বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

স্বাধীনতার পর সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণে বঙ্গবন্ধুর অগ্রাধিকার

আপডেট : ২৪ জুন ২০২১, ০৯:৪৪

৯ মাস স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পাকিস্তানি জান্তারা পরাজয় বরণ করে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। কিন্তু নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে এদেশের প্রতিটি প্রান্ত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে হানাদাররা। সুজলা-সুফলা-শ্যামল বাংলার মাটিকে তামায় পরিণত করে তারা। সেই অবস্থা থেকে দেশ গঠনের চ্যালেঞ্জ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

সাড়ে তিন বছর নির্ঘুম থেকে সরকার পরিচালনা করেছেন তিনি। এই অল্প সময়ের প্রতিটি দিন একের পর এক সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে শুধু এই সময়ের সরকারি প্রকল্প বা সিদ্ধান্তের নিক্তিতে মাপতে যাওয়া সমীচীন হবে না। কারণ রাজনীতিবিদ এবং ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মহানুভবতা, আদর্শিক সংগ্রাম, কষ্ট স্বীকার ও আত্মত্যাগ বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। একটি পরাধীন জাতির স্বাধীনতা অর্জনে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুকে আজীবন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে প্রাতঃস্মরণীয় করে রাখতে এই একটি কারণই যথেষ্ট। 

কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ এবং ভয়াবহতা ছিল অবর্ণনীয়। তা অল্প কথায় বলে শেষ করা যাবে না। এই বিষয়ে মুজিবনগর সরকার ও বঙ্গবন্ধুর সরকারের মন্ত্রীপরিষদ সচিব এইচ টি ইমামের একটি মন্তব্য এখানে তুলে ধরছি। তিনি ‘বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-৭৫’ গ্রন্থে লিখেছেন: পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশকে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, সারাদেশের মানুষজনের হাতে তখন মাত্র চার কোটি টাকার মতো ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার কোনো মজুদ বাংলাদেশ ব্যাংকে ছিল না। [...] মাত্র ১০ হাজারের মতো নথি দিয়ে শুরু হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়। বঙ্গবন্ধু যেদিন টেলিফোনে কথা বলতে শুরু করেন সেদিন ঢাকা জেলা থেকে মাত্র তিনটি জেলার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল। 

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্দেশে আল-বদরের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সব টাকা ১৬ ডিসেম্বর সকালে রাস্তায় এনে আগুন দিয়ে ধ্বংস করে ফেলেছিল। এমন একটি বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে দাঁড় করাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর নেওয়া যেসব যুগান্তকারী পদক্ষেপের সুফল বাংলাদেশের মানুষ ভাগে করে চলেছে, তার একটি সংক্ষিপ্ত খতিয়ান নিচে তুলে ধরা হলো।No description available.ভারতীয় সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার 
১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ভারত সফরে গিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে মিটিং করেন। এর সূত্র ধরে ঘোষণা আসে যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চের আগে বাংলাদেশ ত্যাগ করবে। পরে অবশ্য ২৫ মার্চকে ডেডলাইন হিসেবে নেওয়া হয়। তবে ১৫ মার্চের আগেই ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের কাজ সম্পন্ন হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ 
মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে থাকা অস্ত্র সরকারের কাছে সমর্পণের জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৩১শে জানুয়ারি তারিখ বেধে দেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা 
মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের সক্রিয়ভাবে কাজে লাগাতে বঙ্গবন্ধু ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। বাংলাদেশের পুলিশবাহিনী, জাতীয় মিলিশিয়া, রিজার্ভ বাহিনী, গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের মধ্যে যারা পড়াশোনা শেষ করতে চায় বঙ্গবন্ধু তাদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষালয়ে ফেরত যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং অবশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি পুলিশ ও জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনীতে যোগদানের ব্যবস্থা করেন।

No description available.

