শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ক্ষতি পোষাতে আর্থিক সহযোগিতা চান প্রকাশকরা

আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৪০

করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট নানান প্রতিকূলতার কারণে এবার অমর একুশে বইমেলার আয়োজন নিয়ে শুরু থেকেই একটা অনিশ্চয়তা ছিল। নানা কারণে ১৮ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল সময়সীমায় যে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেটি মেলার জন্য বড়ই অসময়। চৈত্রের প্রচণ্ড রৌদ্রতাপ, ঝড়-বৃষ্টি, কালবৈশাখীর শঙ্কা, ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক—এসবের মধ্যে বর্তমানে অনুষ্ঠানরত বইমেলাটি শেষ পর্যন্ত প্রকাশক ও পাঠক সমাজ কারো জন্যই সুখকর হয়নি।

এর ওপর বাংলা একাডেমির সময় সময় নীতি পরিবর্তন ও নতুন নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বইমেলার ওপর আরো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এরপর উপর্যুপরি বাংলা একাডেমির অস্থির সিদ্ধান্তসমূহ এবং মেলা খোলা রাখার সময়সীমা পরিবর্তন, করোনায় সংক্রমণের হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, লকডাউন ঘোষণা এবং লকডাউনের মধ্যেও বইমেলা খোলা রাখা—সব মিলিয়ে এটি নামসর্বস্ব মেলায় পরিণত হয়েছে।

বিশেষ করে এখন যে ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মেলা খোলা রাখা হচ্ছে, এটা খুবই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন প্রকাশকেরা। বই বিক্রি নেই বললেই চলে। প্রকাশক নেতৃবৃন্দ বলছেন, এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদের মতামত নেওয়া হয়নি, বরং বাংলা একাডেমি এককভাবে এটা চাপিয়ে দিয়েছে।

লকডাউন ঘোষণার পরও মেলা চালু রাখায় প্রকাশকদের ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়েছে বলে তারা জানান। কারণ বইয়ের নামমাত্র বিক্রি; অথচ যাতায়াত ও স্টলের স্টাফ খরচ চালাতে হচ্ছে। মেলা চালু থাকার কারণে অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মুদ্রণ প্রক্রিয়াধীন অসমাপ্ত বইও প্রকাশের কাজ চালাবার ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে।

বইমেলায় শব্দের ঘ্রাণ খুঁজে পাওয়া যায়!

বইমেলা। ছবি: ফোকাস বাংলা

এরই মধ্যে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে বইমেলার কোনো কোনো স্টল ও প্যাভিলিয়নের বই ভিজেছে, কারো সাইনবোর্ড উড়ে গেছে, কোনো কোনোটি হেলে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকেরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। হাতে গোনা কয়েকটি বড় প্রকাশনা সংস্থার এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা হয়তো সম্ভব হবে, কিন্তু বিপুলসংখ্যক ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। এমনিতেই বছরাধিককাল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একাডেমিক বইসহ সব ধরনের পুস্তক ব্যবসা হুমকির মুখে, তার ওপর বইমেলার আর্থিক ক্ষতি এখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে এ কথা ঠিক, বইমেলার এই দুরবস্থার জন্য সরকার, বাংলা একাডেমি ও প্রকাশক সমাজের কেউই এককভাবে দায়ী নন। মূল সমস্যা সৃষ্টি করেছে মূলত করোনা সংক্রমণ। যদিও বইমেলা শুধু বই বেচাকেনার জন্যই আয়োজন করা হয় না, এটি আমাদের জাতীয় চেতনার বাতিঘর। তাছাড়া এবার মুজিব জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন করছে জাতি। শত প্রতিকূলতার মধ্যে প্রকাশকদের বইমেলায় অংশগ্রহণের সেটিও উল্লেখযোগ্য কারণ।

এখন সৃষ্ট এই দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের সহযোগিতা চাইছেন প্রকাশকগণ। সাধারণ প্রকাশকদের পক্ষ থেকে প্রকাশক নেতাদের প্রতি চাপ বাড়ছে, তারা যেন বাংলা একাডেমি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তাদের দাবি তুলে ধরেন। দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধের বিকাশে প্রকাশনা খাতের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তাই করোনায় সরকার প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন সেক্টরে যে বিশেষ অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিচ্ছে, সে অনুযায়ী প্রকাশকদের প্রতি হাত বাড়ানোর এটাই সময়।

লেখক: মাতৃভাষা প্রকাশ ও পরিচালক : বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি

ইত্তেফাক/এএএম