৃত্যু হোক', 'আমেরিকান ঔদ্ধত্যের মৃত্যু হোক', এবং 'শহীদরা দীর্ঘজীবী হোক' স্লোগানগুলো অহংকারী শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়। সকল স্তরের মানুষ, সকল বয়সের প্রতিনিধিত্বকারী জায়নিস্ট শাসনব্যবস্থা এবং তার সাম্রাজ্যবাদী মিত্রদের মোকাবেলা করার জন্য একটি নতুন সংকল্প প্রদর্শন করে।
ইরানের প্রভাবশালী নেতা ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানি জীবিত আছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইসরায়েলের দাবি ছিল, সাম্প্রতিক বিমান হামলায় শামখানি নিহত হয়েছেন। তবে এ তথ্যকে এখন মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রথম দফার বিমান হামলার পর থেকেই নানা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, শামখানি শহীদ হয়েছেন। বিশেষ করে ইরানের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কাঠামোতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে খবরটি বড় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।
ইরানি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে শামখানি বলেন, আমি জীবিত আছি এবং ইরানের জন্য জীবন দিতে সবসময় প্রস্তুত।
বলা হচ্ছে, তিনি ইসরায়েলের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন, তবে এখন স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন এবং পুরোপুরি সেরে উঠছেন।
ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় এখন পর্যন্ত ইরানের দাবি অনুযায়ী ২৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা, কমান্ডার এবং পরমাণু বিজ্ঞানীরাও।
শামখানির জীবিত থাকার খবর চলমান যুদ্ধাবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি গুজব ও তথ্য যুদ্ধের মধ্যেও সত্য প্রতিষ্ঠার একটি দৃষ্টান্ত। ইরান-ইসরাইল উত্তেজনার এ পর্যায়ে, নেতৃবৃন্দের জীবিত থাকা কিংবা মারা যাওয়ার খবর কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ইসরায়েলের ওপর শুক্রবার (২০ জুন) বিকালে নতুন করে প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। এক প্রতিবেদনে মেহের নিউজ এজেন্সি এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের মাটিতে বিনা প্ররোচনায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে তেহরানের কাছে ইরানি জাতি এবং দেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অপরাধী জায়নিস্টদের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। এর প্রতিশোধের অংশ হিসেবে ইরান আজ ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলগুলিতে বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, নতুন এই ব্যারেজে প্রায় ৩৯টি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলজুড়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। উত্তরে হাইফা এলাকা এবং দক্ষিণে বে'র শিবা এলাকায় প্রভাব পড়ার খবর পাওয়া গেছে। জেরুজালেমেও কমপক্ষে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
এক সপ্তাহ আগে থেকে ইসরায়েলি সরকার ইরানের মাটিতে শুরু করা বিনা উস্কানিতে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানও মিসাইল ও ড্রোনের ঝাঁক ছুড়ছে।
মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর কাছ থেকে ধংসাত্মক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর ইসরায়েলি সরকারের কর্মকর্তারা ইরানিদের তাদের শহরগুলো ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিতে শুরু করেছে। আজ উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিমে ইরানি জাতি জুমার নামাজে অংশ নেন এবং ইসরায়েলি হানাদারদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠানোর জন্য রাস্তায় নেমে আসেন। ইরানি জাতি তাদের মাতৃভূমিকে সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করবে এবং তারা কোথাও পালিয়ে যাবে না।
ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে শুক্রবার (২০ জুন) জুমার নামাজ শেষে ইরানের রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার জনতা। প্রেস টিভি জানিয়েছে, দেশের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি-মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানাতে এবং ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্য এই বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী তেহরানে কয়েক হাজার মানুষ এঙ্গেলাব স্কোয়ারে অবস্থিত তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পশ্চিম তেহরানের প্রতীকী আজাদী টাওয়ারে মিছিল করে। এছাড়া মাশহাদ, ইসফাহান, তাবরিজ, কোম, শিরাজ, কাজভিন, ইয়াজদ এবং গিলানসহ শহরগুলোতে একই রকম বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভকারীরা হুমকি উপেক্ষা করে শহীদদের ছবি বহন করে এবং ইহুদিবাদী সরকার ও তার পশ্চিমা সমর্থকদের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তীব্র স্লোগান দেয়।
'জায়নিস্ট শাসনের মৃত্যু হোক', 'আমেরিকান ঔদ্ধত্যের মৃত্যু হোক', এবং 'শহীদরা দীর্ঘজীবী হোক' স্লোগানগুলো অহংকারী শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়। সকল স্তরের মানুষ, সকল বয়সের প্রতিনিধিত্বকারী জায়নিস্ট শাসনব্যবস্থা এবং তার সাম্রাজ্যবাদী মিত্রদের মোকাবেলা করার জন্য একটি নতুন সংকল্প প্রদর্শন করে।
এক তরুণ বিক্ষোভকারী বলেছেন, 'আমি এখানে এসেছি ইরানের জন্য, এই ভূমির পবিত্র মাটির জন্য, শহীদদের জন্য, নেতার জন্য। আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস এবং শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত আমার দেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি।'
আরেকজন বিক্ষোভকারী বলেন, 'লাল রেখা অতিক্রম করা হয়েছে বলে আজ সারা দেশের মানুষ শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। আমরা আমাদের মহান শহীদদের পবিত্র রক্তের প্রতিশোধ নেব।'
ইরানের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গত শুক্রবার বিনা উস্কানিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর ইরানে এই সমাবেশগুলো অনুষ্ঠিত হয়। ইসরায়েলি হামলায় কিছু সিনিয়র ইরানি সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং শিশু ও নারীসহ বেসামরিক নাগরিক শহীদ হন। এর ফলে ইরানের প্রতিশোধমূলক অপারেশন 'ট্রু প্রমিজ ৩' শুরু হয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, এ পর্যন্ত অভিযানের ১৫টি ধাপে ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর নেতৃত্বে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সংবেদনশীল এবং কৌশলগত ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনাগুলোকে সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে এবং ধ্বংস করেছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা ইসরায়েলি সরকারের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অকার্যকরতাকে আরও স্পষ্ট করেছে। এর ফলে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী এবং শাসক কর্মকর্তারা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে মাটির নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
শুক্রবার ইরাক ও ইয়েমেনেও ইসরায়েলি সরকারের আগ্রাসনের মধ্যে ইরানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের নিন্দা জানায়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস (আইআরজিসি) এর সর্বোচ্চ পরিষদের কাছে যুদ্ধকালীন ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ইরান ইন্টারন্যাশনাল।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লাভিজানের একটি গোপন বাঙ্কারে সপরিবারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে খামেনিকে। তার সঙ্গে তার প্রভাবশালী ছেলে মোজতবা খামেনিও রয়েছেন।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেছেন, আমরা জানি তথাকথিত ‘সুপ্রিম লিডার’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি সহজ টার্গেট, তবে আপাতত তাকে হত্যা করা হবে না। কিন্তু আমাদের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই না বেসামরিক মানুষ বা আমেরিকান সৈন্যদের দিকে আর কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হোক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষমতা হস্তান্তরের এ পদক্ষেপ একটি সম্ভাব্য ‘প্রি-এম্পটিভ ট্রান্সফার অব অথরিটি’, যার মাধ্যমে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কমান্ড কাঠামো অক্ষুণ্ন রাখা যাবে, যদি খামেনি নিহত হন।
ইসরাইল-ইরান চলমান সংঘাতের অষ্টম দিনে উভয় পক্ষ একাধিক হামলা ও পাল্টা হামলায় জড়িয়েছে। ইসরাইলের একাধিক আক্রমণে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এর পাল্টা জবাবে ইরানও ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে।
শুক্রবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ইসরাইলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরাইল যদি হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে ইরান আগের চেয়ে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে।
ইরানি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা সবসময় শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথ অনুসরণ করেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি কেবল তখনই সম্ভব, যখন জায়নবাদীরা সন্ত্রাসী আগ্রাসন বন্ধ করবে এবং স্থায়ীভাবে তা বন্ধ রাখার গ্যারান্টি দেবে।
মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ ইরানে ইসরায়েলের বোমা হামলার প্রতি তার সমর্থনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলকে ব্যবহার করেছেন। একটি উত্তপ্ত এবং বিতর্কিত সাক্ষাৎকারের এই পর্যায়ে সিনেটরের কথা শুনে প্রভাবশালী মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসন দৃশ্যত হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
গত বুধবার কার্লসনের মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচারিত এই মুখোমুখি কথোপকথনে ক্রমবর্ধমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয়ে 'গভীরতর বিভক্তি' ফুটে ওঠে।
প্রায় ২ ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে ক্রুজ বলেন, 'সানডে স্কুলে' বড় হওয়ার সময় আমাকে বাইবেল থেকে শেখানো হয়েছিল, যারা ইসরায়েলকে আশীর্বাদ করবে তারা (স্রষ্টার) আশীর্বাদ পাবে এবং যারা ইসরায়েলকে অভিশাপ দেবে তারা অভিশপ্ত হবে। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে, আমি আশীর্বাদের দিকে থাকতে চাই।
সিনেটরের যুক্তিতে হতবাক কার্লসন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, বাইবেলে এই লাইনটি কোথায় আছে? ক্রুজ উত্তর দিতে ব্যর্থ হন।
কার্লসন আরও জিজ্ঞাসা করলেন, 'আপনি বাইবেলের একটি বাক্যাংশ উদ্ধৃত করছেন। আপনার কাছে এর কোনো প্রেক্ষাপট নেই... এবং আপনি জানেন না যে, এটি বাইবেলের কোথায় আছে, কিন্তু এটা কি আপনার ধর্মতত্ত্ব? আমি বিভ্রান্ত। এর মানে কী?'
জবাবে সিনেটর ক্রুজ তার 'ধর্মীয় বিশ্বাসের' কথা ফের উল্লেখ করে নিজের অবস্থানকে ন্যায্যতা দিতে শুরু করেন। তিনি বলেন, 'ইসরায়েলের প্রতি আমার সমর্থন কোথা থেকে এসেছে? এক নম্বর: বাইবেলে, আমাদের ইসরায়েলকে সমর্থন করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় নম্বর...' এটা বলার আগেই কার্লস্ন বাক্যের মাঝখানে সিনেটরকে জিজ্ঞাসা করেন, 'খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের ইসরায়েল সরকারকে সমর্থন করার আদেশ দেওয়া হয়েছে?' এরপর এ নিয়ে আরও বিতর্ক চলে তাদের মাঝে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করার কোনো বৈধ কারণই ইসরায়েলের ছিল না। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর পর্যবেক্ষণে এই সত্যটি নিশ্চিত করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ইসরায়েলের অসংখ্য দাবি সত্ত্বেও যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র ধারণ করেছে অথবা তৈরির পথে রয়েছে, এই অভিযোগের কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলের পদক্ষেপগুলো একটি মিথ্যা অজুহাতের ওপর ভিত্তি করে বলে মনে হচ্ছে।
জাখারোভা জোর দিয়ে বলেন, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট: ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সমাধান আলোচনার মাধ্যমে করা উচিত, আগ্রাসনের মাধ্যমে নয়।
তিনি কূটনৈতিক সংলাপে ফিরে আসার আহ্বান জানান এবং আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো এবং আইএইএ ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর বিবৃতি মেনে চলার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
জাখারোভা উল্লেখ করেন, বছরের পর বছর ধরে ইরানের বিরুদ্ধে এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ বা অভিযোগ পাওয়া যায়নি, যা এই ধরনের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপকে ন্যায্যতা দেয়।
গত ১৩ জুন রাতে বিনা প্ররোচনায় আগ্রাসন চালিয়ে ইরানে আক্রমণ করে ইসরায়েল। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। ঘরবাড়িতে সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরাও প্রাণ হারান।
মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলি খামেনি একই দিন নতুন সামরিক কমান্ডার নিয়োগ করেন এবং বলেন যে, ইসরায়েলের জীবন অন্ধকার হয়ে যাবে। এর কিছুক্ষণ পরেই ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলি-অধিকৃত অঞ্চলের অভ্যন্তরে শাস্তিমূলক হামলা শুরু করে, তেল আবিব এবং হাইফাসহ অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের ছোঁড়ার মাধ্যমে আঘাত করে।
ইসরায়েল ইরানজুড়ে যখন আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের তার প্রতিপক্ষদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য জেনেভায় রয়েছেন।
ইরানি বলছে, প্রথমত তারা এই হামলা অব্যাহত থাকাকালীন আলোচনায় বসবে না। দ্বিতীয়ত তারা পাল্টা হামলা চালিয়ে যাবে এবং তাদের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখবে।
আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, তিনি ইউরোপীয়দের বক্তব্য শোনার জন্য (জেনেভায়) আছেন - যতক্ষণ আক্রমণ অব্যাহত থাকবে ততক্ষণ তিনি আলোচনার জন্য সেখানে নেই।
কিন্তু একই সাথে ইরান এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, তারা কূটনীতির সম্ভাবনার দরজা বন্ধ করছে না, এবং আরাঘচির জেনেভায় থাকার মূল কারণ এটিই।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা যাবে না, যখন আমরা প্রতিদিনই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছি।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, আপনাকে মনে রাখতে হবে ইরান ইতোমধ্যেই আমেরিকানদের সাথে কূটনৈতিক আলোচনার মাঝামাঝি ছিল। ইসরায়েলি হামলার কারণে আলোচনা ব্যাহত হওয়ার আগেও ষষ্ঠ দফা আলোচনার সময়সূচি নির্ধারিত ছিল।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদন
ভারতের চীর বৈরী দেশ পাকিস্তানকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান দিতে যাচ্ছে চীন। জানা গেছে, চীন পাকিস্তানকে ৪০টি শেনইয়াং জে-৩৫ পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটার জেট সরবরাহ করবে। এই যুদ্ধবিমানগুলো পেলে স্টেলথ প্রযুক্তি ব্যবহারকারী স্বল্প কয়েকটি দেশের তালিকায় পাকিস্তানও যুক্ত হবে।
বর্তমানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর কোনো স্টেলথ ফাইটার অপারেশনাল সার্ভিসে নেই এবং দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট—এএমসিএ অন্তর্ভুক্ত হতে এখনো অন্তত এক দশক বাকি। সরকারি হিসাবে এই বিমান পরিষেবায় আসতে পারে ২০৩৫ সালের আশপাশে।
এই প্রেক্ষাপটে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ভারতীয় বিমানবাহিনী সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের কাছে নতে চাওয়া হয়, এই পরিস্থিতিতে ভারতের প্রস্তুতি কী এবং কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে দেশ?
সাবেক ফাইটার পাইলট ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক গ্রুপ ক্যাপ্টেন অজয় আহলাওয়াত জানান, পাকিস্তানি পাইলটরা ইতিমধ্যে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান এই জেট পাবে, এটা মোটেও অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ তাদের মনোনীত ফাইটার পাইলটদের দল চীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে অনেক দিন ধরে। তারা জে-৩৫-এ ওড়ার প্রশিক্ষণ পেয়েছে আগে থেকেই। যে সংস্করণ পাকিস্তান পাচ্ছে, সেটা মূলত এফসি-৩১, যা মূলত জে-৩৫ এর রপ্তানি সংস্করণ। বিশ্বজুড়েই এই রীতি চলে—পুরো ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্করণ কেউই দেয় না।
এফসি-৩১ জে-৩৫ এর মূল সংস্করণ থেকে কিছুটা ভিন্ন। এফসি-৩১ এর সক্ষমতা চীনের নৌবাহিনীর ব্যবহৃত মূল সংস্করণের তুলনায় কিছুটা কম। আহলাওয়াত আরও বলেন, একটা জিনিস একটু বিস্ময়ের, সেটা হলো এই ডেলিভারি সময়ের আগেই হয়ে যাচ্ছে। এটুকুই সারপ্রাইজ।
দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের তুলনায় ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রশিক্ষণ, কৌশল ও বহুমুখী সরঞ্জাম ব্যবহারে এগিয়ে ছিল। কিন্তু জে-৩৫ যুক্ত হলে সেই পার্থক্য কমে যেতে পারে। আহলাওয়াত বলেন, খবরটা উদ্বেগজনক। স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা অনেক কষ্ট করে অন্তত পাকিস্তানের তুলনায় আধুনিক প্রযুক্তি ধরে রেখেছিলাম। আর এখন যদি জে-৩৫ এর কোনো সংস্করণ পাকিস্তানের হাতে যায়, তাহলে সেটা ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হবেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের হাতে এখন মাত্র দুটি খারাপ অপশন আছে—এফ-৩৫ আর সুখোই-৫৭। তবে একমাত্র ভালো অপশন হচ্ছে এএমসিএ। আমাদের উচিত এই প্রকল্পকে জাতীয় অগ্রাধিকারে নিয়ে আসা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাস্তবায়ন করা।
এমএমসিএ একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী টুইন-ইঞ্জিন স্টেলথ যুদ্ধবিমান প্রকল্প, যা ভারতের অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এডিএ) ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনীর সঙ্গে মিলে তৈরি করছে। ২০২৮-২৯ সালের মধ্যে প্রোটোটাইপ তৈরি হওয়ার কথা, আর পুরোদস্তুর অন্তর্ভুক্তি ২০৩৫-এর আগে হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল সঞ্জীব কাপুর বলেন, খবর অনুযায়ী পাকিস্তান এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ৪০টি জেট পেয়ে যাবে। আর আমাদের নিজের তৈরি এএমসিএ আসতে অন্তত ৯-১০ বছর লাগবে। দেশ হিসেবে আমাদের প্রশ্ন করা উচিত, আমরা কি এই ১০ বছর অপেক্ষা করতে পারি, যখন আমাদের দুই প্রতিবেশী আরও উন্নত অস্ত্রে নিজেদের সাজাচ্ছে?
