শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রবাসে ভালো নেই ওরা

আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৪:২৩

দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির এই সন্তুষ্টিরও বড়ো অবদান রয়েছে তাদের। কিন্তু বিদেশ-বিভুঁইয়ে তারা কি ভালো আছে? কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠালেও তাদের অবস্থা এমন যে, নানামুখী সংকটে তারা আজ নিপতিত। প্রতারণা, জালিয়াতদের খপ্পর থেকে শুরু করে দেশে ফেরত আসার মতো অবস্থা হয়েছে তাদের। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। মালয়েশিয়া তো একটি কর্মসূচিই চালু করেছে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে। বিভিন্ন দেশের জেলহাজতেও রয়েছে অনেক প্রবাসী। যারা নানাভাবে প্রতারণার শিকার।

বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অসাধু জনশক্তি রপ্তানিকারক সিন্ডিকেটের কারণে অভিবাসন ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি বিদেশে গিয়েও প্রতারিত হচ্ছেন তারা। শুধু তাই নয়, জীবন নিয়েও শঙ্কিত অনেকে। নিরাপত্তাহীনতায় মানবেতর দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, মালদ্বীপসহ ইউরোপের অনেক দেশের প্রবাসীরা কষ্টে দিন যাপন করছেন। এসব দেশে বন্দি হয়ে আছেন অনেক শ্রমিক। আবার অনেকেই জুলুম-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।

বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক থাকে সৌদি আরবে। সম্প্রতি সেখানে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। কাজের অনুমতিপত্র (আকামা) থাকলেও শ্রমিকদের দেশে ফেরত আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। পাশাপাশি, সৌদি আরবে দিন দিন কাজের জায়গা কমে আসছে। ভিসা জটিলতার কারণেও অনেককে ভিন্ন কাজ করতে হচ্ছে। তাতে আবার বাধ সাধছে সৌদি পুলিশ। তারা শ্রমিকদের গ্রেফতার করছে।

সৌদি আরবের বর্তমান সরকারের ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে প্রতিটি জায়গায় সৌদি নাগরিকদের নিয়োগকরণ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে প্রবাসীদের চাহিদা। কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে যাচ্ছেন অনেক প্রবাসী। এসব শ্রমিকের আকামা নবায়ন, লেবার (শ্রম) ফি, কফিলের (নিয়োগকর্তা) মাসিক টাকা, নিজের আনুষঙ্গিক খরচ জোগাড় করতে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। সৌদিতে ফ্রি-ভিসায় যাওয়া লোকজন এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন বেশি। সব জায়গায় সৌদি নাগরিকদের প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যবসার ওপরও নানান শর্ত দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

দালালদের পাশাপাশি বিভিন্ন দূতাবাস, কনস্যুলেট, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণেও শ্রমিকরা প্রতারিত হয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া অন্যতম। সেখানেও অবৈধভাবে বসবাসকারীদের ধরপাকড় চলছে। আর অবৈধ হয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের কারণেই। ভিসার মেয়াদ বাড়ানো কিংবা অন্য যে কোনো সহযোগিতায় কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ধরনা দিতে হয়। হাইকমিশনে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দুর্ব্যবহার, দালালচক্রের মাধ্যমে ঘুষের লেনদেন এখানে ওপেন-সিক্রেট বলে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে। হাইকমিশনে থেকে যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত শ্রমিকদের উলটাপালটা বুঝিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয় দালালচক্র। একপর্যায়ে বৈধরাও অবৈধ হয়ে যায়।

মালয়েশিয়া সম্প্রতি ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচি চালু করেছে। অবৈধ শ্রমিকদের এই প্রক্রিয়ায় দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। তাদের ফেরত আনতে বাংলাদেশ বিমান বিশেষ ফ্লাইটও চালু করেছে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ৫০ হাজার কর্মীকে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরত আসতে হচ্ছে। নইলে তাদের বিরুদ্ধে সে দেশের আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভিসা-বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতি বন্ধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তত্পরতা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। একই সঙ্গে কূটনৈতিক তত্পরতা চালিয়ে আরো বেশি দক্ষ-আধাদক্ষ শ্রমিক রপ্তানির উদ্যোগ নিলে অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যে দেশে কর্মীরা যায় সে দেশের নিয়োগকর্তাদেরও তাদের সরকারের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এটি কূটনৈতিকভাবেই উদ্যোগ নিলেই কেবল সম্ভব হবে। তবে ভিসা-বাণিজ্য বন্ধে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে শুধু ভিসা প্রসেস করার সুযোগ দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সূত্রগুলো। পাশাপাশি ডাটাবেজ এবং নিয়মিত মনিটরিং করলে সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।

ইত্তেফাক/জেডএইচ