বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বইমেলা চালালে অন্তত রাত ৮টা পর্যন্ত চালু থাকুক

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২১, ০৯:২৫

আমি চাইনি এই বছরে করোনার এই অতিমারির মধ্যে বইমেলা হোক। আবেগের জায়গা থেকে তরুণ-প্রবীণ অনেক লেখক-প্রকাশক আমার কথার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তাদের যুক্তি ছিল, সব যখন খোলা আছে তখন বইমেলা কী দোষ করল?

উত্তরে বলেছিলাম, আমি তো সব খুলে রাখাকে সমর্থন করছি না। মাঝের কয়েকটি মাস যেভাবে এই দেশের মানুষ করোনার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল, সরকারি দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনা-জয়ের বাণী যেভাবে প্রচার করা হচ্ছিল, তাতে মানুষের মনে করোনা সম্পর্কে ভীতি কেটে যাওয়াটা অস্বাভাবিক ছিল না।

অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং পৃথিবীর বিভিন্ন রোগতত্ত্ব প্রতিষ্ঠান থেকে সব সময়ই সাবধান বাণী উচ্চারিত হয়েছে। বলা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে কোভিড-১৯ ভাইরাস নিজের জেনোম পরিবর্তন করে চলেছে। তা আরো আগ্রাসি হয়ে হামলা চালাবে। এই নতুন আগ্রাসি হামলার সাবধানতা হিসাবে আমি সব সময় সরব থেকেছি দেশে করোনা-সতর্কতা জারি রাখার কথায়।

আবার বইমেলার কথায় আসি। সারা বছর প্রকাশকরা উন্মুখ হয়ে থাকেন বইমেলার জন্য। তাদের প্রকাশিত বইয়ের সবচেয়ে বেশি পরিচিতি ঘটে বইমেলার এক মাস। এই প্রবণতা সুস্থ নয়। তবে এটাই বাস্তবতা। সারা বছর বই প্রকাশিত হওয়ার কথা, সারা বছর বিপণন হওয়ার কথা, সারা বছর বই নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। তা শুধু রাজধানীতে নয়। সারা দেশে। কিন্তু সবকিছু রাজধানীতে কয়েকটি দিনের জন্য কেন্দ্রিভূত করার আমাদের সর্বনেশে প্রবণতা বইকেও করে তুলেছে মেলাকেন্দ্রিক। তাই প্রকাশক-লেখকদের বইমেলার দাবি তোলা অস্বাভাবিক নয়।

বইমেলা। ছবি: ফোকাস বাংলা

তবে আমি বলে এসেছি, করোনা শুধু অনেক প্রাণহানিই ঘটায়নি, সেই সঙ্গে আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে চোরা ধস নামিয়ে গেছে অনেকখানি। বইয়ের পাঠক এবং ক্রেতা মূলত মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণির একটি অংশ। তারা করোনাকালীন একটি বছরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে গেছেন। কাজেই প্রকাশকরা মেলায় স্টল সাজানো, কর্মীদের বেতন এবং বইয়ের পেছনে যে বিনিয়োগ করবেন, তা উঠে আসার সম্ভাবনা কম।

দ্বিতীয়ত, যেহেতু বইয়ের পাঠকরা কিছুটা হলেও অন্যদের তুলনায় একটু বেশি সচেতন, তারা কেউ প্রয়োজনের বাইরে চলাচল করতে চান না, তাই তারা বইমেলাতেও তেমন আসবেন না। তৃতীয় কারণ হিসাবে বলেছিলাম, বইমেলার প্রাণ হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা অবস্থান করছেন ঢাকা শহরের বাহিরে নিজ নিজ এলাকাতে। বইমেলা প্রাণহীন হতে বাধ্য।

সবগুলো আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।ক্রমাগত চাপের মুখে বাংলা একাডেমি এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ফেব্রুয়ারির বইমেলা মার্চে চালু করলেও কয়েক দিনের মধ্যেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আক্রমণ করেছে আমাদের দেশকে। মানুষের আক্রান্ত হবার সংখ্যা এবং মৃত্যু প্রতিদিন অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করছে। এই অবস্থায় বাংলা একাডেমিও কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তারা বইমেলা বন্ধ করছেন না বটে, তবে সময় সংকুচিত করে আনছেন। এখন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। এই সংকোচনের পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তাই বইমেলা যদি চালাতেই হয়, তাহলে অন্তত রাত ৮টা পর্যন্তই চালু রাখা উচিত।

ইত্তেফাক/এএএম