তার পরামর্শ, এই ফাঁকা স্থান পূরণ করতে হলে ফ্রান্সের রাফাল কেনার মতো করে রাশিয়ার সুখোই-৫৭ জেট সরকারি চুক্তিতে কেনা যেতে পারে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, সুখোই-৫৭ আমাদের অস্ত্র, রাডার ও অন্যান্য প্রযুক্তির সঙ্গে বেশ ভালোভাবে খাপ খায়। কিছু দিক দিয়ে এটা এফ-৩৫ থেকেও ভালো। দুটো বিমানই অ্যারো ইন্ডিয়া প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিল। যারা দেখেছে, তাদের অনেকেই বলেছে সুখোই-৫৭ নানা বিষয়ে এগিয়ে।
সঞ্জীব কাপুর আরও বলেন, এই চুক্তি ট্রান্সফার অব টেকনোলজি ও ডিআরডিও-এর তৈরি অস্ত্র সিস্টেম ব্যবহারের কোডিং সুবিধাসহ হলে আরও উপকার হবে। তিনি বলেন, রাশিয়ার সহযোগিতায় আমরা এ প্রযুক্তির ওপর অভিজ্ঞতা নিতে পারি। এ সময়ের মধ্যে আমাদের বিমান ও মেরামতকর্মীরা স্টেলথ জেট নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা পাবে। তাছাড়া ভারতীয় পরিবেশে ব্যবহার করে এএমসিএ-এর ডিজাইন ও উন্নয়নেও অনেক কিছু শিখতে পারবে আমাদের টিম।
তবে গ্রুপ ক্যাপ্টেন আহলাওয়াত এই প্রস্তাবে একেবারেই দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, দুঃখিত, আমি সম্পূর্ণভাবে একমত নই। যদি আমাদের এএমসিএ না থাকত, তাহলে টেকনোলজি ট্রান্সফার দরকার হতো। কিন্তু আমাদের নিজস্ব গবেষণা ইউনিট আছে, আমাদের প্রযুক্তি আছে।
তিনি মনে করিয়ে দেন, ভারত আগে সুখোই-৫৭ ভিত্তিক ফিফ্থ জেনারেশন ফাইটার এয়ারক্রাফট প্রকল্পে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরে ভারতের পক্ষ থেকে সেই প্রকল্প থেকে সরে আসা হয়। তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই সুখোই-৫৭ প্রজেক্টের অংশ ছিলাম। কিন্তু যেটা দেখেছি, সেটা আমাদের পছন্দ হয়নি। আমরা ৩৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছি, তারপরও আমরা পিছিয়ে এসেছি। আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা আছে। রাশিয়া এখনো নিজের জন্যই পুরো রেজিমেন্ট গঠন করতে পারেনি। আমাদের উচিত এমন কিছু নেওয়া যা প্রমাণিত। দুটি খারাপ অপশনের মধ্যে কম খারাপটি এফ-৩৫।
ইসরায়েলি সম্পত্তি কর ক্ষতিপূরণ তহবিলের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথ রিপোর্ট করেছে, ইরানের পাল্টা হামলার ফলে ৮ হাজারের বেশি ইসরায়েলি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদন অনুসারে, দৈনিকটি জানিয়েছে, ভবন বা যানবাহনের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের জন্য প্রায় ৩০ হাজার বিমা অনুরোধ করা হয়েছে।
গত ১৩ জুন রাতে বিনা প্ররোচনায় আগ্রাসন চালিয়ে ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করে, যার মধ্যে তেহরানের আবাসিক ভবনও অন্তর্ভুক্ত ছিল। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয় এবং ঘরবাড়ি সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরা প্রাণ হারান।
ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলি খামেনি একই দিন নতুন সামরিক কমান্ডার নিয়োগ করেন এবং বলেন যে, ইসরায়েলের জীবন অন্ধকার হয়ে যাবে।
মেহের নিউজ জানিয়েছে, এর কিছুক্ষণ পরেই ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলি-অধিকৃত অঞ্চলের অভ্যন্তরে শাস্তিমূলক হামলা শুরু করে, তেল আবিব এবং হাইফাসহ অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের ছোঁড়ার মাধ্যমে আঘাত করে।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মূল বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের একটি উচ্চমাত্রার গোপন অভিযান পরিচালিত হয়েছে, যার কোডনাম—অপারেশন নার্নিয়া। এ অভিযানের মাধ্যমে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু বিজ্ঞানীদের একে একে হত্যা করেছে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।
এক নজরে পুরো অভিযান
গত শুক্রবার শুরু হওয়া আরেক অভিযান ‘রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হিসেবে ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ নেতারা এবং পরমাণু কর্মসূচিতে যুক্ত প্রধান বিজ্ঞানীদের টার্গেট করে হামলা চালায়। এর মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট ৮২০০-এর ১২০ জন সদস্য এবং বিমানবাহিনীর সমন্বিত দল।
অভিযান শুরুর আগে ইরানিদের বিজ্ঞানীদের ৪টি স্তরে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়—যাদের মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছেন সামরিক দক্ষতায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকা এবং যাদের পরিবর্তন করা সবচেয়ে কঠিন এমন ব্যক্তিরা। এর ভিত্তিতে তৈরি করা হয় ‘হিট লিস্ট’, যেখানে সবচেয়ে বেশি হুমকি হয়ে ওঠা বিজ্ঞানীদের নাম ছিল শীর্ষে।
নিহত শীর্ষ বিজ্ঞানীরা
অভিযানে নিহত ইরানি বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন—
ফেরেইদুন আব্বাসি – পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ
মোহাম্মদ মাহদি তাহরানচি – পদার্থবিদ
আকবর মাতলালি জাদে – কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার
সাঈদ বেরাজি – উপাদান প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ
আমির হাসান ফাকাহি – পদার্থবিদ
আবদুল হামিদ মিনুশাহর – রিঅ্যাক্টর পদার্থবিদ
মনসুর আসগারি – পদার্থবিদ
আহমদ রেজা দাওলপারকি দরিয়ানি – পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ
আলি বাখায়ী কাতেহরেমি – যান্ত্রিক প্রকৌশলী
‘টার্গেট ব্যাংক’ তৈরির গল্প
অভিযানের পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জানান, আমরা একটি লক্ষ্য-ব্যাংক তৈরি করছিলাম। ব্রেকথ্রু আসে যখন একটি গোয়েন্দা ঘাঁটি ও একটি বিমান ঘাঁটি শনাক্ত করি। তারপর শুরু হয় বিভিন্ন দলে ভাগ করে মিশন— কে রাডার ধ্বংস করবে, কে কমান্ড সেন্টার, আর কে বিজ্ঞানীদের মারবে।
সাইকোলজিকাল ওয়ারফেয়ার: নতুন কৌশল
এই অভিযানের আরেক চমকপ্রদ দিক হলো ইসরায়েলের নতুন কৌশল—মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে ‘পার্সিয়ান ভাষায়’ একটি বার্তা এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা হয়, যেখানে ইরানি নাগরিকদের মোসাদের সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়।
বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা বুঝতে পারি, আপনি কঠিন অবস্থার মধ্যে আছেন। আমাদের প্রিয়জনেরা যারা এই পরিস্থিতির শিকার, তারাও ইসরায়েলকে বার্তা দিচ্ছে যেন ইরানকে গাজা বা লেবাননের মতো ভাগ্য না ভোগ করতে হয়।’
বার্তার শেষে মোসাদের একটি লিংক শেয়ার করে বলা হয়—ভিপিএন বা এনক্রিপটেড সংযোগ ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মোসাদের এই ‘অপারেশন নার্নিয়া’ কেবল একটি সামরিক অভিযান নয়, এটি ইরানের পরমাণু প্রকল্পে দীর্ঘদিনের দক্ষতাসম্পন্ন বিজ্ঞানীদের সরিয়ে দেওয়ার কৌশলী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে ইসরায়েল একদিকে যেমন ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতি থামাতে চায়, অন্যদিকে তেহরানের অভ্যন্তরে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
এ অভিযান আগামী দিনগুলোতে ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: দ্য জেরুজালেম পোস্ট
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পাঁচটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঠিক কোন স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কখন এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।
শুক্রবার (২০ জুন) সংবাদ সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, রেড ক্রিসেন্ট প্রধান পিরহোসেন কোলিভান্দ বলেছেন, কাচের জানালা ভেঙে গেছে এবং বিস্ফোরণের ধোঁয়ার কারণে রোগীদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল।
তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি, তবে রেড ক্রিসেন্ট আন্তর্জাতিক প্রসিকিউটরদের কাছে ঘটনাগুলো উত্থাপন করবে। কারণ সংঘাতের সময় হাসপাতালে আক্রমণ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন।
কোলিভান্দ ইরনাকে বলেছেন, আমরা ইসরায়েলি শাসনের হামলা, যা আন্তর্জাতিক নীতির পরিপন্থী, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নথি হিসেবে পাঠিয়েছি।
ইসরায়েলও বলেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ইরানি হামলায় তাদের একটি প্রধান হাসপাতাল, সোরোকা মেডিকেল সেন্টার, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইরান বলেছেন, পাশেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা ছিল। ওই স্থাপনাই ছিল ইরানের লক্ষ্যবস্তু। তবে শক ওয়েভের কারণে পাশের হাসপাতালের কিছু ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে। ইসরায়েলও স্বীকার করেছে, হাসপাতাল কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ নিহত হয়নি।
ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে ১২৫ মিনিটব্যাপী বিমান অভিযান চালিয়ে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস এবং একজন সামরিক কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
শুক্রবার (২০ জুন) এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর (আইএএফ) ৫০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান অংশ নেয়।
তবে ধ্বংস হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্রগুলোর অবস্থান বা নিহত কমান্ডারের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। আইডিএফের ভাষ্য অনুযায়ী, নিহত কমান্ডার ওই ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্রের একটিতে অবস্থান করছিলেন এবং ‘ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন’।
ইসরায়েলের এই অভিযানের বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি তেহরান। তবে এরই মধ্যে শুক্রবার ভোর থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।
সূত্র : আলজাজিরা
সম্ভাব্য সাইবার হামলার হুমকির কারণে পুরো দেশজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে ইরান। দেশটির যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বরাতে শুক্রবার (২০ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে ইরানের আধাসরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম।
বৃহস্পতিবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আগ্রাসনকারী শত্রুপক্ষ যেন দেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্কের অপব্যবহার করতে না পারে, সেজন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে যে শত্রুপক্ষ ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটগুলো ধ্বংস এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখতে একটি সাইবার আর্মি গঠন করেছে।’
মন্ত্রণালয় থেকে অবশ্য বলা হয়েছে যে ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণভাবে সীমিত পর্যায়ে এখনও চালু আছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
তবে ইরানের সাধারণ লোকজন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে ব্রডব্র্যান্ড বা মোবাইল ফোনে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছেন না তারা।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করলে তা ‘প্যান্ডোরার বক্স’ খুলে দেওয়ার শামিল হবে বলে সতর্ক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।
শুক্রবার (২০ জুন) সকালে স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল খামেনিকে হত্যার চেষ্টা করে, তাহলে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া হবে খুবই নেতিবাচক। আমরা দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি ইরানের ভেতরে চরমপন্থার উত্থান ঘটাবে ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। যারা খামেনিকে হত্যার কথা বলছে, তাদের ভেবে দেখা উচিত—এর ফলাফল কত ভয়াবহ হতে পারে।’
পেসকভ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ‘ইরানে সরকার পরিবর্তন হবে—এটি একেবারেই অকল্পনীয়। এই বিষয়ে আলোচনা করাটাও অগ্রহণযোগ্য।’
এই মন্তব্যগুলো রাশিয়ার পক্ষে ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাত সম্পর্কে এখন পর্যন্ত দেওয়া সবচেয়ে শক্ত প্রতিক্রিয়া বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে, যেখানে ইরান রাশিয়াকে শাহেদ ড্রোন সরবরাহ করেছে।
এদিকে ইরানে হামলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই সপ্তাহ সময় নেবেন বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
লেভিট জানান, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত হবে কি না—এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ইরানের সঙ্গে নিকট ভবিষ্যতে আলোচনা হওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে, যা হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এই ভিত্তিতে আমি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব, আমি যাব (যুদ্ধে জড়ানো) কি না।
এর আগে মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বুধবার (১৮ জুন) তাদের এক প্রতিবেদনে দাবি করে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গোপনে ইরানে সামরিক হামলার পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন, তবে এখনো চূড়ান্ত নির্দেশনা জারি করেননি। এমনটিই জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা।
সূত্র: সিএনএন
তেহরানের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অংশ নেয় ইসরায়েলের অন্তত ৬০টি যুদ্ধবিমান। হামলায় প্রায় ১২০টি আধুনিক অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। শুক্রবার (২০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
আইডিএফ দাবি করেছে, হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের সামরিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণকেন্দ্র এবং একটি পারমাণবিক গবেষণা স্থাপনা। তাদের ভাষায়, এসব স্থাপনা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত। তবে এ বিষয়ে ইরানের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিরশেবা শহরে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, মাইক্রোসফট অফিসের নিকটবর্তী এলাকায় আগুন দেখা গেছে। এতে আবাসিক ভবন ও যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। ধারণা করা হচ্ছে, ইরান গ্যাভ-ইয়াম প্রযুক্তি পার্ককে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি বিরশেবায় মাইক্রোসফট ভবনের কাছাকাছি আঘাত হানে। এ সময় আগুনে একটি গাড়ি পুড়ে যায়। হামলার ফলে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের রেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে বিশেষ বাহিনী।
ইসরায়েলের জরুরি উদ্ধারকারী সংস্থা মেগান ডেভিড অ্যাডম হামলার পরের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। এতে ধ্বংসস্তূপ, ধোঁয়ার কুণ্ডলী ও আতঙ্কগ্রস্ত মানুষকে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবারও ইরান ইসরায়েলের তেল আবিব, হোলোন এবং রামাত গান এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। হোলোনে হামলায় গুরুতর আহত হন তিনজন, আর রামাত গানে প্রায় ২০ জনের হালকা আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এসব হামলায় মোট আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৬৫ জনে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, এটি ছিল তাদের ১৪তম ‘সমন্বিত হামলা’, যা তারা বিভিন্ন কৌশলগত লক্ষ্যে পরিচালনা করেছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে, ইসরায়েলের পুলিশ সাধারণ মানুষকে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতপ্রাপ্ত হাসপাতাল বা আশপাশের এলাকায় না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ সোরোকা হাসপাতালের একটি অংশে ‘বিপজ্জনক পদার্থ’ লিক হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। হামলায় হাসপাতালটির জানালা ও দেয়াল ভেঙে পড়ে এবং আতঙ্কিত মানুষ করিডোর দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
জেরুজালেমে বিবিসির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ভোরের দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শহরজুড়ে শোনা গেছে, যা গত কয়েক দিনের মধ্যে সবচেয়ে জোরালো ছিল। ইসরায়েলের আরও কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের খবর পাওয়া গেলেও তা নিশ্চিত করা যায়নি।
রামাত গান এবং তেল আবিবের কিছু ভবনের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ছবিও ইতোমধ্যে সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ এই সংঘর্ষের ফলে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক মহল।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত বহু দশক ধরে চলা বৈরিতার ফল। কিন্তু ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের আগে পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল, যাদের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক ছিল।
বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ক্ষমতায় আসে একটি কট্টরপন্থি শিয়া মুসলিম সরকার, তীব্রভাবে পশ্চিমা দেশ ও ইসরায়েল বিরোধিতাই যাদের আদর্শ। সদ্য নিয়োগ পাওয়া নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অধীনে থাকা ইরান, সে সময় ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং একে নিপীড়ন ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়।
ইরানের নতুন শাসনব্যবস্থা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানায় এবং হেজবুল্লাহ (লেবানন), হামাস (গাজা) ও হুথি (ইয়েমেন)-এর মতো ইসরায়েলবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রধান পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়।
ইসরায়েল তাদের দিক থেকে ইরানকে বিশ্বের প্রধান সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক বলে অভিযুক্ত করে আসছে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সামরিক তৎপরতা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গে মিলে নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে আসছে।
তারা বহু বছর ধরে ইরানের বিরুদ্ধে গোপন অভিযান চালিয়েছে, যা ছিল দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘ এক "ছায়াযুদ্ধ" যা পরে প্রকাশ্যে আসে।
ইরানের পর এবার পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের সাবেক উপ–প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতা মেইর মাসরি।
আরবি ও উর্দু ভাষায় এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে মাসরি বলেন, ‘ইরানের পর এবার আমরা পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের চিন্তা করছি।’
মাসরির মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে তার বক্তব্যের নিন্দা জানান।
বর্তমানে সরকারি কোনো পদে না থাকলেও ইসরায়েলি রাজনীতি ও কৌশল নির্ধারকদের মধ্যে প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন মাসরি, বিশেষত লেবার পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে।
পোস্টে মাসরি আরও লেখেন, ‘পাকিস্তান ইরান থেকে দূরে নয়। এতটুকু বুঝলেই যথেষ্ট।’
তার এই হুমকির পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। অনেকে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে মাসরির বক্তব্যের নিন্দা জানান। ব্যবহারকারীরা মন্তব্য করেন, এ ধরনের উসকানিমূলক হুমকি পাকিস্তানিদের মনোবল আরও দৃঢ় করবে। কেউ কেউ মনে করিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা ও এর সংযত ব্যবহার বিশ্বে স্বীকৃত।
এদিকে আঞ্চলিক উত্তেজনা চলার মধ্যে গত সোমবার পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ইসরায়েলকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ইসহাক দার বলেন, ‘ইসরায়েলের জন্য আমাদের বার্তা স্পষ্ট, পাকিস্তানের দিকে তাকানোর সাহস কেরো না।’ তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে এবং যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে প্রস্তুত ও সক্ষম।
ইসহাক দার স্মরণ করিয়ে দেন, ‘ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার সময় পুরো জাতি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিল, সেভাবেই সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এখনো সবাই একযোগে প্রস্তুত থাকব।’
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ায় যে ইরানে হামলা হলে পাকিস্তান ইসরায়েলের ওপর পারমাণবিক হামলা চালাতে পারে। তবে এসব গুজব সরাসরি অস্বীকার করেছে পাকিস্তান সরকার।
ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচিকে হত্যার একটি বড় ধরনের ইসরায়েলি ষড়যন্ত্র ভণ্ডুল করেছে বলে দাবি করেছেন ইরানি সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা মোহাম্মদ হোসেইন রংবারান। তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, সম্প্রতি ‘সঠিক ও নিখুঁত নিরাপত্তা ব্যবস্থার’ মাধ্যমে তেহরানে এই হত্যাচেষ্টা নস্যাৎ করা হয়েছে।
লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল-মায়েদিনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রংবারান বলেন, ‘এটি ছিল একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্র। আমাদের বীর “অজানা সৈনিক”—অর্থাৎ গোয়েন্দারা সময়মতো ব্যবস্থা নিয়ে এ ধরনের ভয়াবহ আগ্রাসন রুখে দিয়েছেন।’
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি সময়ে এই হামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল এবং এটি সফল হলে ইরানের নিরাপত্তা ও কূটনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারত।
ইরান সরকার বা আরাগচির দপ্তর থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এখনও আসেনি। তবে স্থানীয় পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে সামনে এল, যখন আব্বাস আরাঘচি জেনেভায় জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য নিয়ে গঠিত ইউরোপীয় ত্রয়ীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই আলোচনার প্রেক্ষাপটে ইরান ও ইসরায়েলি দখলদার শাসনের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে রাঙ্গবারান সরাসরি এই হত্যাচেষ্টার সঙ্গে আরাঘচির কূটনৈতিক তৎপরতার যোগসূত্র স্থাপন করেন। তিনি ইঙ্গিত দেন, ইসরায়েল এই গুপ্তচর হামলার মাধ্যমে ইরানের অবস্থান দুর্বল করতে চেয়েছিল। রাঙ্গবারান বলেন, এই হুমকি ‘বাস্তব ও গুরুতর।’ তার মতে, এই ষড়যন্ত্র আঞ্চলিক সংকটের গভীরতা এবং আরাঘচির কূটনৈতিক ভূমিকাকে প্রতীকী দিক থেকেও আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।
নিজ বক্তব্যে রাঙ্গবারান আরাঘচিকে কেবল অভিজ্ঞ কূটনীতিক হিসেবেই নয়, বরং ইসলামি প্রজাতন্ত্রের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবেও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আরাঘচি নিজেকে কেবল একজন কূটনীতিক হিসেবে দেখেন না, বরং তিনি নিজেকে মাতৃভূমির একজন সৈনিক মনে করেন।’ তিনি প্রয়াত কুদস ফোর্সের কমান্ডার শহিদ জেনারেল কাসেম সোলাইমানির সঙ্গে আরাঘচির অবস্থানকে তুলনা করে বলেন, ‘তিনি শহীদ হওয়ার বাসনা পোষণ করেন সেই পথেই।’
রাঙ্গবারান তার বক্তব্যের শেষে দেশের জনগণকে আহ্বান জানান, যাতে তারা আরাঘচি ও তার সহকর্মীদের পাশে দাঁড়ায় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ইরানের সার্বভৌমত্ব ও অধিকার রক্ষার প্রচেষ্টায় তাদের সমর্থন জানায়।
এদিকে, ইরান সতর্ক করে বলেছে, দেশটির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ছে। এ অবস্থায় উচ্চপদস্থ ইরানি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পারমাণবিক ইস্যুতে এক সময়কার শীর্ষ আলোচক আরাঘচি এখন পশ্চিমা কূটনীতিতে অভিজ্ঞ এক মুখ, এবং ওয়াশিংটন ও তেল আবিবের চাপে ইরানের অবস্থান তুলে ধরার অন্যতম ব্যক্তিত্ব তিনি।
বুধবার রাত। ইরানের আকাশপথ ছুঁড়ে বেরিয়ে গেল এক রহস্যময় আগুনের বল। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতাজুড়ে ছড়িয়ে পড়লো সেই দৃশ্যের ঝলক। একপলকে কারও চোখে উল্কা, কারও কাছে অজানা ‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিক্যাল’। মধ্যরাত পেরোতেই প্রশ্ন— ইরান এবার কী দেখাল?
কৌতূহলের অবসান হলো দ্রুতই। জানা গেল, এটি কোনো উল্কা নয়, কোনো রহস্যময় যানও নয়— এটি ইরানের নতুন হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাত্তাহ’। এর গতি শুনলে শিহরিত হতে হয়— শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি! ঘণ্টায় প্রায় ৭৬৭ মাইল গতির শব্দকেও ফেলে আসে ম্যাক ১৫ গতির এই ধ্বংসের তীর।
এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’র একাদশ ধাপের অংশ। লক্ষ্য একটাই— ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বুক চিরে ভেতরে ঢুকে পড়া। আর ইরান তা করেছে নিখুঁতভাবে।
কিন্তু আঘাত একমুখী নয়। জবাব দিতে দেরি করেনি ইসরায়েলও। পাল্টা হামলার আঘাতে ইরানের ভূখণ্ডের গভীরে সামরিক স্থাপনাগুলো কেঁপে উঠেছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের বোমায়।
প্রতিশোধ আর পাল্টা প্রতিশোধের এই অগ্নিকুণ্ড টানা অষ্টম দিনে ঢুকে পড়েছে আজ শুক্রবার।
ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রের এই ব্যবহারকে একটি ‘সন্ধিক্ষণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। জানা গেছে, এই সলিড-ফুয়েল (কঠিন জ্বালানি) ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ভেদ করে দেশটির মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে। আইআরজিসি ওই সময় বলেছিল, ‘শক্তিশালী এবং অত্যন্ত কৌশলী ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আজ রাতে ভীতসন্ত্রস্ত জায়নবাদীদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বারবার কাঁপিয়ে দিয়েছে, এটি তেল আবিবের যুদ্ধবাজ মিত্রদের কাছে ইরানের শক্তির একটি স্পষ্ট বার্তা। তারা এখনো বিভ্রম এবং মিথ্যা ধারণায় ডুবে আছে।’
আকাশে ‘রহস্যময়’ ক্ষেপণাস্ত্রের ভিডিও ভাইরাল কয়েক ঘণ্টা পর আইআরজিসি উৎক্ষেপণের ভিডিও প্রকাশ করে। দ্রুতই সেটি ভাইরাল হয়। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা ক্ষেপণাস্ত্রের গতি এবং মাঝপথে আকস্মিক গতিপথ পরিবর্তনের সক্ষমতা দেখে বিস্মিত হন। ঘণ্টায় ১৩ থেকে ১৫ ম্যাক গতিতে এ ধরনের গতিবিধি এটিকে বিদ্যমান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কী?
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের গতির পাঁচ গুণেরও বেশি (ঘণ্টায় প্রায় ৬ হাজার ১০০ কিলোমিটার) গতিতে ছুটতে পারে। শুধু তাই নয়, এটি মাঝপথে গতিপথ পরিবর্তনও করতে পারে। এই উচ্চ গতি এবং কৌশলী সক্ষমতা এটিকে শনাক্ত বা প্রতিহত করা কঠিন করে তোলে। আইআরজিসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় সমস্ত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় সংক্ষিপ্তভাবে হাইপারসনিক গতিতে পৌঁছায়। এ কারণে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে।
ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র আসলে কী?
