শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২০

​​​​​​বাংলাদেশিদের মধ্যে বেড়েছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা! 

আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:২৯

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটের ময়দানে বাংলাদেশি আমেরিকানরা কোনো ফ্যাক্টর নন। তারপরও ব্লু বা ডেমোক্রেট স্টেট খ্যাত নিউইয়র্কে এবার বাংলাদেশিদের ভোটের হিসাব পাল্টে যেতে পারে। 

গোটা যুক্তরাষ্ট্রে যত বাংলাদেশি রয়েছেন তার ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ বসবাস করেন নিউইয়র্কে এবং যারা ভোটার তাদের ৯৯ ভাগই ডেমোক্রেট। কারণ নানা কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থন বাড়ছে তাদের মধ্যে। ডেমোক্রেট নিবন্ধিত ভোটার হলেও তাদের ভোটটি এবার পড়তে পারে রিপাবলিকান প্রার্থী, অর্থাৎ ট্রাম্পের ঘরে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর গত চার বছরে ধরেই হোয়াইট হাউজের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমো এবং সিটি মেয়র বিল ডি ব্ল্যাজিও’র। করোনা মহামারিতে সেই বিরোধ আরো চরমে পৌঁছেছে। মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে হিমশিম খান গভর্নর ও মেয়র। 

এ নিয়ে গভর্নর ও মেয়রের মধ্যেও এক প্রকার বাকযুদ্ধ চলে। ত্রিমুখী এই দ্বন্দ্বে নিউইয়র্ক স্টেট ও সিটিতে বসবাসরত ইমিগ্র্যান্টদের জীবনযাত্রায় নাভিশ্বাস ওঠে। এই প্রভাব থেকে মুক্ত নন বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্টরাও। নির্বাচনে নানান কৌশল ও বহুমুখী সংকটের যাতাকলে অধিকাংশ প্রবাসী মনে করেন, ট্রাম্পই আবার ক্ষমতায় আসবেন এবং তারই আবার আসা উচিত। এ কারণে দিন দিন বাংলাদেশিদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন বাড়ছে।

গত মাসে নিউইয়র্ক থেকে সম্প্রচারিত অন্যতম জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল টিবিএন২৪ প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশির ওপর জরিপ চালায়। সেখানে ট্রাম্প প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। মূলধারায় সাধারণত এক হাজার লোকের ওপর জরিপ চালানো হয়। সেখানে টিবিএন আড়াই হাজার বাংলাদেশির ওপর চালানো জরিপের ফল প্রকাশ করে। 

এই ফল প্রকাশ করতে গিয়ে টিবিএন২৪ চ্যানেলের পরিচালক ও দ্য ভিউজ অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় উপস্থাপক হাবিব রহমান জানিয়েছেন, তারা ভেবেছিলেন নিউইয়র্কের অধিকাংশ বাংলাদেশি ডেমোক্রেটিক সমর্থক। সে হিসাবে ট্রাম্প জরিপে খুব কম ভোট পাবেন। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার পর তাদের সে ধারণা পাল্টে গেছে। এ অবস্থায় তারা আরো একটি জরিপ চালাবেন এবং আশঙ্কা করছেন, সেই জরিপে ট্রাম্পের অবস্থান আরো সুসংহত হতে পারে। 

নিউইয়র্কের কুইন্সে বসবাসরত বাংলাদেশি আমেরিকান ব্যবসায়ী আব্দুল কাইয়ুম গত ৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোট দেন। সবসময় ডেমোক্রেট প্রার্থীদের ভোট দেন। গত নির্বাচনে তিনি ভোট দিয়েছিলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে। কিন্তু ইলেকটোরাল ভোটে জিতেছেন ট্রাম্প। আসন্ন নভেম্বরের নির্বাচনে যে কৌশলে রিপাবলিকান শিবির প্রচার চালাচ্ছে তাতে ট্রাম্পেরই জয়ের সম্ভাবনা বেশি। এ কারণে এবার ভোটটি আর নষ্ট করতে চান না তিনি। 

তিনি বলেন, যারা বৈধ অভিবাসী তারা সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের মঙ্গল চান। ট্রাম্পও তাদের জন্য কাজ করতে চান। কিন্তু নিউইয়র্কের গভর্নর ও সিটি মেয়র সারাক্ষণ আনডকুমেন্টেড লোকদের জন্য কাজ করছেন। ফলে যারা এ দেশটিকে ভালবাসেন তারা বঞ্চিত হচ্ছেন নানাভাবে। 