জাতীয়করণ কর্মসূচি গ্রহণ
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবসে জাতীয়করণ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বিদেশি ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি ছাড়া তৎকালীন স্বাধীন বাংলাদেশে যত ব্যাংক, বীমা কোম্পানি এবং শিল্পকারখানা ছিল সেগুলোকে জাতীয়করণ করেছিলেন।

১১ মাসের মধ্যে সংবিধান
মাত্র এক বছরের মধ্যে পৃথিবীর অন্যতম সুলিখিত সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন জাতিকে। রাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণ, জাতীয় প্রতীক প্রণয়ন, রাষ্ট্র পরিচালনার কার্যপদ্ধতি ও কার্যবণ্টন (রুলস অব বিজনেস এবং অ্যালোকেশন অব বিজনেস) প্রণয়ন করেন।

পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন 
যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের জন্য পরিকল্পনা কমিশন গঠন, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন। নবগঠিত পরিকল্পনা কমিশনে একই রকমভাবে দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, প্রকৌশলী এবং অন্যান্য পেশাজীবী সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন 
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন।

No description available.

প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন 
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনীসহ বিমান ও নৌবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে প্রণয়ন করেন এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ)।

সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর উন্নয়ন
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে যেসব মন্ত্রণালয়ের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন, এর মধ্যে অগ্রভাগে ছিল প্রতিরক্ষা। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক বাহিনী শক্তিশালী করার পদক্ষেপ গ্রহণ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু মনে করতেন, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জনগণের সমর্থন ও শক্তি অপরিহার্য। স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা দিয়ে নতুন সমাজ গঠনে আত্মনিয়োগ করতে বঙ্গবন্ধুর সরকারের আহবান ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর যোদ্ধাদের পুলিশবাহিনী ও জাতীয় মিলিশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ... মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীরা বাংলাদেশের নয়া সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীতে নেতৃত্ব প্রদান করবেন, এটাই সরকার আন্তরিকভাবে কামনা করছে।’’

No description available.
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ১৯৭২ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার কাছ থেকে বিমানবাহিনীর জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামরিক সাহায্যের আশ্বাস লাভ করে। আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবাহিনী ১২ টি মিগ-২১ বিমান সামরিক অনুদান হিসেবে গ্রহণ করে। এগুলো ছাড়াও ১৯৭৫ সালের মধ্যে একটি এএন-২৪ বিমান, একটি ভিআইপি এমআই-৮ হেলিকপ্টার, ৪টি এমআই-৮ হেলিকপ্টার এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ, পি-১৫, পি-৩৫ এবং পিআরআইভি-১১ রাডার, ১৯৭৩ সালে বিমানবাহিনীর জন্য রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট স্থাপনে সহায়তা এবং ১৯৭৫ সালে ১টি এএন-২৬ বিমান এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করা হয়। এগুলো ছাড়া ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার ঢাকার কুর্মিটোলায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ক্যাডেট প্রশিক্ষণ ইউনিট (সিটিইউ) প্রতিষ্ঠা করেছিল। 

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহু কর্মকর্তা ও বিমানসেনাকে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া এবং চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ ও পরিদর্শনের ব্যবস্থা করে বিমানবাহিনীর সাংগঠনিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘পদ্মা’ ও পলাশ' নামের দুটি গানবোট ও কয়েকজন নৌকমান্ডো সমন্বয়ে বাংলাদেশে নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। উল্লেখ্য যে, মাত্র ১৭ জন কর্মকর্তা ও ৪১৭জন নাবিক মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে নৌ-বাহিনীর দায়িত্ব-কর্তব্যের বিষয়াবলী অনুমোদন করে। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো গঠিত ও অনুমোদিত হয় ১৯৭৫ সালে। রিয়াল অ্যাডমিরাল পদবির নৌবাহিনী প্রধানের নিযুক্তি এবং পাঁচজন কমোডোর পদমর্যাদার কর্মকর্তা এবং ৪৯০০ জনবল সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন সাংগঠনিক কাঠামো বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকারই অনুমোদন করেছিল। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে যেসব রণতরী কমিশন লাভ করেছিল সেগুলো হলো- বানৌজা পদ্মা, সুরমা, বিশখালি, এসআই আমিন, কর্ণফুলী, তিস্তা, পাবনা, নোয়াখালী, পটুয়াখালী। 

No description available.