ফাত্তাহ একটি প্রিসিশন গাইডেড (নির্ভুল), টু-স্টেজ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি কঠিন জ্বালানিতে চলে, অর্থাৎ সলিড ফুয়েল মিসাইল। এর পাল্লা ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার (প্রায় ৮৭০ মাইল)। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভেতরে ও বাইরে উভয় স্থানেই চলতে সক্ষম। ২০২৩ সালে প্রথম ফাত্তাহ উন্মোচন করে ইরান। এটি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথমে একটি গোলাকার প্রপেল্যান্ট ব্যবহার করে সক্রিয় হয়। ওড়ার সময় সব দিকে গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। এতে এটিকে শনাক্ত এবং প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।
গতিতে কৌশলগত অগ্রগতি
ফাত্তাহর মাধ্যমে ইরান কার্যকর হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এই তালিকায় আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারত ছিল। ঐতিহ্যবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের বিপরীতে, হাইপারসনিক অস্ত্রগুলো উড়ন্ত অবস্থায় গতির সঙ্গে গতিপথ পরিবর্তনের মতো কৌশল ব্যবহার করে। এটি অধিকাংশ আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে এড়াতে সক্ষম।
প্রেস টিভি জানিয়েছে, গত বুধবারের অভিযানটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে তীব্র ছিল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থামাতে ব্যর্থ হয়েছে।
পাল্টা হামলা
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালায়। ফিলিস্তিন ক্রনিকলের মতে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান কারমানশাহের একটি সামরিক ঘাঁটিতে পাঁচটি হেলিকপ্টার, একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সুবিধা এবং সেন্ট্রিফিউজ তৈরির সঙ্গে যুক্ত একটি স্থানে আঘাত হানে।
তেহরানে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইসরায়েল জানিয়েছে, এই হামলাগুলো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছিল।
সংঘাতের শেষ কোথায়
উভয় পক্ষই নতুন সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। এতে সংঘাত আরও বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে ব্যর্থ করে দিচ্ছে যে, তা নজিরবিহীন। এর বিপরীতে, ইরানের অভ্যন্তরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা, ইসরায়েলের দীর্ঘ পাল্লার অভিযানের সক্ষমতার প্রমাণ।
সামরিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা পুনরায় শুরু না হলে এই অঞ্চল আরও বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করবে। অবশ্য আজ শুক্রবারই জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কূটনৈতিক সমাধান প্রচেষ্টার জন্য দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছেন।
ইরানের সম্ভাব্য পাল্টা হামলার আশঙ্কায় মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ও নৌবাহিনীর জাহাজ সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমন তথ্য জানিয়েছেন দুই মার্কিন কর্মকর্তা।
ইসরায়েল যখন ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় ধারাবাহিক বোমাবর্ষণ করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রও এই অভিযানে সরাসরি যুক্ত হবে কি না—সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই মার্কিন বাহিনী সতর্কতামূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
গত শুক্রবার থেকে ইরানে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইরানও পাল্টা জবাব দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্প তেহরানবাসীকে সরে যেতে বলেছেন। ইসরায়েলি হামলার ষষ্ঠ দিনে তেহরান থেকে বাসিন্দারা পালিয়ে যেতে শুরু করে।
অন্যদিকে কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস গতকাল বৃহস্পতিবার একটি সতর্কবার্তা জারি করেছে, যেখানে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি আল উদেইদ এয়ার বেসে (যা দোহার বাইরের মরুভূমিতে অবস্থিত) সাময়িকভাবে তাদের কর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
দূতাবাস কাতারে অবস্থানরত তাদের কর্মী ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে এবং চলমান আঞ্চলিক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে বলেছে।
দুজন মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, যুদ্ধবিমান ও জাহাজ সরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপটি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সুরক্ষার পরিকল্পনারই অংশ। তবে কতগুলো সরানো হয়েছে এবং কোথায় সরানো হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে তারা অস্বীকৃতি জানান। তাদের একজন বলেন, আল উদেইদ ঘাঁটিতে যেসব বিমান সুরক্ষিত শেল্টারে ছিল না, সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাহরাইনের একটি বন্দর থেকে নৌবাহিনীর জাহাজও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে—সেই বন্দরে মার্কিন সেনাবাহিনীর পঞ্চম নৌবহর অবস্থান করে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এটা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। সেনাদের সুরক্ষা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’ এই সপ্তাহে রয়টার্সই প্রথম জানায়, বহু ট্যাংকার বিমান ইউরোপে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে আরও যুদ্ধবিমান মোতায়েনও রয়েছে।
ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থানরত একটি বিমানবাহী রণতরিও বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা হয়েছে। ইসরায়েল শুক্রবার থেকে হামলা শুরু করেছে। তাদের অভিযোগ, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। তবে ইরান দাবি করে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না।
জেনেভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত বুধবার জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সরাসরি জড়িত হয়, তাহলে তেহরান কড়া জবাব দেবে—এই বার্তা ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনকে জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানে নেতৃত্বের পতন বা পরিবর্তন তাদের হামলার লক্ষ্য নয়, তবে হামলার ফলে এমনটা ঘটতেও পারে।
তিনি বলেন, ‘শাসনব্যবস্থা বদলানো কিংবা এই শাসনব্যবস্থার পতনের বিষয়টি একান্তই ইরানি জনগণের। এর কোনো বিকল্প নেই। এই কারণে আমি একে লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করিনি। এটা হতে পারে হামলার একটি ফলাফল, কিন্তু এটা আমাদের আনুষ্ঠানিক বা নির্ধারিত লক্ষ্য নয়।’
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েলের সরকারি টেলিভিশন ‘কান’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলায় যুক্ত হোক বা না হোক, তেহরানের সব পারমাণবিক স্থাপনা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা ইসরায়েলের রয়েছে।
তার বক্তব্যের কিছুক্ষণ পর হোয়াইট হাউজ জানায়, ইরান যুদ্ধে ওয়াশিংটন যুক্ত হবে কি না, সে বিষয়ে ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের ফোরদো জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রের বাঙ্কারবিধ্বংসী বোমার সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে ইসরায়েলের। কোম শহরের কাছে একটি পাহাড়ের নিচে, মাটির গভীরে অবস্থিত এই ফোরদো কেন্দ্রটিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘মুকুট’ হিসেবে ধরা হয়।
ফোরদো নিয়ে সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে হবে নাকি তাদের ছাড়াই হবে— এ প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমাদের নিশানায় থাকা সবকিছু, তাদের সব পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস করার ক্ষমতা আমাদের আছে। যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হবে কি না, তা পুরোপুরি প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) সিদ্ধান্ত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে যা ভালো, তা করবেন। আর আমি করব যা ইসরায়েলের জন্য ভালো। আমি বলতে পারি, এখন পর্যন্ত সবাই তার নিজের কাজটাই করছে।’
এর আগে বুধবার ট্রাম্প বলেছিলেন, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেরই ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি ধ্বংস বা অকার্যকর করার ক্ষমতা আছে। তিনি বলেন, ‘তার মানে এই নয় যে আমি সেটা করতে যাচ্ছি।’
ইসরায়েল-ইরান চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়ালে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ পরিণতি নেমে আসবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'এটা আমেরিকার যুদ্ধ নয়, যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সংঘাতে অংশ নেন, তাহলে ইতিহাসে তাকে এমন একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনে রাখা হবে, যিনি একটি অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন।'
খতিবজাদে আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলবে, এতে আগ্রাসন বাড়বে এবং নিরীহ মানুষের ওপর নৃশংস নির্যাতনের অবসান দীর্ঘায়িত হবে।'
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের সোরোকা হাসপাতালে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই এই মন্তব্য করেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দাবি করে, হাসপাতাল নয়, লক্ষ্যবস্তু ছিল এর পাশে থাকা একটি সামরিক স্থাপনা।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ওই হামলায় সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে অন্তত ৭১ জন আহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে আরাকের ভারী পানি চুল্লি ও নাতাঞ্জের একটি স্থাপনাও রয়েছে।
তেহরান এখনো ইসরায়েলে হামলায় তাদের কতজন নিহত বা আহত হয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে সাঈদ খতিবজাদে বলেন, তেহরান এখনো কূটনৈতিক সমাধানকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তিনি বলেন, 'আমরা কূটনীতি চাই। কিন্তু বোমাবর্ষণ চলাকালে কোনো আলোচনায় বসা সম্ভব নয়।'
ইরানের ইসরায়েলবিরোধী হামলার ব্যাখ্যায় খতিবজাদে বলেন, এটি ছিল জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা। তার ভাষায়, '১৩ জুন যখন সংঘাত হঠাৎ বেড়ে যায়, তখনও তেহরান কূটনৈতিক আলোচনায় ছিল। কিন্তু ইসরায়েল প্রথমে আঘাত হানে, কয়েকজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করে।'
গত এক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ফলে পুরো অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেবেন—যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে জড়াবে কি না।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের প্রাথমিক লক্ষ্য পেরিয়ে এবার দেশটির শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি কাঁপিয়ে দিতে চাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি সরাসরি ইরানি জনগণকে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। এ পথে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ বিবেচনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।
ইতিহাস বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে সরকার পতনের জন্য সামরিক হস্তক্ষেপের নজির নতুন নয়। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক আক্রমণ এবং ২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটো অভিযানে সাদ্দাম হোসেন ও মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনের অবসান ঘটে। তবে এসব ঘটনার দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল ছিল অঞ্চলজুড়ে অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা।
শাহের উৎখাত
ইরানে এর আগেও রাজতন্ত্রের পতন ঘটেছে। ১৯৭৮-৭৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ক্ষমতাচ্যুত হন। যদিও এরও আগে ১৯৫৩ সালে সিআইএ-সমর্থিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শাহকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। শাহের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিক্ষোভের সুযোগে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি নির্বাসন থেকে ফিরে এসে বিপ্লবের নেতৃত্ব নেন এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিপ্লব যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানের নতুন অধ্যায় রচনা করে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্রের জন্ম
অভ্যুত্থানের পর খোমেনি এবং তাঁর সমর্থকরা রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করেন এবং ইরানকে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করেন। সরকারে তীব্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব ছিল। খোমেনি কেবল ইরানকেই পরিবর্তন করেননি, বরং আঞ্চলিক শৃঙ্খলা গঠনে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকেও চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এতে তেলসমৃদ্ধ এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকা তার প্রভাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হারিয়ে ফেলে। এরপর ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে শত্রুতাপূর্ণ আমেরিকান বা ইসরায়েলি পদক্ষেপের আশঙ্কা ইরানের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
নতুন সর্বোচ্চ নেতার ক্ষমতা গ্রহণ
খোমেনির মৃত্যুর পর ১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি দেশের সর্বোচ্চ নেতা হন। তিনিও শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে আত্মনির্ভরশীলতা, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা এবং রাশিয়া-চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার কৌশল গ্রহণ করেন। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এবং শিয়া মিলিশিয়া নেটওয়ার্ক দেশ-বিদেশে ইরানের প্রভাব ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ফলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে খামেনি সহজে পিছু হটবেন না বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা।
তবে, সম্মিলিত অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং বহিরাগত চাপের ভারে শাসন ব্যবস্থার পতন হলে বিকল্প কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ইরান ঐতিহাসিকভাবে ক্ষমতার বিস্তারের পরিবর্তে কেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে একত্রিত হয়েছে। যদি ইসলামী শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর আশা করা ভুল হবে।
তাছাড়া ইরানি জনগণ অত্যন্ত সংস্কৃতিবান এবং সৃজনশীল। তাদের অর্জন ও সভ্যতার একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং গর্বিত ইতিহাস রয়েছে। তারা তাদের নিজস্ব ভাগ্য নির্ধারণে পুরোপুরি সক্ষম, যতক্ষণ না এই প্রক্রিয়ায় স্বার্থান্বেষী বিদেশি হস্তক্ষেপ না থাকে।
ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ফের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। টাইমস অব ইসরায়েলের লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের দক্ষিণে বীরশেবায় সরাসরি আঘাত হেনেছে ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাইক্রোসফট ভবনের কাছে বীরশেবায় বিকট বিস্ফোরণের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ইসরায়েল হাওম বলছে, ইরানের নতুন করে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
টাইমস অব ইসরায়েল বলছে, ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বীরশেবায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের বাইরে আঘাত হেনেছে। এতে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরেছে এবং আশেপাশের ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আগুন নেভাবে দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা কাজ করছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, বাসিন্দারা এখন তাদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বেরোতে পারবেন।
ইরানের এলিট বাহিনী ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর গোয়েন্দা বিভাগের নতুন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজিদ খাদামি।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) আইআরজিসি’র শীর্ষ কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ পাকপৌর তার নিয়োগ চূড়ান্ত করেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা ইরনা।
মাজিদ খাদামি এর আগে বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। এবার তিনি সদ্য নিহত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মেদ কাজেমির স্থলাভিষিক্ত হলেন। কাজেমি গত ১৫ জুন ইরানে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর (আইএএফ) হামলায় নিহত হন। ওই হামলা শুরু হয় ১৩ জুন থেকে, যা দুই দেশের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন এক সময়ে আইআরজিসির শীর্ষ গোয়েন্দা ইউনিটের দায়িত্ব হস্তান্তর হলো, যখন ইরান ও ইসরায়েল মুখোমুখি সংঘাতে জড়িত এবং গোয়েন্দা তৎপরতা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলছে।
ইরানের পরমাণু প্রকল্প ও ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাত ঠেকাতে এবার আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ইউরোপের শীর্ষ দেশগুলো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি এ বিষয়ে বৈঠক করবেন ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন ও ইইউ কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
শুক্রবার (২০ জুন) সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি।
বৈঠকে আব্বাস আরাগচির পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেন-নোয়েল ব্যারট, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল, ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এবং ইইউ পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান কাজা কালাস।
ইরান পরমাণু বোমা তৈরি করছে— অভিযোগ তুলে গত ১৩ জুন থেকে দেশটিতে বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। হামলায় ইতোমধ্যে ইরানের বেশ কয়েকজন প্রথম সারির সামরিক কমর্কর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও পরমাণু প্রকল্পের প্রধানসহ নিহত হয়েছেন ৬ শতাধিক মানুষ।
ইসরায়েল অভিযান শুরুর পর পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইরানও। সেই হামলায় ইসরায়েলে নিহত ও আহত হয়েছেন ৫ শতাধিক।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেসামরিক ও শান্তিপূর্ণ খাতে পরমাণু শক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ইরান। তবে ২০১৭ সালে প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘জ্যাকোপা’ নামের সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রেকে বের করে আনেন।
গুরুত্বপূর্ণ সেই জ্যাকোপা চুক্তিতে সহযোগী দেশ হিসেবে স্বাক্ষর করেছিল জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং রাশিয়া।
সূত্র : বিবিসি
গত এক সপ্তাহে ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান নিয়ে যেসব বিবৃতি দিয়েছেন তা পরস্পরবিরোধী বলে মনে হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ইঙ্গিত দেন যে শান্তি দ্রুত ফিরছে কিন্তু এরপরেই, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যোগদানের পাশাপাশি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার কথার জানান।
সর্বশেষ হোয়াইট হাউজ বৃহস্পতিবার বলেছে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হবে কি না এই বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, সম্ভবত এই ইস্যুতে ট্রাম্পের কোনো সুস্পষ্ট কৌশল বা লক্ষ্য নেই। বরং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে এই যুদ্ধে টেনে আনছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন।
ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদি বলেন, ট্রাম্প ইরানকে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করার হুমকি দিয়ে 'লাভবান' হতে চাচ্ছেন।
আল জাজিরাকে এই বিশ্লেষক আরও বলেছেন, আমার মনে হয় ট্রাম্প নিজেকে 'ম্যাডম্যান' হিসেবে জাহির করতে চাচ্ছেন- যিনি অপ্রত্যাশিত।
এ ছাড়া ইরানি বংশোদ্ভূত মার্কিন বিশ্লেষক নেগার মরতাজাভি আল জাজিরাকে বলেন, ‘নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে কৌশলে পরাজিত করছেন।’ তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত নই, ট্রাম্প নিজেই জানেন কিনা, তিনি আসলে কী চান।
এই বিশ্লেষক আরও বলেছেন, ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে নিজেকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে যুদ্ধাবস্থার ইতি টানবেন। কিন্তু এখনও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামেনি, গাজায় সংঘাত বেড়েছে, আর তার চোখের সামনেই মধ্যপ্রাচ্যে তৃতীয় বড় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
ট্রাম্পকে নিয়ে নেগার মরতাজাভি বলেছেন, তিনি বলেন এক কথা, আর করেন আরেকটা।
ইরানের হামলায় একের পর এক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে ইসরায়েল। দেশটির এ হামলায় ইসরায়েলিদের মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হামলা থেকে বাঁচতে ইউরোপে পালানোর চেষ্টা করছেন ইসরায়েলিরা। এজন্য মিসরের সিনাই উপদ্বীপে ব্যাপক ভিড় দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) তেহরান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বাঁচতে ইউরোপে পালানোর চেষ্টা করেছেন ইসরায়েলিরা। এজন্য তারা মিসরের সিনাই উপদ্বীপে ভিড় করছেন।
হিব্রু সংবাদপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এক নাগরিক বলেছেন, আমি বরং মরুভূমির বিপজ্জনক যাত্রায় অংশ নেব, কিন্তু দখলকৃত অঞ্চলে আর থাকব না। তার এ বক্তব্যে ইসরায়েলের বর্তমান পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরছে।
অন্যান্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বর্তমানে বসতি স্থাপনকারীদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় অনেকে পাচারকারীদের মাধ্যমে নৌকায় করে সাইপ্রাসে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। এই পাচারকারীরা নৌকার মাধ্যমে ইসরায়েলিদের সাইপ্রাসে নিয়ে যাচ্ছেন, যা বর্তমান সংকটের মধ্যে পালানোর একটি বিকল্প পথ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হামলার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন ল্যাভিট এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব বলেন, ইরান–ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ‘সরাসরি যুক্ত’ হবে কিনা তা নিয়ে ‘নানা জল্পনা–কল্পনা’ চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে ইরানের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনা না-ও হতে পারে। এর ওপর ভিত্তি করে (সংঘাতে) যাব কি যাব না, সে বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব।’
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ না করার বিষয়টি’ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের অবস্থান পুনরায় তুলে ধরে বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেওয়া যাবে না।
গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানের ছোড়া মিসাইলগুলোর মাত্র ৬৫% ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিহত করতে পেরেছে, যেখানে আগের দিনও এটি ছিল প্রায় ৯০%। ইসরায়েলের একজন সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনবিসি নিউজকে এই চাঞ্চল্যকর জানিয়েছেন।
এনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাক্তন শীর্ষ এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, 'ইরানের কাছে এখনো অত্যন্ত উন্নত মিসাইল রয়েছে এবং তারা এখন সেগুলো ব্যবহার করছে।' তথ্যের সংবেদনশীলতার কারণে প্রকাশ্যে কথা বলার অনুমতি না থাকা এই কর্মকর্তা জানান, গত দিনে ছোড়া ইরানের দ্রুতগতির মিসাইলের কারণে ইসরায়েল এখন প্রস্তুতির সময়ও কম পাচ্ছে।
এনবিসিকে তিনি বলেন, 'গতকাল পর্যন্ত, মিসাইল পড়ার আগে আমরা প্রায় ১০ থেকে ১১ মিনিটের আগাম সতর্কতা পেয়েছিলাম। কিন্তু আজ সকালে, এটি ছিল ছয় বা সাত মিনিট। এর মানে সম্ভবত মিসাইলগুলো আগের তুলনায় অনেক দ্রুত ছিল।'
তিনি বলেন, 'এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইরানের কাছে আক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়েও নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে, যা মিসাইলগুলোকে খুব নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সাহায্য করে, যেমন আজ বেরশেবার হাসপাতালে।'
ইরানের আঞ্চলিক কার্যক্রমের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষক এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গত সপ্তাহে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলায় ইরানের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের ক্ষতি হলেও, তাদের মিসাইল মজুদ এখনো প্রতিশোধমূলক হামলা দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যাওয়ার মতো। তিনি ইরানের কৌশলকে 'কৌশলগত ধৈর্য' বলে বর্ণনা করেন। ইসরায়েল ও এই অঞ্চলের কেউ কেউ ইরানের প্রতিক্রিয়া ক্ষমতাকে খাটো করে দেখেছেন বলে তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, 'ইরানের সংকল্প এবং হামলা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, তাই আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যখন আমরা ইরানের শাসনের আসন্ন পতনের কথা বলি, যা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে।'
দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বে এক নম্বর হিসাবে বিবেচিত হয়ে এসেছে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ‘আয়রন ডোম’, ‘অ্যারো-৩’, ‘অ্যারো-২’, ‘ডেভিড’স স্লিংসহ আরও বেশ কিছু বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে সজ্জিত এই দেশটিকে মনে করা হতো বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ আকাশসীমার মালিক।
কিন্তু ইরানের পালটা আঘাতে এবার সেই আস্থার দুর্গে ফাটল ধরেছে। হাইপারসনিক প্রযুক্তি, ডেকয় কৌশল ও ব্যারেজ আক্রমণের মাধ্যমে ইরান একেবারে ভেঙে ফেলছে ইসরাইলের গর্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা ঢাল।
তেহরান শুধু শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরাইলকে চমকে দেয়নি, বরং আঘাত হেনেছে প্রযুক্তিগত দম্ভের মূল কেন্দ্রে।
পরমাণু অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে ইরান, এমন দাবি করে শুক্রবার ভোরে দেশটিতে নির্বিচারে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। জবাবে ইসরাইলে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে ইরানও। শুরু হয় সংঘাত। যা চলছে এখনো। এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪০ জনের বেশি ইরানি নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ইসরাইলে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে এই উত্তাল পরিস্থিতিতেই এক বিস্ফোরক দাবি করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়ানিয়াহু। বলেছেন, প্রতি মাসে ৩০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে ইরান।
তিনি আরও জানিয়েছেন, এই গতি বজায় থাকলে ৬ বছরে ইরানের হাতে থাকবে ২০ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র! যা শুধু ইসরাইলের জন্য নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য এক গভীর হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এই দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেননি নেতানিয়াহু। তবে তার বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু একটি কৌশলগত হুঁশিয়ারি নয়, বরং ইরানকে আরও একবার সামরিকীকরণে তীব্র আগ্রহী ও আক্রমণপ্রবণ রাষ্ট্র হিসাবে উপস্থাপনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র মজুতের সঠিক পরিমাণ জানা কঠিন হলেও, ২০২৩ সালে মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি জানিয়েছেন, ইরানের হাতে বিভিন্ন ধরনের ৩ হাজারটির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
ইসরাইলের বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গত কয়েক দিন ধরে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস করেছে ইসরাইল। তবে ইরানের হামলায় উঠে আসছে এর ভিন্ন চিত্র।
মঙ্গলবার ইরান দাবি করেছে, ইসরাইলের একটি সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং মোসাদের একটি পরিকল্পনা কেন্দ্রে আঘাত করেছে তারা। এর মাধ্যমে ইসরাইলের বিশ্বসেরা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ও ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে ইরান।
আয়রন ডোম কি: ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ‘আয়রন ডোম’। এটি অনেকের কাছে ইসরাইলের প্রধান প্রতিরক্ষা বলেই পরিচিত। এটি মূলত নিকট পাল্লার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও ধ্বংস করার জন্য তৈরি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
ইসরাইলের দাবি, এটি ৯০ শতাংশ সফল। ২০১১ সালে এ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করা হয়। তবে এর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালে। হিজবুল্লাহর রকেট হামলা প্রতিহত করতেই আয়রন ডোম তৈরি করা হয়।
সূত্র: আলজাজিরা, সিএনএন
ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ থেকে সরে আসার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেছেন, এই সংঘাতে ‘উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি সত্যিকারের ঝুঁকি’ রয়েছে। তাই তিনি সব পক্ষকে একটি কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজতে অনুরোধ করেছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, স্টারমার উল্লেখ করেছেন, এর আগে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কয়েক দফা আলোচনা’ হয়েছে (ইরানের) এবং ‘আমার কাছে মনে হয়, এটিই এই সমস্যা সমাধানের পথ।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ওয়াশিংটনে উত্তেজনা কমানোর জন্য যুক্তরাজ্যের মতামত তুলে ধরতে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ট্রাম্পের শীর্ষ কূটনীতিক মার্কো রুবিওর সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
ল্যামি এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও আজ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ইসরায়েলিদের 'সামরিক ও গোয়েন্দা স্থানের' কাছাকাছি না থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) লাইভ প্রতিবেদনে সিএনএন এ কথা জানিয়েছে।
আব্বাস আরাঘচি এক্স-পোস্টে বলেছেন, ইরানের সামরিক বাহিনী সঠিকভাবে একটি ইসরায়েলি কমান্ড, নিয়ন্ত্রণ ও গোয়েন্দা সদর দপ্তর এবং আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে।
