বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

১৯৭১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক (৯ মার্চ)

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২১, ১৭:০৩

সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সম্পাদনায় ১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর দৈনিক হিসেবে যাত্রা শুরুর পর থেকে ইত্তেফাক হয়ে ওঠে গণমানুষের মুখপত্র।  বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিল পত্রিকাটি। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে আপসহীনভাবে সত্য প্রকাশ করে গেছে ইত্তেফাক। পত্রিকাটির এই ভূমিকা উপমহাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়।

স্বাধীনতার মাস অগ্নিঝরা মার্চে দৈনিক ইত্তেফাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার প্রধান শিরোনাম ছিল, “শেখ মুজিবের শর্ত মানিয়া ‘ভয়াবহ বিপর্যয়’ রোধে যত্নবান হউন”। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি পূর্বাঞ্চলীয় নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক সংস্থার আহ্বান ছিল এমন। ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ এক বিবৃতিতে পাকিস্তান পিডিপি সভাপতি ও জাতীয় পরিষদের সদস্য নুরুল আমিন নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সুষ্ঠু পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য ইয়াহিয়ার কাছে আবেদন জানান। 

নুরুল আমিনের মন্তব্য, ‘ভুলে যাওয়া উচিত নয়, ৩ মার্চের পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখা জনসাধারণের জন্য উসকানি হিসেবে কাজ করে এবং তারই প্রতিক্রিয়ায় স্বতঃস্ফূর্তভাাবে গণ-অভ্যুত্থান দেখা দেয়। 

সামরিক শাসক কর্তৃক প্রকাশিত প্রেসনোটের বক্তব্যে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদের দুঃখ প্রকাশ করে জানানো মন্তব্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ৯ মার্চের ইত্তেফাকে। এর শিরোনাম, ‘বাঙ্গালীতে বাঙ্গালীতে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির অপপ্রয়াস’। তিনি বলেন, ‘প্রেসনোটে হতাহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়- এর মাধ্যমে এটাও বোঝানো হয়েছে যে, ১৭২ জন নিহত ও ৩৫২ জন আহতের সংখ্যা এত বেশি নয়।’

প্রথম পাতার অষ্টম কলামে ছাপা হয় ‘ইতিহাস স্রষ্টাদের প্রতি অভিনন্দন’। ৮ মার্চে তাজউদ্দিন আহমদের দেওয়া বিবৃতি তুলে ধরা হয় এতে। তিনি বলেন, ‘আজ যারা ইতিহাস সৃষ্টি করছেন বাংলাদেশের সেই বীর জনগণকে আমি সালাম জানাই। জনগণের নজিরবিহীন ঐক্য গণআন্দোলনের শক্তির উৎস। সরকারের সব বিভাগে কর্মরত বাঙালিরা আমাদের ডাকে মহিমান্বিতভাবে সাড়া দিয়েছেন এবং বিশ্বের জনসাধারণ ও ক্ষমতাসীনদের কাছে প্রমাণ করেছেন- জোর যার মুল্লুক তার নয়।’

স্বাধিকার আন্দোলনে শহীদদের শোকার্ত পরিবারের সাহায্যে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি শিক্ষকরা একদিনের বেতন প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন। ইত্তেফাকের ৯ মার্চের প্রথম পাতায় ‘শহীদদের পরিবারের জন্য সাহায্যের ডাকে সাড়া’ শিরোনামে এই তথ্য জানানো হয়। 

‘শিল্পীদের সিদ্ধান্ত’ শিরোনামের প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলার বিক্ষুব্ধ শিল্পীরা আগামী ১০ মার্চ থেকে বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে শর্ত একটাই- ঢাকা বেতার ও টেলিভিশনের সকল অনুষ্ঠান বাংলার বর্তমান গণআন্দোলনের অনুকূল হবে।

৭ মার্চ লন্ডনস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে ‘স্বাধীন বাংলার’ দাবিতে বিক্ষোভ করেন ১০ হাজার ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালি। বিক্ষোভকারীরা শত শত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডসহ ‘ভুট্টোর বিচার চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন। ইত্তেফাকের ৯ মার্চের প্রথম পাতায় খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়। 

ইত্তেফাক/জেএইচ