নিউইয়র্কে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান প্রযুক্তিবিদ ও উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহ হত্যায় খুনি সনাক্ত ও গ্রেফতারের পর এই হত্যার ঘটনায় অধিকতর তদন্ত করছে পুলিশ। হত্যায় আরও কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কী না সেই তদন্ত এখন জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছে ইউইয়র্ক পুলিশ। এদিকে সন্দেভাজন খুনি হ্যাসপিলকে জামিন না দিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
হাসপিলের সঙ্গে আর্থিক বিরোধ ছাড়াও বেশ কিছু বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত চলছে। হাসপিল ও ফাহিমের এই আর্থিক বিরোধে কেউ ইন্ধন জুগিয়েছে কী না তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদিও সন্দেহভাজন খুনি হাসপিল এখনও পুলিশের কাছে কিছু স্বীকার করেনি। তার বিরুদ্ধে আনা সেকেন্ড ডিগ্রি হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হলে হাসপিলের প্যারোলবিহীন ২৫ বছর থেকে আজীবন কারাদ- হতে পারে।
পুলিশের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, হাসপিলের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয় ছাড়াও ফাহিম সালেহের আরও কিছু ব্যবসায়িক বিষয় অনুসন্ধান করছে। বিশেষ করে অংশীদারিত্বমূলক ব্যবসায় কারো সঙ্গে তার বিরোধ ছিল কী না। বাংলাদেশে জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপে ‘পাঠাও’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ। গোয়েন্দাদের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। আর তা হলো, বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে পাঠাওয়ের মাধ্যমে। ব্যবসা সফল ‘পাঠাও’। এতকিছুর পরও ফাহিম সালেহ কেন ‘পাঠাও’ ছেড়ে বাংলাদেশে বাইক শেয়ারিং অ্যাপ ‘জোবাইক’ এবং বাস টিকেটিং অ্যাপ ‘যাত্রী’ চালু করলেন? একইভাবে নাইজেরিয়ায় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘গোকাডা’ কেন বাধার মুখে পড়েছিল? ব্যক্তিগত সহকারী হিসাবে এর সবকিছুই জানার কথা হাসপিলের।
নিউইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী হাসপিলকে ‘নিউ আমেরিকান সাইকো’ বলে উল্লেখ করে বলেন, এ ব্যাপারে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ফাহিম সালেহের পরিবার এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। যে কারণে তারা কারো সাথে যোগাযোগ করতে আগ্রহী না। ফাহিম সালেহের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সপ্তাহে তার লাশ দাফন করার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকালে নিউইয়র্ক সিটির লোয়ার ইস্ট ম্যানহাটনের বিলাসবহুল কনডোমিনিয়াম (অ্যাপার্টমেন্ট) থেকে ফাহিমের টুকরো করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ফাহিম সালেহ ২০১৫ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেন রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘পাঠাও’। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় পরে নাইজেরিয়ায় চালু করেন রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘গোকাডা’। সরকার সেটি বন্ধ করে দিলে চালু করেন পার্সেল সার্ভিস। সেটিও জনপ্রিয়তা পায় দেশটিতে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও কলম্বিয়ায় আরো একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টেক জায়ান্ট ফাহিম সালেহ।
ইত্তেফাক/এসি