বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রাণের মেলায় প্রাণের পরশ পাচ্ছি না

আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২১, ০৯:১০

এই শহরের অন্যান্য মেলায় যাওয়া হয় না বললেই চলে। কেউ কেউ যখন এ নিয়ে মাঝেমধ্যে প্রশ্ন করেন, তখন মজা করেই উত্তর দিই—অন্যান্য মেলায় কম যাওয়ার ব্যাপারটা আমি বইমেলায় প্রতিদিন গিয়ে পুষিয়ে দিই।

বইমেলা আমার কাছে তেমনই। প্রায় প্রতিদিনের রুটিন। সেই বইমেলা শুরু হয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মেলায় যাওয়া হয়েছে মাত্র দুই দিন। গেল কুড়ি বছরে তেমনটা ঘটেনি। মেলার মাস মানেই আমাদের সবকিছু আবর্তিত হয় বাংলা একাডেমি চত্বর আর হালের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঘিরে। আমাদের অনেকের মিলনস্থল হয়ে ওঠে বইমেলা প্রাঙ্গণ।

হাজারো নতুন-পুরোনো বইয়ের ঘ্রাণ, বইকে ঘিরে আড্ডা, বই দেখা, বই কেনা, নিজের বইয়ে কখনো কখনো চেনা-অচেনা পাঠককে কিছু লিখে দেওয়া, সেলফি। কত-শত মুখের অপেক্ষা—যাদের অনেকের সঙ্গে হয়তো শুধু বইমেলাতেই দেখা হয়। ফলে একুশের এই গ্রন্থমেলা শুধু মেলা থাকে না, দিনে দিনে তা দখল করেছে আমাদের আবেগের অনেকখানি।

কিন্তু প্রকৃতির ইশারায় এবার আবেগ আর বাস্তবতা যেন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। অথচ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষকে ঘিরে এবারের একুশে বইমেলা হওয়ার কথা ছিল অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনন্য আর জমজমাট। প্রস্তুতিও ছিল সেরকম। কিন্তু গেল এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারির চোখরাঙানি আমাদের কোনো কিছুই ঠিকমতো হতে দিচ্ছে না। দুঃখজনকভাবে একই সঙ্গে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। আবেগের ঢেউয়ের মুখোমুখি হচ্ছে করোনার ঢেউ। তার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইপাগল আর আড্ডাপাগল মানুষ আসছেন বইমেলায়। কিন্তু বইমেলায় মানুষের সে াতের যে চিত্র আমরা দেখে অভ্যস্ত সেটি এবার অনুপস্থিত।

ফলে এবারের বইমেলায় আপাতদৃষ্টিতে হয়তো সবকিছুই আছে। নতুন বই আছে, অল্পবিস্তর পাঠক আছে, কমবেশি আড্ডাও আছে। কিন্তু বইমেলাকে আমরা যে কারণে অন্য সব মেলা থেকে আলাদা চোখে দেখি। যাকে আমরা বলি প্রাণের মেলা—সেই প্রাণের পরশ এবারের মেলায় তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রত্যাশার সবকিছু তাই আগামীবারের জন্য তুলে রাখলাম।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার

ইত্তেফাক/এএএম