তিনি বলেন, 'বিস্ফোরণ তরঙ্গ' নিকটবর্তী সোরোকা মেডিকেল সেন্টারের বাহ্যিক ক্ষতি করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, হাসপাতালটিতে গাজায় আহত ইসরায়েলি সৈন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান সরাসরি হাসপাতালটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে ইরান বলছে, তারা মেডিকেল সেন্টার ঘেঁষা একটি কমান্ড সেন্টারকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
আরাঘচি বলেন, গত সপ্তাহে ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েল তাদের অবৈধ যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে শত শত নিরীহ ইরানিকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। আমাদের শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জনগণকে লক্ষ্যবস্তু করা অপরাধীদের দমন করতে থাকবে, যতক্ষণ না তারা আমাদের জাতির বিরুদ্ধে তাদের অপরাধমূলক আগ্রাসন বন্ধ করে।
সিএনএন জানিয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামীকাল শুক্রবার ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে আলোচনার জন্য সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় যাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইসরায়েলের সহায়তা চাওয়ার বিষয়টি ইসরায়েলর দুর্বলতার লক্ষণ বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদন অনুসারে, খামেনি এক্স-পোস্টে বলেছেন, এটা সত্য যে জায়নিস্ট শাসনের মার্কিন বন্ধুদের এখন হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। এ ধরনের কথা (সাহায্য চাওয়া) বলতে হচ্ছে—যা প্রমাণ করে, ওই (ইসরায়েল) শাসনব্যবস্থা কতটা দুর্বল ও অক্ষম।
খামেনি আরও বলেন, আমি আমাদের প্রিয় জাতিকে বলতে চাই, শত্রু যদি বুঝতে পারে আপনি তাদের ভয় পাচ্ছেন, তাহলে তারা আপনাকে ছাড়বে না।
সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, আপনারা এখন পর্যন্ত যেভাবে আচরণ করেছেন, তা অব্যাহত রাখুন; সেই আচরণই আরও দৃঢ়তার সঙ্গে চালিয়ে যান।
ইসরায়েলে নতুন করে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্রের ঝাঁক ছুড়েছে ইরান। আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এক্স-পোস্টে নতুন মিসাইলগুলো সনাক্ত করেছে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানিয়েছে, 'হাইফা এবং তেল আবিব শহরে সামরিক লক্ষ্যবস্তু এবং সামরিক শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত শিল্প কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে সম্মিলিত ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন আক্রমণের একটি নতুন দফা শুরু হয়েছে।'
আইআরজিসি আরও জানিয়েছে, হাইফা এবং তেল আবিবে সামরিক লক্ষ্যবস্তু, বিশেষ করে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি ধরণের যুদ্ধ এবং আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করে ড্রোন অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এক পোস্টে ইসরায়েলি বাহিনীও দাবি করেছে, তারা সনাক্ত করেছে যে, সম্প্রতি ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে আরও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এগুলো প্রতিহত করার জন্য কাজ করছে।
ইসরায়েলি বাহিনী জনসাধারণকে 'সুরক্ষিত এলাকায় চলে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত' সেখানেই থাকতে বলেছে।
মার্কিন কূটনীতিক ডেভিড স্যাটারফিল্ড বলেছেন, ইরানের ওপর সম্ভাব্য মার্কিন হামলা নিয়ে ওয়াশিংটনের মতবিরোধের কারণ– ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার 'প্রভাব' নিয়ে নয়। ‘এটি বরং এই জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে এই ধরনের পদক্ষেপ আসলেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির চূড়ান্ত অবসান ঘটাতে পারবে কি না,’ বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভকে বলেন স্যাটারফিল্ড।
মার্কিন কূটনীতিক ডেভিড স্যাটারফিল্ড আরও বলেন, "আমেরিকার জন্য ইসরায়েলকে জোরালোভাবে সমর্থন করা এক জিনিস, আর নিজের বিমান ও অস্ত্র ব্যবহার করে ইরানের মাটিতে হামলা করা অন্য জিনিস।’
ইরান বারবার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির বিষয়টি অস্বীকার করেছে। ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরি না করার কথা বলেছেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডও। কিন্তু ট্রাম্প তার এই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইসরায়েলের হামলার পর ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে নিজের মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন ইরানের সাবেক যুবরাজ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। তার বাবা শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করেছিলেন।
বিবিসি'র লরা কুয়েনসবার্গের কাছে ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেছেন, 'এই কঠিন দিনগুলোতে, আমার হৃদয় সেই সকল নিরস্ত্র নাগরিকদের সঙ্গে আছে, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং খামেনির যুদ্ধবাজি ও বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে, আমি আমাদের মাতৃভূমিকে যুদ্ধের আগুনে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি।'
পাহলভি দাবি করেছেন, 'ইসলামিক রিপাবলিকের অবসান ঘটেছে এবং এটি এখন ধ্বংসের পথে। খামেনি, ভীত ইঁদুরের মতো, ভূগর্ভে লুকিয়েছে এবং পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। যা শুরু হয়েছে তা আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং একসঙ্গে আমরা ইতিহাসের এই তীক্ষ্ণ মোড় পার করব।'
তিনি আরও বলেন, ইসলামিক রিপাবলিকের অবসান মানে ইরানি জাতির বিরুদ্ধে এর ৪৬ বছরের যুদ্ধের সমাপ্তি। শাসনের দমন-পীড়নের যন্ত্রপাতি ভেঙে পড়ছে। এখন শুধু একটি জাতীয় বিদ্রোহের প্রয়োজন এই দুঃস্বপ্নের চিরতরে অবসান ঘটাতে। এখনই উঠে দাঁড়ানোর সময়; ইরানকে পুনরুদ্ধার করার সময়। আসুন আমরা সবাই এগিয়ে আসি—বন্দর আব্বাস থেকে বন্দর আনজালি, শিরাজ থেকে ইসফাহান, তাবরিজ থেকে জাহেদান, মাশহাদ থেকে আহভাজ, শাহর-ই কোর্দ থেকে কেরমানশাহ—এবং এই শাসনের অবসান ঘটাই।
রেজা পাহলভি বলেন, ইসলামিক রিপাবলিকের পতনের পরের দিনকে ভয় পাবেন না। ইরান গৃহযুদ্ধ বা অস্থিরতায় নিমজ্জিত হবে না। আমাদের কাছে ইরানের ভবিষ্যৎ ও এর সমৃদ্ধির জন্য একটি পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা পতনের পর প্রথম একশো দিন, স্থানান্তরকালীন সময় এবং একটি জাতীয় ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত।
ইরানের আরাক পারমাণবিক চুল্লি ও নাতাঞ্জসহ বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনায় রাতভর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকে এসব হামলার কথা জানিয়েছে ইরান।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি আগ্রাসন অব্যাহত রাখার’ অভিযোগ করেছে দেশটি।
আরাক পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের মাঝে ‘সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির’ জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তুরস্ক। সম্ভাব্য যুদ্ধ প্রস্তুতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখাই এর লক্ষ্য বলে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত চলায় ইরানের সঙ্গে নিজেদের সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে তুরস্ক। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, ইরান থেকে তুরস্কে এখন পর্যন্ত কোনও অনিয়মিত অভিবাসনের ঢল দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্র বলেন, দেশে তৈরি রাডার ও অস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করে বহুস্তরবিশিষ্ট সমন্বিত আকাশ এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক। সম্ভাব্য যুদ্ধ প্রস্তুতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখাই এর লক্ষ্য।
তিনি বলেছেন, ইসরায়েল তার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী ইরানে হামলা চালানোর পরপরই তুরস্কের কুইক রিঅ্যাকশন অ্যালার্ট বাহিনীর যুদ্ধবিমান আকাশে উড়েছিল। ইসরায়েলি বিমানের আন্তর্জাতিক আকাশসীমা লঙ্ঘনের আশঙ্কায় এসব বিমান এখনও সীমান্তে টহল দিচ্ছে।
এর আগে, বুধবার দখলদার ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ ও গুণ্ডামির বিরুদ্ধে ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার আছে বলে মন্তব্য করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে তিনি বলেন, নিজেদের আত্মরক্ষায় ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ ও গুণ্ডামির বিরুদ্ধে এটি ইরানের খুবই স্বাভাবিক, বৈধ এবং আইনি অধিকার। এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে নিয়ে এরদোয়ান বলেন, নেতানিয়াহু এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
তার্কিশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় ‘যুদ্ধাপরাধী’ নেতানিয়াহু যে গণহত্যা চালিয়েছেন, এর মাধ্যমে তিনি জার্মান নাৎসি নেতা এডলফ হিটলারকে ছাড়িয়ে গেছেন।
সূত্র: রয়টার্স।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং ইরানের ওপর চলমান আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নাৎসি জার্মানের শাসক অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বুধবার (১৮ জুন) পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন একে পার্টির সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে এরদোগান বলেন, গাজা থেকে আমরা দেখছি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ ছবি এবং ভিডিওগুলো তার তুলনায় ম্লান। নেতানিয়াহু গণহত্যার অপরাধে অত্যাচারী হিটলারকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছেন।
এরদোগান বলেন, কেবল ইরানের বিরুদ্ধেই নয় - গাজা, সিরিয়া, লেবানন এবং ইয়েমেনের বিরুদ্ধেও অমানবিক আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে তুরস্ক। আমরা সম্ভব নেতিবাচক উন্নয়ন এবং পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা'আর এক্স-পস্টে এরদোয়ানের উদ্দেশে বলেন, 'সুলতান, তার নিজের চোখে, আরেকটি উস্কানিমূলক বক্তৃতার মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে উসকানি অব্যাহত রেখেছেন।'
গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে বোমা হামলা শুরু করে। ইহুদিবাদী সরকারের দাবি, তেহরান পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ শেষ করার কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ইরান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইরানে আক্রমণের জবাবে তাৎক্ষণিকভাবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরানের আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার আইনি অধিকার রয়েছে। তিনি নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে 'ডাকাতি এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ'-এর অভিযোগ করেন।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি গতকাল বুধবার বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রচেষ্টার কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রাশিয়া ইসরায়েলি আক্রমণকে অবৈধ বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করে দিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে হামলা 'পারমাণবিক বিপর্যয়' ডেকে আনতে পারে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে সমর্থন করে আসছেন।
ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে 'হত্যা' করার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েলি পত্রিকা ইদিয়োত আহারোনোত-এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কাৎজ বলেন, এ ধরনের একজন মানুষের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য এমন এক সময় এলো, যখন ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র সোরোকা হাসপাতাল এলাকায় আঘাত হানে। যদিও ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, হাসপাতাল নয়, হাসপাতালের পাশেই একটি সামরিক স্থাপনাই ছিল মূল লক্ষ্য।
তবে ইসরায়েলি পক্ষ বলছে, বেসামরিক স্থাপনায় হামলার নির্দেশ দিয়ে খামেনি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ আরও বলেন, ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করাই যার উদ্দেশ্য, তাকে আর পৃথিবীতে থাকতে দেওয়া যায় না।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু ছিল সোরোকা হাসপাতালের পাশে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদরদপ্তর। তাদের দাবি, বিস্ফোরণের তরঙ্গে হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেখানেই অনেকে আহত হন।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে ইসরায়েলের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারের একাধিক ওয়ার্ড ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের মহাপরিচালক শ্লোমি কোদেশ।
বিবিসিকে তিনি বলেন, পুরো হাসপাতালজুড়েই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে—ভবন, কাঠামো, জানালা, ছাদ—সবখানে ধ্বংসের চিহ্ন রয়েছে।
হামলার আগে হাসপাতালের উত্তর পাশের পুরনো সার্জিক্যাল ভবনটি থেকে রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে জানান কোদেশ। এই ভবনটি যেহেতু পুরোনো, তাই গত কয়েকদিন ধরেই আমরা এটি খালি করে রেখেছিলাম। হামলার সময় সেটি ফাঁকা ছিল।
তবে হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগ, যেখানে তখনও রোগী ও কর্মীরা অবস্থান করছিলেন, সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
কোদেশ বলেন, হাসপাতালে থাকা অবস্থায় ৪০ জন আহত হয়েছেন। অধিকাংশই হাসপাতালের কর্মী ও রোগী। মূলত ভাঙা কাচ, ছাদ ধসে পড়া ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক প্রভাবের কারণেই তারা আহত হন।
শ্লোমি কোদেশ আরও জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে সোরোকা মেডিকেল সেন্টার থেকে ২০০ জনের বেশি রোগীকে অন্য মেডিকেল সেন্টারে স্থানান্তর করা হবে এবং হাসপাতালের অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করছে বিশেষজ্ঞ দল।
দুজন মার্কিন কর্মকর্তা বুধবার জানিয়েছেন, সম্ভাব্য ইরানি হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি ঘাঁটি থেকে কিছু বিমান ও যুদ্ধজাহাজ সরিয়ে নিয়েছে।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও স্পষ্টভাবে জানাননি— যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় হামলা করবে কি না। ছয় দিন ধরে চলা বিমান হামলার মধ্যে ইরানের রাজধানী ছাড়ছেন ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ব্লুমবার্গ নিউজ বুধবার জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের সিনিয়র কর্মকর্তারা ইরানে আসন্ন হামলার সম্ভাবনা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে এই পরিকল্পনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কয়েকটি সূত্র উইকএন্ডে হামলা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে।
বুধবার (১৮ জুন) সকালে হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, তিনি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি বলেন, আমি এটা (ইরানে হামলা) করতে পারি, আবার না-ও করতে পারি। মানে কেউই জানে না আমি কী করব।
এদিকে বৃহস্পতিবার কাতারের মার্কিন দূতাবাস এক সতর্কবার্তা জারি করেছে। সেখানে তাদের মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের সাময়িকভাবে কাতারের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ সীমিত রাখতে বলা হয়েছে। দোহার বাইরে মরুভূমিতে অবস্থিত এই ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক স্থাপনা।
দূতাবাস কর্মী ও কাতারে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের দেওয়া সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, চলমান আঞ্চলিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, বিমান ও যুদ্ধজাহাজ সরিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও সরঞ্জামকে নিরাপদ রাখা। তবে ঠিক কতগুলো বিমান ও জাহাজ সরানো হয়েছে এবং সেগুলো কোথায় নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তারা কিছু জানাননি।
ইসরায়েলকে ‘শান্তির বিরুদ্ধে ক্যান্সারের মতো সত্তা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে উত্তর কোরিয়া। একই সঙ্গে ইসরায়েলের পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের কঠোর বার্তা দিয়েছে এশিয়ার দেশটি।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ-তে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানের ওপর ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের নিন্দা জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানের বেসামরিক, পারমাণবিক ও জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের সামরিক হামলায় পিয়ংইয়ং 'গভীরভাবে উদ্বিগ্ন'।
এতে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা 'মানবতার বিরুদ্ধে একটি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ'। তেল আবিব 'রাষ্ট্র-স্পন্সরিত সন্ত্রাসবাদে' জড়িত, যা এই অঞ্চলে 'একটি নতুন সর্বাত্মক যুদ্ধের' ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে 'আরও হস্তক্ষেপ না করার জন্য' সতর্ক করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, 'বিশ্বের প্রত্যক্ষ করা বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব দ্বারা সমর্থিত এবং পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য একটি ক্যান্সারের মতো সত্তা এবং বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা ধ্বংসের প্রধান অপরাধী।'
এতে আরও বলা হয়, 'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা শক্তিগুলো যুদ্ধের আগুন উসকে দিচ্ছে, ইরানের বৈধ সার্বভৌম অধিকার এবং আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বলেছেন, ইরানের প্রতি তার 'ধৈর্য্য ফুরিয়ে গেছে', তখন উত্তর কোরিয়া থেকে এই বার্তা এলো।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইরান ইস্যুতে ফোনে কথা বলেছেন। আলোচনায় উভয় নেতা ইরানে ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং উত্তেজনা কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন।
ফোনালাপের পর ক্রেমলিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ সাংবাদিকদের বলেন, উভয় নেতা ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেন, যা জাতিসংঘের সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য নিয়ম লঙ্ঘন করে।
তিনি বলেন, মস্কো এবং বেইজিং উভয়ই মৌলিকভাবে বিশ্বাস করে যে, বর্তমান পরিস্থিতি এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কিত বিষয়গুলোর কোনো সামরিক সমাধান নেই। এই সমাধানটি কেবলমাত্র রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে অর্জন করতে হবে।
রাশিয়া সতর্ক করে দিয়েছে, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত আরও তীব্র হলে বিপর্যয় ঘটবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের পক্ষে বোমাবর্ষণে যোগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মস্কো।
পুতিন সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং বারবার বলেছেন, রাশিয়া যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত।
যদিও এখন পর্যন্ত কেউ রাশিয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। বৃহস্পতিবার ঘনিষ্ঠ মিত্র শি'র সাথে ফোনালাপে সেই প্রস্তাবটি পুনর্ব্যক্ত করেন পুতিন।
রুশ মুখপাত্র ইউরি উশাকভ বলেন, পুতিন ও শি আগামী দিনগুলোতে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে সম্মত হন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে ইসরায়েলে কয়েক মাস আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে তারপরও আল জাজিরা আরবি ও আল জাজিরা মুবারাশ দেশটিতে অল্প কিছু কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এবার পুরো আল জাজিরা পরিবারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির।
ইসরায়েলের চরম ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথা বলেছেন। আল জাজিরা আরবি ও আল জাজিরা মুবারাশের সহকর্মীরা তাঁর বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করেছেন।
বক্তব্যে বেন-গভির আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, আল জাজিরাকে ইসরায়েল থেকে সংবাদ পরিবেশনের অনুমতি দিলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ‘হুমকি’ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি আরও দাবি করেন, ইসরায়েলে কেউ যদি আল জাজিরার সম্প্রচার দেখে, তাহলে তার বিরুদ্ধে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এর আগে ২০২৪ সালের মে মাসের শুরুতে ইসরায়েল আল জাজিরার রিপোর্টার, প্রযোজক, ক্যামেরাপারসনসহ সব কর্মীর ওপর দেশটিতে কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরও আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষও আল জাজিরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, যার ফলে কার্যত পশ্চিম তীরে আল জাজিরার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটি থেকে কিছু বিমান এবং জাহাজ সরিয়ে নিয়েছে বলে দুই মার্কিন কর্মকর্তা বুধবার (১৮ জুন) ব্লুমবার্গ নিউজকে জানিয়েছেন। ইরানে ইসরায়েলের বোমা হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেবে কিনা, তা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধোঁয়াশা অবস্থানের মধ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
গতকাল হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে যোগদানের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা, তা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, 'আমি এটা করতে পারি। আমি এটা নাও করতে পারি। মানে, কেউ জানে না আমি কী করতে যাচ্ছি।'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, বিমান ও জাহাজ স্থানান্তর মার্কিন বাহিনীকে রক্ষা করার পরিকল্পনার অংশ।
তবে কতগুলো বিমান বা জাহাজ স্থানান্তরিত করা হয়েছে এবং কোথায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে, তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তারা।
একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব বিমান 'শক্ত আশ্রয়কেন্দ্রে' ছিল না, সেগুলো আল-উদেইদ ঘাঁটি থেকে এবং নৌবাহিনীর জাহাজগুলো বাহরাইনের একটি বন্দর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যেখানে সামরিক বাহিনীর ৫ম নৌবহর অবস্থিত।
কর্মকর্তা আরও বলেন, 'এটি কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়, এটি বাহিনীর সুরক্ষা অগ্রাধিকার।'
পৃথকভাবে কাতারে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) একটি সতর্কতা জারি করে তাদের কর্মীদের দোহার বাইরে মরুভূমিতে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক স্থাপনা আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে প্রবেশে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
তথ্যসূত্র: আরব নিউজ
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার হুমকি প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে চান না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সম্প্রতি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসরাইলের অভিযানের জেরে ইরানের সরকার পরিবর্তন ঘটতে পারে।
এছাড়া দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, খামেনির পরিণতি হবে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের মতো। এমনকি মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র জানে যে কোথায় খামেনি ‘লুকিয়ে’ আছেন, কিন্তু ওয়াশিংটন ‘এখনই’ খামেনিকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা করছে না।
বুধবার রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়া ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। সেখানে সাংবাদিকরা খামেনিকে হত্যার হুমকি প্রসঙ্গে পুতিনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। একদমই চাই না।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি শুধু বলব—আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি যে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার নানা জটিলতা থাকা সত্ত্বেও ইরানের সাধারণ জনগণ তাদের নেতৃত্বের চারপাশে জড়ো হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তারা তাদের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল ইরানের সরকার পরিবর্তন করতে পারবে কি না— এমন প্রশ্নের উত্তরে পুতিন বলেন, ইসরাইলের হামলার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস করা, সরকার পতন নয়।
তিনি আরও বলেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানতে পারেনি ইসরাইল। সেগুলো এখনও অক্ষত আছে। আমার মনে হয়, এই সংঘাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই উচিত শত্রুতা বন্ধ করে পরস্পরের সঙ্গে সমঝোতায় আসা… এবং আমার মতে, সব পক্ষের যদি সদিচ্ছা থাকে— তাহলে এটি সম্ভব।
কূটনৈতিক ব্যস্ততার মধ্যে ইরানের মাটিতে আকস্মিক হামলা চালানোর পর ইসরায়েলিদের ধারণা ছিল, সার্বিক পরিস্থিতি ইহুদিবাদী সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর ষষ্ঠ দিনে এসে ইরান থেকে ছোড়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলিদের সেই ধারণার ভীত নড়বড়ে করে দিয়েছে। যদিও ইসরায়েলি সরকার এসব হামলায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র সামনে আসতে দিচ্ছে না।
আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি রাজনৈতিক ভাষ্যকার ওরি গোল্ডবার্গ বলেছেন, ইসরায়েলে এমন একটা ধারণা ছিল যে, তাদের সরকার 'হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনছে', কিন্তু ইরানের সাম্প্রতিক হামলাগুলো ইসরায়েলের 'হৃদপিণ্ডে' আঘাত করেছে।
ওরি গোল্ডবার্গ তেল আবিব থেকে আল জাজিরাকে বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যখন পুরো অঞ্চলজুড়ে আঘাত করছে, তখন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কেবল দক্ষিণে অবস্থিত সোরোকা হাসপাতালে আঘাত হানার কথা ফোকাস করেছে। 'ইরানিরা হাসপাতালগুলোকে লক্ষ্য করছে' এমন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, অবশ্যই হাসপাতাল লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তবে এটা উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, হাসপাতালের খুব কাছেই অত্যান্ত সংবেদনশীল স্থাপনা এবং সদর দপ্তর রয়েছে। ইসরায়েল তার সামরিক সদর দপ্তর বেসামরিক এলাকা এবং শহরের মাঝখানে স্থাপন করে।
গোল্ডবার্গ ব্যাখ্যা করেছেন যে, হামলা সম্পর্কে তথ্যও সহজলভ্য নয়। অর্থাৎ ইসরায়েলি সরকার ইরানের হামলার তথ্য প্রকাশ করছে না।
গোল্ডবার্গ বলেন, আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, ঠিক যেমন আল জাজিরাকে সেন্সর করা হয়, ছবি দেখার সুযোগ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সেন্সর করছে... ইসরায়েলি নাগরিকরাও আমাদের সরকারি মিডিয়াতে খুব বেশি কিছু দেখতে পান না।
তিনি আরও বলেন, আমরা কঠোর সেন্সরশিপের অধীনে কাজ করি। তাই মূলত প্রতিবেদন ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। তবে এটা স্পষ্ট যে, ইরানিরা গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ স্থানে হামলা চালিয়েছে।'
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন অব্যাহত থাকায় ইসরায়েলের ওপর আরও কঠোর আক্রমণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা বলেন, 'আল্লাহর সাহায্যে, আমরা আক্রমণকারী ইহুদিবাদী সরকারের যে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে ক্রমাগত আক্রমণ করব। আমরা আমাদের সামনে কোনো সীমাবদ্ধতা দেখতে পাচ্ছি না।'
মেহের নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস কর্পসের অ্যারোস্পেস ফোর্সের একটি ঘাঁটি পরিদর্শন করার সময় মুসাভি এই মন্তব্য করেন। তিনি ঘাঁটিতে থাকা বাহিনীর উচ্চ মনোবল এবং পূর্ণ প্রস্তুতির প্রশংসা করেন।
ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সরকারের আগ্রাসনের জবাবে গত কয়েকদিন ধরে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল ও ধ্বংসাত্মক হামলা চালানোর জন্য তিনি আইআরজিসির মহাকাশ বাহিনীর প্রশংসা করেন।
এর আগে বুধবার রাতে আইআরজিসি এক বিবৃতিতে বলেছে, সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে একটি নতুন ধরণের শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো 'সেজ্জিল' মডেলের একটি শক্তিশালী অস্ত্র, যা দ্বি-পর্যায়ের, দীর্ঘ দূরত্বের এবং অতি-ভারী।
গত ১৩ জুন রাতে বিনা প্ররোচনায় আগ্রাসন চালিয়ে ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করে, যার মধ্যে তেহরানের আবাসিক ভবনও অন্তর্ভুক্ত ছিল। লক্ষ্যবস্তু হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয় এবং ঘরবাড়ি সরাসরি আঘাত হানার ফলে বেসামরিক নাগরিকরা প্রাণ হারান।
ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলি খামেনি একই দিন নতুন সামরিক কমান্ডার নিয়োগ করেন এবং বলেন যে, ইসরায়েলের জীবন অন্ধকার হয়ে যাবে। এর কিছুক্ষণ পরেই ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলি-অধিকৃত অঞ্চলের অভ্যন্তরে শাস্তিমূলক হামলা শুরু করে, তেল আবিব এবং হাইফাসহ অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের ছোঁড়ার মাধ্যমে আঘাত করে।
এরপর গত মঙ্গলবার ইরানের মেজর জেনারেল মুসাভি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী শিগগিরই 'প্রতিরোধমূলক হামলা' থেকে 'শাস্তিমূলক হামলার' দিকে এগিয়ে যাবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যনীতি নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন তাদের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে। পোস্টগুলোর কারণে তার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্তও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু।
বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন কর্নেল নাথান ম্যাককরমাক। তিনি মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের জে-৫ (স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং ডিরেক্টরেট)-এর লেভান্ত ও মিসর শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জুইশ নিউজ সিন্ডিকেট (জেএনএস) প্রথমে একটি রিপোর্টে দাবি করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি আংশিক ছদ্মনামে পরিচালিত অ্যাকাউন্ট থেকে ইসরায়েলবিরোধী কিছু মন্তব্য করা হয়েছে, যা কর্নেল ম্যাককরমাকের বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপরই মঙ্গলবার তাকে দ্রুত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
