শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আইসোলেশন নয় ছিল মৃত্যুফাঁদ!

আপডেট : ৩০ মে ২০২০, ০২:০৭

রাজধানীর বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটটি বানানো হয়েছিল মৃত্যুফাঁদ! খোদ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাই বলছেন, হাসপাতালে কোনো ফায়ার ফাইটার টিম নেই। আর মূল হাসপাতালের বাইরে ঐ আইসোলেশন সেন্টারটি যেভাবে তৈরি করা হয়েছিল তাতে পুরো ইউনিটটিই সর্বোচ্চ মাত্রায় একটি দাহ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। আগুন লাগার পর হাসপাতালের কেউ রোগীদের উদ্ধারে এগিয়ে যাননি।

জানা গেছে, হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের পাশে মূল ভবনের বাইরে ২০ ফুট বাই ১০ ফুট অস্থায়ী করোনা আইসোলেশন সেন্টারটি করা হয় এক মাস আগে। শীতের সময় কর্মকর্তারা সেখানে ব্যাডমিন্টন খেলেন। করোনার জন্য অস্থায়ীভাবে শেড দিয়ে পাঁচটি বেডের একটি ইউনিট করা হয় টিন আর বোর্ড দিয়ে।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ওপরে টিন এবং পাশে জিপসাম দিয়ে তৈরি ছিল এটি। পার্টিশন ও সিলিং করা হয়েছে বোর্ড দিয়ে। এর মধ্যেই এসির লাইন, অক্সিজেন, প্রচুর ইলেকট্রিক লাইন ছিল। ফলে পুরো ইউনিটটিই সর্বোচ্চ মাত্রায় একটি দাহ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। দেবাশীষ বর্ধন বলেন, আগুন লাগার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আসলে কিছুই করেনি। তাদের ফায়ার ফাইটিং টিম নেই। ফায়ার হাইড্রেন্ট আছে। ওগুলো ব্যবহারের লোক ছিল না তাদের। আর ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহারের চেষ্টা হলেও তা কাজে আসেনি কারণ মেয়াদ ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত চলছে, শেষ হলেই রিপোর্ট দেব।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ফায়ার সার্ভিস জানতে পেরেছে, বুধবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে আগুন লাগে। আর ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয় আরো ৩৫ মিনিট পর রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে। তাও হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়নি। মূল ভবনের রোগীদের মধ্য থেকেই কেউ পুলিশের ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। তারা দ্রুতই হাসপাতালে গিয়ে সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে হাসপাতালের কেউ আগুন নেভানোর চেষ্টাই করেনি।

ইউনাইটেড হাসপাতালের যোগাযোগ ও ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ডা. শাগুফা আনোয়ার বলেছেন, এটা আইসোলেশন ইউনিট হওয়ায় হাইফ্লো অক্সিজেন চলে। এখানে আইসিইউ ব্যবস্থা আছে। রোগীরা সবাই ভেন্টিলেটরে ছিলেন। তাদের পক্ষে বের হওয়া সম্ভব ছিল না। আর মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় আমরা চেষ্টা করেও কিছু করতে পারিনি।

আগুনে নিহত পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর দুই জন নেগেটিভ। আগুনে নিহত মাহবুব এলাহী (৫০) নামের এক রোগীর ছোটো ভাই নাঈম আহমেদ জানান, ১৫ মে তাকে ভর্তি করা হয়। তার শ্বাসকষ্ট ছিল। কিন্তু প্রথম টেস্টে নেগেটিভ আসে। এরপর ঈদের আগে আরেকটি টেস্ট করা হলেও নেগেটিভ আসে। তারপরও তাকে রিলিজ দেওয়া হয়নি। যেদিন আগুন লাগে সেদিন তার পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে রাখতে হলে কেবিনে নেওয়ার অনুরোধ করেন যেহেতু তিনি করোনা আক্রান্ত নন। তাও শোনেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর রাতে তিনি আগুনে মারা যান। এমনকি তিন জন করোনা রোগী হলেও বাকি দুই জনকেও করোনা রোগী বলে প্রথমে পরিবারের কাছে লাশও দিতে চায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ইত্তেফাক/কেকে