শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণ করেন’

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:২৫

‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে প্রথম বাঙালি হিসেবে বাংলায় ভাষণ দিয়ে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি এবং বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমুন্নত করেছেন।’

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে একথা বলেন।

হাইকমিশনার আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ; যা তিনি বাংলাই দিয়েছিলেন। সে ভাষণও ইউনেস্কো তার অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাংলা ভাষার জন্য এটিও একটি অনন্য গৌরবের বিষয়।’

সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে সর্বোচ্চ সন্মানের আসনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার অব্যাহত দাবী জানিয়ে চলেছেন।’

আরো পড়ুন: চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের ৮০০০ মাতৃভাষার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন। এজন্য তিনি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন।’

লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন (বৃহস্পতিবার) যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে। দিনের শুরুতে হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম হাই কমিশন ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। এরপর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। ভাষা শহীদদের এবং বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।

বিকেলে বাংলাদেশ হাই কমিশন ও যুক্তরাজ্য ইউনেস্কো কমিশন যৌথ উদ্যোগে এবং লন্ডনে অবস্থিত ১১টি দেশের এম্বাসি ও  হাই কমিশনের সহযোগিতায় মিলেনিয়াম গ্লস্টার হোটেলে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম। শুরুতেই তিনি ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণ করেন ও এই ঘটনায় নিহত ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানান।

এ সময় বক্তব্য দেন ফরেন এ্যফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান টম টুগেনহ্টা, শেডো সেমিস্টার ফর ওয়ার্ক ও পেনশন স্টিফেন টিমস, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য  কীথ ভাজ, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট সদস্য জিন ল্যামবার্ট,  কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল পেট্রিশিয়া স্কটল্যান্ড, আইএমও সেক্রেটারি জেনারেল কিটাক লিম, ইউকে কমিশন ফর ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী ও সেক্রেটারি জেনারেল জেমস ব্রীজ, প্রখ্যাত সাংবাদিক ও একুশের অমর সংগীত রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাঙ্গুয়েজ ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক অদিতি লাহিড়ী, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতিনিধি ও যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ এবং ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের প্রতিনিধি ড্যানিয়েল পাশা।

অনুষ্ঠানে দিবসটির উপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। পরে সাইপ্রাস, কোস্টারিকা, কিউবা, মিশর, ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, ইরান, ওয়েলস (যুক্তরাজ্য) এবং স্বাগতিক দেশ বাংলাদেশের শিল্পীরা এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিজ নিজ ভাষায় সংগীত ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। ছয় শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথি অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।

এর আগে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর রাত ১২.০১ মিনিটে বাংলাদেশ হাই  কমিশনার প্রথানুযায়ী স্থানীয় কাউন্সিল টাওয়ার হেমলেটের মেয়র জন বিগস্সহ পূর্ব লন্ডনের আলতাফ আলী পার্কস্থ শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। হাই কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির সর্বস্তরের সদস্যবৃন্দ এ সময় ভাষা শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ইত্তেফাক/বিএএফ