লকডাউনে অন্যান্য দিনের তুলনায় মানুষ কম আসবে এটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। তবে, আগ্রহী পাঠকরা এসেছেন, সব স্টলেই অল্প বিস্তর বিক্রি হয়েছে। তবে তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম। এই বৈরী পরিবেশে এরচেয়ে ভালো কিছু আশাও করছেন না প্রকাশকরা।
দুপুরে মেলা শুরু পর পাঠকের আনাগোনা ছিল না বললেই চলে। চারটার দিকে ভালোই আনাগোনা ছিল পাঠকের। মোড়ক উন্মোচন কেন্দ্র, সিলন টি স্টল, মেলার মাঠে ছোট ছোট দলে দলে আড্ডা বসেছিল লেখক পাঠকের। মোড়ক উন্মোচন কেন্দ্রের পাশেই সিলন টি স্টলে কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, মোজাফফর হোসেন, পিয়াস মজিদ, মনি হায়দার, ইন্তামিন প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের প্রকাশক এ এস এম ইউনুছের সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডা জমে উঠেছিল। বইমেলা খোলা রাখা ভালো হচ্ছে নাকি ভুল হচ্ছে এ নিয়ে নানা জনের মন্তব্য। চায়ের কাপ শেষ করে আড্ডা ভাঙার আগে সবাই একমত হলেন বইমেলা খোলা রাখা মন্দের ভালোই হয়েছে।
‘ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার বইমেলায় অংশ নেয়া প্রকাশকদের থোক অনুদান দিতে পারে’
মেলায় স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন স্বনামধন্য সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান। তিনি বললেন, ব্যস্ততার কারণে বইমেলায় আসা হয় না। লকডাউন সে সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, মেলা ঘুরে প্রকাশকদের কষ্টটাও চোখে পড়ল। সংস্কৃতি খাতে যে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা কম সেটাও উপলব্ধি করলাম। লকডাউনে মেলা সেভাবে জমবে না সেটা সবার জানা। ফলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রকাশকদের বিক্রি অনুযায়ী সরকার বইমেলায় অংশ নেয়া প্রতিটি প্রকাশকদের থোক অনুদান দিতে পারতো। সেটা এমন খুব বেশি টাকা নয়, যা সরকার দিতে পারে না।
ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেশকিছু স্টল, লকডাউনে বন্ধ অনেক প্রকাশনী: এদিকে, গত রবিবার সন্ধ্যার ঝড়ে মেলায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রান্তের বেশকিছু স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই প্রান্তের প্রায় সব স্টলেই কিছু বই ভিজে নষ্ট হয়েছে। আর প্রায় ১৫টি প্রতিষ্ঠানে কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বাবুই, নিউ শিখা প্রকাশনী, সাঁকোবাড়ি, ন্যাশনাল পাবলিকেশন্স, চন্দ্রদ্বীপ, কলি প্রকাশনী, মাতৃভাষা, তিউড়ি প্রকাশনী, আদর্শ প্রভৃতি। এদিকে, লকডাউনের কারণে বেশকিছু প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান তাদের স্টল খোলেনি বইমেলায়।
কম বেশি বিক্রি হয়েছে মেলায়: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি গেটে ডিউটিরত পুলিশ কর্মকর্তা জানালেন, বারোটায় মেলা শুরু হলেও তখন কেউ আসেনি। বেলা দুইটার পর মেলায় মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। সাহিত্য প্রকাশের বিক্রয় প্রতিনিধি কামাল হোসেন বলেন, সারাদিনে দুই হাজার টাকার বই বিক্রি হয়েছে। চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি জাহিদ হাসান, আনুশা নীতু জানালেন, দুপুর ১২টা থেকে মেলা শুরু হলেও তেমন পাঠক আসেনি। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ৮-১০টি বই বিক্রি হয়েছে।
লকডাউনের কারণে মানুষ আসতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে তাম্রলিপির প্রকাশক এ কে তারিকুল ইসলাম রনি বলেন, মেলা চালু রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এসেছে। তারা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অতীতে হরতালে মেলা জমে উঠতে দেখেছি আমরা। এ পরিস্থিতিতে মেলা জমে উঠতে পারে। যদি তা না হয় তখন পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবো।
নতুন বই: গতকাল সোমবার নতুন বই এসেছে ২৮টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলো হচ্ছে- আজব প্রকাশ এনেছে ইথার আখতারুজ্জামানের কাব্যগ্রন্থ ‘নৈশব্দের ঘোর’ , ইমন আহমেদের ‘দুঃখপোকা’, শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর ‘নিলাম্বরি শাড়ি পরে’, নবরাগ এনেছে পবিত্র অধিকারী সম্পাদিত ‘তিনশ বছরের বাংলা ব্যঙ্গ কবিতা’, আকাশ এনেছে খালেক বিন জয়েনউদদীন সম্পাদিত ‘অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়াসমগ্র’, যুক্ত এনেছে তপন কুমার দাসের ‘প্যারিসের মায়া’, আল গাজী পাবলিকেশন্স এনেছে আমিনুর রহমান সুলতানের ‘লোকনাট্য ঘাটুগান’, আগামী এনেছে জালাল ফিরোজের ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্র নির্মাণ’।
ইত্তেফাক/এমআর