শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার দাবিতে গ্রীসে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:৩৮

রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার ও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে গ্রীসে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দেশটির রাজধানী এথেন্সের সংসদ ভবনের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গ্রীসের বর্ণবৈষম্য বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড মুভমেন্ট এগেইনস্ট রেসিজম এবং ফ্যাসিজমসহ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রীস এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।

প্রতিবাদ সমাবেশে ইউনাইটেড মুভমেন্ট এগেইনস্ট রেসিজম এবং ফ্যাসিজম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, মিয়ানমারের নির্বিচারে মানব হত্যায় সারা পৃথিবী আজ লজ্জিত। মিয়ানমার সে দেশের রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়াসহ পৈশাচিক, বর্বর আচরণ করে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। সেই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমার তাদের ফেরত নিচ্ছে না। মিয়ানমারের গণহত্যার বিচারের দাবিতে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করেছে আফ্রিকা মহাদেশের দেশ গাম্বিয়া। সেই মামলার শুনানি ১০,১১ ও ১২ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

এসময় মিয়ানমারের নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদ, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া এবং জাতিসংঘে বিচারের দাবিতে সব দেশকে এক সাথে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশ থেকে মিয়ানমারের গণহত্যা ও লুণ্ঠনকারীদের বিচার ও রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত নেওয়ার দাবি জানান তারা।

আরও পড়ুন: মিয়ানমারের বক্তব্য ‘ফ্রড’: গাম্বিয়া

প্রতিবাদ সমাবেশে গ্রীসে বসবাসকারী বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, মিশর, ভারত, পাকিস্তান ও গাম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক, জেলা ও বিভাগ ভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠন, নারী নেতৃবৃন্দ অংশ নেয়। এথেন্সে অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দোয়েল একাডেমি এবং বাংলা-গ্রীক শিক্ষা কেন্দ্র এর ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পরিচালকমন্ডলী অংশগ্রহণ করেন। বিপুল সংখ্যক নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোর এবং নারীরা এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগদান করে। গ্রীসের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া প্রতিনিধিগন ও বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি গ্রীসের প্রিন্ট এবং ইলেকট্রিক মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।

প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে গ্রীসের সংসদ ভবন সিনতাগমার সামনে বিশাল এক মানববন্ধন এবং প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনের পরে গ্রীসের জাতিসংঘ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের প্রতিনিধি কার্যালয়ে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। গ্রীসে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধির কার্যালয়ে আর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

এই সমাবেশের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে-জাতিসংঘের আদালতে মিয়ানমারের বিচারের দাবি এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার পক্ষে গ্রীসে বিপুল জনমত গড়ে উঠেছে। গ্রীসের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই দাবির পক্ষে এগিয়ে এসেছে।

ইউনাইটেড মুভমেন্ট এগেইনস্ট রেসিজম এবং ফ্যাসিজম সংগঠন এর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, আগামী রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) গ্রীসের সকল মানবাধিকার সংগঠনের উদ্যোগে একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশেও মিয়ানমারের বিচার এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি অত্যন্ত জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কমিউনিটির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, সিনিয়র সভাপতি আহসানউল্লাহ হাসান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গ্রীসের সভাপতি মান্নান মাতুব্বর, সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাওলাদার, এথেন্স সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর পেতরোস কোসটানটিনোস, গ্রীসের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলের কো-অর্ডিনেটর ফানিস পাপাডোপুলোস, থেওদোরোস মানদিলারাস, ইয়োরগোস দালাস, আরিফুর রাহমান আরিফ (সিরাজ), পাকিস্তান কমিউনিটির সভাপতি জাভেদ আসলাম, এথেন্স চেম্বার প্রতিনিধি জহির ডাকুয়া, দোয়েল একাডেমির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দেওয়ান, বিশিষ্ট মুক্তিযাদ্ধা দোয়েল সাংস্কৃতিক সংগঠনের সিনিয়র ভাইস আব্দুল কুদ্দুস সিকদার, দোয়েল একাডেমির প্রধান শিক্ষক জাহিদুল হক, দোয়েল একাডেমির সিনিয়র ভাইস সোহরাব হোসেন ইসমাইল, দোয়েল একাডেমির সহ-সভাপতি হাজী মোক্তার হোসেন, এথেন্স গ্রীক বাংলা স্কুলের প্রধান দাদন মিয়া, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সামাদ মাতুব্বর, আলিম খালাসী আবিদ হানজালা, আলমগীর তালুকদার, রানা মল্লিক, সোবহান বেপারী, লোকমান উদ্দিন, বরিশাল বিভাগীয় সংগঠনের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম জামান ,বাবুল মল্লিক, বিএনপি নেতা সান্ত সরকার, সরোয়ার আলম, পাভেল ভুইয়া, বিথি সরকার ও ইভা হকসহ হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি।

ইত্তেফাক/এএএম