শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সম্মিলিত পর্যটন জোটের অনলাইন আলোচনা সভায় উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী এমপি

বাজেটে পর্যটন খাতকে অবহেলা করা হয়েছে

আপডেট : ১৭ জুন ২০২০, ১৯:৩১

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের পর্যটন খাতকে অবহেলা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। 

বুধবার সম্মিলিত পর্যটন জোটের উদ্যোগে আয়োজিত ‘পর্যটনে বাজেট’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা সভায় তিনি বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মোতাবেক ৩ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকার বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৮০% বাজেট বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। এত বড় পর্যটন খাতের জন্য মাত্র ৭২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। 

সম্মিলিত পর্যটন জোটের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোখলেছুর রহমানের সঞ্চালনায় অনলাইন আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান (পরিকল্পনা) লুবনা ইয়াসমিন, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের সমন্বয়কারী শফিকুজ্জমান, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশের (আটাব) সাবেক সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক (মিডিয়া এন্ড পাবলিকেশন) সাহেদ উল্লাহ, ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, ময়মনসিংহ ট্যুরিস্ট ক্লাবের সদস্য আবদুল কাদের চৌধুরী মুন্না ও সম্মিলিত পর্যটন জোটের প্রথম যুগ্ম-আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম সাগর।

উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনসহ বাঘ সংরক্ষণ, সমুদ্র সৈকত এলাকা ও সিলেটের প্রাকৃতিক নিসর্গ ভিত্তিক পর্যটন গড়ে তোলার জন্য এই বাজেট অত্যন্ত অপ্রতুল। তিনি সংসদে পাস হওয়ার পূর্বে মন্ত্রণালয়কে এই বাজেট পুনর্মূল্যায়ন করার পরামর্শ দেন। 

জাবেদ আহমেদ বলেন, পর্যটনকে মেইনস্ট্রিমিং করতে হবে যেন অন্যান্য মন্ত্রণালয় তাদের কর্মকাণ্ড ও বাজেট প্রণয়নের জন্য পর্যটনকে বিবেচনা করে। কারণ পর্যটন কোনও একক সত্ত্বা নয়। বরং সড়ক, নৌ, সংস্কৃতি ইত্যাদি বহু মন্ত্রণালয়ের বাজেট ও কার্যক্রমের সাথে পর্যটন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। এই ব্যবস্থা পর্যটনের পণ্য বহুমুখীকরণে সহযোগিতা করবে। এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে তিনি অবিলম্বে ট্যুরিজম স্যাটেলাইট একাউন্ট চালুর কার্যক্রম শুরু করার প্রতিশ্রুতি দেন।

লুবনা ইয়াসমিন বলেন, বাজেট প্রণয়নে মন্ত্রণালয়ের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে তা প্রণীত হয়। যেমন, আগের বছরের ব্যয়িত অর্থের সাথে ১৫% হারে পরের বছরের বাজেট তৈরি হয়। তাই বাজেটের আয়তন হঠাৎ করে বাড়ে না। তিনি বলেন, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে পর্যটন খাতের সম্পর্ক খুবই দুর্বল। তাই মন্ত্রণালয় পর্যটনের বিষদ কিছু জানে না। তিনি সম্মিলিত পর্যটন জোটকে আশ্বস্ত করে বলেন, আপনাদের সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন প্রস্তাবনা নিয়ে আসুন, আমরা বাস্তবায়ন করবো।

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, পর্যটনের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। পর্যটন তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেম সৃষ্টি করতে পারে। তাই আজকের তরুণ পর্যটনের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হলে পরবর্তী অন্তত ৪০ বছর তার প্রভাব থাকবে। এই খাতে সম্পৃক্ত বিপুল পরিমাণ মানবসম্পদ এবং জিডিপিতে অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক মনোযোগ দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস সেক্টর বছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করলেও ২২ বিলিয়ন ডলারের আমদানি করে। অন্যদিকে ইউরোপের বাজার পড়ে গেলে গার্মেন্টসও পড়ে যাবে। কিন্তু পর্যটনের রপ্তানি নিট এবং এই বাজার কখনো পড়বে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ভ্রমণ ব্যয় কমলে এখানে বিদেশিরা ভ্রমণে আসবেন না। তাই বাজেটে একে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন রাজেকুজ্জামান।

শফিকুজ্জমান বলেন, পর্যটন খাত করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাই বাজেটে একে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। 

মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব প্রশ্ন তোলেন, এয়ারলাইন্সের টিকেট থেকে এবং ট্রাভেল এজেন্টদের কাছ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয়, তার উপর বাজেটের এত অর্থ এয়ারপোর্ট রক্ষণাবেক্ষণ এবং অন্যান্য কিছু ছোট ক্ষেত্র ছাড়া কোথায় এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ। সেই তুলনায় প্রতি বছর পর্যটনের জন্য অপ্রতুল বাজেট রেখে একে গুরুত্ব দিচ্ছে না মন্ত্রণালয়। এই খাতে তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। সবশেষে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জয়িতা শেখ।

ইত্তেফাক/ইউবি