শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কানাডায় অগ্রিম ভোট শুরু, জরিপে এগিয়ে লিবারেলরা

আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:২১

আগামী ২০ সেপ্টেম্বর কানাডায় অনুষ্ঠিত হবে ফেডারেল নির্বাচন। আজ থেকে শুরু হলো অগ্রিম ভোট। তিন দিনব্যাপী এই ভোটে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টারে, বিল্ডিংয়ের হল রুমে বা লবিতে ভোট গ্রহণ চলবে।

কানাডার নির্বাচনী প্রচার কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। মিডিয়ায় চলে প্রচারণা, জরিপ এবং ভোটযুদ্ধ। এ পর্যন্ত তিনটি টিভি নির্বাচনী লড়াই হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিয়লে, ৮ সেপ্টেম্বর ভ্যাংকুভারে এবং ২ সেপ্টেম্বর কুইবেকে। প্রথম বিতর্কের সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন সাংবাদিক পিয়ের ব্রুনেউ। কুইবেকের প্রভাবশালী গণমাধ্যম টিভিএ-এর আয়োজনে দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বিতর্ক কানাডার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মনোভাব এবং চিন্তা-চেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই বিতর্ক এ মাসের ২০ তারিখে ফেডারেল নির্বাচনে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলবে। এ নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নেন লিবারেল পার্টির জাস্টিন ট্রুডো, ব্লক কুইবেকের ইয়েভেস ফ্রাংকোইস ব্লাঞ্চেত, এনডিপি’র জগমিত সিংহ এবং কনজারভেটিভ পার্টির এরিন ও’তুলে।

এদিকে কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটেছে। অন্টারিও প্রভিন্সের লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নির্বাচনী প্রচারণায় বিক্ষোভকারীরা তাকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেছে, স্কারবরো সাউথওয়েস্টে নিরাপত্তামন্ত্রী বিল ব্লেয়ারের নির্বাচনী বিলবোর্ড জঙ্গলে ফেলে দিয়েছে দুস্কৃতিকারীরা, ইসলামোফোবিক মন্তব্য করার অভিযোগে আসন্ন নির্বাচনে বিচেস-ইস্টইয়র্ক রাইডিংয়ের প্রার্থী লিসা রবিনসনকে প্রত্যাহার করেছে কনজারভেটিভ পার্টি, এই ধরনের খবর এখন তুঙ্গে।

ট্রুডোর নির্বাচনী প্রচারণায় পাথর ছুঁড়ে মারা সম্পর্কে স্থানীয় আজাদ গ্রোসারীর মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এতে লিবারেল পার্টির ভোট বাড়বে। কারণ, জাস্টিন প্রতি ভোটারদের একটা নরম জায়গা তৈরি হবে। বিল বোর্ড ছুঁড়ে ফেলা সম্পর্কে উক্ত নির্বাচনীর আরেক প্রার্থী মহসিন ভূঁইয়া বলেন, প্রচারে বাঁধা দেওয়া অপরাধমূলক, অগ্রহণযোগ্য এবং অগণতান্ত্রিক কাজ। আমি এর নিন্দা জানাই।

দুই বছর আগে ইসলামোফোবিক মন্তব্যের অভিযোগে প্রার্থী লিসা রবিনসনকে প্রত্যাহার প্রসঙ্গে দলের নেতা এবং সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম মিন্টু ইত্তেফাককে বলেন, এটা কনজারভেটিভ পার্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে দলের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। শুধু তাই নয়, এবার দল থেকে প্রায় কুড়ি জন মুসলিম প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যা দলের জন্য বিরল ব্যাপার। নির্বাচনীর ইলেকশন অফিসার অনাদি নিমগ্ন বলেন, আমরা একদিনের জন্য নিয়োগ পেয়েছি। আমাদের যে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, তা দারুণ শিক্ষামূলক।

সিবিএন’র সাংবাদিক মাহবুব ওসমানী নির্বাচনের জয়-পরাজয় নিয়ে বলেন, নানা ধরনের জরিপ হয়েছে। বেশির ভাগ জরিপে সরকারি দল লিবারেল এগিয়ে আছে। সেজন্য জাস্টিন হঠাৎ করে করোনাকালে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেন। এজন্য বিরোধী দল ‘হটকারী সিদ্ধান্ত’ বলে আখ্যা দেন।

মাহবুব ওসমানী আরও বলেন, এবারো হয়তো সংখ্যালঘু সরকার হবে। যদি কনজারভেটিভ পার্টিও সরকার গঠন করে, তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। কারণ, এবারো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে প্রধান দুই দল কনজারভেটিভ আর লিবারেলের মধ্যে।

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্টুডোর নির্বাচনী এলাকা প্যাপিনউএর অর্গানাইজিং সেক্রেটারি মাইনুর সরকার মন্ট্রিয়ল থেকে নির্বাচন সম্পর্কে ইত্তেফাককে জানান, হুট করে নির্বাচন ঘোষণা করায় অন্যান্য রাজনৈতিক দল প্রস্তুত ছিলোনা, ফলে একটু বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কানাডাকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অর্থনৈতিক ভাবে চাঙ্গা করার কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিকল্প ছিলো না। যেহেতু মাইনরটি সরকার সংসদে বিল পাস করতে আটকে যাচ্ছিলো, তাই নির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়েছিলো।

আজকের সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, লিবারেল ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ (১৪২ আসন) আর কঞ্জারবেটিভ ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ অর্থাৎ যথাক্রমে ১৪২ আসন এবং ১৩৪ আসনে অবস্থান করেছে। আবার সিবিসির জরিপে কঞ্জারভেটিভ এগিয়ে আছে দশমিক ২ শতাংশে। 

উল্লেখ্য, কানাডায় ফেডারেল নির্বাচনে এবার সবচেয়ে বেশি আটজন বাংলাদেশি প্রার্থী! তারা হলেন, অন্টারিও প্রদেশের অশোয়া আসনে সরকারি দল লিবারেল থেকে আফরোজা হোসেন, টরন্টোস্থ স্কারবোরো সাউথ-ওয়েস্ট আসনে কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে মহসিন ভূঁইয়া, এনডিপি থেকে স্কারবোরো সেন্টার আসনে ফাইজ কামাল, আলবাট্রার এনডিপি থেকে খালিস আহমেদ তমাল এবং ক্যালগরি থেকে এনডিপির গুলশান আক্তার, মেট্রো ভ্যাঙ্কুভারের সোরি-নিউটন আসনে কনজারভেটিভ পার্টির সৈয়দ মহসিন, নায়গ্রা ওয়েস্ট আসনে এনডিপির নামির রহমান এবং অশোয়া থেকে গ্রিন পার্টির সানি মীর।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি