বইমেলা আজ জমে উঠবে, ছুটির দিন বলে এমন প্রত্যাশাই করছেন লেখক, পাঠক ও প্রকাশকরা। আজও যথারীতি মেলার দুয়ার খুলে যাবে বেলা ১২টায়। যেহেতু গণপরিবহন খুলে দেওয়া হয়েছে তাই আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার মেলায় পাঠকের আনাগোনায় মুখরিত হবে। গতকাল মেলায় অল্পবিস্তর বিক্রি হয়েছে সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানেই।
এদিকে, আগাম কোনো ঘোষণা ছাড়াই গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় মেলার দুয়ার বন্ধ করে দিলে অনেকেই মেলায় প্রবেশ করতে পারেননি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসির দিকের গেটে মানুষের জটলা দেখা গেছে। লকডাউনের মধ্যে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে মেলায় ঢুকতে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাঠকরা। লকডাউনের সময় আগাম গেট বন্ধ করার বিষয়ে প্রকাশকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি জানিয়েছেন, এই লকডাউনের সময় আধা ঘণ্টা আগে গেট বন্ধ করা অযৌক্তিক।
বাংলা একাডেমি আঙিনায় বইমেলার নতুন দিগন্ত:
আগে এ আঙিনাতেই বসতো বইমেলা। এখন যেন অনেকটা ব্রাত্য হয়ে পড়েছে। বইমেলার ঐতিহ্য অনুযায়ী মুক্তধারার স্টল দিয়ে শুরু হয় বইমেলার স্টল বিন্যাস। এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা সরে যাওয়ায় এখানে যেসব প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকে তারা প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতোই টিমটিম করে জ্বলতে থাকে।
বাংলা একাডেমি অংশে প্রধানত সরকারি ও বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। এর মধ্যে বেশি কিছু স্টলে খুব ভালো বিক্রি হয় বই। বিশেষ করে শিশু একাডেমির প্রকাশনাগুলো শিশুদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আরেক পাঠকপ্রিয় স্টল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে ‘গ্রাফিক নভেল মুজিব’ নিয়ে আছে শিশুদের দারুণ কৌতূহল। কার্টুনের মাধ্যমে সহজ ভাষায় লেখা বইটির ‘ভাষা আন্দোলন :শুরুর গল্প’ শিরোনামের অষ্টম সংস্করণ এসেছে মেলায়। স্টলটির বিক্রয়কর্মী জানান, ছোটরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সহজভাবে জানতে চায়। তাই এই গ্রাফিক নভেলের প্রতি তারা বিশেষ আগ্রহী।
ধর্মীয়বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের খোঁজে অনেকেই আসেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের স্টলে। এখানে বহুল বিক্রীত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘বুখারী শরিফ’, ‘আখলাকুল নবী’, ‘আল কোরআনুল করিম’ ও ‘নক্ষত্রতুল্য সাহাবায়ে কারাম’।
এছাড়াও রয়েছে জাতীয় জাদুঘর, রম্য পত্রিকা উন্মাদ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্টল। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের স্টলের আছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক নানা বই। কবি নজরুল ইনস্টিটিউটে দেখা মেলে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের বিচিত্র বিষয়ে রচনাসম্ভারসহ তাকে নিয়ে লেখা নানা বই। ডাক বিভাগের স্টলে রয়েছে হরেক রকমের ডাকটিকিট, পোস্টকার্ড ও বিশেষ খাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থায় রয়েছে মূলত গবেষণা বিষয়ক বই। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতেও রয়েছে গবেষণাধর্মী গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই। তাদের প্রকাশিত পাঠক আকৃষ্ট করা বইয়ের মধ্যে আছে ‘বাংলা পিডিয়া’, ‘জুনিয়র বাংলা পিডিয়া’, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’, ‘চারু ও কারুকলা’, ‘ঢাকাই খাবার’, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ ও ‘স্থাপত্য’। রয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্টল। আরো রয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রকাশনা নিয়ে স্টল। এসব স্টলেও বিক্রি বেশ ভালো।
নতুন বই :বইমেলার ২২তম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন বই এসেছে ৪৭টি। এর মধ্যে গল্প-৮, উপন্যাস-৬, প্রবন্ধ-৫, কবিতা-১৯, গবেষণা-১, ছড়া-২, জীবনী-২, মুক্তিযুদ্ধ-২, নাটক-১, অন্যান্য-১টি বই। এর মধ্যে পিয়াল প্রিন্টিং পাবলিকেশন্স এনেছে আসাদ চৌধুরী সম্পাদিত ‘রুমানা চৌধুরীর আবৃত্তির কবিতা’, পাঞ্জেরী এনেছে আনজীর লিটনের ‘স্কুলের ছড়া’, শাহজাহান কবির বীরপ্রতীকের ‘নৌযুদ্ধ একাত্তর’, য়ারোয়া বুক কর্নার এনেছে শ্যামসুন্দর সিকদারের ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু’, ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স এনেছে মুম রহমানের ‘মাতাল পাগল প্রেমিক’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ইত্তেফাক/এসআই