পেন্টাগনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ম্যাককরমাক আর জয়েন্ট স্টাফে থাকবেন না। এ ছাড়া ওই অ্যাকাউন্টের বিষয়বস্তু ও প্রভাব বিশ্লেষণে একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জেএনএস ও মিডল ইস্ট আই-এর তথ্য অনুযায়ী, ওই পোস্টগুলোর একটিতে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে বাজে মিত্র’ বলে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘ইহুদি-শ্রেষ্ঠত্ববাদী দুষ্টচক্রের’ অংশ হিসেবে অভিহিত করে অভিযোগ তোলা হয়, তিনি ও তার সমর্থকেরা ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করে ‘এরেটজ ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতিগত নির্মূলের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ম্যাককরমাকের লিংকডইন প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি ২০২৪ সালের জুনে জে-৫ ডিরেক্টরেটে তার বর্তমান পদে যোগ দেন।
এই বিতর্কিত পোস্টগুলো নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, 'এই মন্তব্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বা বৈদেশিক নীতির প্রতিনিধিত্ব করে না। আমাদের অংশীদারিত্ব ও বৈশ্বিক মৈত্রীর নীতিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।'
মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, কিছু পোস্টে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, তারা ইসরায়েলের ‘অগ্রহণযোগ্য আচরণে’ পরোক্ষভাবে উৎসাহ দিচ্ছে। একই সঙ্গে বলা হয়, পশ্চিমা দেশগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া ইহুদি গণহত্যার (হলোকস্ট) অপরাধবোধের কারণে আজও ইসরায়েলের সমালোচনায় মুখ বন্ধ রাখে।
পোস্টগুলোতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের বিগত কয়েক দশকের নানা কর্মকাণ্ড জাতিগত নিধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সমান।
উল্লেখ্য, এসব পোস্ট পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বা আর্কাইভে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে কর্নেল ম্যাককরমাকের বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে জড়ানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া ভাষায় সতর্ক বার্তা দিয়েছে ইরান। দেশটির ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করলে তেহরান কঠোর জবাব দেবে। বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ইরানের ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম ঘারিবাবাদি বলেছেন, জায়নবাদী রেজিমের পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র যদি সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় তাহলে আক্রমণকারীদের শিক্ষা দিতে এবং ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা-স্বার্থ রক্ষার জন্য তেহরানকে তার হাতিয়ার ব্যবহার করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংঘাত থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে ইরানি এই নেতা বলেন, ইরানের সামরিক কমান্ডের কাছে প্রয়োজনীয় সকল অপশন আছে।
এদিকে ইরান নতুন করে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের একটি হাসপাতালেও আঘাত হেনেছে।
ইসরায়েলের সোরোকা হাসপাতালে ইরানের হামলার বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেছেন তিনি।
পোস্টে নেতানিয়াহু বলেছেন, আজ সকালে, ইরানের সন্ত্রাসী অত্যাচারীরা বিরশেবার সোরোকা হাসপাতালে এবং মধ্যাঞ্চলে সাধারণ মানুষের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
হুঁশিয়ার বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা তেহরানের সেই অত্যাচারীদের থেকে পুরো মূল্য আদায় করব। সিএনএনের লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সর্বশেষ চালানো এই হামলার পর তেহরানে হামলা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, তিনি এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানে কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা জোরদার করার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এক ঘোষণায় জানিয়েছে, তাদের বিমানবাহিনী বুধবার রাতে ইরানের নাতাঞ্জ শহরে একটি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, যেটি তাদের ভাষ্যমতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতো।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, এই স্থাপনায় এমন বিশেষ যন্ত্রাংশ ও উপকরণ রয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার হয়, এবং সেখানে এমন প্রকল্প চলছে যা পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে দ্রুত এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাতাঞ্জে এর আগেও হামলা হয়েছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে, বৈশ্বিক পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান বিবিসিকে বলেছেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে থাকা সেন্ট্রিফিউজগুলো পুরোপুরি ধ্বংস না হলেও সম্ভবত "মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,"। ইসরায়েলের গত শুক্রবারের হামলার পর এ কথা জানান তিনি।
ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, ইরান সম্প্রতি তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদকে “অস্ত্র তৈরির পথে” নিয়ে যাচ্ছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন বা পারমাণবিক বোমা দুটোর জন্যই ব্যবহৃত হতে পারে।
গত রোববার, ইরান আবার জানিয়েছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যের জন্য, এবং ইরান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার ৩৫ জাতির বোর্ডকে ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছে।
ইরান নতুন করে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের একটি হাসপাতালেও আঘাত হেনেছে। খবব বিবিসি ও আল জাজিরার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সোরোকা হাসপাতালে ইরানের হামলার বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেছেন তিনি।
পোস্টে নেতানিয়াহু বলেছেন, আজ সকালে, ইরানের সন্ত্রাসী অত্যাচারীরা বিরশেবার সোরোকা হাসপাতালে এবং মধ্যাঞ্চলে সাধারণ মানুষের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
হুঁশিয়ার বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা তেহরানের সেই অত্যাচারীদের থেকে পুরো মূল্য আদায় করব।
সিএনএনের লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সর্বশেষ চালানো এই হামলার পর তেহরানে হামলা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, তিনি এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানে কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা জোরদার করার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেছেন, কাপুরুষ ইরানি ডিক্টেটর তার সুরক্ষিত বাঙ্কারের বসে ইসরায়েলের হাসপাতাল ও আবাসিক ভবনগুলোতে ইচ্ছাকৃত আক্রমণ চালাচ্ছেন।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে উদ্দেশ্য করে তিনি মন্তব্য করেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
টানা সপ্তম দিনের মতো ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। ইরানের ফার্স ও তাসনিম বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ইরান আবারও নতুন করে ইসরায়েলের ওপর সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার লাইভ খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, অন্তত চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে।
টাইমস অব ইসরায়েল লিখেছে, ইরানি হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের বিরশেবা শহরের একটি হাসপাতালে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং হাসপাতালে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের রামাত গান এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানের কিছু ছবি প্রকাশ পেয়েছে। শুধু সোরোকা হাসপাতাল নয়, ইসরায়েলের আরও অনেক জায়গায় হামলার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আল জাজিরা তাদের লাইভ প্রতিবেদনে সর্বশেষ জানিয়েছে, ইরানের এই হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে।
ইরানের আরাক হেভি ওয়াটার পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ইরানের টেলিভিশনের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হুমকি দিয়েছিল, রিঅ্যাক্টরের আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা যেন অবিলম্বে এলাকা ত্যাগ করেন। হুমকি দেওয়ার পরে সেখানে হামলার খবর এলো।
এই হামলা ইসরায়েল-ইরান চলমান উত্তেজনা একটি গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইরান ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির আওতায় এই আরাক চুল্লির নকশা পরিবর্তনে সম্মত হয়। হেভি ওয়াটার মূলত পারমাণবিক চুল্লি ঠাণ্ডা করতে ব্যবহৃত হয়। তবে এর পার্শ্ব-উৎপাদান হিসেবে প্লুটোনিয়াম তৈরি হয়- যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ফের সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত চারটি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রভাব ইসরায়েলে পড়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। আল জাজিরা তাদের লাইভ প্রতিবেদনে বলছে, জেরুজালেম এবং তেল আবিবে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ফের সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সিএনএনের লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
আইডিএফ বলছে, তারা ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করেছে। সেইসঙ্গে ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বাজিয়েছে। এ ছাড়া হুমকি মোকাবিলায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
পরবর্তী নোটিশ জারি না করা পর্যন্ত জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছে আইডিএফ।
এরইমধ্যে টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত চারটি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রভাব ইসরায়েলে পড়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। আল জাজিরা তাদের লাইভ প্রতিবেদনে বলছে, জেরুজালেম এবং তেল আবিবে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ইরানে সম্ভাব্য হামলা চালানো জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে বুধবার (১৮ জুন) ব্লুমবার্গ এই তথ্য জানিয়েছে।
কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিস্থিতি এখনো বিবর্তিত এবং এটি পরিবর্তন হতে পারে। কিছু কর্মকর্তা বলেছেন, চলতি সপ্তাহান্তেই ইরানে সম্ভাব্য হামলা হতে পারে।
এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জানা উচিত তাদের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ সন্দেহাতীতভাবে তাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে।
তিনি বলেন, ইরানি জাতি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ ও চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে এবং এই জাতি চাপের মুখে কারও কাছে আত্মসমপর্ণ করবে না।
ইসরায়েল-ইরান চলমান যুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামলায় অংশ নিতে পারে, এমন জল্পনা কল্পনার মধ্যেই ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি জড়ো করতে শুরু করেছে। বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৪০ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। গত কয়েকদিনে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩০টি সামরিক উড়োজাহাজ আমেরিকার ঘাঁটি থেকে ইউরোপে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এগুলো সবই ট্যাংকার বিমান, যেগুলো যুদ্ধবিমান ও বোমারু বিমানগুলোকে মাঝ আকাশে জ্বালানি সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হয়।
দক্ষিণ চীন সাগর থেকে ইউএসএস নিমিৎজ নামের একটি বিমানবাহী রণতরী মধ্যপ্রাচ্যের দিকে এগোচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে কয়েকটি গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার (নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যুদ্ধজাহাজ)।
ওমান উপসাগর ও পারস্য উপসাগরে আরও কিছু যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রয়েছে, যেগুলো ইতোমধ্যে ইসরায়েলকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সহায়তা করেছে।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এফ-১৬, এফ-২২ এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটিতে স্থানান্তর করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালাবে কিনা, তা নিয়ে যখন বিশ্বের মানুষ উৎকণ্ঠায়, তখন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউসের সাবেক কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর অ্যান্থনি স্কারামুচি বিবিসি নিউজনাইটকে বলেছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো ধারাবাহিকতা বা নীতিভিত্তিক কৌশল নেই।
তিনি বলেন, এটা মুহূর্তের সিদ্ধান্ত, কোন কৌশলগত চিন্তাভাবনা ছাড়াই নেওয়া হয়
স্কারামুচির দাবি, ট্রাম্পের মধ্যে নিজেকে কঠোর ও শক্ত নেতা দেখানোর যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি আছে, সেটাকে কাজে লাগাচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। যেন ট্রাম্পকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া যায়।
ইরানে সরকার পতনের চেষ্টা বা ‘রেজিম চেঞ্জ’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য জড়িত থাকার প্রসঙ্গে স্কারামুচি বলেন, গত দুই দশকে আমরা কিছুই শিখিনি। আমার কাছে এটা পরিষ্কার না যে, এই ধরনের পরিবর্তনের নেতৃত্ব মার্কিনিদেরই নেওয়া উচিত কিনা।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ইরানে সম্ভাব্য হামলা চালানো জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে বুধবার (১৮ জুন) ব্লুমবার্গ এই তথ্য জানিয়েছে।
কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিস্থিতি এখনো বিবর্তিত এবং এটি পরিবর্তন হতে পারে। কিছু কর্মকর্তা বলেছেন, চলতি সপ্তাহান্তেই ইরানে সম্ভাব্য হামলা হতে পারে।
এর আগে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন। তবে ইরানে হামলার বিষয়ে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ সূত্র সিবিএসকে জানিয়েছে, ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগের বিষয়ে সম্মত হয় কিনা তা দেখার জন্যই ট্রাম্প মূলত হামলা থেকে বিরত রয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, ইরানে হামলা চালাতে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগদানের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বুধবার হোয়াইট হাউজের বাইরে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, আমি করতেও পারি, নাও করতে পারি।
এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জানা উচিত তাদের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ সন্দেহাতীতভাবে তাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে।
তিনি বলেন, ইরানি জাতি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ ও চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে এবং এই জাতি চাপের মুখে কারও কাছে আত্মসমপর্ণ করবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন। তবে ইরানে হামলার বিষয়ে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। সিবিএস নিউজের বরাত দিয়ে বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ সূত্র সিবিএসকে জানিয়েছে, ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগের বিষয়ে সম্মত হয় কিনা তা দেখার জন্যই ট্রাম্প মূলত হামলা থেকে বিরত রয়েছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রথম এই খবর প্রকাশ করেছে।
এর আগে গতকাল বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের আলোচকরা হোয়াইট হাউজে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও তার মতে, এটা কঠিন। তিনি বলেছেন, তিনি নিশ্চিত নন যে সংঘাত কতটা দীর্ঘ হবে, কারণ ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এ ছাড়া ইরানে হামলা চালানোর বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন, আমি করতেও পারি, নাও করতে পারি।
এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জানা উচিত তাদের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ সন্দেহাতীতভাবে তাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে।
তিনি বলেন, ইরানি জাতি চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ও চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে এবং এই জাতি চাপের মুখে কারও কাছে আত্মসমপর্ণ করবে না।
ইসরায়েলের হাইফা শহরের বাসিন্দাদের জন্য একটি সতর্ক বার্তা জারি করেছে ইরান। ওই বার্তায় হাইফা শহর খালি করতে বলা হয়েছে।
বুধবার (১৮ জুন) ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ‘কয়েক মিনিট আগে হাইফায় বসবাসরত জায়োনিস্টদের জন্য একটি সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যাতে তারা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে’।
টেলিভিশনে ওই অঞ্চলের একটি চিত্র প্রদর্শন করা হয়। যেখানে হিব্রু ভাষায় লেখা ছিল- ‘অনুগ্রহ করে উল্লিখিত এলাকা থেকে অবিলম্বে সরে যান—পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনী এই এলাকায় অভিযান চালাবে’।
এর আগে, ইরানের নতুন করে ছোড়া মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র ও প্রযুক্তির সূতিকাগার তেল আবিবে আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলি সূত্রের বরাতে বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় নতুন করে হামলার খবর দিয়েছে মেহের নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সূত্রের বরাত দিয়ে আল মায়াদিন জানিয়েছে যে, ইরান অধিকৃত ফিলিস্তিনে নতুন করে প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু করেছে। ইহুদিবাদী এই গণমাধ্যম আরও জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর অধিকৃত ফিলিস্তিনে সাইরেন বেজে উঠেছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা কয়েকদিনের সংঘাতে উত্তপ্ত পুরো মধ্যপ্রাচ্য। এর মধ্যেই ভারত সরকার জানিয়েছে, ইরানে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার করে আনতে তারা ‘অপারেশন সিন্ধু’ নামে এক কর্মসূচি শুরু করেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “ইরান আর ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে ক্রমাগত পরিস্থিতির অবনতি হওয়াতে ভারত সরকার গত কয়েকদিন ধরেই নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মূলত ইরানে ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তার লক্ষ্যেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ভারতীয় দূতাবাস ১১০ জন ভারতীয় ছাত্রছাত্রীকে ইরানের উত্তরাঞ্চল থেকে সরিয়ে এনে নিরাপদে আর্মেনিয়ার সীমান্ত পার করিয়ে দিয়েছে ১৭ জুন।”
“ওই শিক্ষার্থীরা সড়কপথে আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরাভানে পৌঁছেছেন। ইরান আর আর্মেনিয়ায় আমাদের দূতাবাস পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকি করেছে।”
দিল্লি থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই ছাত্রছাত্রীরা ইয়েরাভান থেকে একটি বিশেষ বিমানে দিল্লির দিকে রওনা হয়েছেন এবং বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে তারা দিল্লিতে পৌঁছাবেন।
এর আগে রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে একইভাবে বহু ভারতীয় ছাত্রছাত্রীকে ইউক্রেন থেকে ফিরিয়ে এনেছিল ভারত সরকার।
নাগরিকদের ‘সুরক্ষিত’ রাখতে ইন্টারনেট সুবিধা সাময়িকভাবে সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। খবর আল জাজিরার।
ইরানের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে নাগরিকদের প্রাণ ও সম্পত্তির প্রতি ‘শত্রুর হুমকি’ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সাময়িকভাবে ইন্টারনেট সুবিধা সীমিত করা হয়েছে।
এর আগে লন্ডনভিত্তিক ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণ সংস্থা নেটব্লক্সের এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানে ‘প্রায় সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ দেখা গেছে।
ইসরাইলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে একের পর এক সাইবার হামলার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ইরানকে। এতে ইরানের ব্যাংকিং ব্যবস্থাসহ অনেক প্রযুক্তি কাঠামো আক্রান্ত হয়েছে। তাই দেশটি এখন নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেরাই ইন্টারনেট সুবিধা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইরান সরকারের রেজিস্ট্রেশনযুক্ত দুটি উড়োজাহাজ ওমানের রাজধানী মাসকাটে অবতরণ করেছে। যাচাইকৃত ন্যাভিগেশনাল ডেটার ভিত্তিতে এই খবব জানিয়েছে আল জাজিরা।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং তথ্য আরও দেখায়, ইরানের বেসরকারি মালিকানাধীন মেরাজ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজও মাসকাটে নেমেছে।
তবে ইরান সরকার এখন পর্যন্ত ওমানে কোনো সরকারি সফরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। উল্লেখ্য, ওমান কিছু দিন আগেও যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিল।
এর আগে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আল জাজিরার প্রতিনিধিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানান, ওমানে কোনো আলোচক দলের পাঠানোর তথ্য সঠিক নয়।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরান মাসকাটে কোনো আলোচক দল পাঠায়নি।
সূত্র: আল জাজিরা
ইরানের রাজধানী তেহরানে দেশটির পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের পুলিশ বিভাগের বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, এই হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
হামলার নিন্দা জানিয়ে ওই বিবৃতিতে ইরানের পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, হামলায় তাদের কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এতে পুলিশের কার্যক্রমে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৭ জুন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। কথোপকথনের সময় ইরানের সঙ্গে আলোচনায় পুতিনের মধ্যস্থতার প্রস্তাব নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্টকে 'খোঁচা' দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বুধবার (১৮ জুন) ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি গতকাল তার (পুতিনের) সঙ্গে কথা বলেছি। আপনি জানেন, তিনি আসলে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি বললাম, 'আমাকে একটা উপকার করুন। আগে আপনার নিজের (ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাত) মধ্যস্থতা করুন। আগে রাশিয়া ও ইউক্রেন নিয়ে মধ্যস্থতা করি। ঠিক আছে?'
ট্রাম্প আরও বলেছেন, আমি (পুতিনকে) বললাম, 'ভ্লাদিমির, আগে রাশিয়া ও ইউক্রেন মধ্যস্থতা করুন। ইরানের বিষয়টি পরে দেখা যাবে।'
একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করেন, ইউক্রেন সংঘাত শেষ পর্যন্ত সমাধান হবে। তিনি বলেন, 'আমি মনে করি এটাও সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু এত মানুষ ইতোমধ্যে মারা গেছে।'
এসকে
ইরানের নতুন করে ছোড়া মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র ও প্রযুক্তির সূতিকাগার তেল আবিবে আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলি সূত্রের বরাতে বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় নতুন করে হামলার খবর দিয়েছে মেহের নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সূত্রের বরাত দিয়ে আল মায়াদিন জানিয়েছে যে ইরান অধিকৃত ফিলিস্তিনে নতুন করে প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু করেছে।
ইহুদিবাদী এই গণমাধ্যম আরও জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর অধিকৃত ফিলিস্তিনে সাইরেন বেজে উঠেছে।
ইসরায়েল লক্ষ্য করে এবার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি এ কথা জানিয়েছে।
ইরানের দাবি, ‘ফাত্তাহ’ নামের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে।
ইসরায়েল ইরানে প্রথম হামলা চালানোর পর ছয় দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের কূটনৈতিক মিশন। ইরানি আলোচকরা হোয়াইট হাউজে যেতে চান– ট্রাম্পের এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে তারা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে মিশনের এক পোস্টে বলা হয়, কোনো ইরানি কর্মকর্তাকে পা চাটার জন্য হোয়াইট হাউজের দরজায় বসে থাকতে বলা হয়নি।
তার (ট্রাম্পের) মিথ্যার চেয়েও ঘৃণ্য জিনিস হলো ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে ‘উৎখাতের’ বিষয়ে তার কাপুরুষোচিত হুমকি, পোস্টটিতে যোগ করা হয়।
এটি ট্রাম্পের সাম্প্রতিক দাবির প্রতি ইঙ্গিত করে যে আমেরিকা জানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা কোথায় আছেন, কিন্তু আপাতত তার ক্ষতি করতে চায় না।
পোস্টটিতে আরও বলা হয়েছে যে ইরান ‘জোর করে চাপিয়ে দেওয়া’ আলোচনায় অংশ নেবে না এবং যে কোনো হুমকির জবাব পাল্টা হুমকি দেবে, যে কোনো পদক্ষেপের জবাবে পাল্টা ব্যবস্থাও নেবে।
হোয়াইট হাউসের নর্থ লনে, রোজ গার্ডেন থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে, বিশাল এক পতাকা স্তম্ভ উন্মোচনের সময় হাজির ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পতাকা উত্তোলন নিয়ে বেশ উৎসাহিত ছিলেন তিনি। নির্মাণকর্মীদের সঙ্গে হাস্যরসের পর প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউস প্রেস কর্পসকে কিছু সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। খবর নিউ ইয়র্ক টাইমস।
প্রথমে তার বক্তব্য ঘুরপাক খায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, সুদের হার এবং সরকারি ঋণ নিয়ে। তবে যখন সাংবাদিকরা ইরান নিয়ে মার্কিন অবস্থান জানতে চান, তখন তিনি দ্রুত প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সেটা বলতে পারি না। আমি করতেও পারি, নাও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করতে চাই। তবে এটা বলতে পারি—ইরানের অনেক সমস্যা আছে এবং তারা এখন আলোচনায় বসতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল হামলা চালানোর আগেই ইরানের আলোচনায় আসা উচিত ছিল—এই বক্তব্য তিনি গত কয়েকদিনে বারবারই তুলে ধরেছেন।
ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরান সংকটে জড়াবে কি না, তা নিয়ে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ধোঁয়াশা রাখছেন। কিন্তু একইসঙ্গে তেহরানের ওপর চাপও বজায় রাখছেন, যেন তারা আলোচনার টেবিলে ফিরে আসে।
ইরানের তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইস্ফাহানের নাজাফাবাদে একটি গাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী নিহত হয়েছেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর তার সন্তান প্রসবের কথা ছিল।
প্রতিবেদনের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী দুটি গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এই ওই নারী ও তার স্বামী নিহত হন।
তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, দুটি গাড়ি লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় মোট ৬ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১০ এবং ১৩ বছর বয়সী দুটি শিশুও রয়েছে।
মেহের নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, গত ১৩ জুন ভোরে ইহুদিবাদী সরকার ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করে, সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার পাশাপাশি আবাসিক এলাকায়ও আঘাত হানে। ইসরায়েলি হামলার ফলে কয়েক ডজন সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। হামলায় ইরানের ইসফাহানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতি হয়।
ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে তেহরানও প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি সরকারের প্রেস অফিস এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ১৩ জুন থেকে ইরান ৪০০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।
অপরদিকে ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৫৮৫ জন নিহত এবং ১,৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। নিহতদের অর্ধেকের বেশি বেসামরিক নাগরিক।
প্রতিবেশী দেশগুলোকে তাদের ভূখণ্ড থেকে ইরানে হামলা চালাতে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ডার আহমেদ আলি গৌদারজি। তিনি বলেন, আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের কারণে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আলি গৌদারজি বলেন, আমরা আশা করি আমাদের প্রতিবেশীরা তাদের ভূখণ্ড থেকে ইরানের বিরুদ্ধে পরিচালিত যে কোনো শত্রুতাপূর্ণ অভিযান বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নেবে। আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের কারণে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আশা করেন, 'আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করা এড়াতে' প্রতিবেশীরা যেন এই আহ্বানে সাড়া দেয়।
ইরানের মেহের নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, গত ১৩ জুন ভোরে ইহুদিবাদী সরকার ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করে, সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার পাশাপাশি আবাসিক এলাকায়ও আঘাত হানে। ইসরায়েলি হামলার ফলে কয়েক ডজন সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। হামলায় ইরানের ইসফাহানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতি হয়।
ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে তেহরানও প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি সরকারের প্রেস অফিস এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ১৩ জুন থেকে ইরান ৪০০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।
আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর অফিসের তথ্যমতে, ইরানি হামলার ফলে ৪০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তু নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তারা স্থানগুলোর বিবরণ উল্লেখ করেনি।
অপরদিকে, ইরানি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৫৮৫ জন নিহত এবং ১,৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। তিনি কি ‘কূটনৈতিকভাবে পিছু হটবেন’ না কি ইরানের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ শুরু করবেন’?
