যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা ও জন্ম নেওয়া শিশু-কিশোরদের মাঝে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে নিউইয়র্কের একটি অলাভজনক সংগঠন অংকুর। স্থানীয় সময় শনিবার বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে ‘কানেক্ট বাংলাদেশ’ নামে এক অনুষ্ঠানে অর্ধশতাধিক শিশু-কিশোর অংশ নেয়। এসব শিশুর সঙ্গে এসেছিলেন তাদের অভিভাবকেরাও।
অনুষ্ঠানের অতিথি ও বক্তা সবকিছুই ছিলো আগামী প্রজন্ম। তাদের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশটির উন্নয়ন অগ্রগতি সম্পর্কে জানানোর জন্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল বাতেন এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান।
অনুষ্ঠানের আয়োজক ও অংকুর-এর প্রতিষ্ঠাতা নিউইয়র্কে বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিত্সক ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ‘মাঝে মাঝে নিজের কাছে কেমন যেনো অপরাধী লাগে এই ভেবে যে, আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে প্রিয় দেশটাকে ঠিকভাবে তুলে ধরতে পারছি না। এ কারণে ‘কানেক্ট বাংলাদেশ’ নামে এই উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে নিউইয়র্ক ছাড়াও অন্যান্য স্টেটেও এ ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হবে। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলবো, বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার আহবান জানাবো।’
মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল বাতেন এসময় এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশু কিশোররা, বাংলাদেশকে আরও গভীরভাবে জানা ও বোঝার সুযোগ পাবে।’
কণ্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কয়েকটি গান গেয়ে শোনান। গানের ফাঁকে ফাঁকে তিনি যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। সাংবাদিক ও লেখক শামীম আল আমিনের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় শিশু, কিশোর, তরুণ ও তাদের বাবা মায়েরা কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। গান দুটিতে কণ্ঠ মেলান উপস্থিত সবাই। বাংলাদেশের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয় এরপর। ডা. ফেরদৌস খন্দকার একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে শিশুদের কাছে বাংলাদেশকে আরো গভীরভাবে পরিচয় করিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানে আবিবা ইমাম দ্যুতির কণ্ঠে হৃদয় ছোঁয়া গান, জারিন মাইশার গলায় ‘আমি বাংলায় গান গাই’; অপর্ণা আমিনের কণ্ঠে জোয়ান বায়েজের ‘বাংলাদেশ’ গান মনে দাগ কাটে সবার। গোটা মিলনায়তন জুড়ে তখন ছিল পিনপতন নিরবতা। আর সাইফ যখন ইংরেজিতে একটি প্রেমের গান ধরলো, তখন উপস্থিত কিশোর-তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উচ্ছ্বাস! বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নিয়ে সাফোয়ানের কবিতা আবৃত্তি এবং নিজের লেখা কবিতায় জনম সাহা ছড়িয়ে দিয়েছিল অন্য শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস। হাজার মাইল দূরে বসে এভাবেই বাংলাদেশের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা একঝাঁক আগামী প্রজন্ম।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিয়ে আগামী প্রজন্মের মধ্যে একটি জরিপ চালানো হয়। আয়োজকরা জানিয়েছেন, জরিপের ফলাফল শিগগিরই প্রকাশ হবে। প্রবাসে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম নিজেদের শেঁকড় সম্পর্কে কতটা জানে তা জানা যাবে এই জরিপে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের উপহার ও সনদপত্র দেয়া হয়।
ইত্তেফাক/আরএ