শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গড়ে উঠুক বই পড়ার অভ্যাস

আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩১

মহাবিশ্বের অজানাকে জানা ও অচেনাকে চেনার যে চিরন্তন আগ্রহ মানুষের আছে, সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের সবচেয়ে সহজ রাস্তা হলো বই পড়া। যুগ যুগ ধরে মানুষ বই পড়েছে জ্ঞান ও মানবিকতা অর্জনের জন্য।

যে জাতি যত বেশি বই পড়ে সে জাতি তত বেশি শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান হয়—এ বিষয়ে কারোরই দ্বিমত থাকার কথা নয়। একটি ভালো বই মানুষের বিবেকের দরজাকে খুলে দিয়ে তাকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে, তেমনি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনকে সুস্থ ও আনন্দিত রাখতে পারি। বই পড়ার ফলে মানুষের মস্তিষ্কে যে উদ্দীপনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয় তা মানুষের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে এসে মানুষের মধ্যে হ্রাস পেয়েছে বই পড়ার ঝোঁক। এক দশক আগেও তরুণদের অনেকেরই অবসর সময় কাটতো বই পড়ে। হুমায়ুন আহমেদের ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, আনোয়ার হোসেনের গোয়েন্দা সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ কিংবা রাকিব হাসানের গোয়েন্দা সিরিজ ‘তিন গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় সিরিজের বইগুলো তরুণ ও কিশোর পাঠকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পাশাপাশি ইন্টারনেট-ভিত্তিক গেমের আসক্তিও বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে সমাজের তরুণ ও কিশোর বয়সিদের মধ্যে। সেজন্য হারিয়ে যেতে বসেছে বই পড়ার অভ্যাস।

বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনের পর দিন। মাদকাসক্তি, পর্নোগ্রাফি, কিশোর গ্যাং কালচার ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশে। এতে নষ্ট হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তি। বিপথগামী সন্তানের কারণে ধ্বংসের পথে দেশের অনেক সুন্দর সুখী পরিবার। অথচ তারুণ্য তো সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োজিত হওয়ার বয়স, জ্ঞান অর্জন ও সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করার বয়স। বাংলাদেশের ইতিহাসে সব আন্দোলন-সংগ্রামের মূল চালিকাশক্তি ছিল তরুণ প্রজন্ম। তারুণ্যের ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা ও প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশ।

গণপরিবহন চালু হওয়ায় মেলাও প্রাণবন্ত

ছবি: ফোকাস বাংলা

সুস্থ, সুন্দর ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বই মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায়, মননশীলতার সম্প্রসারণ ও জ্ঞানের গভীরতা বাড়ায়। তাই বাংলাদেশকে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলতে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একটি ভালো বই মানুষের জীবনের অমূল্য সম্পদ। একদিন হয়তো পার্থিব সব সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাবে; কিন্তু একটি ভালো বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান কখনো নিঃশেষ হবে না, তা চিরকাল হূদয়ে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখবে তাই, ‘বই পড়ুন, জীবন গড়ুন—এ জাতীয় স্লোগানকে বাস্তবায়ন করতে হবে। জীবনকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে হলে আর বড় মনের অধিকারী হওয়ার জন্য গড়ে তুলতে হবে বই পড়ার অভ্যাস।

জন্মদিন, বিশেষ দিন কিংবা অনুষ্ঠানসমূহে বই উপহার দেওয়ার প্রথা চালু হলে দেশের প্রতিটি ঘরে বই শোভা পাবে ও বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। তাই পছন্দমতো বই কেনা এবং সেই বই উপহার কিংবা পুরস্কার দেওয়ার সুন্দর মানসিকতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রতিটি পরিবারে পারিবারিক পাঠাগার গড়ে তোলা যেতে পারে। যাতে করে, অবসর সময়ে পরিবারের সদস্যরা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নিয়মিত বইপাঠ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বইপড়াকে আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব। তরুণ প্রজন্মের উচিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সময় ব্যয় না করে প্রতিদিন অল্প অল্প করে হলেও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। এতে করে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

ইত্তেফাক/এএএম