বঙ্গবন্ধুর আমলে কয়েকটি ঘাঁটিও কমিশন লাভ করেছিল। এগুলো হলো- বানৌজা ঈসা খান, হাজী মহসিন ও তিতুমীর। উল্লেখ্য যে, ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নৌবাহিনী Naval Ceremonial Ensign লাভ করে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে Territorial Waters and Maritime Zones Act 1974 জারি করে।

সাধারণ নির্বাচন আয়োজন 
সংবিধান প্রণয়ন ও সাংবিধানিক পথে যাত্রা শুরুর মাত্র তিন মাসের মধ্যে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সরকার বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করে।

দালালদের বিচার 
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পূর্ব বাংলার যেসব গোষ্ঠী, দল এবং ব্যক্তিবর্গ পাকিস্তানের সামরিক জান্তার অন্যায় ও অনৈতিক আক্রমণ- অভিযানে সহযোগিতা করেছিল তাদেরকে আইনের অধীনে বিচার করার ব্যবস্থা নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকার। পাকিস্তানি দালালদের আইনের অধীনে আনতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচারকার্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ প্রণয়ন।

No description available.

পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের ফেরত আনা 
মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনার প্রশ্নে জাতির পিতা ছিলেন খুব আন্তরিক। পাকিস্তানের সরকারকে বারবার আহ্বান জানিয়ে গেছেন জাতির পিতা।

রক্ষীবাহিনী গঠন 
দেশের নানাস্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগী আরেকটি নিরাপত্তাবাহিনীর প্রয়োজন থেকে বঙ্গবন্ধু সরকার রক্ষীবাহিনী গঠন করেছিল।

নারী পুনর্বাসন বোর্ড 
মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের সম্মানের সঙ্গে পুনর্বাসনের লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ড (Bangladesh Women's Rehabilitation Board) গঠন করে।

তিনদলীয় ঐক্যজোট গঠন 
অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলসমূহকে ঐক্যবদ্ধ হতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের জুন মাসে এক ঐতিহাসিক আহ্বান জানান। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অক্টোবর মাসে আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ত্রিদলীয় গণঐক্যজোট গঠন করে।

No description available.

হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা 
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশাসনিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রসহ, বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন, শরণার্থী-মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন প্রভৃতি জনস্বার্থমূলক কাজ সুশৃঙ্খল অবস্থায় আনয়নের ব্যবস্থাবলির সঙ্গে দেশের বিচার ব্যবস্থাকেও সুবিন্যস্ত এবং আইনগত ভাবে বৈধ করতে বঙ্গবন্ধু সরকার ব্যবস্থা নিয়েছিল। সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে বিচারব্যবস্থা বলতে একটি উচ্চ বিচারালয় ছিল। সেই বিচারালয়কে হাইকোর্টে উন্নতকরণ এবং বৈধকরণের উদ্দেশ্যে সার্বভৌম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ হাইকোর্ট আদেশ ১৯৭২ জারি করেন।

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে পদক্ষেপ 
বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে। আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য জ্বালানি নিরাপত্তার গুরুত্ব অপরিসীম এবং অনিবার্য, এটা বঙ্গবন্ধু শুরুতেই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছিলেন। তাই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের তৈল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ অনুসন্ধান, উত্তোলন ও ব্যবহারের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির আদেশবলে নিজস্ব ও জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ মিনারেল, এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড গ্যাস কর্পোরেশন (BMEDC) এবং খনিজ তেল ও গ্যাস খাতকে নিয়ে বাংলাদেশ ওয়েল অ্যান্ড গ্যাস কর্পোরেশন (BOGC) গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু। গ্যাস অনুসন্ধানে ১৯৭৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত ২৫টি কুপ খনন করা হয় এবং আটটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়।

রাষ্ট্রপতি ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল গঠন
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ/নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার, পঙ্গু ও আহতদের সাহায্যার্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে একটি ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এই ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও পাকিস্তানিদের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ও সামুদ্রিক সম্পদরাজি সুরক্ষা 
সমুদ্রসীমা নিয়ে চিন্তাভাবনা মুজিবনগর সরকারের আমলে করা হলেও এ নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে পত্র বিনিময় ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। তবে বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত হওয়ার প্রাক্কালে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পানিসীমার বিস্তৃতি সম্বন্ধে এক ঘোষণা প্রদান করা হয়েছিল। ঘোষণায় বলা হয়েছিল, উপযুক্ত ভূমিরেখা থেকে সমুদ্রে বাংলাদেশের পানিসীমা বারো নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের উপকূল সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্বীকৃত। এই দাবির ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু এ ক্ষেত্রে গভীর মনোযোগ দেন এবং সংবিধানের ১৪৩ ধারার ২ উপধারার বলে জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের পানিসীমা এবং মহীসোপান নির্ধারণে আইন দ্বারা এবং এ সংক্রান্ত বিষয়াদি ঘোষণার প্রয়োজনে ‘‘রাষ্ট্র অধীন পানিসীমা ও সামুদ্রিক এলাকা, ১৯৭৪ শীর্ষক একটি বিধিবদ্ধ আইন’’ প্রণয়ন করে।

টিসিবি গঠন
পৃথিবীর সব দেশে পণ্যসামগ্রী এবং দ্রব্য ও মালামাল আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি আমদানি- রফতানি বিষয়ক কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১২ জুন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ আইন ১৯৭২ জারি করেছিলেন।

বাংলাদেশ কনজুমার সাপ্লাইজ কর্পোরেশন 
দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালের ১৯ মে বঙ্গবন্ধু সরকার বাংলাদেশ কনজুমার সাপ্লাইজ কর্পোরেশন অর্ডার ১৯৭২ জারি করে।

দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল কমিটি 
বঙ্গবন্ধু সরকার দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে ১৯৭৩ সালেই শিল্প মন্ত্রণালয়ের শিল্প বিভাগে জমা দেয়।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণযজ্ঞের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন 
১৯৭২ সালের ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। সফরকালে লেনিনগ্রাদ সফরে (পিটার্সবার্গ) শহরের বিশাল স্মৃতিসৌধ দেখে অভিভূত হওয়া বঙ্গবন্ধু সঙ্গে থাকা সফরসঙ্গী এইচ টি ইমামকে নির্দেশ দেন এর একটি ফেচ করে রাখতে। বাংলাদেশেও ত্রিশ লাখ শহীদের স্মরণে এমন একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের নির্দেশ দেন জাতির পিতা। এইচ টি ইমাম লিখেছেন, ‘‘দেশে ফেরার পর আমার কাঁচা হাতের এই স্কেচ এবং স্মৃতিতে ধরে রাখা ছবিটি তৎকালীন প্রধান স্থপতি জনাব আবুল বাশারকে দেখাই এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী ওই রকম একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের ডিজাইন করার জন্য তাকে অনুরোধ করি। তিনি মোটামুটি এই আদলেই একটি নকশা প্রস্তুত করেন। ১৬ ডিসেম্বর তারিখে বঙ্গবন্ধু এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। একই সঙ্গে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে আরেকটি ছোট আকারের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু হয়।’’

স্বাস্থ্যখাতে ঐতিহাসিক অবদান 
১৯৭২ সালে ঢাকায় বড় হাসপাতাল বলতে ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে গড়ে উঠে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ড. গাস্টের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত পঙ্গু হাসপাতাল এবং আরও বেশকিছু স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। তার অনুরোধে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় একটি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইন্সটিটিউট করার উদ্যোগ নিলেন। শাহবাগ হোটেল সে সময় অনেকটা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। বঙ্গবন্ধু এই শাহবাগ হোটেলেই প্রতিষ্ঠা করলেন ইন্সটিটিউট অব পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ (আইপিজিএমআর), যাকে আমরা সবাই পিজি হাসপাতাল বলে জানি। এই পিজি হাসপাতালই এখন বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ)। 

এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার। শাহবাগ হোটেলে যেসব কর্মকর্তা, কর্মচারী ছিলেন, তাদের সবাইকে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা ও মেঘনায় চাকরি দিয়ে দেন। বাংলাদেশে বহুমূত্র রোগের চিকিৎসার জন্য প্রতিষ্ঠিত বারডেম হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পেছনে বঙ্গবন্ধু দারুণ অবদান রেখেছিলেন। বারডেমের স্বপ্নদ্রষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইব্রাহিম জমি বরাদ্দ ও প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বঙ্গবন্ধুর সহযোগিতা কামনা করলে তিনি ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সারাদেশে দূর-দূরান্তে গরিব মানুষের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই।

বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন 
সাধারণভাবে বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র নামে পরিচিত পার্বত্য চট্টগ্রামে বেতবুনিয়া ভূ-কেন্দ্রটি ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্বোধন করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে তার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নে (আইটিইউ-জি) এর সদস্যপদ লাভ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।

টেক্সটাইল খাতে উচ্চ শিক্ষার শুরু 
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তান আমলে শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৫৭ সালে বরাদ্দ দিয়ে নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন বর্তমান ক্যাম্পাসে। তখন ডিপ্লোমা কোর্স হত টেক্সটাইল কলেজে। ১৯৭৮ সালে এটি পূর্ণ কলেজে রূপান্তরিত হয়। ২০১১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে কলেজ থেকে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।

এফডিসি প্রতিষ্ঠা 
পূর্ব পাকিস্তান সংসদে ১৯৫৭ সালের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এই অধিবেশনে সরকারি বিল হিসেবে ‘পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন বিল, ১৯৫৭’ উত্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিছু সংশোধনীসহ বিলটি সংসদে গৃহীত হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু এফডিসির উন্নয়নকল্পে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

আইএমইডি সৃষ্টি 
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন আজকের আইএমইডি (বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ১৯৭৫ সালের ২৮ জানুয়ারি। এটিও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই প্রতিষ্ঠিত হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার 
পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। অতীতে যেসব উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালিত হয়েছিল তাতে গরিব কৃষকদের তুলনায় বিত্তশালী কৃষক শ্রেণি লাভবান হয়ে আসছিল।

বঙ্গবন্ধুর আমলেই প্রথম বলা হলো, সরকারকে এমন নীতি অবলম্বন করতে হবে যাতে ধনিক শ্রেণি নয়, গরিব কৃষকের কল্যাণ সাধিত হয়। অনুপার্জিত আয় এবং উচ্চ আয়ের উপর রাজস্ব নির্ধারণ করার তাগিদ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দেওয়া হয় এবং সরকারকে তা অবিলম্বে কার্যকর করার পরামর্শ দেয়া হয়। দরিদ্র মানুষদের ন্যূনতম মূল্যে অপরিহার্য দ্রব্য, যেমন গৃহনির্মাণ সামগ্রী, কম দামের কাপড় ইত্যাদি দেওয়ার উপর পরিকল্পনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভোগ্যপণ্য আমদানির বিকল্প দ্রবসামগ্রী এবং নির্ধারিত কয়েকটি রপ্তানি দ্রব্য উৎপাদনের ওপরও পরিকল্পনায় জোর দেওয়া হয়।

প্রাথমিক স্কুল সরকারিকরণ 
স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সরকার ১১,০০০ প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ, ৪০,০০০ প্রাথমিক স্কুল সরকারিকরণ করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক স্কুল পর্যন্ত বিনামূল্যে এবং মাধ্যমিক স্কুল পর্যন্ত নামমাত্র মূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবারহ শুরু হয় জাতির পিতার আমলেই।

