মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা: রেস্টুরেন্ট আগুনে পুড়লেও আন্দোলনকারীদের পক্ষে বাংলাদেশি মালিক

আপডেট : ৩০ মে ২০২০, ১০:৫৯

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার জেরে মিনিয়েপোলিসে চলমান বিক্ষোভ ও আন্দোলনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে এক বাংলাদেশির রেস্টুরেন্ট। 'গান্ধী মহল' নামের এই রেস্টুরেন্টের মালিক অবশ্য বিষয়টি নিয়ে বিচলিত নয়। বরং তিনি জানান, ন্যায় বিচার পেতে আমার পুরো ভবন আগুনে পুড়লেও আপত্তি নেই।

শুক্রবার সকালে বাংলাদেশি-ভারতীয় রেস্টুরেন্ট 'গান্ধী মহল'-এ আগুন লাগার কথা হাফসা ইসলাম ও তার পরিবার জানতে পারে ভোরে। হাফসা ইসলামের বাবা এই রেস্টুরেন্টের মালিক। এ প্রসঙ্গে হাফসা ইসলাম (১৮) বলেন, 'প্রথমে আমা খুব রাগ হয়। এটি আমার পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস।' কিন্তু এরপর তিনি তার বাবাকে কথা বলতে শোনেন। তার বাবা রুহুল ইসলাম ফোনে তার কোন এক বন্ধুকে বলছিলেন, 'আমার ভবন পুড়ে যাক।.. ন্যায় বিচার পেতে হবে।'

পরবর্তীতে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে রেস্টুরেন্ট দেখতে যান রুহুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, ভবন আবারো নির্মাণ করা যাবে। কিন্তু একজন মানুষকে আবারো তৈরি করা সম্ভব নয়। কমিউনিটি এখনো আমাদের পাশে আছে। আমরা আবারো একত্রে কাজ করে এটি নির্মাণ করব।

গান্ধী মহল রে্স্টুরেন্টের বাহিরে দাঁড়িয়ে রুহুল ইসলাম

গান্ধী মহল রে্স্টুরেন্টের বাহিরে দাঁড়িয়ে রুহুল ইসলাম

বিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় সব সময়ই সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্র। সেই যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়েপোলিস শহরে গত সোমবার পুলিশ হেফাজতে মারা যান কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড। তিনি একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। এই ঘটনার একটি ভিডিও’তে দেখা যায়, এক পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরে রেখেছেন। সে সময় ফ্লয়েড বলতে থাকেন, প্লিজ, আমি শ্বাস নিতে পারছি না, আমাকে মারবেন না। এক পথচারী সে সময় ফ্লয়েডকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে অনুরোধ করেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে ফ্লয়েডকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনার সময় সেই রাস্তায় উপস্থিত ছিলেন রুহুল ইসলামের স্ত্রী। পার্ট টাইম ফুড ডেলিভারের কাজ করার সময় তিনি রাস্তায় লালবাতি দেখে গাড়ি থামান। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, এই ভয়াবহ দৃশ্যটি আমি দেখেছি। কিন্তু তখনো আমি জানতাম না সে মারা গেছে।' এ সময় আন্দোলনকারীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারছি কেনো তারা এমনটি করেছে। তারা শুরুতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে, কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি।

২০০৮ সালে অর্থনৈতিক মন্দা চলাকালে 'গান্ধী মহল রেস্টুরেন্ট' চালু করেন রুহুল ইসলাম। ব্যক্তিগতভাবে তিনি অহিংস আন্দোলনের পক্ষে। আর সে কারণেই নিজের রেস্টুরেন্টের নাম রেখেছেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নামে। তিনি বলেন, আমি এখনো অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিবো। কিন্তু আমাদের তরুণ প্রজন্ম প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ এবং তাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

পরিবারটি আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা সহায়তার জন্যও কাজ করে যাচ্ছে। রুহুল ইসলামের স্ত্রী জানান, একজন নারীর চোখে রাবার বুলেট লেগে সে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছে। আরেকজন ঘাড়ে রাবার বুলেটের আঘাতে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার পুলিশের ছোড়া টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট থেকে বাঁচতে অনেকেই ঢুকে পড়ে এই রেস্টুরেন্টে।

বর্তমানে তিনি অসুস্থদের জন্য খাবার তৈরি করছেন। তিনি বলেন, কমিউনিটিকে সহায়তার জন্য যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করছি।

ইত্তেফাক/আরএ