শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

১৯৭১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক (৪ মার্চ)

আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২১, ১৪:১৪

১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর দৈনিক হিসেবে যাত্রা শুরুর পর থেকে ইত্তেফাক হয়ে ওঠে গণমানুষের মুখপত্র।  বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিল পত্রিকাটি। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে আপসহীনভাবে সত্য প্রকাশ করে গেছে ইত্তেফাক। পত্রিকাটির এই ভূমিকা উপমহাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়।

স্বাধীনতার মাস অগ্নিঝরা মার্চে দৈনিক ইত্তেফাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল, ‘ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত কর-খাজনা বন্ধ’। এর পাশেই ঢাকার পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা দেওয়ার একটি আলোকচিত্রের ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘বাংলার মানুষ খাজনা দেয়, ট্যাক্স দেয় রাষ্ট্র চালানোর জন্য- গুলি খাওয়ার জন্য নয়।’ ক্যাপশনের নিচে বড় আকারে একটি আলোকচিত্রে দেখা যায় পল্টন ময়দানের জনসভায় অংশ নেওয়া জনতার একাংশ। 

জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার প্রতিবাদে ঘোষিত কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে (৩ মার্চ) ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে উত্তাল-উদ্দাম বিশাল জনসমুদ্রে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। সামরিক সরকারকে শিগগিরই গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। গম্ভীরস্বরে তার বক্তব্য ছিল, ‘স্বাধিকারকামী বাংলার মানুষ আর সহযোগিতা করবে না, কোনো কর-খাজনাও দেবে না।’

ছাত্রলীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগ যৌথভাবে সমাবেশটির আয়োজন করে। এতে আওয়ামী লীগ প্রধান সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের নির্দেশ দেন, ‘পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপনারা অফিস-আদালতে যাওয়া বন্ধ রাখুন।’

পল্টন ময়দানের জনসভা নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের ৪ মার্চের প্রথম পাতায় ছিল কয়েকটি প্রতিবেদন। এর মধ্যে ‘আমি যদি না থাকি’ শিরোনামে ছিল একটি খবর। সমাবেশে তিনি নিজের অনুপস্থিতিতেও নির্ভয়ে স্বাধিকার আন্দোলন চালিয়ে যেতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। ব্যথাভারাক্রান্ত কণ্ঠে শেখ মুজিব বলেন, ‘হয়তো এটাই আপনাদের সামনে আমার শেষ ভাষণ। আগামী রবিবার রেসকোর্সে আমার বক্তৃতা করার কথা। কিন্তু কে জানে, সে সুযোগ আমাকে নাও দেওয়া হতে পারে। তাই আজ আপনাদের কাছে আর আপনাদের মাধ্যমে বাংলার জনগণের কাছে আমি বলে যাচ্ছি, আমি যদি নাও থাকি, আন্দোলন যেন না থামে।’

প্রিয়-পরিজনের কাছে অন্তিম বাসনা প্রকাশের মতো বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলার ভাইয়েরা আমার, আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন না থামে, বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। যদি কেউই না থাকে, তবুও আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। বাংলার ঘরে ঘরে প্রত্যেক বাঙালিকে নেতা হয়ে নির্ভয়ে আন্দোলন চালাতে হবে। যেকোনো মূল্যে বাংলার স্বাধিকার ছিনিয়ে আনতে হবে।’

আরেকটি খবরের শিরোনাম করা হয়, ‘লুটতরাজ ও উচ্ছৃঙ্খলতার বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়ান’। জাতীয় পরিষদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিব লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছৃঙ্খল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জনসাধারণকে সতর্ক করে বলেন, ‘এসব কাদের কাজ তা আমরা জানি। বাংলার স্বাধিকারবিরোধী বিশেষ মহল নিজেদের এজেন্টের মাধ্যমে এসব অনাসৃষ্টি ঘটিয়ে যাচ্ছে। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বাধিকার আন্দোলন বিপথগামী করার এই অশুভ চক্রান্ত রুখতেই হবে। বিপথগামী করে আন্দোলন বানচাল করাই তাদের এই অশুভ তৎপরতার লক্ষ্য। যেকোনো মূল্যে তাদের প্রতিহত করতে হবে।’

দৈনিক ইত্তেফাকের এই খবরের নিচে আরেকটি প্রতিবেদনে জানানো হয় উচ্ছৃঙ্খলতা প্রতিহত করার কর্মসূচি। ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতারা যৌথভাবে উদ্যোগটি নেয়। এক্ষেত্রে শহরের বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগিয়েছেন তারা। 

১৯৭১ সালের ৪ মার্চের ইত্তেফাকে স্বাধিকার আন্দোলনের তিন দিনের (৪-৬ মার্চ) কর্মসূচির সময়সূচি প্রকাশিত হয়।

ইত্তেফাক/জেএইচ