শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মোবাইল অ্যাপ ও হটলাইনে সাংসদ আসলামুল হকের অভিনব খাদ্য সহায়তা 

আপডেট : ২৪ মে ২০২০, ০৩:৩২

কোভিড-১৯ এর সংক্রামণে দেশে চলছে লকডাউন। এ অচলাবস্থায় স্বল্প আয়ের দরিদ্র মানুষেরা লাইনে দাঁড়িয়ে কিংবা ভোটার আইডি কার্ড দেখিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারলেও সারাদেশে এই লকডাউনের বিপরীতে মারাত্মক সংকটে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো লাইনে দাঁড়িয়ে কিংবা জনপ্রতিনিধিদের কাছে নাম দিয়ে খাদ্য সহায়তা গ্রহণ হয়ত সম্ভবপর না। তাই ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হক মধ্যবিত্তদের পরিচয় গোপন রেখে প্রযুক্তির সহায়তায় শুরু করেন এ দুটি অভিনব খাদ্য বিতরণ পন্থা।  

গত ২৭ মার্চ প্রথম তিনি চালু করেন হটলাইনের মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ। হটলাইনে ফোন করে ঠিকানা মেসেজ করে দিলেই খাবার চলে যায় ঢাকা-১৪ এর বাসিন্দাদের দরজায়। ইতিমধ্যে এই হটলাইন ঢাকা-১৪ তে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে।  খাদ্য গ্রহণ শেষে গ্রহীতা পুনরায় হটলাইনে ফিরিতি ফোনে জানাচ্ছেন কৃতজ্ঞতা।  এভাবে একটি গ্রহীতা পরিবার প্রতি সপ্তাহে একবার খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন।  

করোনায় যেহেতু বের হওয়া যাচ্ছে না তাই খুব সহজেই ঢাকা-১৪বাসী ঘরে বসেই এই খাদ্য সহায়তা নিতে পারেন। এতে সামাজিক দূরত্বও সহজে বজায় থাকে।  হটলাইনে খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়ার ব্যাপক সফলতার পর মো. আসলামুল হক ২০ মে থেকে শুরু করেছেন মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়া।  Connect Aslamul Haque Mp নামের এই অ্যাপে নাম ঠিকানা রেজিস্টার করে শুধু মাত্র একটি ক্লিক করলেই খাদ্যের অনুরোধটি চলে যায় অ্যাপের সার্ভারে। অ্যাপ সার্ভারে গচ্ছিত অনুরোধ পাঠানো পরিবারগুলোর অনুরোধ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরের সপ্তাহের খাদ্যের অনুরোধ জেনারেট করে। এতে খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়া অনেকটা সহজ হয়ে যায়।  

আরো পড়ুন: জীবিত আতরজানকে মৃত দেখিয়ে চালের তালিকা থেকে নাম কাটলেন ইউপি সদস্য! 

হটলাইনের পর আবার খাদ্য বিতরণের জন্যে কেনো আরেকটি মাধ্যম অ্যাপ চালু কেন চালু করা হলো- প্রশ্নের জবাবে মো. আসলামুল হকের মালিকানাধীন মায়িশা গ্রুপের কমিউনিকেশান ও  মিডিয়া উইং কর্মকর্তা নবেন্দু জয় জানান, হটলাইন কোন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি নয়, এ পদ্ধতি চালু রাখতে প্রশিক্ষিত লোকের প্রয়োজন। যেহেতু সাধারণ ছুটি চলছে আমাদের অফিসও স্বাভাবিকভাবে বন্ধ এর জন্যে বেশি এজেন্টের কল সেন্টার আমরা তৈরি করতে পারিনি, আমাদের মাত্র ৩ এজেন্টের কল সেন্টার। আর ৩ এজেন্টের কল সেন্টার দিয়ে এত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়া দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে করা সহজসাধ্য নয়। তাই আমাদের সম্মানিত চেয়ারম্যান মহোদয় খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়া দ্রুত করতে অ্যাপ নির্মাণের নির্দেশ দেন। তার পরিকল্পনা এবং নির্দেশনায় গত ২০ মে থেকে আমরা হটলাইনের পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তার অনুরোধ গ্রহণ করছি। মোবাইল অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত খাদ্য বিতরণ অনেক স্বচ্ছ এবং নির্ভুল এতে কেউ একবারের অধিক খাদ্য গ্রহণের অনুরোধ দিতে পারবে না, একবার অনুরোধ দিলে পুনরায় অনুরোধটি ৭ দিন পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে।’

সংসদ সদস্য আসলামুল হক বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর সংক্রামণের  প্রথমভাগেই আমার নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-১৪ এর অন্তর্গত টোলারবাগে আঘাত হানে। তখন যেহেতু প্রশাসনিকভাবে তখনও লকডাউনের ঘোষণা আসে নাই তাই আমরা ওই এলাকায় চলাফেরা দোকানপাট সীমিত করি।সীমিতকরণের পর যে ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ তা যাদের আর্থিক সঙ্গতি কিছুটা দুর্বল তাদের বাসায় খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা। যেহেতু টোলারবাগে মধ্যবিত্ত পরিবারের বসবাস বেশি তাই তারা যেনো পরিচয় গোপন রেখে খাদ্য সহায়তা পেতে পারে সেজন্য ২৭ মার্চে আমরা হটলাইন চালু করি। পরবর্তীতে আমার পুরো এলাকায় হটলাইনের সুবিধার আওতায় এসেছে। হটলাইনে অনুরোধ প্রক্রিয়া থেকে খাবার বিতরণ একটু সময়সাধ্য তাই ২০ মে থেকে খাদ্য অনুরোধ প্রক্রিয়া একেবারে স্বয়ংক্রিয় করতে আমি মোবাইল অ্যাপে’র মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু করি। আশা করি হটলাইনের চেয়েও স্বচ্ছ এবং নির্ভুলভাবে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আমরা খাদ্য বিতরণ করতে পারবো এবং হটলাইনেও খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’

এই হটলাইনের মাধ্যমে বিশ হাজারেরও বেশি পরিবার খাদ্য সহায়তা গ্রহণ করেছেন। প্রযুক্তিদল স্পাইরো টেকনোলোজি,মুক্তির গান ইনোভেশান লিমিটেড এবং মায়িশা সফট টেকলোজি লিমিটেডের  কারিগরি সহায়তায় সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হকের উদ্যোগে এরকম ডিজিটাল খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়া একেবারেই নতুন হলেও যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে। 

প্রায় আশি হাজার পরিবারকে খাদ্য প্রদান, পঁয়ত্রিশ হাজার পরিবারকে বস্ত্র প্রদান ও রাস্তায় রাস্তায় লকডাউন বজায় রাখতে সিসি ক্যামেরা ও মাইক স্থাপন করে এলাকার মানুষ ও সারা বাংলাদেশের নেটিজেনদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন ঢাকা-১৪ এর এই সংসদ সদস্য। 

ইত্তেফাক/এএএম