বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইসলামাবাদে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:২১

যথাযথ মর্যাদা ও ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রাঙ্গনে  মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। সকালে চান্সারি প্রাঙ্গনে হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি ও ইসলামাবাদে বসবাসকারি বাংলাদেশি নাগরিকগণ কালব্যাজ ধারণ করেন। সকলের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে উত্তোলন করেন পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহসান। দিবসটি উপলক্ষে চান্সারি প্রাঙ্গণ বাংলা বর্ণমালা ও ভাষা দিবসের পোস্টারে সজ্জিত করা হয়। 

ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে চান্সারি প্রাঙ্গনে একটি অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। হাইকমিশনার তারিক আহসান মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। ইসলামাবাদে বসবাসকারি বাংলাদেশি নাগরিকগণও শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় সকলে ’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি গাইতে থাকেন।

চান্সারি প্রাঙ্গনে শিশুদের বাংলা ভাষা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১০জন শিশু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। পরে, হাইকমিশনার ও তার পত্নী বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণ করেন।

সন্ধ্যায়, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে এক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। এরপর ভাষা আন্দোলনে ভাষা শহীদ ও ভাষা সৈনিকদের গৌরবোজ্জ্বল অবদানের কথা ও দিনটিকে ইউনেস্কো কতৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

হাইকমিশনার তারিক আহসান তার বক্তৃতায় বাহান্নর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদানের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল ভাষা সৈনিকের প্রতি। তিনি বলেন যে, মৌলিকত্ব, শব্দ সম্ভার আর শিল্প-সাহিত্য চর্চার উৎকর্ষের বিচারে বাংলা ভাষা শুধু উপমহাদেশ না এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠ ভাষাগুলোর একটি। অথচ, দেশ বিভাগের পর সংখ্যাগরিষ্ট বাঙ্গালীর এই গৌরবময় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা থেকে বি ত করতে চেয়েছিল সেসময়ের শাসকগোষ্ঠী। আত্মত্যাগ আর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙ্গালী মাতৃভাষার অধিকার আদায় করেছিল। এই নৈতিক বিজয়ের আবেদন সর্বজনীন আর চিরকালীন। এই আবেদনই ১৯৯৯ সনে ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার মূলে কাজ করেছে।

আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও অতিথিবৃন্দ সমবেতকন্ঠে ’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি পরিবেশন করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে একুশের কবিতা আবৃত্তি করা হয়। এরপর ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাছাড়া, ঢাকায় চলমান একুশে গ্রন্থমেলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্মিত ’বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন’-কে কেন্দ্র করে সম্পাদিত আরেকটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের মাঝে বাংলাদেশী খাবার পরিবেশন করা হয়।

ইত্তেফাক/আরকেজি