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর জ্যেষ্ঠ ফেলো এলি জেরানমায়েহ।
জেরানমায়েহ বলেন, এই ধরনের পরিস্থিতিতে নেতাদের সবসময়ই একটি বিকল্প থাকে। অতীতেও ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে সরে এসেছেন, এবারও তা তার পক্ষে সম্ভব। তিনি আরও বলেন, যদি ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্ত নেন, ইরান তা তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বলে বিবেচনা করবে।
জেরানমায়েহ বলেন, যদি এই প্যান্ডোরার বাক্স একবার খুলে যায়, আমরা জানি না পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
তিনি যোগ করেন, এ ধরনের সংঘাত সম্ভবত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাকি মেয়াদকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে ফেলবে।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর এই জ্যেষ্ঠ ফেলোর মতে, ইরানের জন্য আত্মসমর্পণ কোনো বিকল্প নয়। তারা জানে, সামরিকভাবে তারা জয়ী হবে না, তবে তারা এটাও নিশ্চিত করতে চাইছে যেন সবাই এই সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ১৯৯২ সাল থেকে ইরানের 'পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি' নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আসছেন। আল জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তার একটি পরিচিত বক্তব্য প্রতিধ্বনিত হচ্ছে: 'ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে'।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯২ সালে নেতানিয়াহু যখন ইসরায়েলের পার্লামেন্টে এমপি হিসেবে ভাষণ দিয়েছিলেন, তখন থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে দাবি করে আসছেন তেহরান পারমাণবিক বোমা অর্জন থেকে মাত্র কয়েক বছর দূরে।
তিনি সেই সময়ে ঘোষণা করেছিলেন, 'তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে, আমরা ধরে নিতে পারি ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি এবং উৎপাদনের ক্ষমতায় স্বায়ত্তশাসিত হয়ে উঠবে।' পরবর্তীতে তার ১৯৯৫ সালে নেতানিয়াহু তার লেখা বই, 'ফাইটিং টেরোরিজম'-এ একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন।
নেতানিয়াহুর এই অনুভূতি বারবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে। ২০০২ সালে নেতানিয়াহু একটি মার্কিন কংগ্রেস কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে ইরাক আক্রমণের পক্ষে কথা বলেন।
সেসময় তিনি পরামর্শ দেন, ইরাক ও ইরান উভয়ই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকে আক্রমণ শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্রের চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
২০০৯ সালে 'উইকিলিকস'-এর প্রকাশিত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি তারবার্তায় প্রকাশ করা হয়েছিল, নেতানিয়াহু কংগ্রেসের সদস্যদের বলছেন যে, ইরান পারমাণবিক সক্ষমতা থেকে মাত্র এক বা দুই বছর দূরে।
এর তিন বছর পর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে নেতানিয়াহু একটি বোমার কার্টুন দেখিয়ে একই দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইরান পারমাণবিক সীমার আগের চেয়েও অনেক কাছাকাছি। 'পরবর্তী বসন্তের মধ্যে, সর্বাধিক পরবর্তী গ্রীষ্মের মধ্যে ... তারা মাঝারি সমৃদ্ধকরণ শেষ করে চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাবে।'
এখন প্রথম সতর্কীকরণের ৩০ বছরেরও বেশি সময় পরে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে একই দাবি তুলে আক্রমণ চালিয়েছে। নেতানিয়াহু সেই পুরোনো দাবি তুলে বলেন, 'ইরান খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।'
এই বছরের শুরুতে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক বিবৃতি দিয়েছিলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। তা সত্ত্বেও নেতানিয়াহুর এই দাবিগুলো অব্যাহত রয়েছে।
ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। এমনকি অন্য কোনোভাবেও যেন সহায়তা না করা হয়, সে বিষয়ে জোর দিয়েছে মস্কো।
রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থা অনুসারে, বুধবার (১৮ জুন) রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেওয়া বা এমনকি এই ধরনের 'অনুমানমূলক বিকল্প' বিবেচনা করার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেন।
তিনি বলেছেন, 'এটি এমন একটি পদক্ষেপ হবে, যা পুরো পরিস্থিতিকে আমূল অস্থিতিশীল করে তুলবে।'
এর আগে মার্কিন অভ্যন্তরীণ আলোচনার সাথে পরিচিত একটি সূত্র জানায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলায় ইসরায়েলে যোগদানসহ বেশ কয়েকটি 'বিকল্প' বিবেচনা করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার বিষয়ে খোলাখুলিভাবে হুমকি দেন। তিনি বলেন, 'আমরা তাকে বের করে (হত্যা!) করব না, অন্তত আপাতত।'
এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভের মন্তব্যগুলো এলো।
এদিকে, পৃথক মন্তব্যে রাশিয়ার বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এসভিআর-এর প্রধান সের্গেই নারিশকিনবলেছেন, ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে পরিস্থিতি এখন সংকটজনক।
ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল দাবি করে, ইহুদিদের ব্যাপারে তারা সব সময় অন্তর্ভুক্তিমূলক। দেশটিতে নাগরিকত্ব বিষয়ক বিধিবিধানের দুটি প্রধান আইন রয়েছে—১৯৫০ সালের ‘রিটার্ন ল’ এবং ১৯৫২ সালের ‘নাগরিকত্ব আইন’।
রিটার্ন ল অনুযায়ী, বিশ্বের যেকোনো ইহুদি বিনা শর্তে ইসরায়েলে অভিবাসনের অধিকার রাখেন এবং তাৎক্ষণিক ইসরায়েলের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারেন। অথচ, ইসরায়েলের পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইহুদির বাস যেসব দেশে তার মধ্যে অন্যতম ইরানে। এই দেশেই এখন নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি নেতানিয়াহু সরকার।
ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের উত্তাপে যখন পুরো মধ্যপ্রাচ্য অস্থির, তখন সব মনযোগ ও আলোচনা থেকে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছেন ইরানে বসবাসরত ইহুদিরা। প্রায় ২ হাজার ৭০০ বছরের পুরোনো ইতিহাসের ধারক এই সম্প্রদায়টি আজও টিকে আছে ইরানের মূলধারার সমাজে। অথচ বর্তমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় তাদের অবস্থান ও উদ্বেগ প্রায় অনুপস্থিত।
বর্তমানে আনুমানিক ১৭ হাজার থেকে ২৫ হাজার ইহুদি নাগরিক ইরানে বাস করছেন, যাদের অধিকাংশের বসবাস তেহরান, ইস্পাহান, শিরাজ, হামেদান ও তাবরিজের মতো শহরে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের বাইরে সবচেয়ে বেশি ইহুদি জনগোষ্ঠী রয়েছে ইরানেই। দেশটির জাতীয় সংসদ ‘মজলিশে’ এই সম্প্রদায়ের জন্য একটি আসন সংরক্ষিত আছে।
ইহুদিদের ধর্মীয় ও সামাজিক অবকাঠামোর উপস্থিতিও ইরানে সুপ্রতিষ্ঠিত। রাজধানী তেহরানে ছড়িয়ে রয়েছে অন্তত ৫০টি সিনাগগ (ইহুদিদের প্রার্থনাগৃহ)। ইস্পাহানে আল-আকসা নামে একটি মসজিদের পাশেই রয়েছে একটি বিখ্যাত সিনাগগ। ইরানে ইসলাম ও ইহুদি সম্প্রদায়ের দুই ধর্মীয় স্থাপনার পাশাপাশি অবস্থানকে ধর্মীয় সহাবস্থানের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। তেহরানে ইহুদি সম্প্রদায়ের পরিচালিত একটি হাসপাতালও রয়েছে, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন।
ইরানের আবরিশামি সিনাগগের প্রবীণ রাব্বি ইয়োনেস হামামি লালেহজার এক সাক্ষাৎকারে আল-জাজিরাকে বলেছিলেন, ‘আমরা ২ হাজার ৭০০ বছর ধরে ইরানে বসবাস করছি। পারস্য রাজবংশের সময় থেকেই আমাদের ইতিহাস এই ভূখণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’
পশ্চিম ইরানের হামেদান শহরে আজও বিদ্যমান রয়েছে এসথার ও তার চাচা মরদখাইয়ের সমাধি, যারা ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বর্ণনায় পারস্য সম্রাট জার্শিসের (জেরেক্সেস) রাজত্বকালের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
ইতিহাসের বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে ইরান ছিল ইহুদিদের নিরাপদ আশ্রয়। স্পেনের ‘ইনকুইজিশন’ বা ধর্মীয় নিপীড়নের সময় বহু ইহুদি ইরানে আশ্রয় পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর তাণ্ডব থেকে পলায়নরত বহু পোলিশ ইহুদি আশ্রয় নিয়েছিলেন তেহরানে।
তবে ইরানে ইহুদিদের ইতিহাস শুধু নিরাপদ সহাবস্থান আর ধর্মীয় সহনশীলতার গল্প নয়—এর মাঝে রয়েছে কিছু কঠিন অধ্যায়ও। সাফাভি (১৬শ–১৮শ শতক) ও কাজার (১৯শ শতক) শাসনামলে বহু ইহুদিকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হওয়ার চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল। এই সময়গুলোতে ধর্মীয় স্বাধীনতা অনেকাংশেই সংকুচিত ছিল। আর ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর রাজনৈতিক পরিবেশের আমূল পরিবর্তনে ইরানে ইহুদিদের অবস্থান আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তখন নিরাপত্তা, পরিচয় ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ে, যার ফলে বহু ইরানি ইহুদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মতো দেশে স্থানান্তরিত হন।
আক্রমণ করতে গিয়ে আটক হওয়া ইসরায়েলি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের পাইলটদের ছবি শিগগিরই প্রকাশ করবে ইরান। আরব নিউজ জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৭ জুন) এক প্রতিবেদনে তেহরান টাইমস এ খবর দিয়েছে।
ইরানের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের পাইলটকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন নারী।
গত শুক্রবার সকালে ইরানের মাটিতে আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েল এখনো তাদের কোনো পাইলট নিখোঁজ কি না, তা নিশ্চিত করেনি।
এছাড়া ইরানের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি আসলেও এ বিষয়ে মুখ খোলেনি ইসরায়েলি সরকার।
এদিকে, ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে তেহরানও প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি সরকারের প্রেস অফিস এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ১৩ জুন থেকে ইরান ৪০০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।
আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর অফিসের তথ্যমতে, ইরানি হামলার ফলে ৪০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তু নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তারা স্থানগুলোর বিবরণ উল্লেখ করেনি।
অপ্রদিকে, ইরানি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৫৮৫ জন নিহত এবং ১,৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ইসরাইলের অবৈধ হামলা থেকে ইরান নিজেদের রক্ষা করছে। তিনি ইসরায়েলের হামলাকে 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ' বলে অভিহিত করেছেন। বুধবার (১৮ জুন) রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইরানের আত্মরক্ষা স্বাভাবিক, আইনি ও বৈধ।
পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন একে পার্টির সদস্যদের উদ্দেশে এরদোয়ান বলেন, ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পরমাণু আলোচনা শেষ হওয়ার অপেক্ষা না করেই ইসরাইল তুরস্কের প্রতিবেশী ইরানে হামলা চালিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আঙ্কারা কূটনীতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান দেখতে চায়। তুরস্ক এই সংকটের সমাধানে অবদান রাখতে প্রস্তুত আছে।
গত সপ্তাহে ইরানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু অ সামরিক স্থাপনা। রাজধানী তেহরানসহ একাধিক আবাসিক এলাকাও আক্রান্ত হয়। ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে পাল্টা হামলা চালায় ইরান।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ভালো অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন দেশটির আণবিক শক্তি সংস্থার (এইওআই)। বুধবার (১৮ জুন) মেহের নিউজ এজেন্সি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলে হয়, ইসরায়েলি সরকারের আগ্রাসনের পর ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ডের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি ইসরায়েলি সাংবাদিকদের জোর দিয়ে বলেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ভালো অবস্থায় রয়েছে।
এইওআই-এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উচ্চ মনোবলের প্রশংসা করে তিনি বলেন, সবাই তাদের শক্ত ঘাঁটিতে অবস্থান করছেন এবং অবিচলভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
মোহাম্মদ ইসলামি জোর দিয়ে বলেন, ইরানি জনগণের মধ্যে গর্ব এবং শক্তি গভীরভাবে প্রোথিত, কারণ তারা কখনো বলপ্রয়োগ বা আত্মসমর্পণ করেনি।
তেহরানের জ্যেষ্ঠ পারমাণবিক কর্মকর্তা শত্রুদের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে তারা কোথাও সফল হতে পারবে না।
মেহের নিউজ জানিয়েছে, গত ১৩ জুন ভোরে ইহুদিবাদী সরকার ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করে, সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার পাশাপাশি আবাসিক এলাকায়ও আঘাত হানে।
ইসরায়েলি হামলার ফলে কয়েক ডজন সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। হামলায় ইরানের ইসফাহানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতি হয়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেবে ইরান। দেশটি দৃঢ় থাকবে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিরুদ্ধেও। তিনি আরও বলেন, ইরান কারও কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।
বুধবার (১৮ জুন) টেলিভিশনে সম্প্রচারিত দেওয়া ভাষণে খামেনি এ কথা বলেন। দেশটির সংবাদ সংস্থা তাসনিমের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা এ কথা জানিয়েছে।
খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের কথাও উল্লেখ করে বলেন, যারা ইরান ও এর ইতিহাস জানে তারা জানে, ইরানিরা হুমকির ভাষার প্রতি ভালো সাড়া দেয় না।
আর আমেরিকানদের জানা উচিত যে, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ নিঃসন্দেহে অপ্রতিরোধ্য পরিণতি বয়ে আনবে, বলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা।
যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের ওপর হামলায় অংশ নেয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে পাল্টা হামলা চালাতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে ইরান। মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করে এমনটাই জানাচ্ছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
মার্কিন কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ইরান এরই মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখেছে, যা প্রয়োজনে বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে মার্কিন সামরিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানতে ব্যবহৃত হবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিষয়টি এখন শুধু কূটনৈতিক নয়, পূর্ণাঙ্গ সামরিক উত্তেজনার হুমকি। মধ্যপ্রাচ্যে ৪০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে ও তাদের বেশিরভাগই সৌদি আরব, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন।
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে মার্কিন প্রশাসন আশঙ্কা করছে, তারা যদি ইসরায়েলের সাথে মিলে ইরানের পরমাণু স্থাপনা ‘ফোরদোতে’ হামলা চালায়, তবে ইরানপন্থি হুথি গোষ্ঠী লোহিত সাগরে আবারও বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা শুরু করবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে কেউ কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারবে না। ইরানি জনগণের ওপর কোনো ইচ্ছা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপে জানান, যদি যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তবে তার দায়ভার বহন করতে হবে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্রদের।
মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইসরায়েল এককভাবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করতে পারবে না। ফোরদো পরমাণু স্থাপনার নিচে বিস্তৃত টানেলে লুকানো ইউরেনিয়াম মজুত থাকায় তা ধ্বংস করতে বি-২ স্টেলথ বোম্বারের মতো অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের সহায়তা দরকার হবে। এই বিমান থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রই একমাত্র অস্ত্র, যা পাহাড় ভেদ করে আঘাত হানতে পারে।
কিন্তু এমন হামলা চালানো মানেই- মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের অগ্নিশিখা ছড়িয়ে পড়া। ইরান ঘোষণা দিয়েছে, ইসরায়েলের হয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি হামলা শুরু করে, তাহলে ইরাকে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোই হবে প্রথম টার্গেট। পাশাপাশি যারা ইসরায়েলকে সহায়তা করবে, সেই সব আরব দেশের ঘাঁটিগুলোতেও হামলা চালানো হবে।
গোটা পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, মার্কিন সামরিক বাহিনী আশঙ্কা করছে, ইরান যদি হরমুজ প্রণালীতে নৌ-মাইন স্থাপন করে, তাহলে পারস্য উপসাগরে থাকা মার্কিন রণতরীগুলো কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে।
ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলো আগেও মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জর্ডানে একটি ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হন। হুথি গোষ্ঠীও বেশ কয়েকবার মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ও বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরান এখনো পরমাণু অস্ত্র তৈরির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলে এক বছরের মধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হবে।
এ অবস্থায়, ট্রাম্প প্রশাসন কী করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ দাবি করেছেন, তবে তার ভেতরেই প্রতীয়মান হচ্ছে মার্কিন কৌশলের দ্বিধা।
‘ডিফেন্স প্রায়োরিটিজ’ নামক থিঙ্কট্যাংকের মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের পরিচালক রোজমেরি কেলানিক বলেন, ইসরায়েলের হামলা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথে ঠেলে দিতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধে জড়ায়, তাহলে সেই সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, একবার যুদ্ধে ঢুকে পড়লে আর বের হওয়া সহজ নয়। আপনি হয়তো পুরোপুরি জড়িয়ে পড়বেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি একটি এক্স-পোস্টে যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, 'মহান হায়দারের নামে, যুদ্ধ শুরু হলো।'
হায়দার নামটি দিয়ে হযরত আলি (রা.)-কে বোঝানো হয়। তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর গভীর স্নেহে বড় হয়েছেন। মাজহাব-কেন্দ্রিক ধারণা অনুসারে, শিয়া মুসলমানরা আলি (রা.)-কে প্রথম ইমাম এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বৈধ উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করে।
পোস্টে আলি খামেনি লিখেছেন, 'আলি তার জুলফিকার নিয়ে খায়বারে ফিরে এসেছেন।' জুলফিকার হলো আলি (রা.)-এর তারবারির নাম, যেটি হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাকে দিয়েছিলেন।
সর্বোচ্চ এই নেতা পৃথক আরেক পোস্টে লিখেছেন, 'ইরান, ইরানের জাতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানী বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা কখনো এই জাতিকে হুমকির ভাষায় কথা বলবেন না, কারণ ইরানি জাতি আত্মসমর্পণ করতে জানে না।'
ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি লিখেন, 'আমেরিকানদের জানা উচিত যে, (ইরানে) মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে।'
ইসরায়েলি সরকারের প্রেস অফিস এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, গত ১৩ জুন থেকে ইরান ৪০০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এর ফলে তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে।
আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর অফিসের তথ্যমতে, ইরানি হামলার ফলে ৪০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তু নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তারা স্থানগুলওর বিবরণ উল্লেখ করেনি।
এছাড়া এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৪ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ৮০৪ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে আটজনের অবস্থা গুরুতর বলে নেতানিয়াহুর অফিস জানিয়েছে।
বিবৃতি অনুসারে, ইসরায়েলি কর কর্তৃপক্ষের কাছে মোট ১৮ হাজার ৭৬৬টি বীমা আবেদন দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫,৮৬১টি কাঠামোগত ক্ষতির জন্য, ১,২৭২টি যানবাহনের ক্ষতির জন্য এবং ১,৬৩৩টি অন্যান্য ধরণের ব্যক্তিগত সম্পত্তির জন্য রয়েছে।
আনাদোলু এজেন্সি বলছে, গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাসহ একাধিক স্থানে বিমান হামলা শুরু করে। এরপর থেকে আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে তেহরান প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়।
এদিকে ইরানি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৫৮৫ জন নিহত এবং ১,৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী তেহরানের উপকণ্ঠে একটি তিনতলা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ পরিচালিত একটি গোপন ড্রোন ও বিস্ফোরক তৈরির কারখানার খোঁজ পেয়েছে।
ইরানের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল প্রেস টিভির এক খবরে এমনটা দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গত রোববার ইরানি পুলিশ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানে ড্রোনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, যেমন পাখা ও কাঠামোর অংশ আর ধাতব সরঞ্জাম রয়েছে। এসব যন্ত্রাংশ ড্রোন তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।
ইরানের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ওই বাড়ির ভেতরেই ড্রোন তৈরি হচ্ছিল। সেখানে যন্ত্রাংশ তৈরির সরঞ্জামও জব্দ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ড্রোন কারখানার সন্ধান পাওয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের আগের একটি স্বীকারোক্তি মিলে যায়।
পশ্চিমা গণমাধ্যম অ্যাক্সিওসের এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, মোসাদ কর্মকর্তারা আট মাস ধরে ইরানে ড্রোন পাচার করছিলেন, যাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলোয় হামলা চালানো যায়।
যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটির আশপাশে মোসাদ এজেন্টরা অবস্থান করছিলেন, যেন সমন্বিতভাবে নাশকতা ও ড্রোন হামলা চালানো যায়।
এই অভিযানে পাওয়া এসব প্রমাণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইসরায়েল ও গাজার চলমান যুদ্ধের মধ্যেই মোসাদ ইরানের মাটিতে সক্রিয়ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।
একই দিন গত রোববার তেহরানের রাস্তায় নাটকীয় কায়দায় একটি ট্রাক ধাওয়া করার দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে। একজন ইরানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা একটি ট্রাকের পেছনে ছুটে যাচ্ছিলেন। সন্দেহ করা হচ্ছে, ওই ট্রাকে উন্নত মানের ইসরায়েলি ড্রোন বহন করা হচ্ছিল।
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরপর দুটি গুলি চালিয়ে ওই ইরানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা ট্রাকটি থামান। ওই গাড়িতে অত্যাধুনিক ড্রোনের মজুত পাওয়া যায়।
এর আগে ওই দিনেই ইরানি গোয়েন্দারা ওই ড্রোন তৈরির গোপন কারখানা ধ্বংস করে। ধারণা করা হচ্ছে, ড্রোন তৈরি ছাড়াও গুপ্তচরবৃত্তি বা নাশকতার উদ্দেশ্যে ওই বাড়িকে আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
তবে ইরানি কর্তৃপক্ষ এখনো সব তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে জোর দিয়ে বলেছে, বিদেশি হুমকির বিরুদ্ধে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবস্থায় রয়েছে। তারা ইরানের মাটিতে থাকা সন্দেহভাজন ইহুদিবাদী নেটওয়ার্কগুলো ভাঙতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
গত কয়েক সপ্তাহে এ ধরনের অনেক সন্দেহভাজন এজেন্টকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বিদেশি গোয়েন্দা তৎপরতা মোকাবিলায় বড় ধরনের অভিযানের অংশ হিসেবে এই গ্রেপ্তার চলছে।
ইরানের কর্মকর্তারা অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, ইসরায়েল ও তার মিত্রদের হুমকির বিরুদ্ধে ইরান সর্বদা সতর্ক থাকবে। গত কয়েক দশকে এই চক্র ইরানের ক্ষতি করার চেষ্টা করে আসছে।
ইরানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বারবার বলে আসছেন, ইসরায়েল বহু বছর ধরে ইরানের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ইরানিরা এখনো সজাগ রয়েছে।
গত শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েল হঠাৎ ইরানে হামলা চালায়। ওই হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। এ ছাড়া নারী–শিশুসহ বহু সাধারণ মানুষ নিহত হন।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাবে ইরান আত্মরক্ষার্থে বড় পরিসরের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এসব হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড।
তেহরান, হাইফা ও অন্যান্য শহরে থাকা সামরিক ও শিল্প স্থাপনায় এ হামলা চালানো হয়।
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের পতন এবং হিজবুল্লাহর অবস্থান ধ্বংস হওয়ার পর ইসরায়েল ডিসেম্বরে ইরানে হামলার পরিকল্পনা শুরু করে। এতে ইসরায়েলের জন্য একটি উন্মুক্ত আকাশপথ তৈরি হয় বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউস সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ওভাল অফিসে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি বিস্তারিত উপস্থাপনা দেন।
নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, তখন ট্রাম্প ইসরায়েলের হামলায় সরাসরি যোগ দেওয়া বা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থাকার মধ্যে কোনোটি বেছে না নিয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন এবং হামলা চালানোর জন্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘এখনো প্রকাশ না করা’ সহযোগিতা দিতে সম্মত হন।
প্রতিবেদনটিতে ট্রাম্পের ইরানবিষয়ক অবস্থানের সাম্প্রতিক পরিবর্তন ও তার আচরণগত দ্বিধাদ্বন্দ্বও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। টাইমস লিখেছে, ‘শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েল যখন ইরান আক্রমণ করলে ট্রাম্প যখন ঘুম থেকে উঠেন, তখন তার প্রিয় চ্যানেল ফক্স নিউজ ইসরায়েলের সামরিক কৌশল নিয়ে টানা সম্প্রচার করছিল। ট্রাম্প নিজেও এ সফলতায় নিজেকে কৃতিত্ব দিতে চাইছিলেন।’
প্রতিবেদনের শেষাংশে টাইমস উল্লেখ করে, ট্রাম্প সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দেওয়ায় এই সংঘাত দ্রুত কূটনৈতিকভাবে মীমাংসিত হবে এমন সম্ভাবনা এখন ‘বড্ড ক্ষীণ’।
ইরানের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রদেশে ‘শত্রুপক্ষের’ ড্রোন তৈরির কারখানা এবং ড্রোন বহনকারী যানবাহন শনাক্তের কথা নিশ্চিত করেছেন দেশটির পুলিশের মুখপাত্র সাঈদ মন্তাজেরোলমাহদি।
পুলিশের এই মুখপাত্রের বরাতে খবরটি প্রকাশ করেছে ইরানের লেবার নিউজ এজেন্সি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের ১৪টি ড্রোন ভূপাতিত করার কথা জানিয়েছে ইরানের পুলিশ। খবর আল জাজিরার।
এদিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। এমন এক সময়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো যখন দেশটি ইসরায়েলি হামলার হুমকি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির মুখোমুখি।
