বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সারওয়ার আলী হত্যাচেষ্টা ডাকাতির ঘটনা

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ২০:২৪

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলীর বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সোমবার ভোরে রাজধানীর উত্তরা থেকে এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া মো. ফরহাদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআইয়ের কাছে এমনই তথ্য দিয়েছে। ভুক্তভোগী ঘটনাটিকে জঙ্গি হামলা বলে দাবি করলেও পিবিআই ডাকাতি মনে করছে।

বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসপি মো. বশির আহমেদ বলেন, ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ফরহাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দায়। জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, ঘটনার সঙ্গে সাতজন জড়িত। মূল পরিকল্পনাকারী ডা. সারওয়ার আলীর স্ত্রীর চাকরিচ্যুত গাড়িচালক নাজমুল।

গ্রেফতার ফরহাদ দিনমজুর হিসেবে কাজ করে। গত ৩ জানুয়ারি তাকেসহ আরও একজনকে দৈনিক ৫০০ টাকা চুক্তিতে কাজে নেওয়া হয়। পরে এ চক্রে আরও চারজন যোগ হয়ে আশকোনার একটি রেস্টুরেন্টে বসে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন বিকালেও আশকোনার রোজ ভ্যালি হোটেলের ৩০৩ নম্বর কক্ষে সাতজন পরিকল্পনা করে এবং সন্ধ্যার পর ঘটনাস্থলে যায়।

প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে ডাকাতি বলে মনে হচ্ছে। টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিতে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ফরহাদ জানিয়েছে। তবে কোনও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতার করলে জানা যাবে। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ দুজন ছাড়া অন্যদের নাম পরিচয় জানানো সম্ভব হচ্ছে না।

ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এসপি মো. বশির আহমেদ বলেন, উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ওই বাসার ৪র্থ তলায় সারওয়ার আলী এবং তৃতীয় তলায় তার মেয়ে থাকেন। দুর্বৃত্তদের দুজন প্রথমে তৃতীয় তলায় গিয়ে মেয়ে, মেয়ের স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি করে। তাদের আঘাত করে সারওয়ার আলীর অবস্থান জানতে চায়। ৪র্থ তলার ফ্ল্যাটের কথা বললে একজন ওপরে যায় এবং দরজা নক করে।

দরজা খোলা হলে তারা প্রথমে সারওয়ার আলীর স্ত্রী ও পরে সারওয়ার আলীকে জিম্মি করে। পরে তৃতীয় তলা থেকে আরও একজন আসে। এ সময় তারা চিৎকার করলে দ্বিতীয় তলায় থাকা এক ব্যক্তি এবং তার ছেলে গিয়ে তাদের বাঁচান। সারওয়ার আলীর মেয়ে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশের সহায়তা চাইলে তাৎক্ষণিক পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। এর আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, বাসায় দুজনই গিয়েছিল বাকি পাঁচজন আশপাশে ছিল। গ্রেফতার ফরহাদও বাসার আশপাশে অবস্থান করছিল। তবে পুলিশ যে দুজনকে গ্রেফতার করে আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করেছে তারা এই সাতজনের বাইরে। তবে গ্রেফতার ওই দুজনেরও এ ঘটনায় সহযোগিতা রয়েছে। হামলার সঙ্গে দুজন শিক্ষিত যুবক রয়েছে। এছাড়া কোনও এক বিষয়ে ডা. সারওয়ার আলীর সঙ্গে তর্ক করার কারণে গাড়িচালক নাজমুলকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি রাতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারওয়ার আলীকে হত্যার উদ্দেশ্যে দুই দুষ্কৃতকারী তার উত্তরার বাসভবনে ঢোকে। সারওয়ার আলীকে তারা আঘাত করতে না পারলেও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তার স্ত্রী মাখদুমা নার্গিস, তাদের মেয়ে সায়মা আলী ও জামাতা হুমায়ুন কবির ও দুই প্রতিবেশী।

হত্যাচেষ্টার ঘটনায় বাসার দারোয়ান মো. হাসান ও পূর্বের ড্রাইভার নাজমুলসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে উত্তরা পশ্চিম থানায় ৬ জানুয়ারি মামলা করেন ডা. সারওয়ার আলী। ফরহাদ ছাড়াও এই ঘটনায় ওই বাড়ির দারোয়ান হাসান এবং ড্রাইভার হাফিজুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/জেডএইচ