বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মার্কিন কংগ্রেসকে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের অনুরোধ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

আপডেট : ১৮ জুলাই ২০১৯, ১৩:২২

রোহিঙ্গা ইস্যুর টেকসই সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসকে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উভয়কক্ষের পররাষ্ট্র সম্পর্কিত কমিটির প্রভাবশালী পাঁচজন সদস্যের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে এ অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ এবং টেকসই সমাধানে শুধু অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা নয়, রাজনৈতিক সমর্থনও দরকার।

রাশিয়া এবং গণচীন যাতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তরিক অর্থে সোচ্চার হয়, সে ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।

বৈঠক শেষে এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ইউএস সিনেটে পররাষ্ট্র সম্পর্কিত কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর (রিপাবলিকান) জেমস ই রিস, প্রভাবশালী সদস্য সিনেটর (ডেমক্র্যাট) বব মেনেন্ডেজ, প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্র সম্পর্কিত কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান (ডেমক্র্যাট) ইলিয়ট অ্যাঙ্গেল, এশিয়া সম্পর্কিত সাব কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান (ডেমোক্রেট) বব শারমেন এবং কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং-এর সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার প্রশাসন একটি জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূলের ষড়যন্ত্র করেছে এবং গণহত্যার সঙ্গে নিজেদের জড়িত করেছে। এতদসত্বেও যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি তাদের আরো জানিয়েছি যে মিয়ানমারের সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা হচ্ছে সিঙ্গাপুর থেকে। জাপান ও ইউরোপের অনেক দেশই মিয়ানমারের গণহত্যার নিরব সমর্থক। এরা সকলেই যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু। এর আগে ভেনিজুয়েলা ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমার প্রশ্নে তাদের একইভাবে সোচ্চার হওয়া জরুরি। এধরনের আরো কিছু ইস্যুতে তাদের সঙ্গে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে বলে জানান ড. মোমেন।

বাংলাদেশের বিগত নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বলে সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানরা মন্তব্য করেন। এর জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাটাগরিক্যালি তাদেরকে জানিয়েছেন যে ৪১ হাজার পোলিং বুথের মধ্যে মাত্র ২১টিতে অনিয়ম ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর নির্বাচন স্থগিত করা হয়। নির্বাচন কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। ড. মোমেন এ সময় পাল্টা তথ্য উপস্থাপন করে কংগ্রেসম্যান ও সিনেটরদের জানিয়েছেন, ‘২০০৮ এবং ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়েও নানা কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বিদেশীদের হস্তক্ষেপের কথাও আজ সর্বজনবিদিত।

বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আলোকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর পুলিশের বুলেটে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। কারাগারেও সহস্রাধিক আমেরিকানের মৃত্যু হচ্ছে। এসবের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। মানবাধিকারের প্রতিটি ইনডেক্সেই বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন ডিসি সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্সের কথা অবহিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধিদের। এছাড়া, রোহিঙ্গা মুসলমানেরা যাতে খুব দ্রুত সসম্মানে নিজ নিজ বসতভিটায় ফিরতে পারে সে জন্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান তিনি।
 
সিনেট ও কংগ্রেসে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির শীর্ষ নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন খুব দ্রুত রোহিঙ্গা ইস্যুতে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণের। এসময় অবশ্য তারা ড. মোমেনের কাছে জানতে চান যে গণচীনের নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে। তারা কী বলেছেন। ড. মোমেন তাদের জানান যে গণচীনের নেতারাও আশ্বাস দিয়েছেন শিগগির মিয়ানমার সমস্যায় তারা কার্যকর চেষ্টা চালাবেন।

নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নতির পথে ধাবিত হচ্ছে সে তথ্যও সবিস্তারে উপস্থাপন করেন সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানদের কাছে। এসব বৈঠকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

ইত্তেফাক/আরকেজি