মদ, জুয়া বন্ধ 
বঙ্গবন্ধু দায়িত্ব নেয়ার পরপরই মদ, জুয়া, ঘোড়দৌড়সহ সমস্ত ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড কার্যকরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা 
পবিত্র ধর্ম ইসলামের অনুসারী বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। ইসলাম ধর্মের যথাযথ খেদমতের অভিপ্রায়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা ছিল বঙ্গবন্ধুর অন্যতম কীর্তি। ফাউন্ডেশনসংক্রান্ত ১৯৭৫ সালের ১৭ সংখ্যক রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। 
অধ্যাদেশে বলা হয়, ‘‘যেহেতু, দেশে মসজিদ ও ইসলামী কেন্দ্র, একাডেমি ও ইন্সটিটিউট স্থাপন, পরিচালনা, সহায়তাদান, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও সভ্যতার ক্ষেত্রে ইসলামের অবদান সম্পর্কে গবেষণা চালানো, ইসলামের বিশ্বভ্রাতৃত্ব, পরমসহিষ্ণুতা ও ন্যায়বিচারের মতো মৌলিক আদর্শাবলী প্রচার, ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, আইন, বিজ্ঞান ও বিচারব্যবস্থার উপর গবেষণার প্রসার ঘটানো এবং ইহার সহিত সম্পর্কিত বিষয়াদির বিধান করিবার জন্য একটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন স্থাপন করা প্রয়োজন এবং সমীচীন’’। অধ্যাদেশটি ২৮ মার্চ, ১৯৭৫ হতে বলবৎ হয়েছে বলে গণ্য করা হয় অধ্যাদেশে।

বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায় 
বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে মোট ১২৭টি দেশের স্বীকৃতি পায় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সদস্যপদ লাভ 
১৯৭২ সালেই বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (Non Alligned Movement) NAM-এর সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৭৩ সালের মধ্যে আর্থিক ও সামাজিক সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), ইউনেস্কো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। একই সময়ে কমনওয়েলথ ও ওআইসির সদস্যপদ লাভ বঙ্গবন্ধুর সরকারের অন্যতম কূটনৈতিক অর্জন। বঙ্গবন্ধুর নিরলস প্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে।

কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসেই আলোকিত বাংলাদেশের স্বপ্ন  

শিক্ষকের মর্যাদা নিশ্চিত 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষক সম্প্রদায়কে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দিতেন। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও তাদের জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে হাজার হাজার স্কুল সরকারিকরণ করেছিলেন জাতির পিতা। বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও মুক্ত মানুষ তৈরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে তাদের বিবেক ও বুদ্ধির কাছে দায়বদ্ধ করে অবতারণা ঘটিয়েছিলেন ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ এর।

স্বাধীন ও মুক্ত সমাজ গঠনে মানুষ গড়ার কারিগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন জাতির পিতা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, এই চারটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মূলভিত্তি হিসেবে জারি করা হয় অধ্যাদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে রাষ্ট্র ও সমাজের নানা ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিতে ভয় পান না, সে সাহসের উৎ্সও বঙ্গবন্ধুর দেয়া এই অধ্যাদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে বঙ্গবন্ধু কতখানি আন্তরিক ছিলেন সেটি একটি ঘটনা বললে পরিষ্কার হবে। ১৯৭৩ সাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ প্রিলিমিনারি ক্লাসের শিক্ষার্থীগণ অটো প্রমোশনের দাবিতে উপাচার্য, বিভাগীয় প্রধান, ডিন, প্রভোস্ট, প্রক্টর প্রমুখকে প্রায় ৬ ঘণ্টা ঘেরাও করে রেখেছিল। উপাচার্যের কক্ষে অটো প্রমোশন প্রশ্নে তখন এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চলছিল। বঙ্গবন্ধু ঘেরাও পরিস্থিতির কথা অবগত হওয়ামাত্র ছুটে যান এবং বিকেলের মধ্যেই ঘেরাওকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্ধার করেন। শিক্ষকদের প্রতি এই অসৌজন্যমূলক আচরণ প্রদর্শন করায় তিনি ঘেরাওকারীদের প্রতি খুবই বিরক্ত হন এবং তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জাতির জনক তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবনে ছাত্র রাজনীতি করেছি। কিন্তু আমি কখনো এরকম অসদাচরণ করিনি।’

ইত্তেফাক/এসজেড