যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া শহরে স্থানীয় কংগ্রেসম্যান, জনপ্রতিনিধি, শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক, মনোবিজ্ঞানী, মানবাধিকারকর্মী, সমাজকর্মী, অভিনেত্রী, মডেল, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবর্গসহ ফিলাডেলফিয়ায় বসবাসরত বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হল “বিশ্ব শরণার্থী দিবস: রোহিঙ্গাসহ বিশ্বের দীর্ঘস্থায়ী শরণার্থীদের সমসাময়িক হুমকিসমূহ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার।
ফিলাডেলফিয়ারা প্রবাসী তরুণ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মী মো. লুৎফর রহমান হিমুর প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ গ্লোবাল ফাউন্ডেশন এই সেমিনারের আয়োজন করে।
এতে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ছিলেন নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের মন্ত্রী নিলা টেইলর, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন এর সিনিয়র পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার মিজ ডানা সিলেইম্যান, বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ড. ওচিমা পিটম্যানা, মানবাধিকার প্রবক্তা জোসেফ হ্যারিস, ফিলাডেলফিয়ার ৬০নং ওয়ার্ডের কমিটিম্যান গ্রেক থম্পসন, ফ্যাশান ডিজাইনার ও আর্টস্ অর্গানাইজার ভ্যানি তাওসাইন্যান্ট, সঙ্গীত শিল্পী, মিজ্ টিন ইন্টারন্যাশনাল বিউটি ও মিজ্ ভারত, নিউইয়র্ক সুজান কচ, আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ফটোগ্রাফার ও ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকার উলিসি টাওসাইনটিস, অভিনেত্রী, মডেল ও মানবাধিকার কর্মী ইভি ডমিনিকুই, শিশুতোষ বই এর লেখক ও সঙ্গীত প্রযোজক আলবার্ট রিড, সাউথ সুদানের সাবেক শরণার্থী বর্তমান মানবাধিকার কর্মী নায়ামাল টুডিয়াল ও বাংলাদেশের আরটিভির সিইও আশিক রহমান। অনুষ্ঠানটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিকের উপস্থিতি।
সেমিনারটিতে বক্তব্য প্রদানকালে রাষ্ট্রদূত মাসুদ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের মূল চ্যালেঞ্জসমূহ বিশেষ করে সঙ্কট সমাধানের মিয়ানমারের অসহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। এক্ষেত্রে জাতিসংঘে ভূমিকা রাখা, রোহিঙ্গাদের জন্য একক বৃহত্তম মানবিক সহায়তা প্রদান, মিয়ানমারের উচ্চপদস্থ ৫জন মিলিটারি কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, সহিংসতাকে ‘জাতিগত নির্মূল’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ-এ রেজুলেশন গ্রহণসহ নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার জন প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজ আপনারা রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে যে একাত্বতা দেখালেন তা সত্যিই বিরল। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে আরও মানবিক ও রাজনৈতিক সহায়তা, দায়বদ্ধতা নিরূপনে চাপ প্রয়োগ, আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও মিয়ানমারে সংঘটিত গণহত্যাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে আখ্যাদান ইত্যাদি বিষয়ে আরও ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে স্থানীয় কংগ্রেসম্যানগণ যাতে পদক্ষেপ নেন সে অনুরোধ জানান রাষ্ট্রদূত মাসুদ। এছাড়া এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সহায়তা কামনা করেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইটসিআর) এর সিনিয়র পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার মিজ ডানা সিলেইম্যান বিশ্বের শরণার্থী সমস্যার বর্তমান পরিস্থিতি ও সমসাময়িক চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন। ইউএনএইচসিআর শরাণার্থীদের জন্য যে সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে করে তা উল্লেখ করেন তিনি।
সঙ্গীত শিল্পী, মডেল, মিজ্ টিন ইন্টারন্যাশনাল বিউটি ও মিজ্ ভারত নিউইয়র্ক সুজান কচ রোহিঙ্গা সঙ্কটের আদ্যপান্ত তুলে ধরেন। এই কিশোরীর সাবলিল ও হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা সকলেরই দৃষ্টি কাড়ে।
আরটিভির সিইও আশিক রহমান রোহিঙ্গা সঙ্কটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়োকোচিত ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি আরটিভির প্রযোজনায় রোহিঙ্গাদের উপর নির্মিত ‘জন্মভূমি’ সিনেমার বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
ইত্তেফাক/বিএএফ