শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনা পূজার চেয়ে ভয়ংকর কুসংস্কার আমি দেখেছি: তসলিমা নাসরিন

আপডেট : ০৮ জুন ২০২০, ০৯:৩৮

করোনা দূর করতে যজ্ঞ! এখন আবার ‘করোনা মাতাকে উৎসর্গ করে পূজাও হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছেও মারণ ভাইরাসের মোকাবিলা করতে এমন কুসংস্কার দেখে হতবাক অনেকেই। গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা যখন মারণ ভাইরাসকে কাবু করতে প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য কোমর বেঁধে ময়দানে নেমেছেন, তখন বাংলা তো বটেই, এমনকী অসম, বিহারের মতো বিভিন্ন রাজ্যগুলিতেও ঘটা করে চলছে ‘করোনা মাতার পূজা। অনেকে আবার এই ‘অভিনব’ পূজা দেখতে ভিড়ও জমাচ্ছেন। আধুনিকতা এলেও মানুষের মননে কি আদৌ কোনও পরিবর্তন ঘটেছে? বিজ্ঞানের যুগে মহিলাদের এই ‘করোনা মাতা’ পূজার পর এই প্রশ্ন যেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। সেই প্রসঙ্গ নিয়েই এবার মুখ খুললেন তসলিমা নাসরিন।
 
তসলিমা নাসরিনের কথায়, ‌‌‘এই পূজার খবর পেয়ে আমি মোটেও অবাক হইনি! কারণ, এর থেকেও আরও ভয়ংকর কুসংস্কার আমি দেখেছি। এই পূজা তো অশিক্ষিত, অল্প-শিক্ষিত নিরীহ মহিলারা করছে। আমরা কি লেখাপড়া জানা ভদ্রলোকদের করোনা থেকে বাঁচতে গোমূত্র পান করতে দেখিনি, সারা গায়ে গোবর লেপে বসে থাকতে দেখিনি? আমরা বড় বড় তারকা, বড় বড় রাজনীতিক, বড় বড় ধনকুবেরদের কি মানুষ ঠকানোর ‘ব্যবসায়ী’ গুরুদের পায়ে মাথা ঠেকাতে দেখিনি! আমরা কি রকেট ছাড়ার আগে নারকেল ফাটাতে কিংবা মন্দিরে মিনিয়েচার রকেট নিয়ে বিজ্ঞানীদের পুজোয় বসতে দেখিনি? পূজা-আর্চা নিয়ে থাকা কিছু মহিলা, যারা বিজ্ঞান মনস্ক হওয়ার কোনরকম সুযোগ পায়নি জীবনে, তারা করোনা পূজার করেছে, বিজ্ঞান-পড়া ভদ্রলোকদের কুসংস্কারের তুলনায় এ তো কিছুই নয়।’

 

পশ্চিমবংগে, আসামে, বিহারে, আর কোন কোন রাজ্যে জানিনা, করোনাভাইরাসকে দেবী মনে করে পুজো চলছে। ন'টা লাড্ডু, ন'টা লবংগ, ন...

Posted by Taslima Nasrin on Sunday, June 7, 2020

এ প্রসঙ্গে, আবারও মহিলাদের শিক্ষার প্রয়োজনীতা নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। আমাদের দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে এখনও যেখানে কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়। কিংবা মেয়ে সন্তানের জন্ম হলে পরিবারের সদস্যদের মুখ ভার হয়ে যায়, সেখানে মেয়েদের ‘পেটে বিদ্যা ধারণে’র কথা বোধহয় এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছে। এ তো গেল সমাজে নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মেয়েদের কথা। উচ্চবিত্ত পরিবারগুলিতে এর রকমফের হয় মাত্র! বাড়ির পুরুষের থেকে মহিলার রোজগার বেশি থাকলেও ভ্রু উঁচু হয় অনেকের! তবে এর ব্যতিক্রমও যে নেই, এমনটা নয়। তবে সেই সংখ্যাও সীমিতই। আজকের যুগেও যেখানে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রসঙ্গের উত্থাপন করতে হয়, লড়তে হয়, সেখানে মেয়েদের ঘর-সংসারের ভিতরে ঠেলে দিয়ে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার জন্য দোষ দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? প্রশ্ন তুলেছেন তসলিমা নাসরিন।

ইত্তেফাক/বিএএফ