অমর একুশে বইমেলাকে রঙিন করে রাখেন নারীরা। শাড়ি পরে, বাঙালি সাজে সেজে মেলাকে বাঙালির ঐতিহ্যের ধারায় ধরে রাখেন তারাই। কিন্তু বই মেলায় নারী লেখকদের বই কেমন বিক্রি হয়। প্রকাশকরা বলছেন, যারা ভালো লেখেন সেই নারী লেখকদের বই ভালো বিক্রি হয়। তবে পুরুষদের তুলনায় নারী লেখকের সংখ্যা খুব কম।
বাংলাদেশে নারী লেখকদের সংখ্যা কম হলেও যারা সাহিত্যের জগতে পা রেখেছেন তারা সবাই নিজের স্বকীয়তায় পাঠকের হূদয়ে চির আসন পেয়েছেন। সুফিয়া কামাল, নীলিমা ইব্রাহীম, সন্জীদা খাতুন, সেলিনা হোসেন, রিজিয়া রহমান, রাবেয়া খাতুন, মকবুলা মনজুর, দিলারা হাশেম, আনোয়ারা সৈয়দ হক, রুবী রহমান, কাজী রোজী উল্লেখযোগ্য। এরপরে তসলিমা নাসরীন, নাসরীন জাহান, শাহনাজ মুন্নী, ঝর্ণা রহমান পাঠকের কাছে তাদের লেখা নিয়ে উঠে আসেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েক জন তরুণ নারী লেখক পাঠকের সমাদর লাভ করছেন। এদের মধ্যে শাহীন আখতার, অদিতি ফাল্গুনী, মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম, মৌরি মরিয়ম, সাগুফতা শারমীন তানিয়া, আফসানা বেগম, রাশিদা সুলতানা, বদরুন নাহার, সাকিরা পারভীন সুমা, ফাতিমা রুমী, কামরুন নাহার শীলা, সুহিতা সুলতানা, শেলী নাজ, আফরোজা সোমা, আয়শা ঝর্না প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
তবে নারী লেখক উঠে আসছেন খুব কম। বা অনেকে লিখলেও মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছেন হাতে গোনা অল্প ক’জন। কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার দেশের স্বনামধন্য একটি সাহিত্য পুরস্কার। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে ৪৭ জন পুরস্কার পাওয়ার মধ্যে নারী আছেন মাত্র পাঁচ জন। বাকি ৪২ জন পুরুষ লেখক। এর আগে থেকে ১৯৯৩ সাল থেকে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার নিয়মিতভাবে নারী লেখক পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বীকৃতি দিয়ে পুরস্কার প্রদান করে আসছে। দেশের স্বনামধন্য নারী লেখকদের অনেকেই অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই তাদের লেখক জীবনের প্রথম স্বীকৃতি পেয়েছেন। তারপরেও নারী লেখকদের উঠে আসার সংখ্যা বেশ কম।
মেলায় আসা সচেতন পাঠকদের একটা বড় অংশ কোন নারী লেখকের বই পড়েন প্রশ্নের উত্তরে, সেলিনা হোসেন, নাসরীন জাহান, আনোয়ারা সৈয়দ হক ও রাবেয়া খাতুনের নাম উল্লেখ করেন। অনেকে জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’র কথা বলেছেন। নারীবাদী লেখিকাদের মধ্যে তসলিমা নাসরীন, সুপ্রীতি ধরের কথাও বলেছেন অনেকেই। তবে, যারা কিছুটা সিরিয়াস পাঠকদের তাদের মুখে উঠে এসেছে মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, শাহীন আখতার, মৌরী মরিয়মের কথা। নারী লেখক কেন কম উঠে আসছে এ প্রসঙ্গে নারী লেখকরা জানান, দেশে এখনো লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তাছাড়া, বাড়ির একটা ছেলে যখন লেখে তখন পরিবার তাকে অবসর তৈরি করে দেয়। কিন্তু মেয়েদের জন্য তা করা হয় না।
এ প্রসঙ্গে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, মেয়েরা লেখক হিসেবে কম, তার দায়িত্ব শুধু মেয়েটার একার নয়। আমাদের সামাজিক, পারিবারিক এবং পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থাও অনেকটা দায়ী। যে মেয়েরা লিখছেন দেখা যাবে তাদের পরিবার তাদের সহযোগিতা করছে। অনেক ভালো লেখক এই পরিবারের সহযোগিতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে।
ইত্তেফাক/জেডএইচডি