শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নিউইয়র্কে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা’ শীর্ষক সমাবেশ

আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৩৮

বিশ্বে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অন্যতম শক্তি হলো ‘কবিতা’। আর একজন কবির প্রকৃত হাতিয়ার হচ্ছে তার ‘শব্দ’। কবিতা শেষ পর্যন্ত মানুষের পক্ষেই দাঁড়ায়। কবিতা মানবকল্যাণের জন্যই উচ্চারিত হয় বার বার। ‘শব্দই রুখবে মৌলবাদ, কবিতার আলোতে ভেসে যাবে সকল সাম্প্রদায়িক আঁধার’-এই প্রত্যয় ধারণ করে নিউইয়র্কে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা’ শীর্ষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

রবিবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে কবি ও আবৃত্তিকারদের এই সমাবেশে সূচনা বক্তব্য দেন কবি ফকির ইলিয়াস। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট আবু সাঈদ রতন।

কবি ফকির ইলিয়াস বলেন, একজন মায়ের আঁচলে জমানো কিছু টাকা যখন কোনো মৌলবাদী দুর্বৃত্ত লুট করে নেয়- তখন একটি রাষ্ট্রসত্ত্বাই লজ্জিত হয়। একজন খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের বাড়িতে বিনা কারণে ঢুকে যখন তার কিশোরী মেয়ে ধর্ষণ করা হয়- তখন মানুষের প্রকৃত পরিচয় রহিত হয়ে পড়ে! আমরা সেই বিবেক থেকেই আজ এখানে সমবেত হয়েছি।

তার কথায়, অতীতে যে সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো হয়েছিল এর সুষ্ঠু বিচার হয়নি। যদি হতো, তাহলে কুমিল্লা, নোয়াখালী, রংপুরের পীরগঞ্জে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটতো না। সরকারকে এসব কঠোর হাতে দমন করতে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রতিবাদ ও কবিতা পর্বে, আবৃত্তিকার ও ফটো-সাংবাদিক নজরুল কবীর বলেন, বিশ্বের কোথাও আর এমনভাবে সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক আক্রমণের নজির দেখা যায় না।বাংলাদেশে এটা বার বার কেন হচ্ছে- এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। বাংলাদেশে তারা সংখ্যায় অধিক যারা মানবতার পক্ষে দাঁড়ান ও কথা বলেন। তাই আমরা সংখ্যায় কম- এটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। শুধুমাত্র রাষ্ট্রকে কঠোর হয়ে সকল অশুভ শক্তিকে দমন করতে হবে।

বাংলা কবিতার বিশিষ্ট কবি শাহীন ইবনে দিলওয়ার বলেন, বাঙালী জাতি কি ভুলে গেল তার গৌরবের ইতিহাস! আমরা কি ভুলে গেলাম আমাদের অতীতের সকল সম্প্রীতির ঐতিহ্য। বাংলাদেশে আজ যে নগ্ন আক্রমণ হচ্ছে, তা বিশ্ব-বিবেককে হার মানিয়েছে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাইনি। আমাদের প্রজন্মকে আজ ঘুরে দাঁড়িয়ে সকল অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে।

তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ও অ্যাকটিভিস্ট নুরুল আমিন বাবু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এগুলো কঠোর হাতেই দমন করে যাচ্ছে, এবং যাবে ইনশাআল্লাহ। এ বিষয়ে কোনো আপোষ হবেনা,হতে পারে না। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

বিশিষ্ট আবৃত্তিকার গোপন সাহা বলেন, সংখ্যালঘু শব্দটি শুনে যে শিশু বড় হয় তার মাঝে একটা ভয় কাজ করে! কারণ যে বুঝতে পারে, আমি সমাজে ছোটো! আমরা কি এই শব্দটি পরিহার করতে পারি না! কেন পারছি না! মানুষ তো সকলেই সমান।ভোট তো সবার একটাই! তাহলে এই হীন বৈষম্য কেন! কেন আজ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বার বার বাংলাদেশে আক্রান্ত হচ্ছেন! আমরা এর চির অবসান চাই। এই শব্দবাণী নিয়েই আজ আমরা এখানে হাজির হয়েছি।
 
অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন- কবি শাহীন ইবনে দিলওয়ার, কবি আনোয়ার সেলিম, কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি, ছড়াকার খালেদ সরফুদ্দীন, কবি মৃদুল আহমেদ, অ্যাকটিভিস্ট ভাস্বতী দে বহ্নি, আবৃত্তিকার নজরুল কবীর, বিশিষ্ট আবৃত্তিকার গোপন সাহা, অন্যতম আবৃত্তিকার পারভীন সুলতানা, তরুণ আবৃত্তিকার সাদেক শিবলী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হামলার মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়ে বক্তব্য রাখেন উদিতা। তিনি বলেন, আজ যে বাড়িটি আক্রান্ত হলো, সেই বাড়ির শিশু কিশোর-কিশোরীটি একটি গ্লানিময় বেদনা নিয়েই বেড়ে উঠবে আজীবন। এর দায় কে নেবে? রাষ্ট্র এই বিষয়ে কতটা সতর্ক আজ! তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত এই অবস্থার চির-অবসান ঘটাতে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, অ্যাক্টিভিস্ট ও শিল্পী সুতপা মণ্ডল, অ্যাকটিভিস্ট নুশরাত এলিন, সমাজকর্মী আমজাদ হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কবি মিশুক সেলিম। 

তিনি বাংলাদেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টরস কমান্ডারস ফোরাম নেতা হারুন হাবীবের লেখা একটি কবিতা পড়ে শোনান।

ইত্তেফাক/বিএএফ