তাসনিম জানিয়েছে, আজ বুধবার সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে এই বৈঠক শুরু হয়।
তাসনিম প্রকাশিত ছবিতে ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ এবং মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার চলমান সংঘাত আরও তীব্র আকার নিচ্ছে। এবার ইরানের রাজধানী তেহরানের কাছে ভারামিন শহরের আকাশসীমায় ইসরায়েলের আরেকটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান। বুধবার সকালে ভারামিনের গভর্নর হোসেইন আব্বাসি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির লাইভ প্রতিবেদন এই খবর প্রকাশ করেছে। ঘটনাস্থলে ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন সংবাদদাতা বলেছেন, ‘স্থানীয় সময় আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে ড্রোনটি ভূপাতিত করা হয়। কোনো স্থাপনায় আঘাত করার আগেই ড্রোনটিকে গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে।’
এ দিকে তেহরান টাইমস জানিয়েছে, ইসরায়েলের একটি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তেহরানের কাছে ভূপাতিত করেছে ইরান।
ইরানের ভারামিন শহরের গভর্নর হোসেইন আব্বাসি বুধবার সকালে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলের এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।’
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। গত শুক্রবার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের মোট পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করল ইরান।
এফ-৩৫ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান। এটি রাডারে সহজে ধরা পড়ে না। এর একাধিক সংস্করণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ এটি ব্যবহার করে।
গত ১৩ জুন ভোররাত ৩টার দিকে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি পক্ষে বলা হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে ইসরায়েল ও এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্রসহ ড্রোন হামলার আশঙ্কা থেকে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আগাম প্রতিরোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে। ওই হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে। জবাবে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইরানও।
আজ বুধবার ষষ্ঠ দিনে গড়াল ইসরায়েল–ইরান সংঘাত। আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪০ জন নিহত হয়েছে। আর ইসরায়েলে ইরানের হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ২৪ জন।
ওমান সাগরে দুই তেলবাহী জাহাজের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছে, নেভিগেশন ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
প্রাথমিক তথ্যের বরাত দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওমান সাগরে দুটি তেলবাহী ট্যাংকারের মধ্যে একটি দুর্ঘটনাজনিত সংঘর্ষ ইঙ্গিত দেয়, ঘটনাটি একটি জাহাজের নেভিগেশনে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ঘটেছে।
মঙ্গলবার হরমুজ প্রণালির কাছে ‘অ্যাডালিন’ এবং ‘ফ্রন্ট ইগল’ নামের দুটি ট্যাংকারের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং আগুন ধরে যায়। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের মধ্যে এই এলাকায় ইলেকট্রনিক হস্তক্ষেপ বেড়েছে। এই কারণে জাহাজের নেভিগেশন ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তবে জাহাজের কর্মীদের কোনো আঘাত বা তেল ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি।
ইরান থেকে ছোড়া দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যবহৃত ‘অ্যারো’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্রুত ফুরিয়ে আসছে ইসরায়েলের—এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল (ডব্লিউজেএসজে)। চলমান সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়, ওয়াশিংটন কয়েক মাস ধরেই বিষয়টি জানে এবং ইতোমধ্যে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তি জোরদার করতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়েছে। ভূমি, নৌ ও আকাশ—তিন ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে।
জুন থেকে সংঘর্ষ তীব্রতর হওয়ার পর পেন্টাগনও মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা উপস্থিতি বাড়িয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ সরবরাহও চাপে পড়ছে বলে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রকল্পের পরিচালক টম কারাকো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কেউই সারাদিন বসে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পারে না। ইসরায়েল ও তাদের মিত্রদের আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, বসে থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর খেলায় থাকা যাবে না।’
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত ও সজ্জিত’, তবে গোলাবারুদ ও সরঞ্জামসংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
‘অ্যারো’ ইসরায়েলের বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি উচ্চাকাশে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম, যা ইরান থেকেও ছোড়া হতে পারে।
ইরানে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি ও সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী বুশেহরের একটি সংবেদনশীল পারমাণবিক এলাকার ছবি তোলার সময় এক বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সরাসরি মোসাদের হয়ে তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া রাজধানী তেহরানের নিকটবর্তী বাহারেস্তান কাউন্টিতে একটি যানবাহনে তল্লাশির সময় মোসাদ-সংশ্লিষ্ট এক সন্ত্রাসী চক্রের সন্ধান পায় নিরাপত্তা বাহিনী। সেখানে মাইক্রো-ড্রোন, বিস্ফোরক, যোগাযোগ সরঞ্জাম ও লক্ষ্যনির্ধারণ ব্যবস্থা উদ্ধার করা হয়েছে।
এই ঘটনার বিষয়ে বাহারেস্তানের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর মোরাদ মোরাদি বলেন, গ্রেপ্তাররা এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দুর্বল করা।
এছাড়া, ইরানের ইসফাহান শহরের একটি ওয়ার্কশপ থেকে ড্রোন ও মাইক্রো-এয়ারক্রাফট তৈরির উপকরণ উদ্ধারের পর আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, তারা ইসরায়েলের ভাড়াটে কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন।
উল্লেখ্য, ইসফাহান শহরটি ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিকটবর্তী এলাকায় অবস্থিত।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ক্রমেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন—একটির পর একটি বিমান হামলায় তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সামরিক ও গোয়েন্দা উপদেষ্টারা নিহত হওয়ায় এই ৮৬ বছর বয়সী ধর্মীয় নেতা এখন এক অনিশ্চিত বাস্তবতার মুখোমুখি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থায় ইরানের ভেতরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি কৌশলগত ভুলের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির শীর্ষ কর্মকর্তা আমির আলী হাজিজাদে এবং গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি নিহত হয়েছেন। এরা সবাই খামেনির ‘ইনার সার্কেল’-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন—জাতীয় নিরাপত্তা থেকে আঞ্চলিক কৌশল, সব সিদ্ধান্তেই যাদের হাত ছিল।
খামেনির নেতৃত্বাধীন এ মহলটি সাধারণত ১৫-২০ জন উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টার সমন্বয়ে গঠিত। তাদের মধ্যে রয়েছেন সামরিক কমান্ডার, শীর্ষস্থানীয় আলেম এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কার্যালয় থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একটি সূত্র রয়টাসকে বলেছে, ‘এই মুহূর্তে খামেনি ভয়াবহ নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন। তার চারপাশে যাঁরা থাকতেন, একের পর এক তাদের হারিয়ে যাচ্ছেন। ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বড়।’
বিশ্লেষক অ্যালেক্স ভাটাঙ্কা বলেন, ‘খামেনি চূড়ান্তভাবে একগুঁয়ে, কিন্তু একই সঙ্গে খুবই সতর্ক। তার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হচ্ছে, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের টিকে থাকা নিশ্চিত করা।’
এত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও খামেনি ইরানের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজের হাতে রেখেছেন। দেশের সামরিক বাহিনী, বিচার বিভাগ, এমনকি প্রেসিডেন্ট নিয়ন্ত্রণাধীন নানা সংস্থাতেও তার সরাসরি প্রভাব রয়েছে। যেকোনো ছোট-বড় সিদ্ধান্তেও তার দপ্তরের অনুমোদন দরকার হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।
তবে খামেনির অনুপস্থিত উপদেষ্টাদের জায়গা পূরণে এগিয়ে এসেছেন তার ছেলে মোজতবা খামেনি। গত দুই দশকে তিনি বিপ্লবী গার্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং এখন মূল সমন্বয়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। অনেকেই মনে করেন, এই মধ্যমপদে থাকা আলেম ভবিষ্যতে তার পিতার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন।
তার সঙ্গে আরও রয়েছেন খামেনির কার্যালয়ের নিরাপত্তা উপদেষ্টা আলী আসগর হেজাজি, দপ্তরের প্রধান মোহাম্মদ গোলপায়েগানি এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আকবর ভেলায়েতি ও কামাল খারাজি। তারা এখন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়গুলোতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন।
কিন্তু যেসব পদে সামরিক কৌশল ও গোয়েন্দা সমন্বয় প্রয়োজন, সেইখানে আইআরজিসি নেতাদের অভাব স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো, এই বাহিনীই ইরানের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি আঞ্চলিক আধিপত্যের রূপরেখা তৈরি করে থাকে।
সর্বশেষ সংকট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যখন ইসরায়েল ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষ জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদেরও টার্গেট করেছে। হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এক হামলায় এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিদ্রোহীদের হাতে ক্ষমতা হারিয়েছেন গত ডিসেম্বরে।
সার্বিকভাবে ইঙ্গিত মিলছে, ইসরায়েল কেবল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করতেই নয়, বরং সরাসরি সর্বোচ্চ নেতৃত্ব কাঠামোকেও ভেঙে দিতে সক্রিয়ভাবে আঘাত হানছে।
এমন এক সময়ে, যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং অভ্যন্তরীণভাবে অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হচ্ছে, তখন খামেনির এই ভঙ্গুর উপদেষ্টা কাঠামো তার নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা ৫০টির বেশি যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্রসহ একাধিক অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র। খবর আল-জাজিরার।
টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলে, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা নির্দেশনার ভিত্তিতে এই হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ব্যাপক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। যদিও ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কথা বরাবর অস্বীকার করে এসেছে।
ইসরায়েলি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য 'কাঁচামাল এবং উপাদান' উৎপাদনকারী কারখানাগুলোতেও আক্রমণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বুধবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের বৈঠক হবে। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে হোয়াইট হাউসে এই বৈঠক হওয়ার কথা। খবর বিবিসির।
সাক্ষাৎকালে ট্রাম্প ও মুনির একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। তবে পুরো বৈঠকে গণমাধ্যমের কাউকে উপস্থিত থাকতে দেওয়া হবে না।
জেনারেল মুনির ১৪ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর এই সাক্ষাৎ আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। তাঁদের মধ্যে এমন এক সময়ে সাক্ষাৎ হচ্ছে, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত চলছে। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা অঞ্চলটির অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত রয়েছে।
ইরানি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, জেনারেল মুনির গত মে মাসের শেষ দিকে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর তৎকালীন প্রধান মোহাম্মদ হোসেইন বাঘেইরির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। গত ১৩ জুন ইসরায়েলি বিমান হামলায় বাঘেইরি নিহত হন।
ইরান আর ইসরায়েলের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কার মধ্যেই বুধবার (১৮ জুন) ভোররাতে পূর্ব ইংল্যান্ডের রয়্যাল এয়ারফোর্স লেকেনহিথ থেকে অন্তত চারটি এফ-৩৫ বিমান ঘাঁটি ছেড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
এই বিমানগুলোর সঙ্গে একটি জ্বালানির ট্যাংকার বিমানও ছিল।
এছাড়া ইরানের মাটির গভীরে তৈরি স্থাপনায় হামলা করতে পারে যে বি টু স্পিরিট বোম্বার বিমান, সেগুলোও ভারত মহাসাগরে ইরান থেকে চার হাজার কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে একটি ঘাঁটিতে রাখা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
গত তিনদিনে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩০টি মিলিটারি বিমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্পেইন, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এসব বিমান ইরান ইসরায়েল সংঘাতের কারণে ইউরোপে নেওয়া হয়েছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, বিবিসির মার্কিন সহযোগী সিবিএস নিউজের সূত্র বলছে ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের কেন্দ্রগুলোতে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
এরকম পরিস্থিতিতে বুধবার ভোরে ইরানের শীর্ষ নেতা আলী খামেনি বলেছেন, ইরান জায়নিস্টদের সঙ্গে সমঝোতা করবে না।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে খামেনির প্রোফাইল থেকে দেওয়া পোস্টে উল্লেখ করা হয়, জায়নিস্টদের কোনো দয়া দেখানো হবে না।
মঙ্গলবার আলী খামেনির অবস্থান সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের করার পর এই প্রথম কোনো মন্তব্য করলেন তিনি।
এর মধ্যে ইসরায়েল আর ইরান একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। বুধবার ভোর রাতেও তেল আবিবে কয়েকদফা মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান।
ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড কোর আইআরজিসি জানিয়েছে তেল আবিবে বুধবারের হামলায় তারা হাইপারসনিক ফাতাহ ওয়ান মিসাইল ব্যবহার করেছে। হামলার আগে তেল আবিবের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছিল তারা।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস আইডিএফও মঙ্গলবার রাতে দাবি করেছে যে তারা ইরানের বেশ কয়েকটি মিসাইল ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৮৫ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩২৬ জন আহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি (এইচআরএএনএ) তাদের ওয়েবসাইটে বেসরকারী সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এই সংস্থাটি জানিয়েছে, হতাহতদের মধ্যে সামরিক কর্মী এবং বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৩৯ জন বেসামরিক ব্যক্তি এবং ১২৬ জন সামরিক কর্মী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, সামরিক বা বেসামরিক মিলিয়ে আরও ২২০ জন নিহত এবং ৮৬৮ জন আহত ব্যক্তির অবস্থা অজানা, যা এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।
এইচআরএএনএ ২০২২ সালে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় হতাহতের বিস্তারিত পরিসংখ্যানও প্রদান করেছিল। তারা ইরানের স্থানীয় প্রতিবেদনগুলোকে তাদের তাদের সোর্সের খবরের সাথে তুলনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এদিকে সোমবার ইরানের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রকাশিত সর্বশেষ আপডেটে মৃতের সংখ্যা ২২৪ জন এবং আহতের সংখ্যা ১,২৭৭ জন বলে জানানো হয়েছে।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) বলছে, তারা গত রাতে ইসরায়েলের দিকে ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র ফাত্তাহ-১ নিক্ষেপ করেছে। বিবিসি এ খবর দিয়েছে।
২০২৪ সালের ১ অক্টোবর ইরান যখন ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল, তখনো তারা বেশ কয়েকটি ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। তবে চলমান সংঘাতে ইরান সম্ভবত এই প্রথম ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল।
২০২৩ সালে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করে ইরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ক্ষেপণাস্ত্রটির নামকরণ করেন।
আইআরজিসি এই ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘ইসরায়েল বিধ্বংসী’ বলে উল্লেখ করেছে। এটি উন্মোচনের সময় ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি বিশাল ব্যানার টাঙানো হয়েছিল, যেখানে হিব্রু ভাষায় লেখা ছিল: ‘৪০০ সেকেন্ডে তেল আবিবে।’
আইআরজিসি ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘হাইপারসনিক’ হিসেবে দাবি করলেও সামরিক বিশ্লেষকেরা এর প্রকৃত হাইপারসনিক সক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
অতি উচ্চগতির হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র অনেক সময় বর্তমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাড়া দেওয়ার আগেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং মাঝপথে দিক পরিবর্তন করতে পারে।
অতি উচ্চগতির হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে এমন গতিতে আঘাত হানতে পারে যে, বর্তমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা প্রতিহত করতে পারে না। এমনকি সাড়া দেওয়ার আগেই তা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথে দিকও পরিবর্তন করতে পারে।
প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন যে মার্কিন সেনাবাহিনীর চলমান ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িত হওয়া উচিত নয়।
আন্তর্জাতিক অনলাইন গবেষণা তথ্য এবং বিশ্লেষণ প্রযুক্তি সংস্থা ইউগভ (YouGov)-এর এক জরিপে অংশগ্রহণকারী মার্কিনিরা এই মত দেন।
জরিপে মাত্র ১৬ শতাংশ মার্কিন সম্পৃক্ততার পক্ষে, যেখানে ২৪ শতাংশ বলেছেন যে তারা নিশ্চিত নন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ডেমোক্র্যাট সমর্থক, যারা মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছিলেন তাদের সংখ্যা ছিল ৬৫ শতাংশ, এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে এই হার ছিল ৫৩ শতাংশ। প্রায় ৬১ শতাংশ স্বাধীনভাবে এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছিলেন।
জরিপে আরও দেখা গেছে, অর্ধেক আমেরিকান ইরানকে তাদের শত্রু হিসেবে দেখে। ২৫ শতাংশ মানুষ বলেছেন যে এই সম্পর্ক অন্তত বন্ধুত্বপূর্ণ নয়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ‘ইরান কখনোই জায়নবাদীদের (ইসরায়েল) সঙ্গে আপস করবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া একাধিক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এক পোস্ট খামেনি লিখেছেন, ‘আমরা জায়নবাদীদের প্রতি কোনো দয়া দেখাব না।’ আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘যুদ্ধ শুরু হলো।’
এই মন্তব্যগুলো তার একাধিক ভাষায় পরিচালিত এক্স অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খামেনিকে নিয়ে মন্তব্য করার পর এটি ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র জানে খামেনি কোথায় আছেন। কিন্তু ‘এই মুহূর্তে’ তাকে হত্যা করবে না।
এর আগে চলতি সপ্তাহেই খবর প্রকাশিত হয়, ইসরায়েলের খামেনিকে হত্যার প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছেন ট্রাম্প।
ইরানে সম্প্রচারের সময় ইসরাইলি হামলায় সাহসী ভূমিকার জন্য আলোচনায় ওঠে এসেছেন দেশটির অন্যতম খ্যাতিমান সংবাদ উপস্থাপিকা সাহার ইমামি। সোমবার রাতে রাজধানী তেহরানের ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিং-আইআরআইবি ভবনে ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি। ঠিক তখনই ঘটে প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণ। অনুষ্ঠান চলার সময়েই টেলিভিশন স্টেশনে আছড়ে পড়ে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র। তবে এমন ভয়াবহ হামলার পরও থামেননি ইমামি।
এ হামলার এক ঘণ্টা না পেরোতেই আবার ফিরে এসে লাইভ সম্প্রচার চালিয়ে যান তিনি। এমন সাহসী পদক্ষেপের জন্য এখন প্রশংসায় ভাসছেন ইমামি। তবে এই হামলায় দুজন নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সি (আইআরএনএ)।
ঘটনার সময়কার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইমামি টিভিতে ইসরাইলের সমালোচনা করার পরপরই স্টুডিওর ভেতর ধোঁয়ায় ভরে ওঠে। ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট জাহরা বেহরামজাদেহ আজার বলেছেন, ইমামি আজ ইরানি নারীদের সাহসের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘এই নারী এখন আগ্রাসনের মুখে পুরো ইরানি জাতির কণ্ঠস্বর।’
সাহার ইমামি ইরানের সবচেয়ে পরিচিত সংবাদ উপস্থাপকদের একজন। ১৯৮৪ সালে তেহরানে জন্মগ্রহণকারী ইমামি প্রমাণ করেছেন, প্রবল আগ্রহ ও নিষ্ঠাই একজনকে নিজ লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। যদিও তিনি কৃষিবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বিশেষত খাদ্য প্রকৌশলে। কিন্তু তার প্রকৃত টান ছিল গণমাধ্যম ও জনসেবার দিকে। তিনি ২০১০ সালে সংবাদ উপস্থাপনায় আসেন এবং দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। মিডিয়ায় তার পদার্পণ ছিল বাধাবহুল। তবে একান্ত প্রচেষ্টার ফলেই তিনি জায়গা করে নেন ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্র্রচার কেন্দ্রে। তার মতে, নারী সাংবাদিকরা সমাজে পরিবর্তন আনার বড় ভূমিকা রাখেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকেন। সাহার ইমামি বিবাহিত এবং তার একটি সন্তান রয়েছে।
এদিকে সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি (সিপিজে) সোমবার তেহরানে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের স্টুডিওতে ইসরাইলের হামলায় হতবাক হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তারা। হিজবুল্লাহ এটিকে ইরানি জনগণের বিপ্লব বন্ধ করার এবং সত্য মুছে ফেলার একটি পরিকল্পিত হামলা বলে দাবি করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর কথা ভাবছেন। বিবিসির যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অংশীদার সিবিএস নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।
সিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোরদোর মতো গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোও হামলার লক্ষ্য হতে পারে বলে জানিয়েছে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।
সূত্রগুলো বলছে, এই বিষয় নিয়ে হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা এ ব্যাপারে এখনো পূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা আগামী এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংসে তাদের সবকটি প্রধান লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে বলে আশাবাদী। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এমনটাই জানিয়েছেন আইডিএফ কর্মকর্তারা।
অপারেশনের লক্ষ্য হিসেবে ইসরায়েল শুরু থেকেই ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টাকে ‘অস্তিত্বের হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তা নির্মূল করার অঙ্গীকার করেছে।
এখন পর্যন্ত আইডিএফ দুটি প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে বোমাবর্ষণ করে বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করেছে। পাশাপাশি ইসরায়েলের দাবি, ইরানের অন্তত নয়জন শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী যাঁরা পরমাণু বোমা প্রকল্পে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যালয় ও কমান্ড সেন্টারেও হামলা চালানো হয়েছে।
তবে আইডিএফ জানিয়েছে, তেহরানের কাছে অবস্থিত ভূগর্ভস্থ ফরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি এখনো লক্ষ্যবস্তু হয়নি, তবে তা তাদের ‘টার্গেট ব্যাংক’-এ রয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ফরদো অবশ্যই মোকাবিলা করা হবে।
এ ছাড়া, আইডিএফ-এর হিসাবে, ইরানের মোট ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লাঞ্চারের প্রায় ৪০ শতাংশ আনুমানিক ২০০টি এর মধ্যে ধ্বংস বা অকার্যকর করা হয়েছে। এর ফলে গত দুই দিনে ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অনেকটাই কমে গেছে।
আইডিএফ দাবি করেছে, তারা ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডের প্রায় সবাইকে হত্যা করেছে। সামরিক কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা প্রাথমিক পরিকল্পনার তুলনায় তিন গুণ বেশি ইরানি কমান্ডারকে হত্যা করতে পেরেছে।
আইডিএফ আরও জানায়, পুরো অভিযানের প্রস্তুতি মাসখানেক আগেই শুরু হয়েছিল, যেখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ইরানের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিক্রম করা। বর্তমানে পশ্চিম ইরান ও তেহরান অঞ্চলে আকাশে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করেছে আইডিএফ।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ‘অবৈধ হামলা’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো বর্তমান সংকটাপন্ন পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক শত্রুতার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছে দেশটি। খবর সিএনএনের।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলের ধারাবাহিক ও তীব্র হামলা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ। এসব হামলা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করছে এবং বিশ্বকে এমন এক পারমাণবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যার প্রভাব ইসরায়েলসহ পুরো বিশ্বেই পড়বে।’
রাশিয়া আরও বলেছে, ‘আমরা ইসরায়েলি নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি— আইএইএর তত্ত্বাবধানে থাকা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর তাৎক্ষণিকভাবে এ হামলা বন্ধ করুন।’
বিবৃতিতে কিছু পশ্চিমা দেশ ‘সুযোগসন্ধানী আচরণ’ করছে বলে অভিযোগ করা হয়। তবে নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাগুলো বিশেষভাবে ইসরায়েলের সেসব বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে, যেখান থেকে ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালানো হয়েছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আমাদের হামলা নিরবচ্ছিন্ন, জটিল, বহুস্তরবিশিষ্ট এবং ধাপে ধাপে চলতে থাকবে… আমরা সেই বিমানঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করেছি, যেখান থেকে ইহুদিরা ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছিল।’
এর আগে ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছিল, ইরান মঙ্গলবার দশম ধাপে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা শুরু করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তুরস্কের প্রেসিডেন্সির এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক পোস্টে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
কাতারের আমির শেইখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। ফোনালাপে তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, “নেতানিয়াহু আবারও প্রমাণ করেছেন, তিনি এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।”
ইরানের রাজধানী তেহরানে আবারও নতুন করে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। মধ্যরাতের পরপরই তেহরানজুড়ে একাধিক বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি।
বার্তাটিতে বলা হয়েছে, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উচ্চ শব্দের বিস্ফোরণ শোনা গেছে। এদিকে, ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানাচ্ছে, বিস্ফোরণগুলো ছিল ‘টানা ও প্রচণ্ড’ শক্তিশালী।
তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রাজধানীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, এবং বহু বাসিন্দা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্ফোরণের শব্দ ও কম্পনের কথা জানিয়েছেন।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যবর্তী সংঘাত আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এর মধ্যেই চীন অভিযোগ করেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ অস্থিরতা আরও বাড়াচ্ছেন।
ট্রাম্প গতকাল তেহরানে বসবাসকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে এলাকা ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর সমালোচনায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুই জিয়াকুন বলেন, ‘আগুনে ঘি ঢালা, চাপ বাড়ানো ও হুমকিতে পরিস্থিতির সমাধান হয় না। বরং এগুলো সংঘাতকে আরও বাড়াবে ও ছড়িয়ে দেবে।’
নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘সংলাপ ও সমঝোতাই হচ্ছে এই অস্থিরতা নিরসনের একমাত্র পথ।’
এদিকে ইরান ও ইসরায়েল আবারও হামলা ও পাল্টাহামলায় লিপ্ত হয়েছে। সোমবার রাতে তেলআবিবকে লক্ষ্য করে সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরান বলেছে, এটা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও তীব্র হামলা। অপর দিকে তেলআবিব ও আশপাশের এলাকায় অ্যালার্ম বাজতে শুরু করে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করাই হতে পারে এই সংঘাত শেষ করার উপায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সবাইকে অবিলম্বে তেহরান ছাড়তে। কারণ তিনি চাইছেন না যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করুক।
ইরানে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ২২০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে ৭০ জন নারী ও শিশু। অপর দিকে, ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা হামলায় ২০ জন মারা গেছে।
ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তার বাসভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সোমবারের এ হামলায় বাড়িটি মারাত্মকভাবে ধ্বংস হলেও, সৌভাগ্যক্রমে ওই কর্মকর্তা বাসায় না থাকায় কেউ হতাহত হননি।
ক্ষতিগ্রস্ত বাসার বাসিন্দা ওয়ালিদ ইসলাম ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত। তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, ‘আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।’
বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূলত তেহরানের ‘জর্ডান’ এলাকায় বসবাস করেন, যা শহরের তৃতীয় জেলায় অবস্থিত। ওই এলাকাতেই ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো লক্ষ্য করেই ইসরায়েল এ হামলা চালায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামলার আগে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ফলে প্রাণহানি তুলনামূলকভাবে কম হলেও, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে।
ওয়ালিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের আশপাশে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। শুধু কিছু কূটনৈতিক আবাসন কোনোভাবে টিকে আছে।’
ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ সরকার তেহরানে অবস্থানরত মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। নির্দেশনা অনুযায়ী তারা দূতাবাস এলাকা ত্যাগ করে শহরের অন্যান্য নিরাপদ অঞ্চলে আশ্রয় নেন।
তবে পরিস্থিতির অবনতি বিবেচনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের তেহরানের বাইরের আরও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক বলেন, ‘তেহরানে অবস্থানরত প্রবাসী ও দূতাবাস কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। আমরা তাদের সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছি।’
তিনি জানান, বর্তমানে তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি সবাই নিরাপদে আছেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ রাখা হবে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৮টি ‘শত্রু বিমান’ শনাক্ত ও প্রতিহত করার দাবি করেছে ইরান। এর মধ্যে একটি গুপ্তচর ড্রোন ছিল, যা ইরানের ‘সংবেদনশীল’ স্থানগুলো সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছিল বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাতে এ তথ্য জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশটির সামরিক বাহিনী এর আগেও একাধিকবার ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে।
তবে ইসরায়েল বরাবরই এই দাবি অস্বীকার করে আসছে। তারা বলছে, ইরানে তাদের অভিযানের সময় কোনো যুদ্ধবিমান বা ক্রু সদস্যের ক্ষতি হয়নি
এবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর আলজাজিরার।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা জানি, খামেনি কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি একটি সহজ লক্ষ্য, তবে তিনি সেখানে নিরাপদ। আমরা অন্তত এখনই তাকে হত্যা করতে যাচ্ছি না।’
তবে একইসঙ্গে তিনি ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা বেসামরিক নাগরিক বা মার্কিন সেনাদের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ হোক, তা চাই না। আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।’
আরেকটি পোস্টে ট্রাম্প সম্পূর্ণ বড় অক্ষরে লেখেন. ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ!’ এর আগে তিনি ইরানকে ‘সম্পূর্ণরূপে নতি স্বীকার’ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, খামেনিও মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর ক্ষমতাচ্যুত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাদ্দাম হোসেনের মতো পরিণতি বরণ করতে পারেন।
দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। একই সঙ্গে ইহুদিবাদী সরকারের কোমর ভেঙে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজা তালাই-নিক এ হুমকি দেন।
তিনি বলেন, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী তাদের প্রতিশোধমূলক সামরিক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে। আমাদের জাতি একটি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের মুখোমুখি এবং শত্রুরা আমাদের জনগণের প্রতিটি অংশের শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতাকে লক্ষ্যবস্তু করছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে একটি প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে আছি, কিন্তু আমরা আমাদের সমস্ত আক্রমণাত্মক এবং প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা ব্যবহার করছি। আমাদের প্রতিরক্ষা ফ্রন্টের পরিখাগুলো প্রশস্ত এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষ এতে জড়িত। এ ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ‘সহ্য করার ক্ষমতা’ নেই ইসরাইলি সরকারের।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজা তালাই-নিক বলেন, শত্রুরা দীর্ঘ যুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে না এবং এটি চলতে থাকলে, ইহুদিবাদী সরকারের কোমর ভেঙে যাবে। ইতোমধ্যে মঙ্গলবার ইহুদিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযানে ইরান প্রথমবারের মতো একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে। তবে ইহুদিবাদী সরকার আগে থেকে বিষয়টি বুঝতেই পারেনি। তাদের জন্য এই ধরনের আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন ভোরে হঠাৎ ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও আবাসিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইহুদিবাদী সেনারা।
সেই থেকে চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত উভয় দেশের অনেকে নিহত ও আহত হয়েছেন। তবে এই সহিংস পরিস্থিতি থামাতে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সূত্র: প্রেস টিভি
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা টিমের সাথে দেশটির স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর ১টায় হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন রুমে সাক্ষাৎ করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ ইস্যুতে মার্কিন নীতি কী হতে যাচ্ছে- তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই বৈঠক। তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসে এসব তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, যুদ্ধে যোগদান এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে- বিশেষ করে ফোরদোতে ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম মজুদের স্থাপনায় হামলার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন।
এদিকে কিছুক্ষণ আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিষয়ে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা ঠিক জানি তথাকথিত 'সর্বোচ্চ নেতা' কোথায় লুকিয়ে আছেন।
ট্রাম্প লিখেছেন, তিনি সহজ লক্ষ্যবস্তু, কিন্তু সেখানে নিরাপদ - আমরা তাকে বের করে (হত্যা!) আনবো না, অন্তত এখনই নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কিন্তু আমরা চাই না বেসামরিক নাগরিক বা আমেরিকান সৈন্যদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ হোক। আমাদের ধৈর্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
এ ছাড়া এর আগে আরেক পোস্টে তিনি বলেন, ইরানের আকাশসীমা আমাদের নিয়ন্ত্রণে।
এই পোস্ট দুটির পরপরই তৃতীয় আরেকটি পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেছেন,আনকন্ডিশনাল সারেন্ডার! (নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ!)
ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাবে ইরান এবার নতুন এক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলিরেজা তালায়ি নিক।
তিনি বলেন, ‘যখন আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন আমাদের সশস্ত্র বাহিনীও পূর্ণমাত্রায় আক্রমণাত্মক সক্ষমতা প্রয়োগ করতে বাধ্য হয়।’ তিনি জানান, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) সফল পাল্টা হামলা চালিয়েছে এবং সেগুলোতে ইরানের নিজস্ব উন্নত অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলিরেজা জানান, মঙ্গলবারের নতুন হামলায় একটি সম্পূর্ণ নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা এর আগে কখনো ব্যবহৃত হয়নি। ইসরায়েল ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি আটকাতে তো পারেনি, এমনকি আগাম শনাক্তও করতে পারেনি বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাঠামোর ওপর হামলা চালানো হয়েছে, যা মার্কিন সহযোগিতায় বহুস্তরীয় আকাশ প্রতিরক্ষায় সুরক্ষিত ছিল। কিন্তু আমাদের গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র সেই বাধা অতিক্রম করে তাদের কেন্দ্রে আঘাত হানে—এটাই প্রমাণ করে শত্রুপক্ষের দুর্বলতা।
আলিরেজা তালায়ি নিক আরও বলেন, যত দিন যাবে, ততই ইসরায়েলি বাহিনীর ধৈর্য ও সক্ষমতা হ্রাস পাবে। কৌশলগত দিক থেকে তারা দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অবস্থায় নেই।
তিনি আশ্বস্ত করেন, ভবিষ্যতে ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর আরও ‘চমকপ্রদ সাফল্য’ পাবে।
যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়ানোর ঘোষণা না দিলেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা এখন ইরানের আকাশ পুরোপুরি এবং সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি।’
ট্রাম্পের এই বক্তব্যে ‘আমরা’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ইরানের কাছে আকাশ নজরদারির ভালো প্রযুক্তি ও প্রচুর প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ছিল, কিন্তু সেগুলো আমেরিকান তৈরি “জিনিসপত্রের” সঙ্গে তুলনীয় নয়। ভালোভাবে কেউ কিছু করলে সেটা করে আমেরিকা—পুরোনো দিনের সেই আমেরিকা।’
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ কথা জানিয়েছেন।
আল–জাজিরার খবর বলা হয়, নিয়মিত ব্রিফিংয়ে পেসকভ বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত বন্ধে প্রয়োজনে রাশিয়া মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত।
তবে পেসকভ বলেন, ‘বর্তমানে আমরা অন্তত ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের মধ্যস্থতা গ্রহণ বা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে যাওয়ার আগ্রহ দেখছি না।’
ইরান রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও, রাশিয়া বহু বছর ধরেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। ইসরায়েলকে দূরে ঠেলে না দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে মস্কো।
মস্কোর স্টেট ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের সহকারী অধ্যাপক নিকোলাই সুরকভ আল জাজিরাকে বলেন, রাশিয়া একটি অত্যন্ত জটিল ভারসাম্যের খেলা খেলছে। দেশটি আন্তরিকভাবেই একটা রাজনৈতিক সমাধান চায়।
ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের আকাশে ইরান থেকে ছোড়া নতুন ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গেছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাত ৯টার দিকে এ খবর জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, ইরান থেকে সর্বোচ্চ ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পরই জর্ডানের রাজধানী আম্মানে সাইরেন বাজতে শোনা যায়। আল জাজিরা সম্প্রচারে আসার ঠিক আগে আরেকবার সাইরেন বেজে ওঠে, যা ইঙ্গিত দেয় যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তখন আর জর্ডানের আকাশসীমায় নেই। পরে সেগুলোকে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও তেল আবিবের আকাশে দেখা গেছে।
এই মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের কোনো নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলের চিকিৎসা ও জরুরি সেবাদাতা সংস্থাগুলোও এখনো কোনো হতাহত বা আহতের তথ্য জানায়নি। এছাড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের কোনো দৃশ্যমান প্রমাণও এখনো মেলেনি।
তেল আবিব জেলার বাইরেও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সতর্কতা সাইরেন বাজানো হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় পরিস্থিতি কতটা বিস্তৃত।
ইরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা জানিয়েছে দেশটির মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান (এইচআরএএনএ)। সংস্থাটি জানায়, বোমা হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ইরানে ৪৫২ জন মানুষ নিহত এবং ৬৪৬ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
এইচআরএএনএ’র মতে, নিহতদের মধ্যে ২২৪ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১০৯ জন সামরিক সদস্য। এছাড়া ইসরায়েলের হামলায় ১৮৮ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১২৩ জন সামরিক সদস্য আহত হয়েছেন।
তবে ১১৯ জন নিহত এবং ৩৩৫ জন আহত ব্যক্তি সামরিক নাকি বেসামরিক তা শনাক্ত করতে পারেনি সংস্থাটি। ইরানের সরকারের পক্ষ থেকে এত হতাহতের তথ্য সম্পর্কেও কিছু জানানো হয়নি।
এর আগে ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুই শতাধিক নাগরিক নিহতের তথ্য জানিয়েছিল ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তানে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এক বৈঠকের কিছু বক্তব্য প্রকাশ করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। খবর আল জাজিরা।
কাজাখস্তানে রাজধানী আস্তানায় দেওয়া এক বক্তব্যে শি জিনপিং বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা হঠাৎ করে অনেক বেড়ে দিয়েছে। এ নিয়ে চীন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্য কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে লঙ্ঘন করে এমন সব কর্মকাণ্ডের আমরা বিরোধিতা করি।’
গত শুক্রবার ইরানে হঠাৎ করেই হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েল। এতে সামরিক ও পারমাণবিক বিভিন্ন স্থাপনায় হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী নিহত হন।
এরপর পাল্টা হামলা চালায় তেহরান। পঞ্চমদিনের মতো পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে ইরান-ইসরায়েলের।
ইরানে সব চিকিৎসক ও নার্সের ছুটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের দ্রুত কাজে ফিরে যেতেও বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) দেশটির উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৈয়দ সাজ্জাদ রাজাভি এ তথ্য জানিয়েছেন।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘চিকিৎসক ও নার্সদের সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে।’ পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি মনোবল ও মানসিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে চিকিৎসা দলগুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সবার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং যেকোনো প্রয়োজনে সহায়তা প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয় প্রস্তুত।‘ হতাহতের শিকারদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ নির্দেশিকা চিকিৎসা কেন্দ্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান রাজাভি।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণে দেশটি দুটিতে অবস্থানরত নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন। খবর আল জাজিরা।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোরালোভাবে পরামর্শ দিচ্ছে যে যত দ্রুত সম্ভব ইসরায়েল ও ইরান ত্যাগ করুন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা থেকে বিরত থাকুন।’
এর আগে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াও তাদের নাগরিকদের ইসরায়েল ও ইরান ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতকে বৈশ্বিক হুমকি আখ্যা দিয়ে এই সংঘাত অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ।
ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে এ আহ্বান জানান বলে মঙ্গলবার (১৭ জুন) প্রতিবেদনে জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, ‘ইসরায়েল যখন তাদের হামলার পরিসর ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে, তখন বলা কঠিন এই যুদ্ধক্ষেত্রের সীমা কোথায় গিয়ে থামবে—এটা বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্যই হুমকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সংঘাতের অবসান ঘটতেই হবে। যদি বিশ্ব এখন দৃঢ় পদক্ষেপ না নেয়, তবে তা ইসরায়েলের অপরাধে এক প্রকার সহায়তা করার নামান্তর হবে।’
প্রতিবেশী দেশ ইরাকের রাজধানী বাগদাদের রাস্তায় ইরানের সমর্থনে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজিত হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের পতাকা পুড়িয়ে ও ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানি সামরিক কমান্ডারদের ছবি প্রদর্শন করেন প্রতিবাদ জানায়।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
গত সপ্তাহে ইরানের ওপর ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার পর পুরো অঞ্চলে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে। একইসঙ্গে ইরান-সমর্থিত ইরাকি গোষ্ঠীগুলোর হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এসব গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে।
গত শুক্রবার ইরানে হঠাৎ করেই হামলা চালানো শুরু করে ইসরাইল। এতে সামরিক ও পারমাণবিক বিভিন্ন স্থাপনায় হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী নিহত হন।
এরপর পাল্টা হামলা চালায় তেহরান। পঞ্চমদিনের মতো পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে ইরান-ইসরাইলের।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতে ‘ঘি ঢালছেন’ বলে অভিযোগ করেছে চীন। খবর এএফপি।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তেহরানের বাসিন্দাদের ‘অবিলম্বে সরে যেতে’ সতর্ক করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) বেইজিংয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের মন্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, ‘আগুন উসকে দেওয়া, ঘি ঢালা, হুমকি দেওয়া এবং চাপ সৃষ্টি করা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে না, বরং কেবল সংঘাতকে আরও তীব্র ও বিস্তৃত করবে।’
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের ওপর যেসব দেশের বিশেষ প্রভাব রয়েছে, চীন তাদেরকে পরিস্থিতি অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে উত্তেজনা কমানো ও এই সংঘাতকে আরও ছড়িয়ে পড়া থেকে প্রতিহত করা।
পাশাপাশি ইসরায়েলে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের ‘যত দ্রুত সম্ভব’ দেশটি ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলে চীনের দূতাবাস।
দূতাবাস সামাজিক মাধ্যম উইচ্যাটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে উল্লেখ করে, ইসরায়েলে অবস্থিত চীনের (কূটনীতিক) মিশন দেশটির নাগরিকদের অবিলম্বে স্থল সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে ইসরায়েল ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দিচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে পূর্বশর্ত হলো, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তবেই দেশত্যাগ করা উচিত।
প্রসঙ্গত, কয়েক দশকের শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ও পরোক্ষ যুদ্ধের পর গত শুক্রবার ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের দাবি, ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সে কারণেই তারা এ হামলা শুরু করেছে।
তবে তেহরান বরাবর দাবি করে এসেছে, শুধু শান্তিপূর্ণ কাজেই তাদের পরমাণু প্রকল্প ব্যবহার করা হবে।
টানা পাঁচ দিন ধরে চলছে দুই পক্ষের সংঘাত। এতে বড় আকারে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের মাঝ আকাশে মিসাইল হামলার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশি এক পাইলট। এনাম তালুকদার নামে সেই পাইলট বর্ণনা করছেন তার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।
তিনি জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রিয়াদের উদ্দেশ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট যখন রাত ২টা ১৫ মিনিটে উড্ডয়ন করে, তখন আকাশ শান্ত ছিল, আবহাওয়া অনুকূল ছিল। ককপিটের দায়িত্বে ছিলেন বিমানের ফ্লাইট সেফটির প্রধান ক্যাপ্টেন এনামুল হক এবং তার পাশে ছিলেন কো-পাইলট রাফসান রিয়াদ।
ক্যাপ্টেন এনামুল স্মরণ করেন, ‘ভারত, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকাশসীমা পেরিয়ে আমরা বাহরাইনের দিগন্তের কাছাকাছি পৌঁছলাম। স্থানীয় সময় তখন ভোর ৫টা (১৪ জুন)। ৪০,০০০ ফুট উচ্চতায় পৃথিবী দেখতে সব সময়ই অসাধারণ লাগে। কিন্তু সেই অনুভূতি দ্রুতই মিলিয়ে গেল – তার বদলে নেমে এলো আতঙ্ক ও ভয় – কারণ আমরা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত কিছু দেখলাম।’
তাদের বিমান পারস্য উপসাগরের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। ডানদিকে ইরান; বামে এবং কিছুটা পেছনে বাহরাইন। সূর্য তখনো ওঠেনি, তবে পূর্ব দিগন্তে একটি ক্ষীণ আভা দেখা দিতে শুরু করেছিল।
হঠাৎ করেই ইরানের আকাশে একটি উজ্জ্বল ঝলক দেখা গেল। প্রথমে এনামুল ভেবেছিলেন এটি হয়তো কোনো নিয়মিত সামরিক মহড়ার অংশ। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই তিনি এবং তার কো-পাইলট দেখতে পেলেন – ক্ষেপণাস্ত্র। ডজন ডজন, এমনকি তারও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুত গতিতে একের পর এক পশ্চিম দিকে ছুটে যাচ্ছিল।
‘আমার কো-পাইলটও হতবাক হয়ে গিয়েছিল। আমরা অবিলম্বে আমাদের উড্ডয়নের রুট পর্যালোচনা করতে শুরু করলাম। একটি প্রশ্ন আমার মনে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল: যদি সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে একটিও পথচ্যুত হয়? এই চিন্তাই আমার মেরুদণ্ড দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।’
একজন অভিজ্ঞ পাইলট হিসেবে তিনি এর আগেও উচ্চ-ঝুঁকির পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন – কিন্তু এমন কিছু কখনো নয়। ‘আকাশ জুড়ে জ্বলন্ত তীর ছুটে যাচ্ছে, আমাদের বিমান থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে।’
কর্মীরা দ্রুত নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে তাদের গতিপথ পরিবর্তন করেন এবং অবশেষে রিয়াদে নিরাপদে অবতরণ করেন।
‘ভূমিতে নামার পর আমি আমার ফোন চালু করলাম – এবং শিরোনামগুলো ভেসে উঠল: 'ইরান ইসরায়েলের উপর বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে',’ তিনি বলেন।
এটি কেবল একটি সামরিক পদক্ষেপ ছিল না – এটি একটি যুদ্ধের শুরু বলে মনে হয়েছিল, এমন একটি যুদ্ধ যা দুটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এখন ঝুঁকির মধ্যে বলে মনে হচ্ছিল।
‘সেদিন সকালে আমি কেবল একজন পাইলট ছিলাম না। আমি ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলাম – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের কিনারা থেকে একটি সংঘাতের শুরু উন্মোচিত হতে দেখেছিলাম।’
তারা যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দেখেছিলেন সেগুলো সম্ভবত দীর্ঘ-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল – কেবল অস্ত্র নয়, এনামুল পর্যবেক্ষণ করেন; এগুলো ছিল একটি কৌশলগত বার্তা। এই প্রক্ষেপণগুলো লক্ষ্যবস্তুতে ফিরে আসার আগে শত শত কিলোমিটার উপরে প্রায় মহাকাশে উঠে যায়।
তিনি যোগ করেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের আকাশসীমা আর কেবল একটি ট্রানজিট করিডোর নয়; এটি একটি বিতর্কিত এবং সম্ভাব্য বিপজ্জনক অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে।’
সৌভাগ্যবশত, যাত্রীরা তারা যে বিপদের মধ্য দিয়ে অজান্তেই পার হয়ে এসেছেন তা জানতে পারেননি। ‘আমরা নিরাপদে অবতরণ করতে পেরেছিলাম, কিন্তু প্রশ্নটি এখনো আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে: আমরা যে আকাশে উড়ি তা কতটা নিরাপদ?’
ইরান-ইসরায়েলের চলমান উত্তেজনা কাতারের রাজধানী দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি। এ সময় তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলায় কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। পাশাপাশি আঞ্চলিক শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে সহিংসতার পথ পরিহারের করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার ঘটনাকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ইসরায়েলি এই হামলার ‘ভয়াবহ পরিণতি’ হতে পারে উল্লেখ করে কড়া নিন্দা জানান তিনি।
মাজেদ আল-আনসারি বলেন, এই হামলার সময়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ইরান যখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে ইতিবাচক পথে আলোচনায় প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই এই হামলা চালানো হয়েছে। আর ওই আলোচনায় আঞ্চলিক অনেক দেশ সরাসরি যুক্ত ছিল।
তিনি বলেন, কাতার এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্যস্থতায় সক্রিয় রয়েছে এবং একটি চুক্তির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ রয়েছে বলে দোহা বিশ্বাস করে।
আনসারি বলেন, আমরা ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ চালিয়ে যাব।
সূত্র: আল জাজিরা।