শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সবাই এ প্লাস মানুষ হও

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:১৬

প্রিয় শিক্ষার্থী, এবার যারা এইচএসসি (হায়ার সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট) বা সমমান সনদ অর্জন করেছ তাদের জানাচ্ছি অভিনন্দন। তোমরা জানো, ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে তোমাদের শিক্ষা মূল্যায়নের ফল। এটি নিয়ে চলছে অনেক আলোচনা, সমালোচনা ও পর্যালোচনা। কেননা, কোভিড ১৯ পরিস্থিতির কারণে আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা ব্যতীতই ঘোষণা করা হয়েছে তোমাদের এই ফলাফল। যারা এবার ফরম ফিলাপ করেছিলে তারা সবাই পাস করেছ। জেএসসি বা সমমান ও এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে তোমাদের গ্রেড। অর্থাৎ যারা আগে ভালো ফল করেছিলে তারা এখনো ভালো ফল করেছ। যারা আগে ভালো করতে পারোনি তাদের ফল এখনো তেমন ভালো হয়নি। পিছনে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে, সবসময়ই ভালো করার চেষ্টা করা জরুরি। গুরুত্ব দিতে হবে জীবনের প্রতিটি স্তরে। কোন কিছুকেই হালকা করে দেখার বা অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। 

যে যাই বলুক, তোমাদের আস্থা রাখতে হবে নিজের উপর। নিজেকে নিজে অযোগ্য ভাবা উচিত নয়। মানুষ সর্বদাই তার উত্তম চিন্তা, চেতনা, চেষ্টা ও কাজের দ্বারা উত্তম। পরীক্ষা দিতে না পারার দায় তোমাদের নয়। তোমরা পরিস্থিতির শিকার। ভালো করার জন্য তোমাদের প্রস্তুতি ছিল, ইচ্ছা ছিল, চেষ্টা ছিল এবং নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়ার সৎ সাহস ছিল; এখানেই তোমরা উত্তম। আগের পরীক্ষায় তোমরা উত্তীর্ণ হয়েছিলে বলেই এই পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছো; এখানেও তোমরা উত্তম। তোমাদের সেই জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে অনেকেই, কৃতকার্য হয়েছ তোমরা। সেজন্য তোমাদেরও অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারো কথায় কিছুই যায় আসে না তোমাদের! একটুও মন খারাপ করা চলবে না কারো উপহাসে, অবহেলায়, বাঁক কথায়। তোমাদের ভাবতে হবে, বলতে হবে ও বিশ্বাস করতে হবে; মোটেও অটো পাস করো নি তোমরা। না, এটি কোন মিথ্যা কথা নয়। এটিই সত্য কথা, এটিই সঠিক কথা, এটিই যুক্তিযুক্ত কথা। কেননা, এমনি এমনিই পাস করানো হয়নি তোমাদের। মুক্ত হস্তে দান করা হয়নি তোমাদের এই সুফল। কারো দয়া বা অনুগ্রহের ফসল নয় এটি। তোমাদের পূর্ববর্তী শিক্ষার মূল্যায়নের ভিত্তিতেই তোমরা অর্জন করেছ এই গ্রেড। মোটেও ভিত্তিহীন নয় তোমাদের সনদ। তোমরা নিজের যোগ্যতায়ই পাস করেছ জেএসসি ও এসএসসি এবং সমাপ্ত করেছ এইসএসসি এর সম্পূর্ণ সিলেবাস। তোমাদের প্রস্তুতি ছিল, অধিকার ছিল, পরীক্ষা দিয়ে নিজের বাড়তি যোগ্যতা প্রমাণ করার। কিন্তু করোনা মহামারীর হাত থেকে জীবন রক্ষার স্বার্থে তোমাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। এই ব্যর্থতার দায় মোটেও তোমাদের নয়। বরং মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ দয়ায় ২০২০ সালে তোমরা বেঁচে আছো এটিই সফলতা। 

মনে রাখতে হবে, জীবন অনেক দীর্ঘ। জীবনে সফলতার পথ অবারিত। তোমাদের মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখার ক্ষেত্র অগণিত। মানুষের পুরো জীবনটাই পরীক্ষাক্ষেত্র। একটি পরীক্ষা দিতে পারোনি বলে হতাশ হলে চলবে না। তোমাদের যদি ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকে, আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকে, সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার দিশা থাকে; তো অবশ্যই তোমরা সফল হবে জীবনের বিভিন্ন পরীক্ষায়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বিজয়ী হতে হবে মানুষ হবার পরীক্ষায়। সেখানে রাখতে হবে মেধার স্বাক্ষর,  যোগ্যতার প্রমাণ, হতে হবে উত্তম। আমাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার এই প্রচলিত পরীক্ষায় যারা এক বা একাধিক বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছ এবং যারা কোন বিষয়েই এ প্লাস পাওনি তাদের সবাই হয়ে উঠতে হবে এ প্লাস মানুষ। অর্থাৎ তোমাদের হতে হবে সেরা মানুষ, শ্রেষ্ঠ মানুষ, উত্তম মানুষ। এ প্লাস হচ্ছে পজেটিভ সাইন, উত্তমের প্রতীক, শ্রেষ্ঠত্বের উপমা। তোমরা যখন সৎ হবে, নীতিবান হবে, বিবেকবান হবে, বিজ্ঞানমনস্ক হবে, উৎপাদনক্ষম হবে, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হবে; সর্বোপরি মানুষের কল্যাণে ও স্রষ্টার সন্তুষ্টিতে নিবেদিত হবে তখনই তোমরা হবে এ প্লাস মানুষ। তখনই তোমরা হবে সৃষ্টির সেরা জীব। তাইতো আমি বার বার বলি, ভালো করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও, সর্বশক্তি দিয়ে সচেষ্ট হও, সাধ্যমত এগিয়ে যাও, সৎকর্মে নিবেদিত হও, মানুষ হবার পরীক্ষায় বিজয়ী হও। সেখানেই চূড়ান্ত সফলতা।


লেখক : অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা