মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মুজিব থেকে মুজিবনগর সরকার

আপডেট : ১৯ জুন ২০২১, ২১:৩৬

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। 

এর আগে, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার। তখন থেকে এই স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্থানটির নামকরণ হয় মুজিবনগর। এবং সেখানে শপথ অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশের প্রথম সরকার ‘মুজিবনগর সরকার’ নামে পরিচিত লাভ করে।

মূলত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বদেশ ভূমি থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের লক্ষে এই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকচক্র। এবং বেআইনিভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে তারা। পরবর্তীতে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির হামলে পড়লে, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তাঞ্চলে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন।

মুজিবনগর সরকারের গুরুত্বএই অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন ও বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় তার অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে করা হয় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি।

নতুন রাষ্ট্রের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভের লক্ষে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় নবগঠিত এই সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে। অবশেষে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও পাকিস্তানিদের প্রতিক্রিয়া

ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকার

গঠন: ১০ই এপ্রিল ১৯৭১
শপথ গ্রহণ: ১৭ই এপ্রিল ১৯৭১
স্থান: মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকানন

রাষ্ট্রপতি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
উপ-রাষ্ট্রপতি: সৈয়দ নজরুল ইসলাম
প্রধানমন্ত্রী: তাজউদ্দিন আহমেদ
অর্থমন্ত্রী: ক্যাপ্টেন (অব.) এম. মনসুর আলী
স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী: এম কামারুজ্জামান

ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রণালয়সমূহ

No description available.

(১) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
(২) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
(৩) অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
(৪) মন্ত্রিসভা সচিবালয়
(৫) সাধারণ প্রশাসন বিভাগ
(৬) স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়
(৭) তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়
(৮) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
(৯) ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়
(১০) সংসদ বিষয়ক বিভাগ
(১১) কৃষি বিভাগ
(১২) প্রকৌশল বিভাগ

ইত্তেফাক/এসজেড