বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে বাংলায় প্রথম দার্শনিক গ্রন্থ

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:০৫

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এসেছে নতুন বই ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব: দার্শনিক ভাবনা।' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মো. নূরুজ্জামানের লেখা এই বই চিন্তার জগতকে আরো প্রসারিত করবে বলে ধারণা করছেন পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীরা। এর আগে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে বাংলা ভাষায় হাতেগোনা দুয়েকটি বই পাওয়া গেলেও দার্শনিক প্রেক্ষাপটে লেখা বাংলা ভাষার প্রথম বই এটি।

এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে লেখা এ মৌলিক গ্রন্থটি। বইমেলার ৩০১-৩০৩ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। এর আগেও বিজ্ঞানের দর্শন এবং সমাজচিন্তা নিয়ে বেশ কয়েকটি মৌলিক গ্রন্থ লিখেছেন এই অধ্যাপক।

বইগ্রন্থনার প্রেক্ষাপট এবং এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘যেসব প্রযুক্তির সাহায্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সাধিত হবে, যেমন-বস্তুর আন্তর্জাল, বিগ ডাটা, ভার্চুয়াল বাস্তবতা, শিক্ষা সহায়ক প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এসব নিয়ে এ বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শিক্ষা সহায়ক প্রযুক্তি শিক্ষা প্রদানের উপায়সহ শিক্ষার প্রকৃতিতে যে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে তা তুলে ধরা হয়েছে। এ গ্রন্থে শিক্ষার কেন্দ্রে চলে আসা বিষয়সহ মানববিদ্যার ভবিষ্যৎ আলোচিত হয়েছে।’

শিল্প-বিকাশের নানা পর্বে শক্তিশালী প্রযুক্তির আবিষ্কার বিভিন্ন শিল্পবিপ্লব ঘটিয়েছে। বিকাশের এ ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই বাষ্পীয় শক্তির আবিষ্কার প্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটায়। এভাবে বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব, ডিজিটাল প্রযুক্তি তৃতীয় শিল্পবিপ্লব সাধন করে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যন্ত্রশিক্ষণ ইত্যাদির সংযোজনের ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব শুরু হয়।

আরো পড়ুন: বুক নেই ফেসবুকে

এ সকল বিপ্লবের প্রভাব কেবল শিল্পের ক্ষেত্রে সীমিত থাকেনি। এটি শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিসহ আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে। প্রতিটি শিল্পবিপ্লবই মানুষের জীবনযাপনের উপায় ও উপাদানের মধ্যে নতুনত্ব আনে। তবে ঘটে যাওয়া তিন শিল্পবিপ্লবের তুলনায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে পরিবর্তনের গতি অনেক বেশি, এর ক্ষেত্রে আরো বিস্তৃত। এটি কেবল মানুষের চারপাশকে পরিবর্তন করবে না, এটি সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের প্রকৃতিকেও পরিবর্তন করবে। মানুষের প্রতিযোগী হবে তারই তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কোনা যন্ত্রে। এমনকি কোনো ব্যক্তি নিজেকে যতটুকু জানবে তার চেয়ে বেশি জানবে এরূপ কোনো যন্ত্র। তাই এই বিষয়গুলোর আলোচনা গুরুত্ব পেয়েছে গ্রন্থটিতে।

দার্শনিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরার বিষয়ে অধ্যাপক নূরুজ্জামান বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অন্যতম প্রযুক্তি বিগ ডাটা’র পদ্ধতিতত্ত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করে ডাটা বিজ্ঞানীর মতো ডাটা দার্শনিকের প্রয়োজনীয়তাকেও তুলে ধরা হয়েছে। যে প্রযুক্তি শিল্পবিপ্লবের তৃতীয় ধাপ থেকে চতুর্থ ধাপের সৃষ্টি করেছে; সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্বরূপ, ইতিহাস, এর বহুমাত্রিক ব্যবহার ও জ্ঞানতত্ত্ব আলোচনা করা হয়েছে। এসব প্রযুক্তি থেকে সৃষ্ট সামাজিক-নৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের স্বরূপ ও দায় সম্পর্কিত ভাবনাসমূহ এ গ্রন্থের অন্যতম আলোচ্য বিষয়।’

বইটি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীরা। এ বিষয়ে মন্তব্য চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এমফিলে অধ্যয়নরত মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘বইটি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব এবং এই বিপ্লবের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে আমাদের একটি মৌলিক ধারণা দিবে। এ বিষয়ে আগ্রহী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভাবনার ক্ষেত্রকে আরো প্রসারিত করবে।’

ইত্তেফাক/এএএম