ব্রঙ্কসের বাসিন্দা জুয়েল তরফদার করোনা ভাইরাসে নিউইয়র্কের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, নিউইয়র্কে ট্রাম্প, ক্যুমো ও ব্লাজিও’র ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে অভিবাসীরা অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নিউইয়র্কাররা ফেডারেলের ৩০০ ডলার বেকার ভাতা পাননি। অথচ অন্য স্টেটের বাসিন্দারা অর্থ পেয়ে গেছেন। 

গভর্নর ক্যুমোর খামখেয়ালির কারণে নিউইয়র্কের অর্থ ছাড় করাতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। তিনি বলেন, নিউইয়র্কের প্রশাসনে পরিবর্তন দরকার। যুগ যুগ ধরে ডেমোক্রেট শাসিত রাজ্য হওয়ায় একঘেয়েমি শুরু হয়েছে। নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় তাই পরিবর্তন দরকার।

নিউইয়র্কের সম্প্রতি প্রাইমারি নির্বাচনে পরাজিত ডেমোক্রেট লিডার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডেমোক্রেটদের জন্য যোগ্য প্রার্থী নন। এক্ষেত্রে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স মনোনয়ন পেলে জয় সুনিশ্চিত হতো। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশি যারা ডেমোক্রেট রাজনীতি করেন তাদের মধ্যে বিভাজন রয়েছে। এই বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশিরা কোথাও প্রার্থী হলেই পরাজিত হন। এ কারণে নিউইয়র্কের রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের কোনো প্রভাব নেই। 

এদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস জো বাইডেনের রানিং মেট হওয়ায় কথিত ভারতবিদ্বেষী বাংলাদেশিরা এবার জো বাইডেনকে ভোট নাও দিতে পারেন। অন্যদিকে কমলা হ্যারিস ফিলিস্তিন ইস্যুতে সিনেটে সংখ্যালঘু মুসলমানদের পক্ষে কথা বলায় ধর্মীয় কারণে ভারতীয় ডেমোক্রেটরা বাইডেনের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন। 

কমলা হ্যারিসকে বেছে নেওয়ায় মোটা দাগে যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় একটি অংশ বাইডেনকে ভোট দেবেন মনে করা হলেও সে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই পাল্টে যাচ্ছে। বলা যায়, দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় অভিবাসীদের বড় একটি অংশ গত নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিলেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। 

প্রচার ও প্রচারণায় অনেক এগিয়ে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, নিউইয়র্ক পোস্টসহ অধিকাংশ মিডিয়া ট্রাম্পের বিপক্ষে কাজ করলেও দিন শেষে বয়স্ক হোয়াইট আমেরিকানরা ফক্স নিউজ দেখে ঘুমাতে যান। ভোটের আগের রাতেও তারা ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক ফক্স নিউজ দেখে ভোট দিতে যাবেন এমন কথা প্রচলিত আছে। 

করোনা ভাইরাসের কারণে তারা কেন্দ্রে না গিয়ে অ্যাবসেন্টি ব্যালটে ভোট দেওয়ার আবেদন করেছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ ভোটারদের ভোট প্রদানের হার অনেক কম। এই হার ২০ শতাংশের নিচে। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল আকর্ষণ প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক ডিবেট শুরু হচ্ছে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই সরগরম হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ময়দান। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে একে অন্যকে ঘায়েল করছেন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও বিরোধী ডেমোক্রেটের রাজনীতিকরা। তবে এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সৌন্দর্য হিসেবে বিবেচিত প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের দিকে তাকিয়ে আছেন ভোটাররা। 

আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ওহাইও রাজ্যের ক্লেভল্যান্ডের কেজ ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে প্রথমবার আনুষ্ঠানিক বিতর্কে যোগ দেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেন। এই ডিবেটের মডারেটর থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা টেলিভিশন উপস্থাপক ও সাংবাদিক ক্রিস ওয়ালেস। দ্বিতীয় এবং শেষ বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হবে ১৫ ও ২২ অক্টোবর। প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের সাফল্য ভোটারদের পছন্দ-অপছন্দ গুরুত্ব পায়। তবে এসব বিতর্ক নিয়ে বাংলাদেশি আমেরিকানদের কোনো মাথা ব্যথা নেই বললেই চলে। 

উল্লেখ্য, চার বছর পর পর নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসাবে এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩ নভেম্বর। করোনা মহামারির কারণে ডাকযোগে ভোট দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে অ্যাবসেন্টি ব্যালটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। 

ইত্তেফাক/জেডএইচ