বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তথ্য-উপাত্তসহ সংসদে সমালোচনার জবাব দিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

আপডেট : ০১ জুলাই ২০২০, ০১:৪৪

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে চলা সকল সমালোচনার তথ্য-উপাত্তসহ জবাব দিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালিক। মঙ্গলবার সংসদে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে সংসদ সদস্যদের অভিযোগ শোনার পর তার জবাবে বেশ স্পষ্ট করেই বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়া নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি।

এ সময় ঢামেকে কর্মরত তিন হাজার ৭০০ জনের বিস্তারিত তুলে ধরে খরচগুলোর কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, শুধু খাবারের বিল মোটের ২০ হাজার কোটি টাকা নয়। বরং এই ৩ হাজার ৭০০ জনের প্রত্যেকে দৈনিক তিন বেলা খাবারের জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন ৫০০ টাকা করে। এ ছাড়াও ৫০টি হোটেল ভাড়া করা হয়েছে এবং প্রতিটি রুমের ভাড়া ১১০০ টাকা করে।

বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য খাতের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন অনুসারে যে কোন দেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজেট দেশের মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ এবং জিডিপির ৫ শতাংশ হতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত এক দশকে দেশের বাজেটের আকার চারগুণ বাড়লেও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বেড়েছে ৩.১৫ শতাংশ। যেখানে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয় শ্রীলঙ্কায় ৩৬৯ ডলার, ভারতে ২৬৭ ডলার এবং পাকিস্তানে ১২৯ ডলার; সেখানে বাংলাদেশে মাথাপিছু স্বাস্থ্য খাতে বাজেট মাত্র ৮৮ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট ১৭%, সুইজারল্যান্ডে ১২% এবং জার্মানিতে ১১%।

কিন্তু তারপরও এ সকল দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার কম রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার কারণে বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ২৬ শতাংশ। এই হার ভারতে ৬ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৪ শতাংশ। এটা এমনিতেই হয়নি। সবাই কাজ করেছে বলেই এটা হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সংসদ সদস্যরা আমাদের কেবল দোষারোপ করে গেছেন। আমরা কী কাজ করেছি, তা আসেনি তাদের বক্তব্যে।

তিনি বলেন, আমাদের মাত্র একটি টেস্টিং ল্যাব ছিলো। দেড় মাসে আমরা এখন ৬৮টি ল্যাব করেছি। দিনে মাত্র দেড়শ টেস্টের ব্যবস্থা ছিল, সেটা এখন ১৮ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এটা এমনিতেই হয়নি। আমরা জানি, আমাদের আরও টেস্ট দরকার। আরও করলে ভালো হয়। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, কোটি কোটি মানুষের টেস্ট করানোর মত সক্ষমতা আমাদের নেই। এটা মানতেই হবে।

স্বাস্থ্য খাতে গত বছরের তুলনায় মাত্র ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আর চলতি বছর স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ দেয়া ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা দেশের মোট জিডিপির শতকরা  ১ ভাগের কাছাকাছি। এই মোট বরাদ্দের অর্ধেকেরও বেশি বেতন-ভাতা ও ওষুধ কেনার কাজে ব্যয় হচ্ছে। আরেকটি বড় অংশের বাজেট রাখা অবকাঠামো নির্মাণের জন্য। ফলে স্বাস্থ্য খাতের মৌলিক উন্নয়ন এবং গবেষণার জন্য বরাদ্দের পরিমাণ অনেক কম থাকে। এ বিষয়ে দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা দীর্ঘদিন যাবত অভিযোগ করে আসছে।

এ ছাড়াও মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সকল উন্নয়ন বাজেটের ক্রয় অনুমোদনের জন্য প্রত্যেকবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। ফলে সঠিক সময়ে উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।

গত তিন মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, আইসিইউ নিয়ে অনেক কথা হলো। ভেন্টিলেটর নিয়ে বিরাট হৈ চৈ। কিন্তু দেখা গেছে, ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজনই নেই। ভেন্টিলেটরে যারা গেছেন, তাদের প্রায় সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমাদের ৪০০ ভেন্টিলেটর আছে। এর মধ্যে ৫০টিও ব্যবহার হয়নি। সাড়ে তিনশ ভেন্টিলেটর অব্যবহৃত পড়ে আছে।

তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে আইসিইউ-এর পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। যেখানেই আইসিইউ স্থাপনের সুযোগ ছিলো আমরা করেছি। এই মহামারী মোকাবেলায় মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে আমরা নতুন করে ২ হাজার ডাক্তার এবং ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরো ৩ হাজার টেকনিশিয়ান নিয়োগ করছি আমরা। .. এর মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। এখন হাইফ্লো অক্সিজেনের প্রয়োজনের কথা বলা হচ্ছে। আমরা এক হাজার অক্সিজেনের অর্ডার দিয়েছি। প্রায় ১০ হাজার নতুন সিলিন্ডার বানানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ৫ দিনে বসুন্ধরায় দুই হাজার বেডের হাসপাতাল বানিয়েছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবার সহযোগিতা পেলে কোভিড চলে যাবে। স্বাভাবিকভাবে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।

সংসদ অধিবেশনে এই মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে আরো বেশি বাজেট বরাদ্দ দেয়া উচিত বলে জানান তিনি।

ইত্তেফাক/আরএ